চ্যাম্পিয়ন সিটিকে হারিয়ে দিল 'পুঁচকে' সিটি
একদল ছিল পয়েন্ট টেবিলের ওপর থেকে দুই নম্বরে। আরেক দল শেষ থেকে দুইয়ে। পয়েন্ট টেবিলে যতখানি পার্থক্য মানের দিক দিয়ে তার চেয়েও বেশি। কিন্তু প্রিমিয়ার লিগের এমন রাতে ওসব ঠিক ধোপে টেকে না। তাই ১৮ ম্যাচ পর প্রিমিয়ার লিগে ম্যানচেস্টার সিটির অপরাজিত থাকার ধারাটা যখন ভাঙল সেটা ধ্বসে পড়ল নরউইচ সিটির ক্যারো রোডে। প্রিমিয়ার লিগে নতুন আসা নরউইচ সিটির কাছে ৩-২ গোলে হেরেছে পেপ গার্দিওলার দল। ৫ ম্যাচ শেষে প্রিমিয়ার লিগ পয়েন্ট টেবিলে লিভারপুলের চেয়ে তাই পাঁচ পয়েন্টে পিছিয়ে গেল বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
আয়মেরিক লাপোর্তে ইনজুরিতে পড়ার পরই সিটির রক্ষণ নিয়ে সংশয় জেগেছিল। সেটা যে এতোখানিই ভোগাবে তা হয় আঁচ করতে পারেননি গার্দিওলাও। জন স্টোনস আর নিকোলাস অটামেন্ডির ওপর ভরসা করেছিলেন সিটি ম্যানেজার। নরউইচ দুইজনকেই ঋণী বানিয়ে দিয়েছে গার্দিওলার কাছে। ক্যারো রোডে চমকের শুরু ১৮ মিনিটে। কর্নার থেকে সিক্স ইয়ার্ড বক্সের মাথায় লাফিয়ে উঠে কেনি ম্যাকলিন হেডে করলেন গোল। পেছন থেকে কেউ দৌড়ে আসছে তাদের দিকে সেটাই বুঝতে পারলেন না সিটির নামী-দামী ডিফেন্ডাররা।
এর ১০ মিনিট পর নরউইচ সমর্থকদের চোখ ছানাবড়া হওয়ার দশা। সিটির হাই ডিফেন্সিভ লাইনের পুরো ফায়দা তুলে টিমু পুকি মিডফিল্ড থেকে পাওয়া বল নিয়ে এগিয়ে গেলেন গোলের দিকে। অসহায় কাইল ওয়াকার ধাওয়া করে গেলেন পুরো পথ। জায়গামতো গিয়ে টড ক্যান্টওয়েলকে পাস দিলেন পুকি। ফাঁকা বারে খোঁচা মেরে বল ঢুকিয়ে দুই গোলে এগিয়ে গেল সিটি। নরউইচ সিটি।
প্রথমার্ধ শেষের আগেই অবশ্য নরউইচকে বাস্তবতা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সার্জিও আগুয়েরো। বাম পাশ থেকে আসা ক্রস থেকে হেডে গোল করেছিলেন যোগ করা সময়ে। প্রিমিয়ার লিগে টানা পাঁচ ম্যাচে গোল করে আগুয়েরো ভেবেছিলেন বিরতির আগেই হয়ত লড়াইয়ে ফেরার বারুদ যোগান দিয়ে গেলেন তিনি।
দ্বিতীয়ার্ধে আগুয়েরোর ভুল ভাঙতে সময় লেগেছে পাঁচ মিনিট। পেছনে এডারসন। পাশে অটামেন্ডি। ডিবক্সের মাথায় স্টোনস। কোনো চাপ নেই প্রতিপক্ষের। অটামেন্ডিকে স্কয়ার করে বল দিলেন স্টোনস। অটামেন্ডির ধারণাও ছিল না পেছন থেকে ধেয়ে আসছেন বুয়েন্দিয়া। হতচকিত হয়ে বল হারালেন। বুয়েন্দিয়া ফাঁকায় থাকা পুকিকে দিলেন বল। পুকি ছাড়িয়ে গেলেন আগুয়েরোকেও, করলেন মৌসুমের ষষ্ঠ গোল। আগুয়েরো যতখানি এগিয়ে দিয়েছিলেন, আবার ততোখানিই সিটিকে পিছিয়ে দিলেন পুকি।
অথচ এর কিছুক্ষণ আগেই স্টোনস প্রায় একইরকম ভুল করে বসেছিলেন। সেখান থেকে শিক্ষা নেননি অটামেন্ডি। যা হওয়ার হয়েছে সেটাই। এরপর অনুমিতভাবেই খেলা হয়েছে একপেশে। এক অর্ধে বল গড়িয়েছে বেশি। অন্য অর্ধে কাউন্টার অ্যাটাকে ঘায়েল করার চেষ্টা। সময়ের সাথে সেই ধারাও মিলিয়ে গিয়ে এক অর্ধেই ছিলেন ২১ জন খেলোয়াড়।
গার্দিওলা বদলও করেছিলেন। কেভিন ডি ব্রুইন ছিলেন না একাদশে। তিন গোল হজম করার পর তার সঙ্গে গ্যাব্রিয়েল হেসুসকেও নামান গার্দিওলা। নরউইচকে চাপে ফেলে নির্ধারিত সময়ের ২ মিনিট আগে ম্যাচেও ফেরে সিটি। ডিবক্সের ভেতর জটলাতে যখন সুবিধা করতে পারছিল না সিটি, তখন রদ্রি গোল করেন ডিবক্সের বাইরে থেকে করা নিচু শটে। নরউইচ গোলরক্ষক টিম ক্রুল পুরো ম্যাচেই অসাধারণ খেলেছেন, নইলে সিটির সঙ্গে জয়টা হয়ত পেত না নরউইচ।
অটামেন্ডিকে ভুল শুধরাতে না দিয়ে ভালো একটি সেভ করেছিলেন কাছের পোস্টে। আগুয়েরো, হেসুসরা গোল করার মতো প্রয়োজনীয় জায়গাটাই পাননি। আঁটোসাঁটো আর মনোযোগী রক্ষণ দিয়ে শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে নরউইচ সিটি।
নতুন আসা দলের বিপক্ষে প্রিমিয়ার লিগে সবশেষ সিটি হেরেছিল ২০১৫ সালে। বার্নলির কাছে। গার্দিওলার জন্য এই অভিজ্ঞতা প্রথম। আর সিটির বেশিরভাগ সমর্থকই হয়ত ১৯৯৩ সালের কথা রাখেননি। ক্যারো রোডে নরউইচের কাছে সিটির শেষ হারটা ২৬ বছর আগে।