১৯৮৭ : স্পিরিট অফ ক্রিকেট- ওয়ালশ সংস্করণ
১২ বছর আগে এ দুই দল ছিল বিশ্বকাপের ‘প্রথম’ থ্রিলারের অংশ। বিশ্বকাপ ইংল্যান্ড ছেড়ে পাড়ি জমালো উপমহাদেশে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাম্রাজ্যে উঠেছে ভাঙনের সুর। তবে ১২ বছর আগের মতো আরেকটি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তান জন্ম দিল আরেকটি থ্রিলারের, এবার লাহোরে। অবশ্য সে থ্রিলারের রোমাঞ্চ ছাপিয়ে সে ম্যাচ হয়ে উঠলো এক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান পেসারের ‘মহানুভবতা’র দৃষ্টান্ত হয়ে। কোর্টনি ওয়ালশ চাইলেই ম্যাচটা জেতাতে পারতেন দলকে, তবে ‘স্পিরিট অফ ক্রিকেট’-এর উদাহরণ রেখে সুযোগটা নেননি তিনি সেলিম জাফরকে ‘মানকাড’ করার।
ডেসমন্ড হেইন্স ও ফিল সিমন্স শুরুটা দারুণ করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের। এরপর ভিভ রিচার্ডস তুললেন ঝড়। তবে ইমরান খানের তোপে গুটিয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ১৬৯ রানে ৪ উইকেট থেকে ২১৬ রানেই অল-আউট হয়ে গেল তারা। ৩৭ রানে ৪ উইকেট ইমরানের, জাফর নিলেন ৩ উইকেট।
অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২১৬ রানের সম্বলটাকে যেন নিল ১১৬ রান হিসেবে। ২৮ রানে নেই ২ উইকেট, রমিজ রাজা ও জাভেদ মিঁয়াদাদের জুটি পাকিস্তানকে এগিয়ে নিয়েছিল, সে জুটি ভাঙলেন রজার হার্পার। মাঝে ইজাজ আহমেদ, ইমরান খানের পর ৪৯ বলে ৫৬ রান করা সেলিম ইউসুফকে ফিরিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ফিরিয়ে আনলেন ওয়ালশ। ২০৩ রানে ৯ম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হলেন সেলিম ইউসুফ, প্যাট্রিক প্যাটারসন সে ওভারে ২ রান দিয়ে নিলেন ২ উইকেট।
এরপর শেষ ওভারে পাকিস্তানের সামনে প্রায় অসম্ভব এক সমীকরণ। ১৪ রান, বাকি ১ উইকেট। বোলিংয়ে দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেরা বোলার ওয়ালশ।
প্রথম বলে আব্দুল কাদির নিলেন সিঙ্গেল, পরের বলে জাফর আরেকটি। ৪ বলে প্রয়োজন ১২।
বোলিংয়ে দিনটা সুবিধার যায়নি কাদিরের। সেটা যেন পুষিয়ে দিলেন এরপর ব্যাটিংয়ে। প্রথমে ডাবলস, এরপর লং-অফ দিয়ে ছয়। এর পরের বলে এলো আরেকটি ডাবল, শেষ বলের জন্য বাকি দুই। এই পাঁচ বলে দুইবার স্টাম্প ভেঙেছিলেন ওয়ালশ, রান-আউটের সম্ভাবনায়।
তবে নিশ্চিত রান-আউটের সময়ই ভাঙলেন না স্টাম্প। শেষ বলটা করতে এসে শেষ মুহুর্তে নিজেকে বিরত রাখলেন ওয়ালশ। নন-স্ট্রাইকিং প্রান্ত থেকে ক্রিজ ছেড়ে তার আগেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন জাফর। ওয়ালশ দুহাত বদ্ধ করে তাকিয়ে থাকলেন জাফরের দিকে। যেন শিক্ষক পরীক্ষার হলে শেষবারের মতো ‘নীরব সতর্ক’ করলেন দেখাদেখি করা ছাত্রকে।
পাকিস্তান তখনোই অল-আউট হয়ে হারতে পারতো ম্যাচ, ওয়ালশের এমন আচরণে টিকে রইল তারা। শেষ বলে কাভারে স্লাইস করে প্রয়োজনীয় রান নিয়ে নিলেন কাদির।
উল্লাসে মাতল লাহোর। আর ওয়ালশ হয়ে গেলেন যেন সে ম্যাচের চেয়েও বড়।
এরপর যা ঘটেছিল-
প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের আগেই বিদায় নিতে হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। শেষ পর্যন্ত একটি জয় কম ছিল তাদের। আর সেদিন ম্যাচশেষে ওয়ালশ পেয়েছিলেন আর সবার চেয়ে বাড়তি নজর, একজন স্থানীয় সমর্থক তো হাতে-বানানো এক কার্পেটও উপহার দিয়েছিলেন তাকে।