• বাংলাদেশের ভারত সফর
  • " />

     

    খানাখন্দে ভরা সড়কের পর এবার মসৃণ হবে আল-আমিনের যাত্রা?

    খানাখন্দে ভরা সড়কের পর এবার মসৃণ হবে আল-আমিনের যাত্রা?    

    অক্টোবরের শুরুর দিকে আল-আমিন হোসেনের ভাবনায় ছিল বিপ টেস্ট। দ্বিতীয় দফা ফিটনেসের এই টেস্ট দিয়েছিলেন তিনি ঢাকায়। কদিন পরই শুরু হতে যাওয়া জাতীয় লিগে খেলা নিয়ে সংশয় ছিল তার, সাড়ে তিন বছর আগে ফেলে আসা জাতীয় দলের ক্যারিয়ার নিয়ে হয়তো খুব একটা ভাবছিলেন না। জাতীয় লিগের দুই রাউন্ড পর সেই আল-আমিনই আবার ফিরলেন জাতীয় দলের স্কোয়াডে, প্রায় সাড়ে তিন বছর পর। 

    অভিযুক্ত বোলিং অ্যাকশন, টিম কার্ফ্যু ভঙ্গ করে বিশ্বকাপের মাঝপথে দেশে ফেরা, জাতীয় দলের সেট-আপে যাওয়া-আসা-- আল-আমিনের জাতীয় দলের ক্যারিয়ার যেন খানাখন্দে ভরা রাস্তায় লক্কড়-ঝক্কড় লোকাল বাসে ভ্রমণ। আপাতত আবার প্রধান সড়কে উঠেছে সে বাস, তবে সে যাত্রাটা মসৃণ হবে কিনা প্রশ্ন সেটিই। আল-আমিনও ব্যাপারটা সময়ের ওপরই ছেড়ে দিচ্ছেন। 

    ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলে থাকা আল-আমিন শেষ দুটি ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে খেলেছেন ৮ ম্যাচ, নিয়েছেন ৬ উইকেট। অবশ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৪৫ ম্যাচের ক্যারিয়ারে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেই তুলনামূলক বেশি যুত করেছেন তিনি, ২৫ ম্যাচে ৩৯ উইকেট আছে তার। টেস্ট, ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি-- বাংলাদেশের পেস আক্রমণ ঠিক থিতু হতে পারছে না। আল-আমিন সেটিরই সর্বশেষ সংস্করণ। 

    ক্যারিয়ারটা ছোট হলেও টি-টোয়েন্টিতে আল-আমিনের অভিজ্ঞতা আছে তিনটি বড় টুর্নামেন্টে খেলার। দুইটি ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টির সঙ্গে তিনি খেলেছেন একটি এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টিতে। ২০২০ সালে আরেকটি ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টির আগে ডাক পেয়ে তাই খুব একটা বিস্মিত নন আল-আমিন। বরং বলছেন, তার সেসব অভিজ্ঞতার কথা ভেবেই হয়তো আবারও ডাকা হয়েছে তাকে। 
     


    সাড়ে তিন বছর পর জাতীয় দলের হয়ে খেলার সম্ভাবনা আল-আমিনের সামনে/বিসিবি


    “ব্যাপারটা আসলে, মোস্তাফিজ (মোস্তাফিজুর রহমান) আছে, রুবেল (হোসেন) ভাই অনেকদিন ছিল, (শফিউল ইসলাম) সুহাস এসেছে (আবার)। নতুন যারা আছে- খালেদ (আহমেদ), (আবু জায়েদ) রাহি। দলের পরিকল্পনা অনুযায়ী ম্যানেজমেন্টের চাওয়া থাকে এসব ব্যাপারে। হয়তো আমাদের বিশ্বকাপে খেলার অভিজ্ঞতার কথাই ভেবেছে। যারা এখন নেই, তাদেরও হয়তো সুযোগ দেওয়া হবে, বিশ্বকাপের তো দেরি আছে”, বলছেন আল-আমিন।  

    অন্য ফরম্যাটের তুলনায় টি-টোয়েন্টিতে একটু বেশি ‘সমৃদ্ধ’ তার ক্যারিয়ারে পেছনে আল-আমিন বলছেন সে সময় এ ফরম্যাটে বাংলাদেশের বেশি ম্যাচ খেলার ব্যাপারটিকেই। অবশ্য সঙ্গে মনে করিয়ে দিচ্ছেন চিরন্তন সত্যটি, “(কেউ) ভাল খেললে দলের সঙ্গে থাকবে, না খেললে থাকবে না।” 

    আপাতত ভারত সফরের ব্যাপারটি নিয়েই ভাবছেন তিনি, পেস বোলিং কোচ শার্ল ল্যাঙ্গেভেল্ডটের সঙ্গে কাজও করছেন সে অনুযায়ীই। স্লোয়ার, ইয়র্কার নিয়ে আলাদা করে কাজ করছেন। তবে স্বল্প সময়ের প্রস্তুতি ক্যাম্পে এসবের স্কিলের উন্নতির দিকে না তাকিয়ে তিনি ভাবছেন পরিকল্পনা ও সেসবের বাস্তবায়ন নিয়েই। 

    “দেখুন, স্কিল তো একেক জনের একেক রকম। এখন পরিকল্পনা থাকে, সে অনুযায়ী কাজ করতে হয়। পরিকল্পনা কোচ দেবেন, সেটা করে দেখানো আমার দায়িত্ব। ‘এক্সিকিউশন’ ভাল হলেই বোলিং ভাল হবে। দুটিরই সমন্বয় থাকতে হবে। সে এখন তার পরিকল্পনা দিচ্ছে, আমি কোন পরিকল্পনায় খেলেছি-- সেসব শেয়ার করছি দুজন দুজনের সঙ্গে। মাঠের আকার, উইকেটের ধরন অনুযায়ী হয়তো পরিকল্পনা বদলে যাবে, কিন্তু বাস্তবায়নের ব্যাপারটি তো একই হবে। আমার মূল দায়িত্ব কিন্তু ওই বাস্তবায়নই।” 

    অবশ্য নামটা যখন আল-আমিন, তখন মাঠের ভেতরের পরিকল্পনা-বাস্তবায়নের সঙ্গে আসে তার মাঠের বাইরের ‘ইমেজটাও’। ডানহাতি এই পেসার বলছেন, গত সাড়ে তিন বছর ধরে সেসব নিয়েও কাজ করেছেন। এবং এসবের ফল দেখা যাবে সামনেই, “সাড়ে তিন বছর আগে ব্যাপার যেটি ছিল- ‘ব্যাড ইমেজ’ বলেন, শৃঙ্খলার ঘাটতি বা পারফরম্যান্স বলেন- এসব কারণেই দলের বাইরে ছিলাম। দলের বাইরে থাকলে নিজের কী সমস্যা, কোনটা নিয়ে বেশি কাজ করা উচিৎ- এসব নিয়ে কাজ করা যায়। সাড়ে তিন বছরে অনেক কিছু শেখার চেষ্টা করেছি, ক্রিকেটের বাইরে যে ভুলগুলি হয়েছে, সেগুলো যাতে ভবিষ্যতে না হয়, সে চেষ্টা করব। চলার পথ যতো মসৃণ হবে, দলের সঙ্গে যতোদিন থাকব, ততোদিন দেখবেন (আপনারাই বিবেচনা করে)। এখন তো আমি বলতে পারব না।”

    আল-আমিনের এবারের যাত্রাটা কি সেই খানাখন্দে ভরা সড়কে ফিরে যাবে, নাকি চলবে মসৃণ সড়কেই?