অল্পের জন্য বেঁচে গেলেও বীভৎস আক্রমণের দৃশ্য ভুলতে পারছেন না শনাকা
ইস্টার সানডে-তে নেগোমবোর সেন্ট সেবাস্তিয়ানস চার্চে যাওয়ার কথা ছিল শ্রীলঙ্কার অলরাউন্দার দাসুন শনাকার। তবে আগের দিনই ১৭০ কিলোমিটার ভ্রমণ করে অনুরাধাপুরায় গিয়েছিলেন বলে ক্লান্ত ছিলেন, মা ও নানীর সঙ্গে তাই যাননি তিনি। সেই গীর্জা পরে শিকার হয়েছে আত্মঘাতী বোমা হামলার, যাতে আহত হয়েছেন শনাকার মা, অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন তার দাদি। ইস্টার সানডে-তে শ্রীলঙ্কাজুড়ে চলা সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন প্রায় ৩০০-এর ওপর মানুষ, আহত হয়েছেন ৫০০-এরও বেশি।
সেদিন সকালে নিজের বাসাতেই ছিলেন শনাকা, এরপরই শুনেছিলেন বিস্ফোরণের শব্দ। গীর্জায় আক্রমণ হয়েছে শুনে ছুটে গিয়েছিলেন সেখানে, এরপর দেখেছেন বিভৎস দৃশ্য। আক্রমণের শিকার মানুষদের একজন হতে পারতেন তিনিও।
“সাধারণত আমার গীর্জায় যাওয়ার কথা। তবে আগের দিনই অনুরাধাপুরায় গিয়েছিলাম বলে ক্লান্ত ছিলাম। শব্দ শুনেছিলাম, লোকে বলাবলি করছিল গীর্জায় বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। সেখানে ছুটে গিয়ে যা দেখেছি, সেটা কোনোদিন ভুলতে পারব না”, বলেছেন শনাকা।
“পুরো গীর্জাটা একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে। বিধ্বস্ত। লোকে লাশ বের করছিল বাইরে।”
প্রথমে তার মাকে আহত অবস্থায় খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি, তাকে নিয়ে এরপর ছুটেছেন হাসপাতালে। ফিরে এসে খুঁজতে শুরু করেছেন তার দাদিকে। গীর্জার ভেতরে ছিলেন বলে তাকে জীবিত পাওয়ার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন শনাকা।
“যখন শুনলাম সে ভেতরে ছিল, আমার হৃদয় আসলে ভেঙে গিয়েছিল। কারণ বিস্ফোরণের কারণে যে ধ্বংসস্তুপ তৈরি হয়েছে, সেগুলোর তোপেই অনেকে মারাত্মক আহত হয়েছে। আমার মা জানালার কাছে ছিল, একটা দেওয়াল তাকে বিস্ফোরণের হাত থেকে বাঁচিয়েছে, খুব বেশি আহত হননি তিনি।”
হাসপাতাল থেকে এরপর আবার দাদির খোঁজে ছুটেছিলেন শনাকা। এসে দাদিকে জীবিত খুঁজে পেয়েছেন, যেন ঘটে গেছে মিরাকল।
“দাদির খোঁজ যখন করছিলাম, তাকে জীবিত আশা করিনি। তবে তার আশেপাশে সবাই মারা গেছে, তাদের মৃতদেহই তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে মারাত্মক আঘাত থেকে। তিনি আহত হয়েছেন মারাত্মকভাবে, মাথায় বোমার শার্পনেল লেগেছে তার। তবে তাকে অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে পেরেছিলাম আমরা।”
এরপর থেকে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছেন শনাকাও। এমনকি রাস্তায় বের হতে বা হাসপাতালে যেতেও ভয় পাচ্ছেন তিনি। অবশ্য শ্রীলঙ্কার মানুষের ওপর থেকে বিশ্বাসটা উঠে যায়নি তার, “সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে নেগম্বোতে কখনোই সমস্যা ছিল না। এটা স্বর্গের মতো নিরাপদ একটা জায়গা। মানুষগুলো ভাল, সহৃদয়বান, অন্য কারও বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায় না। আমি আসলে বোঝাতে পারব না, এখানকার মানুষ কতোটা নিরীহ ও শান্তিপ্রিয়।”
গত মাসে ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে সন্ত্রাসী হামলা থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। এদিকে শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ক্রাইস্টচার্চের হামলার ‘প্রতিশোধ’ নিতেই ইস্টার সানডেতে এ হামলা হয়েছে।