• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    বাংলাদেশি শেকড় নিয়ে গর্বিত লেস্টারের হামজা

    বাংলাদেশি শেকড় নিয়ে গর্বিত লেস্টারের হামজা    

                                                     পরিবারের সাথে হামজা চৌধুরী

     

    ইউরোপিয়ান ফুটবলের মোটামুটি খোঁজখবর রাখলে লেস্টার সিটির হামজা চৌধুরীকে আপনার চেনার কথা। মায়ের দিক দিয়ে তাঁর বাংলাদেশী শেকড়ের খবরটাও হয়তো আপনার জানা। তবে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হামজা দিয়েছেন আরও চমকে দেওয়া কিছু তথ্য। বাংলাদেশে তিনি নিয়মিত আসতেন ছেলেবেলা থেকে, বাংলা ভাষাও তার মোটামুটি জানা আছে। নিজের বাংলাদেশি পরিচয় নিয়ে যে তিনি গর্বিত, সেটাও জানালেন।

    হামজাকে নিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যমের এমনিতেই আলাদা আগ্রহ আছে। তার বাবা ক্যারিবিয়ান, মা বাংলাদেশি, আফ্রো-এশিয়ান ব্রিটিশ ইংলিশ লিগে মোটামুটি বিরলই। আর হামজার বাহারি আফ্রো চুলও চট করে নজর কাড়ে। তবে এই মৌসুম থেকে নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে আলাদা করে নজর তার ওপর পড়তে বাধ্য করেছেন। লেস্টারের হয়ে এই মৌসুমে এর মধ্যেই সাতটি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন, এই বছর ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব ২১ দলেও খেলেছেন। জাতীয় দলের দরজাও তার সামনে খুলে যেতে পারে যে কোনো সময়। হামজা আপাতত সেই অপেক্ষাতেই আছেন, তবে হৃদয়ে ঠাঁই আছে বাংলাদেশেরও। মা রাফিয়া চৌধুরীর বাড়ি এদেশেরই হবিগঞ্জে, আর সৎ বাবা দেওয়ান মুর্শেদ চৌধুরীও বাংলাদেশি। ছোটবেলায় পরীক্ষা শেষে স্কুলের বড় ছুটি হলেই হামজা চলে আসতেন বাংলাদেশে। এরপর স্কুল শুরু হলে আবার ফিরে যেতেন ইংল্যান্ডে।

    বাংলাদেশ নিয়ে দারুণ কিছু স্মৃতিও আছে এই মিডফিল্ডারের, ‘বাংলাদেশে এলেই আমার মনে হতো, এখানে আমি স্বাধীন। রাত দশটা পর্যন্ত ছেলেপেলেরা বাইরে, ওদের সঙ্গে আমিও ঘুরে বেড়াচ্ছি, নিরাপদ থেকেই যেটা মন চাইছে করতে পারছি।’ তিনি যে বাংলা জানেন, সেটাও সবাইকে বিস্মিত করত, ‘মানুষ তো আমি বাংলা জানি শুনেই অবাক হয়ে যেত। তার ওপর মাথার চুল ছিল বড়, সেজন্য সবাই আরও বেশি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকত। দুই তিন সপ্তাহের জন্য প্রতি বছর আমি বাংলাদেশে যেতাম। সেখানে আমার বেশ কিছু স্মৃতি আছে।’

    মা তার ক্যারিয়ার ও জীবনে কত বড় অবদান রেখেছেন, সেটা হামজা সবসময় বলেন। মায়ের হাত ধরেই তার ফুটবল মাঠে আসা, মায়ের জন্যই তিনি পেশাদার ফুটবলার। পাঁচ বছর বয়সে ছটফটে হামজাকে শান্ত করতে ফুটবল মাঠে নিয়ে এসেছিলেন মা, সেখান থেকেই শুরু সবকিছুর। মায়ের দেশ নিয়ে তাই বাড়তি আবেগ আছে হামজার, ‘দেখুন, আমার সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের একটা অংশ সেখানে। এই ব্যাপারটা আমাকে খুবই আপ্লুত করে। ওখানে যেতে আমার ভালো লাগে বেশ। আর ইংল্যান্ডে থাকলে আপনি একটা বুদবুদের ভেতর থাকবেন, সেখান থেকে বেরুলে আপনার সামনে নতুন একটা দুনিয়া খুলে যাবে। এই ব্যাপারটাও আমি উপভোগ করি।’

    বাংলাদেশের সঙ্গে নিজের ধর্মীয় পরিচয়টাও গুরুত্বপূর্ণ হামজার কাছে। মা মুসলিম হওয়ার সুবাদে ইসলামী ভাবধারায় বড় হয়েছেন। শৈশবে কোরান শিক্ষা করতেন প্রতি মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার। এখন ড্রেসিংরুম থেকে প্রতিবার বের হওয়ার আগেও পড়েন আয়াতুল কুরসি। মায়ের কথামতো নিয়মিত দোয়াও পড়েন। মজা করে বলেছেন, মায়ের শুধু একটা কথাই শোনেন না। মা বারবার চুল কাটতে বলতেন ছোটবেলা থেকে, কিন্তু হামজা একটা না একটা বাহানা করে সেটা এড়িয়ে যেতেন। এখনও আফ্রো চুলটা ধরে রেখেছেন।

    আপাতত সেই চুল বাড়ছে, আর ফুটবলার হিসেবে বড় হচ্ছেন হামজাও!