• বাংলাদেশের ভারত সফর
  • " />

     

    নেট সেশন : গোলাপি রোশনাইয়ে কাটবে বাংলাদেশের আঁধার?

    নেট সেশন : গোলাপি রোশনাইয়ে কাটবে বাংলাদেশের আঁধার?    

    আইসিসি ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ
    ভারত-বাংলাদেশ

    কবে, কখন
    ২২-২৬ নভেম্বর, ২০১৯ 
    বাংলাদেশ সময় দুপুর ১.৩০ (১৩৩০)


    কিছু প্রতিযোগিতা আছে, যেগুলোকে ‘উৎসব’ নাম দেওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা একটা অংশ, বাকি আয়োজন থাকে দিনভর। তবে সেই উৎসবে আসেন কিন্তু মূলত প্রতিযোগিরাই, তাদেরকে ঘিরেই যতো আয়োজন। ভারত-বাংলাদেশ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টটি ‘উৎসব’-এর আবরণে সেই পুরোনো পরীক্ষাই নয় কি? এ উৎসবের নাম- গোলাপি বল ও দিবা-রাত্রির টেস্ট। আর পরীক্ষা- ১-০তে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশের ভারত সফরটা একটু আত্মবিশ্বাস নিয়ে শেষ করা। 

    ২০০০ সালের নভেম্বরে ঢাকায় বাংলাদেশের প্রথম টেস্টে প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। সৌরভ গাঙ্গুলিরও টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ম্যাচ ছিল সেটি। ১৯ বছর পর আরেক নভেম্বরে কলকাতায় আরেকটি প্রথম-এর সাক্ষী হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত, এবার দুই দলেরই হচ্ছে একই 'প্রথম'-এর অভিজ্ঞতা। ২০১৫ সালে দিবা-রাত্রির টেস্ট শুরু হওয়ার প্রায় চার বছর পর এর স্বাদ নিতে যাচ্ছে দুই দল। এর আগে পৃথকভাবে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের কাছে দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলার প্রস্তাব পেলেও ফিরিয়ে দিয়েছিল যথাক্রমে ভারত ও বাংলাদেশ। 

    অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের পর পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে- দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলে ফেলেছে নবীন দুই দল আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ড ছাড়া সবাই। দুই প্রতিবেশী- ভারত ও বাংলাদেশ সে উচ্ছ্বাসে ভাসছে বেশ সময় নিয়েই। 

    বিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর গাঙ্গুলির প্রথম ‘বড়’ সিদ্ধান্ত ছিল এই দিবা-রাত্রির টেস্ট আয়োজন। তাতে কমতি রাখছে না তার আরেক সংস্থা- ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল। এমনকি আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও। 


    আরও পড়ুন- গোলাপি বল ও দিবা-রাত্রির টেস্টের ব্যবচ্ছেদ : 'চিরায়ত' টেস্টের সঙ্গে পার্থক্য কতখানি?


    তবে ইতিহাস, আয়োজন- এসবের ভীড়ে কি ভুলতে বসেছেন সিরিজের প্রেক্ষাপট? ইন্দোরে ভারতের পেস আক্রমণের সঙ্গে মায়াঙ্ক আগারওয়ালের ব্যাটে পিষ্ট বাংলাদেশের রীতিমতো ডুবেছে আঁধারে। 

    দুই দলের কারোরই ‘গোলাপি বলে টেস্ট’ অভিজ্ঞতা না থাকলেও প্রথম শ্রেণিতে কিছু অভিজ্ঞতা আছে চেতেশ্বর পুজারা, আগারওয়াল, রবিন্দ্র জাদেজাদের। বাংলাদেশ টেস্ট স্কোয়াডের সেখানে ভরসা শুধু অনুশীলনই। 

    তবে ইন্দোরে নতুন বলে ভঙ্গুর টপ অর্ডার, মিডল অর্ডারে দৃঢ়তার অভাব, কিংবা বাড়তি ব্যাটসম্যান খেলিয়েও বড় স্কোরের দেখা না পাওয়া- বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে সমস্যার খেরোখাতা যেন শেষ হওয়ার নয়। বোলিংয়েও নিকষ আঁধার, আবু জায়েদ রাহি সেখানে টিমটিম করে জ্বলতে থাকা এক প্রদীপ।

    কলকাতার গোলাপি রোশনাইয়ে বাংলাদেশ সেই আঁধারেই থাকবে, নাকি একটু জ্বলে উঠবে- সব উৎসব ছাপিয়ে প্রশ্ন হতে পারে সেটি। 


    রঙ্গমঞ্চ
    ইডেন গার্ডেনস, কলকাতা

    ১৯৯০ সালে একটি ওয়ানডের পর ২০১৬ ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টিতে দুটি ম্যাচ- ভারতের অন্যতম বিখ্যাত এই ভেন্যুতে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতার ভাঁড়ার। ভারতও দুই বছর পর এখানে খেলছে টেস্ট। এমনিতে বাংলাদেশের মতো পশ্চিমবঙ্গেও এখন শীত নেমেছে প্রায়, বৃষ্টি ছাপিয়ে সেখানে বাগড়া বাঁধানোর সম্ভাবনা বেশি তাই শিশিরের। তার ওপর দিবা-রাত্রির বলে শিশির রাখতে পারে বেশ বড় ভূমিকা। উইকেটে ঘাসের উপস্থিতি থাকবে, দিনের পরের অর্ধে কৃত্রিম আলো, গোলাপি বল আর শিশির মিলিয়ে অন্যরকম এক কন্ডিশন হাজির হবে তাই। উইকেটেও থাকবে ঘাসের ছোঁয়া। 

    দিবা-রাত্রির টেস্টের পরিসংখ্যান বলে, প্রথম ও চতুর্থ ইনিংসের চেয়ে ব্যাটিং কঠিন দ্বিতীয় ও তৃতীয় ইনিংসে। টসের চেয়েও তাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াতে পারে কোন সেশনে কোন দল ব্যাটিং বা বোলিং করছে- সেটিই। 


    যাদের ওপর চোখ

    মুমিনুল হক

    দেশ ও দেশের বাইরে- মুমিনুল যেন দুই জায়গায় দুই রকম। ইন্দোরে প্রথম ইনিংসে ভাল শুরু করেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। তবে ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পচেফস্ট্রুমে ৭৭ রানের পর বিদেশের মাটিতে ১৩ ইনিংসে মুমিনুলের সর্বোচ্চ ইন্দোরে করা ওই ৩৭ রানই। ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের একটু স্থিতীশীলতার অনেকাংশই শুরুর দিকে নির্ভর করছে তার ওপর। অধিনায়ক পারবেন, এগিয়ে আসতে? 


    বিরাট কোহলি

    এক ইনিংস ব্যাটিং করেছেন ইন্দোরে, করতে পারেননি কোনও রান। তাতে দলের পারফরম্যান্সে কোনও প্রভাব পড়েনি, তবে কোহলি বলেই ব্যাপারটা একটু অন্যরকম। গাঙ্গুলি প্রস্তাব দেওয়ার পর দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলতে ভারত অধিনায়ক নাকি রাজি হয়েছিলেন ‘তিন সেকেন্ড’-এর ভেতর। নিশ্চয়ই মুখিয়ে আছেন নতুন এই চ্যালেঞ্জটা নিতে। 

    সম্ভাব্য একাদশ

    মোসাদ্দেক হোসেন টেস্ট সিরিজের আগেই দেশে ফিরেছিলেন ব্যক্তিগত কারণে। কলকাতা টেস্ট থেকে ছিটকে গেছেন অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা সাইফ হাসানও, এ দুজনের কারও পরিবর্তেই ডাকা হয়নি কাউকে। ইন্দোর টেস্টের একাদশের বাইরে এ দুজনকে বাদ দিলে নেই কোনও বাড়তি ব্যাটসম্যান! ম্যাচের আগে অনুশীলনে কোনও ব্যাটসম্যান চোট পেলে তাই অপশন নেই বাংলাদেশের। এমনকি আইসিসির নতুন নিয়ম ‘কনকাশন-বদলি’র হিসাব অনুযায়ীও কোনও ব্যাটসম্যানের জায়গায় কাউকে নিতে পারবে না বাংলাদেশ। 

    এর বাইরে কলকাতায় বাড়তি একজন পেসার খেলাতে পারে বাংলাদেশ, সেটি হতে পারেন আল-আমিন হোসেন বা মোস্তাফিজুর রহমান। আর বাড়তি পেসার খেলানো হলে সরে যেতে হতে পারে মেহেদি হাসান মিরাজ বা মোহাম্মদ মিঠুনের কাউকে। 

    বাংলাদেশ 
    সাদমান ইসলাম, ইমরুল কায়েস, মুমিনুল হক (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, (মোহাম্মদ মিঠুন), লিটন দাস (উইকেটকিপার), মেহেদি হাসান মিরাজ/মোস্তাফিজুর রহমান/আল-আমিন হোসেন, তাইজুল ইসলাম, আবু জায়েদ, এবাদত হোসেন। 

    সবাই ফিট থাকলে ইন্দোরের কম্বিনেশন ভাঙার সম্ভাবনা কম ভারতের। 

    ভারত
    রোহিত শর্মা, মায়াঙ্ক আগারওয়াল, চেতেশ্বর পুজারা, বিরাট কোহলি (অধিনায়ক), আজিঙ্কা রাহানে, রবিন্দ্র জাদেজা, ঋদ্ধিমান সাহা (উইকেটকিপার), রবি আশ্বিন, ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদব, মোহাম্মদ শামি

    সংখ্যার খেলা 

    • এখন পর্যন্ত কোনও ম্যাচ ড্র হয়নি দিবা-রাত্রির টেস্টে। 
    • দিবা-রাত্রির টেস্টে এখন পর্যন্ত পেসারদের ২৫৭ উইকেটের বিপরীতে স্পিনাররা নিয়েছেন ৯৫টি উইকেট। 
    • গোলাপি বলের টেস্টে এখন পর্যন্ত সেঞ্চুরি হয়েছে ১৬টি। 
       

    তারা বলেন 

    “আমার যদ্দুর মনে আছে, দিবা-রাত্রির টেস্টে এর আগে স্পিনারদের খুব বেশি ভূমিকা ছিল না। পেসারদেরই দাপট ছিল। তারপরও আমি মনে করি স্পিনারদের বড় ভূমিকা থাকতে পারে। দিনের প্রথম দুই সেশনে স্পিন অনেক গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। বেশির ভাগ টেস্টেই স্পিনারদের কখনো না কখনো দরকার হয়। আর শুরুর জন্য এসজি বল সবাই উপভোগই করে। এখন পর্যন্ত স্পিনারদের বল করা বেশ ভালো একটা ব্যাপার।”


    ড্যানিয়েল ভেট্টোরি, স্পিন বোলিং কোচ, বাংলাদেশ 


    “আমার মতে, শুধু এই ফরম্যাটেই (দিবা-রাত্রির) টেস্ট ক্রিকেট খেলা উচিৎ নয়। তাহলে সকালের সেশনের স্নায়ুচাপটা থাকবে না। হ্যাঁ, আপনি টেস্ট ক্রিকেটে রোমাঞ্চ আনতে পারেন। তবে শুধুই লোকের বিনোদনের জন্য টেস্ট ক্রিকেট হওয়া উচিৎ নয়।” 

    বিরাট কোহলি, ভারত অধিনায়ক