ইনজুরি সময়, ভিএআর, ইতিহাদ- পুরনো নাটকে শেষ টটেনহাম, সিটি ম্যাচ
ম্যানচেস্টার সিটি-টটেনহাম হটস্পার, ইতিহাদ স্টেডিয়াম, ইনজুরি সময়, গোল, ভিএআর। ডাগ আউটে পেপ গার্দিওলা ও মাউরুসিও পচেত্তিনো। এবার গোল করলেন গ্যাব্রিয়েল হেসুস। লম্বা উদযাপন শেষ। রেফারির কানে হাত। ভিএআর চেক চলছে। ভিএআর চেক শেষ, রেফারি বাজালেন গোলকিকের বাঁশি। আরও একবার হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন পচেত্তিনো, গার্দিওলার চেহারায় পুরনো বিষাদ। পুরোনো ঘটনা নতুন করে আরেকবার চিত্রায়িত হলো ইতিহাদে। কর্নারের সময় বল হাতে লেগেছিল আয়মেরিক লাপোর্তের। নতুন নিয়মে ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত সব হ্যান্ডবলেই গোল হবে বাতিল। লাপোর্তের সাহায্যে পাওয়া বল তাই জালে জড়িয়ে উল্লাস করে নেচে গেয়েও আর হেসুস গোল পাননি। আরও একবার ভিএআর নায়ক হয়ে গেল ইতিহাদের নাটকে, টটেনহাম হটস্পারের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত ২-২ গোলে ড্র করেছে ম্যান সিটি।
দুইবার ম্যাচে এগিয়ে যাওয়ার পর দুইবারই টটেনহাম গোল শোধ দিয়ে সিটির সঙ্গে লড়ে যাচ্ছিল। ৯২ মিনিটে পাওয়া কর্নার থেকে লাপোর্তে ফ্লিক করেছিলেন, ফারপোস্টে ছিলেন হেসুস। তিনি সময় নিয়ে, একজন ডিফেন্ডার কাটিয়ে কাট করে ডান পায়ের শটে গোল করে উদযাপনের উপলক্ষ্য এনে দিয়েছিলেন ইতিহাদে। কিন্তু লম্বা উদযাপন শেষেও হতাশা সঙ্গী হয়েছে সিটির। ভিএআরে সিদ্ধান্ত দিয়েছে লাপোর্তের হাতে লেগেছিল বল। নতুন নিয়মে তাই বাতিল গোল। অথচ পুরনো নিয়মেই চার মাস আগে কপাল পুড়েছিল সিটির এই ইতিহাদে, সেবার রাতের আলোয় ফার্নান্দো ইয়োরেন্তের গোলে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিল সিটি। এবার নতুন করে নতুন নিয়মে দিনের আলোয় গার্দিওলাকে আরও একবার হাত দিতে হয়েছে মাথায়।
অথচ পুরো ম্যাচে টটেনহামের বিপক্ষে দাপট দেখাচ্ছিল সিটি। প্রথম ম্যাচে ওয়েস্টহামের বিপক্ষে একাদশে ছিলেন না বের্নার্দো সিলভা। সেটা একটু চমকই ছিল। টটেনহামের বিপক্ষে অবশ্য একাদশে কোনো চমক রাখলেন না পেপ গার্দিওলা। সিলভা সতীর্থ কেভিন ডি ব্রুইনকে নিয়ে হয়ে উঠলেন ভয়ঙ্কর। ২০ মিনিটে সিলভা ডান প্রান্ত থেকে কিছুটা পেছনে পাস দিলেন ডি ব্রুইনকে। বেলজিয়ান মিডফিল্ডার প্রথম সুযোগেই ক্রস করলেন ফারপোস্টে। রাহিম স্টার্লিং আরাম আয়েশ কয়ে হেডে গোল দিয়ে সিটিকে এগিয়ে দিলেন ম্যাচে।
প্রথমার্ধের পুরোটা সময়ই ছিল সিটির দাপট। টটেনহাম আসলে আক্রমণে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠল একবার। ওই একবারেই গোল শোধ করে দিয়ে টটেনহাম কিছুটা লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখালো। টাঙ্গুয়ে এনদম্বেলের কাছ থেকে ডিবক্সের বেশ বাইরে বল পেলেন এরিক লামেলা। গোলরক্ষক এডারসন বেশ খানিকটা সরে ছিলেন গোল বারের এক কোণায়। লামেলার পাখির চোখ লক্ষ্য মিস করেনি। দুই, তিন স্টেপ বল নিয়ে দৌড়ে খানিকটা বাঁক খেয়ে পছন্দের বাম পায়ে শট নিয়ে গোল করলেন লামেলা। স্টার্লিং আর লামেলার গোলের সময়ের পার্থক্য দাঁড়াল মাত্র ২০৩ সেকেন্ড।
টটেনহামের দাঁত ভাঙা জবাব খুব একটা পছন্দ হয়নি ম্যান সিটির। গোল হজমের পর আরও চড়াও হলো তারা। টটেনহামের কাছে এবার কোনো জবাবই নেই। নিচ থেকে খেলা বিল্ড আপ করে পুরো মাঠ দাপিয়ে বেড়ালো সিটি। ৩৫ মিনিটে আবার সেই ডি ব্রুইন-সিলভা জুটি, আবার ডান প্রান্ত। এবার জায়গা ওলট পালট। ডি ব্রুইন সামনে, সিলভা পেছনে। ডি ব্রুইন সিলভার কাছ থেকে পাস পেলেন, নেয়ার পোস্টে মাটি ঘেঁষে করলেন ক্রস। সার্জিও আগুয়েরো দৌড়ে এসে কোণাকুণি ফিনিশে গোল ফারপোস্টে জড়ালেন বল। ড্যানি রোজ আর ডেভিনসন সানচেজ অলস বসে দেখলেন পুরো ঘটনা।
টটেনহামের বিপক্ষে সাত ম্যাচ গোলশূন্য ছিলেন আগুয়েরো। সেই খরা কাটালেন দারুণ এক গোল করে। সঙ্গে অ্যালান শিয়ারের এক মাঠে প্রিমিয়ার লিগে গোলের রেকর্ডেও ভাগ বসালেন। ইতিহাদে আগুয়েরোর গোল এখন ৯৭। সামনে আছেন কেবল ওয়েইন রুনি (১০১) ও থিয়েরি অরি (১১৪)।
প্রথমার্ধে শেষের আগেই মুখস্থ্ হয়ে যাওয়া আক্রমণে আরেকবার গোল পেয়ে যেতে পারত সিটি। সিলভার পাস, ডি ব্রুইনের ক্রস বাম প্রান্ত থেকে। এবার সেই ক্রসের শেষে থাকলেন ইলিকে গুন্ডোয়ান। টটেনহামেরও তাই কপাল ভালো। স্পটকিক নেওয়ার কাছাকাছি জায়গা থেকে আর লক্ষ্যে শট করা হয়নি গুন্ডোয়ানের। স্টার্লিং বা আগুয়েরোদের কেউ হলে হয়ত দুই গোলেই পিছিয়ে যেতে হত টটেনহামকে।
দ্বিতীয়ার্ধেও পুরনো ছন্দে খেলতে থাকে সিটি। তাতে আরও কোণঠাসা টটেনহাম। হ্যারি কেইন বলের দেখা পাচ্ছিলেন না প্রথমার্ধে, পরেও পেলেন না। কেভি ডি ব্রুইনের ডিফ্লেক্টেড শট এর ভেতর ঠেকিয়ে দিয়ে হুগো লরিস দলকে টিকিয়ে রাখলেন ম্যাচে। অবস্থা বেগতিক দেখে হ্যারি উইংক্সকে বসিয়ে পচেত্তিনো নামিয়ে দিলেন লুকাস মউরাকে। মউরা নিয়ে এলেন ভাগ্য। কর্নারের বিরতিতে মাঠে নেমেছিলেন। মউরা গেলেন ডিবক্সে, লামেলা নিলেন নিখুঁত কর্নার, সিক্স ইয়ার্ড বক্সের মাথায় মউরা লাফিয়ে উঠে হেডে করলেন গোল! দুই সুযোগ, দুইবারই গোল পেল টটেনহাম।
সমতায় থাকা খেলায়ও সিটির আক্রমণের ঝাঁঝ কমেনি। তবে আক্রমণগুলো আগেরমতো আর তেমন নিখুঁত হচ্ছিল না। এরপর বাধা হয়ে দাঁড়ালেন লরিসও। রদ্রির শট সেভ করলেন, এরপর ঠেকালেন নিকোলাস অটামেন্ডির কর্নার থেকে করা হেড। আগুয়েরোকে বসিয়ে গ্যাব্রিয়েল হেসুসের শরণাপন্ন হলেন গার্দিওলা। তবে আগুয়েরো ব্যাপারটা নিলেন না ভালোভাবে, রাগে গজরাতে গজরাতে সাইডবেঞ্চে বসার সময় গার্দিওলার সঙ্গে এক দফা বাক্য বিনিময় হয়ে গেল তার।
হেসুস অবশ্য সিটিকে প্রাণ ফিরিয়ে দিতে পারতেন। সেই বাম প্রান্ত থেকেই সিলভার করা ক্রসটা বেশ উঁচুতে ছিল তার জন্য। বল নামিয়ে এনেও লাভ হয়নি, অ্যাল্ডারভাইরেল্ডের সাহসী ব্লক গোল পেতে দেয়নি হেসুসকে ৭২ মিনিটে। মিনেট চারেক পর উলটো চোখ রাঙ্গানি খেল সিটি। জিনচেঙ্কো বাম প্রান্তে ভুল করে মউরার দিয়ে দিলেন বল, তার ক্রস অটামেন্ডি ক্লিয়ার করে বাঁচালেন সিটিকে।
ম্যাচের শেষে গিয়ে কিছুটা ঝিমিয়েই পড়েছিল সিটি। হেসুসের গোলের পর ডাগ আউটে গার্দিওলা-আগুয়েরো একে অপরকে জড়িয়ে ধরে উদযাপনও করেছিলেন। ওই মুহুর্তটাও স্থায়ী হলো না। পুরো ম্যাচে দাপটই দেখাল সিটি, কিন্তু সবকিছুই শেষ পর্যন্ত মিছে হয়ে গেল।