• বিশ্বকাপের ক্ল্যাসিক মুহুর্ত
  • " />

     

    ১৯৯৯ : হ্যামিল্টনের রান-আউটে বদলে যাওয়া দুই দেশের গতিপথ

    ১৯৯৯ : হ্যামিল্টনের রান-আউটে বদলে যাওয়া দুই দেশের গতিপথ    

    মিনহাজুল আবেদিনকে বলা হতো বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া তখনকার সেরা ব্যাটসম্যান। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে মিনহাজুল দলে সুযোগ পেয়েছিলেন একেবারে শেষ মুহুর্তে গিয়ে। গেভিন হ্যামিল্টনকে বলা হতো স্কটল্যান্ডে জন্ম নেওয়া ‘ইংলিশ’ ক্রিকেটার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে স্কটল্যান্ডের প্রথম ‘তারকা’ তিনি। দুজনই ব্যাটসম্যান হলেও বোলিংটাও পারতেন। দুজনই খেলেছিলেন নিজেদের দেশের প্রথম ওয়ানডেতে। ১৯৯৯ সালের ২৪ মে এডিনবরায় দিনটা হতে পারতো হ্যামিল্টনের, হয়েছিল মিনহাজুলের। 

    গত শতাব্দির প্রায় পুরোটা সময়ই স্কটল্যান্ড ছিল ইংল্যান্ডের মাইনর কাউন্টিগুলির একটি। ইংল্যান্ড সফরে আসা দল তাদের সঙ্গে খেলত, তবে সেসব ম্যাচের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ছিল না। ১৯৯৪ সালে এসে আইসিসির সহযোগি সদস্য হয় তারা, খুলে যায় বিশ্বকাপের খেলার সম্ভাবনার দুয়ার। ১৯৯৭ সালে মালয়েশিয়ায় আইসিসি ট্রফিতে আয়ারল্যান্ডকে প্লে-অফে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায় স্কটিশরা। বাড়তি হিসেবে মিলে বিশ্বকাপে দুটি ম্যাচ আয়োজনের সুযোগও। 

    সে টুর্নামেন্টেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশও প্রথমবার খেলতে যায় বিশ্বকাপে। স্কটল্যান্ড টুর্নামেন্ট শুরু করে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে, এরপর হার পাকিস্তানের বিপক্ষে। বাংলাদেশ হেরেছিল নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে। তবে ২৪ মে, এডিনবরার র‍্যাবার্ন প্লেসের গ্র্যাঞ্জ ক্রিকেট ক্লাবে ফেভারিট ছিল স্কটল্যান্ড। আগের গ্রীষ্মেই তাদের কাছে ২-০তে সিরিজ হেরেছিল বাংলাদেশ, তার ওপর মে মাসে স্কটল্যান্ডে গিয়ে খেলাটা মোটেই সুবিধাজনক ছিল না তাদের জন্য। 

    জন ব্লেইন ও আসিম বাটের ওপেনিং বোলিং জুটি স্কটিশ কন্ডিশনে ছিল ভয়ঙ্কর। টসে হেরে ফিল্ডিংয়ে নেমে তাদের সামনেই হুমড়ি খেয়ে পড়লো বাংলাদেশ। ২৬ রানে ৫ উইকেট হারালো তারা। ছয়ে নেমেছিলেন মিনহাজুল আবেদিন। তিন রানে প্রথম স্লিপে তার ক্যাচ ফেললেন ইয়ান ফিলিপ। মিনহাজুল করলেন ৬৮, অপরাজিত। এর আগে ক্যারিয়ারে কোনও ফিফটি ছিল না তার, ফিফটি ছাড়াই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শেষ করার আক্ষেপটা মিটিয়েছিলেন সেদিন তিনি। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর হয়ে ছিল সেটা অনেকদিন, ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মোহাম্মদ আশরাফুলের ৮৭ রানের আগে। 



    সঙ্গে নাইমুর রহমানের ৩৮ ও এনামুল হকের ১৯ রানে বাংলাদেশ গেল ১৮৫ রান পর্যন্ত। হাসিবুল হোসেন-মঞ্জুরুল ইসলামের তোপে শুরুটা স্বস্তির হলো না স্কটল্যান্ডেরও। ৪৯ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর স্কটল্যান্ডকে টানলেন গেভিন হ্যামিল্টন। মিনহাজুলের মতো তিনিও সেদিন নেমেছিলেন ছয়ে। 

    হ্যামিল্টন ১৯৯৮ সালে কাউন্টিতে দারুণ এক মৌসুম কাটিয়েছিলেন। সে বিশ্বকাপেও যে কোনও ইংলিশ ব্যাটসম্যানের চেয়ে রান বেশি ছিল তার। উইকেটকিপার অ্যালেক ডেভিসের সঙ্গে হ্যামিল্টনের জুটিতে উঠলো ৫৫ রান, স্কটল্যান্ড যাচ্ছিল বিশ্বকাপে নিজেদের ঐতিহাসিক প্রথম জয়ের দিকে। 

    ৪২তম ওভারের দ্বিতীয় বলে বদলে গেল চিত্রটা। মঞ্জুরুলকে সোজা খেলেছিলেন ডেভিস, ভার সামলাতে না পেরে পড়ে গেলেও মঞ্জুরুল কোনোমতে হাতটা লাগাতে পারলেন বলে। হ্যামিল্টন তখনই জেনে গিয়েছিলেন, কী ঘটেছে। শূন্যে একটা লাথি মারলেন ক্ষোভে। ওপাশে আফসোসে পুড়ছেন ডেভিস। বাংলাদেশীরা ততক্ষণে শুরু করেছেন উল্লাস। 

    টিভি আম্পায়ার শুধু নিশ্চিত করলেন হ্যামিল্টনের রান-আউটটা। মাঠ ছাড়ার আগে নতুন ব্যাটসম্যান ব্লেইনকে কিছু একটা পরামর্শ দিলেন হ্যামিল্টন, তবে কাজের কাজ হলো না কিছু। জয় থেকে ২২ রান দূরে থামলো স্কটল্যান্ড। 

     

     

    বাংলাদেশ পেলো ওয়ানডেতে দ্বিতীয়, বিশ্বকাপে নিজেদের। সে ম্যাচে জিতলে স্কটিশ ক্রিকেট হয়তো পুরো বদলে যেত না, তবে বার্তা দিতে পারত দারুণ। বিশ্বকাপে শুধু অংশগ্রহণ করে না তারা, জেতেও! সে বার্তাটা দিল বাংলাদেশ। কদিন পর পাকিস্তানকে থমকে দিয়ে পরের বছর বাংলাদেশ পেয়ে গিয়েছিল টেস্ট স্ট্যাটাস। 

     

    এডিনবরায় সেদিন হ্যামিল্টন নন, নায়ক হয়েছিলেন মিনহাজুল। ২৪ জুনের সেই দিনটা হয়ে আছে স্কটিশ ক্রিকেটের অন্যতম বেদনার দিন। আর বাংলাদেশ যেন সেদিন দিয়েছিল আগমণী বার্তা। 

    এরপর কী ঘটেছিল- 
    সে বছরই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল হ্যামিল্টনের। পেয়েছিলেন ‘পেয়ার’, বোলিংয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। ক্যারিয়ারে ওই একটিই টেস্ট তার। চার বছর অপেক্ষা করে আবার স্কটল্যান্ডের হয়ে খেলেছিলেন, সহায়তা করেছিলেন ২০০৭ সালে বিশ্বকাপ খেলতে। পেশাদার ক্যারিয়ারের ইতি টানলেও দেশের হয়ে খেলে গিয়েছিলেন, যেখান থেকে অবসর নিয়েছিলেন ২০১০ সালে। 
    ১৯৯৯ সালেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছিলেন মিনহাজুল। বাংলাদেশের প্রথম টেস্টে খেলার ‘ইচ্ছা পোষণ’ করলেও সে সুযোগটা হয়নি তার। পরবর্তীতে তিনি হয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক।