১৯৮৩ : জয় জয় জিম্বাবুয়ে
ফ্লেচার সুন্দর, জিম্বাবুয়ে সুন্দর/ক্রিকইনফো
বছর তিনেক আগেও তারা ছিল রোডেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম শ্রেণির টুর্নামেন্ট কুরি কাপের একটা দল। স্বাধীনতার পর তারা হয়ে গেল জিম্বাবুয়ে। এক অফস্পিনার জন ট্রাইকোস দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনটি টেস্ট খেলেছিলেন, তাও প্রায় ১৩ বছর আগে। জিম্বাবুয়ের সেই দলের অনেকেই ‘আন্তর্জাতিক মানের’ ছিলেন, তবে অভিজ্ঞতার ভাঁড়ার ছিল শূন্য। ট্রেন্টব্রিজে তৃতীয় বিশ্বকাপের তৃতীয় ম্যাচটা ছিল জিম্বাবুয়ের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ, আগের বছর আইসিসি ট্রফি জিতে যারা এসেছিল ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্টে। প্রতিপক্ষ প্রবল প্রতাপের অস্ট্রেলিয়া। জিম্বাবুয়ের কাছে সে ম্যাচ ছিল স্নায়ুর এক বিশাল পরীক্ষা। টেলিভিশনে দেখা ‘হিরো’রাই যখন আপনার প্রতিপক্ষ, স্নায়ুটা নড়বড়ে হবেই।
এ তো গেল মানসিক অবস্থা। খেলার মাঠেও তারা ছিল অপরিচিত। সে ম্যাচের আগে জিম্বাবুয়ের পক্ষে বাজির দর ছিল ১-এর বিপরীতে ২০০। জিম্বাবুয়ে এমনই নবীশ, তাদের সম্পর্কে কোনও তথ্যই ছিল না তেমন অস্ট্রেলিয়ার কাছে। জেফ থমসন, ডেনিস লিলিরা তাদের সেরা সময় ফেলে এসেছেন, তবে জিওফ লসন, রডনি হগরা তো আর কম যান না। আছেন অ্যালান বোর্ডার, কেপলার ওয়েসেলস, রড মার্শ, গ্রাহাম ইয়ালোপের মতো বড় বড় নাম। অস্ট্রেলিয়ার সামনে জিম্বাবুয়ে ছিল পুঁচকে।
এতকিছুর পরও ১৯৮৩ সালের ৯ জুন দিনটা হয়ে আছে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট ইতিহাসের সুন্দরতম দিনগুলির একটি। সব হিসাব তুচ্ছ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নবীনতম দেশটা সেদিন স্তব্ধ করে দিয়েছিল ১০৬ বছর ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেলে আসা এক দলকে। অস্ট্রেলিয়া-জিম্বাবুয়ের সে ম্যাচটা হয়ে আছে বিশ্বকাপের অন্যতম বড় অঘটন হয়ে। সেদিন ডানকান ফ্লেচার দেখিয়েছিলেন অলরাউন্ড-শো। বোলিংয়ে জিম্বাবুয়ে ছিল মেশিন। ফিল্ডিংয়ে তারা ছিলেন অতিমানব।
ইংল্যান্ডের জাতীয় নির্বাচন ছিল সেদিন। মার্গারেট থেচার আবার নির্বাচিত হচ্ছেন, ওদিকে সেদিনই আবার আরেক ম্যাচে খেলছে ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের এ ম্যাচটা তাই টেলিভিশন পর্দায় ছিল না। মাঠেও খুব বেশি দর্শক নেই, জিম্বাবুইয়ানদের উপস্থিতি তো আরও কম- ২০-২৫ জন ছিলেন। তবে জিম্বাবুইয়ান পতাকা আর চিৎকারে তারা মাতিয়ে রেখেছিলেন পুরো মাঠ। ড্রেসিংরুমে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্লাইভ রাইসের সহায়তা পেয়েছিল জিম্বাবুয়ে, নটিংহ্যামশায়ারের অধিনায়ক ছিলেন সে সময় তিনি।
রোদেলা দিন। টসে জিতে অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক কিম হিউজ ব্যাটিংয়ে পাঠালেন জিম্বাবুয়েকে। সেটা অবশ্য পরে কাজেই দিয়েছিল জিম্বাবুয়ের, পরে ব্যাটিং করলে অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া যে কোনও লক্ষ্যের সামনেই তাদের গুবলেট পাকানোর সম্ভাবনা ছিল বেশি। তবে ওই যে স্নায়ুর চাপ, সেটা তো ব্যাটিংয়ের মতো করে আর কোথাও এত ভয়ঙ্করভাবে ধরা দেয় না ক্রিকেটে।
দুই ওপেনার আলি শাহ ও গ্রান্ট প্যাটারসনের ওপর দিয়ে চাপটা গেল সবচেয়ে বেশি। এমনিতে বেশ সরব দুজন, তবে সেদিন ব্যাটিংয়ে নামার আগে কেমন চুপ মেরে গেলেন। চোখেমুখে রীতিমত আতঙ্কের ছাপ। ক্রিজে গিয়ে অবশ্য সেটার লেশমাত্র পাওয়া গেল না। লিলি-থমসন ততোদিনে ওপেনিং বোলিংয়ের জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন লসন-হগের কাছে। লসনের প্রথম বলে প্যাটারসন গ্লান্স করে সিঙ্গেল নিলেন ফাইন লেগ থেকে। সে ওভারেই রানের কলাম পূর্ণ করলেন শাহ। জিম্বাবুয়ে ম্যাচে ঢুকলো। ঢুকলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। দিনশেষে যেটা রুপ নিল আগমণী বার্তায়। ‘এসে গেছে জিম্বাবুয়ে’!
সে উত্তেজনাতেই কিনা, লিলির সঙ্গে একচোট কথা চালাচালি করে ফেললেন প্যাটারসন। রান নেওয়ার সময় লিলির কনুইয়ের সঙ্গে একটু ধাক্কা লেগে তিনি পেয়েছিলেন 'হাত ভেঙে যাওয়ার' হুমকি। সেবার চুপ থাকলেও পরের বার লিলিকে জবাব দিতে পিছপা হননি প্যাটারসন। সেটা তার ভাল না খারাপ কে করেছে- কে জানে! শেষ পর্যন্ত ব্যাটিংয়ে মধুচন্দ্রিমা টেকেনি জিম্বাবুয়ের, গুচ্ছ গুচ্ছ করে উইকেট হারালো যেন তারা। প্রথমে লিলির পরপর দুই বলে ফিরলেন দুই ওপেনার। এরপর ইয়ালোপের পরপর দুই বলে ফিরলেন জ্যাক হেরন ও ডেভ হটন। হটনের আউট নিয়ে থাকলো বিতর্ক। ক্যাচ ধরে উদযাপনের জন্য শূন্যে বল ছুঁড়েছিলেন মার্শ, দ্বিতীয় দফায় যেটা নিতে পারেননি। বোলার প্রান্তের আম্পায়ার নট-আউট দিয়েছিলেন, তবে অস্ট্রেলিয়ানদের আবেদনে স্কয়ার লেগ আম্পায়ার তুলেছিলেন আঙুল। অনিচ্ছাসত্ত্বেও ফিরতে হয়েছিল হটনকে।
দুই বোলারই দাঁড়িয়েছিলেন হ্যাটট্রিকের সামনে, দুই হ্যাটট্রিক বলই সামলেছিলেন অ্যান্ডি পাইক্রফট। অবশ্য তিনিও বেশিক্ষণ থাকলেন না, বোর্ডারের ইয়া বড় স্পিনে তিনি হারালেন অফস্টাম্প। কিছুক্ষণ আগেও ৫৫ রানে বিনা উইকেট ছিল জিম্বাবুয়ের। শীঘ্রই তারা বনে গেল ৫ উইকেটে ৯৪ রানে।
তবে অস্ট্রেলিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে গেলেন ডানকান ফ্লেচার, জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক। এই দলে ট্রাইকোস ছাড়া আর সবার চেয়ে বেশি অভিজ্ঞ ছিলেন তিনি। তবে সেই তিনিও হয়ে পড়েছিলেন ‘অবিশ্বাস্য রকমের নার্ভাস’। পাইক্রফটকে বারবার জিজ্ঞাসা করছিলেন, উইকেটের আচরণ কেমন।
এই দলে অবশ্য ফ্লেচার ছিলেন প্রায় কোচের মতো। প্রায় অপেশাদার একটা দলকে গড়ে তুলতে যার অবদান ছিল দারুণ। খেলোয়াড়ি জীবনেও অনুশীলনের দারুণ সব উপায় বের করতে পারতেন পরবর্তীকালের বাঘা এই কোচ। ফিটনেস বাড়াতে রাগবির ট্রেইনারকে এনেছিলেন। জিম্বাবুইয়ান ক্রিকেটারদের মতে, ট্রেনিংটা একটু বেশিই হয়ে গিয়েছিল তাদের। এমনই যে, তারা বেশি ফিট হয়ে উঠেছিলেন রাগবি খেলোয়াড়দের চেয়েও। যেটা শীঘ্রই টের পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, জিম্বাবুয়ের ফিল্ডিংয়ের সময়। পেস সামলাতে ফ্লেচার এনেছিলেন বেসবলের থ্রোয়ার, শুধু তিনি ‘বিমার’ ছুঁড়লেই একটু বিপত্তি হতো আরকি!
ফ্লেচার ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝতে পারতেন আর সবার চেয়ে ভাল। তিনি খেললেন মিডল অর্ডারের অসাধারণ এক ইনিংস। খুব বড় শট নেই, আক্রমণাত্মক ফিল্ডিংয়ের সামনে বের করে গেলেন রান। ৬ষ্ঠ উইকেটে কেভিন কারানের সঙ্গে তার জুটিতে এলো ৭০ রান। কারানও আউট হলেন বিতর্কিতভাবে, গালিতে ডেভিড হুকস ক্যাচটা ঠিকঠাক নিতে পারেননি বলে দাবি ছিল কারানের। আউট দেওয়া হলেও তাই আসতে চাইছিলেন না তিনি, ফ্লেচার বুঝিয়ে শুনিয়ে পাঠিয়েছিলেন। পরের উইকেটে ইয়ান বুচার্টের সঙ্গে আরও ৭৫ রান তুললেন ফ্লেচার, যা অবিচ্ছিন্ন। ফ্লেচার অপরাজিত ৮৪ বলে ৬৯ রানে। জিম্বাবুয়ে ৬ উইকেটে ২৩৯।
জয় জয় জিম্বাবুয়ে/ক্রিকইনফো
ফ্লেচারের অদ্ভুত সুন্দর সেই দিনটার গল্প অবশ্য সেখানেই শেষ নয়।
ওয়েসেলস ও গ্রায়েম উডে ওপেনিংয়েই অস্ট্রেলিয়ার ৬১ রান। সে জুটি ভাঙলেন ফ্লেচার, তার মিডিয়াম পেসে। তার আগেই অবশ্য একটা ধাক্কা খেয়েছে জিম্বাবুয়ে। পিঠের চোটে উঠে গেছেন পেসার ভিনসেন্ট হগ, ৬ ওভারে মাত্র ১৫ রান দিয়েছিলেন তিনি। তাকে দিয়ে টানা ১২ ওভার করানোর পরিকল্পনা ছিল ফ্লেচারের। হগ ওয়ার্ম-আপ করেছিলেন ঠিকঠাক। তবে ম্যাচের উত্তেজনা আর তার ফলে বাড়তি পেসে বোলিংয়ের চেষ্টাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার।
অবশ্য সেই অযাচিত ধাক্কাটা দমাতে পারলো জিম্বাবুইয়ানদের। তার বদলি হিসেবে নামলেন গেরাল্ড পেকওভার। ক্রিকেট মাঠে দ্রুততমদের একজন।
অস্ট্রেলিয়ার শুরুর সাতজন ব্যাটসম্যানের ছয়জনই ছিলেন বাঁহাতি। তাদের বিপক্ষে স্রেফ লেগস্টাম্প ধরে আঁটসাঁট লাইনে বোলিংয়ের কৌশল বেছে নিলেন জিম্বাবুইয়ানরা। অস্ট্রেলিয়ানদের শটের তেমন সুযোগ দিলেন না তারা, বিশেষ করে ট্রাইকোস। সেদিন ১২ ওভার বোলিং করে কোনো উইকেট পাননি তিনি, তবে গুণেছিলেন মাত্র ২৭ রান।
আর ফিল্ডিংয়ে তারা হয়ে উঠলেন অতিমানব। রাগবির অনুশীলনের পুরস্কারটা তারা পেলেন হাতে-নাতে।
হটন শুরুতে উডের ক্যাচটা উইকেটের পেছনে নিলেন দারুণভাবে। হিউজ ফ্লেচারের বলটা উড়িয়ে ফ্লিক করেছিলেন স্কয়ার লেগ আম্পায়ারের মাথার ওপর দিয়ে। তবে সামনে ডাইভ দিয়ে ক্যাচটা নিলেন শাহ। কিছুক্ষণ পর ম্যাচের মোড়টা ঘুরে গেল ওয়েসেলসের রান-আউটে।
ধীরে খেলছিলেন ওয়েসেলস, তবে অস্ট্রেলিয়ার পিছলে যাওয়াটা আটকে রেখেছিলেন তিনি। একটু আগেই জ্যাক হেরনের কাছে অল্পের জন্য রান-আউট থেকে বেঁচেছিলেন। সেটা মাথায় ছিল হয়তো তার, খানিক বাদেই অ্যালান বোর্ডার যখন খেললেন হেরনের দিকেই। শুরুতে রানটা নিতে চাননি ওয়েসেলস, তবে বোর্ডারের চাপে দৌড়াতে হয়েছিল। স্ট্রাইক-প্রান্তে হেরনের সামনে ছিল এক স্টাম্প। বল তাক করে ছুঁড়লেন সেদিকে। অভেদ্য লক্ষ্য- বুম!
তবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ইয়ালোপের উইকেটও। উড়িয়ে ফ্লিক করার প্রবণতা ছিল তারও, পাইক্রফটকে তাই ডিপে পাঠানো হয়েছিল। তবে একটু বেশিই সরে গিয়েছিলেন পাইক্রফট। তাতে অবশ্য ক্যাচটা হয়েছে আরও দুর্দান্ত, লাফিয়ে উঠে এক হাতে। এর আগে ট্রাইকোসের দারুণ এক ক্যাচে ফিরেছেন হুকসও।
পাইক্রফটের আরেকটা দারুণ ক্যাচে কারানের বলে ফিরেছেন বোর্ডার, লসন শিকার বুচার্টের। অস্ট্রেলিয়ার শেষ আশা হয়ে ছিলেন মার্শ। ততক্ষণে লড়াইটা হয়ে গেছে মার্শ বনাম জিম্বাবুয়ে। তবে শেষ ওভারের আগ পর্যন্ত জিম্বাবুয়ে যেন কী ঘটছে সেটার সঙ্গে ধাতস্থ হতে পারেনি। নিজেদের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়াকে স্তব্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারটা কি সহজে হজম হয়!
শেষ ওভারে তারা ভরসা রাখল পিটার রসনের ওপর। বিশাল এক ছয় মারলেন মার্শ, তবে রসনের ব্লকহোলের বাকি বলগুলির বিপক্ষে সুবিধা করতে পারলেন না। ৬০তম ওভারের শেষ বলের পর মার্শ অপরাজিত থাকলেন ৪২ বলে ৫০ রানে। অস্ট্রেলিয়া থামলো ৭ উইকেটে ২২৬ রানে। জিম্বাবুয়েকে হারাতে তাদের প্রয়োজন ছিল আরও ১৪ রান।
১৩ রানের ব্যবধানে পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়াকে আটকে দিল জিম্বাবুয়ে। পরিসংখ্যানের সম্ভাবনায় ঋণাত্মক থাকলে ম্যাচের আগে যাদের জেতার সম্ভাবনা হয়ত ছিল তেমন। অবশ্য সেই ‘অসম্ভব’ সমীকরণে বাজি ধরেছিলেন একজন জিম্বাবুইয়ান, যিনি জিতেছিলেন ১০০ পাউন্ড।
পরে জিম্বাবুইয়ান ক্রিকেটাররা তার কাছ থেকে পানশালায় পেয়েছিলেন রাজকীয় এক ‘ট্রিট’। জিম্বাবুয়ে সেদিন পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়ানদের অভিনন্দন, কয়েকজন ম্যাচশেষে এসেছিলেন জিম্বাবুয়ের ড্রেসিংরুমে।
আর জিম্বাবুয়ে সেদিন দিয়েছিল আগমণী বার্তা।
১৯৮৩ সালের ৯ জুন দিনটা হয়ে আছে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট ইতিহাসের সুন্দরতম এক দিন।
এরপর যা ঘটেছিল-
জিম্বাবুয়ে এরপরের চারটি ম্যাচই হেরেছিল, অবশ্য ভারতকে বাগে পেয়েও কপিল দেবের অতিমানবীয় এক ইনিংসে আটকে গিয়েছিল তারা। আর কিম হিউজের অস্ট্রেলিয়া দলে তার নেতৃত্বের সঙ্গে অন্তত তিনটি 'গ্রুপ'-এর দলাদলি নিয়ে ছিল অনেক প্রশ্ন। গ্রুপপর্ব পেরুনো হয়নি সেবার তাদের। অবশ্য চার বছর পর প্রথমবারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল অ্যালান বোর্ডারের অস্ট্রেলিয়া।