• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    একপেশে ম্যাচে ডি ব্রুইনে ধ্বংস আর্সেনাল

    একপেশে ম্যাচে ডি ব্রুইনে ধ্বংস আর্সেনাল    

    ফুলটাইম
    আর্সেনাল ০-৩ ম্যানচেস্টার সিটি


    যোগ করা সময়ে এমিরেটস ততোক্ষণে আধ-ফাঁকা। ম্যানচেস্টার সিটির দাপটে আর্সেনাল কোনঠাসা হয়ে ছিল পুরো ম্যাচ। ম্যাচের ফল কী হবে সেটাও নির্ধারণ হয়ে গিয়েছিল প্রথমার্ধেই। আর্সেনাল সমর্থকদের মাঠে বসে থাকারও কারণ ছিল না। শেষ বাঁশির পর ফ্রেডি ইউনবার্গ কিছু একটা বললেন পেপ গার্দিওলাকে। কী বললেন সেটা অবশ্য জানার উপায় নেই। তবে আর্সেনাল সমর্থকেরা ততোক্ষণে জেনে গেছেন অস্থির মৌসুমে দ্রুত স্বস্তি খুঁজে পাওয়া হচ্ছে না তাদের। আর গার্দিওলার দল দারুণ এক জয়েও কতোখানি তৃপ্তি পাবে সেটা নিয়েও সংশয় আছে। এই জয়ের পরও তো লিভারপুলের সঙ্গে তাদের পয়েন্ট পার্থক্য ১৪! তবে ডার্বিতে হারের পর আবারও সিটির আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে দারুণ কার্যকরী হওয়ার কথা এমিরেটেসের এই জয়।

    প্রিমিয়ার লিগে আগের চার দেখাতেই ম্যানচেস্টার সিটির কাছে হেরেছিল আর্সেনাল। এবার সংখ্যাটা বেড়ে হলো পাঁচ। এমিরেটসে একপেশে ম্যাচে আরও একচেটিয়া প্রথমার্ধেই ৩ গোল দিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছিল ম্যান সিটি। দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য আর কোনো গোল হজম করতে হয়নি আর্সেনালকে। হারের ব্যবধানটাও তাই শেষ পর্যন্ত অস্বস্তিকর হয়নি গানারদের।



    আর্সেনালকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছিলেন আসলে কেভিন ডি ব্রুইন। জোড়া গোল করেছেন তিনি, সিটির অন্য গোলেও আছে তার অবদান। বেলজিয়ান মিডফিল্ডার হ্যাটট্রিকও পূরণ করে ফেলতে পারতেন প্রথমার্ধেই। কিন্তু আর্সেনাল গোলরক্ষক বার্নড লেনোর দুর্দান্ত এক সেভে আর তৃতীয় গোলটি পাওয়া হয়নি ডি ব্রুইনের। ডি ব্রুইন ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন ম্যাচের একেবারে শুরু থেকে। ৮৯ সেকেন্ডের ভেতর গোল করে দলকে এগিয়ে নিয়েছেন তিনি। গ্যাব্রিয়েল হেসুসের কাটব্যাক বক্সের ভেতর রিসিভ করার পরও অনেক কাজ বাকি ছিল। ডি ব্রুইন সহজ পথে এগিয়েছেন, সোজাসুজি গোলে শট করে। গোলের ১৪ গজ দূর থেকে যতখানি দরকার ছিল ডি ব্রুইন ততোখানিই নিখুঁত ছিলেন।

    দুইদলের ম্যাচ কেমন হবে সেটা আগে থেকেই ধারণা করা যাচ্ছিল। তবে সিটির সাম্প্রতিক ফর্ম যাদের দ্বন্দ্বে ফেলে দিচ্ছিল, তাদেরও আর কোনো সংশয় থাকল না শুরুর ওই গোলের পর। ১৫ মিনিটে আবার গোল। এবার নিজেদের অর্ধ থেকেই দ্রুত গতিতে আক্রমণে উঠল সিটি। রদ্রি, ফার্নান্দিনহো হয়ে এরপর আর্সেনালের অ্যাটাকিং থার্ডে বল পেলেন ডি ব্রুইন। বামদিক থেকে তার করা স্কয়ার পাস দূরের পোস্ট থেকে এক পায়ে ঠেলে দিয়ে ব্যবধান বাড়িয়ে নিলেন রাহিম স্টার্লিং।

    অসহায় আর্সেনালের হারের ক্ষণ গোণা শুরু হয়ে গিয়েছিল তখন থেকেই। দুঃস্বপ্ন আরেকটু বেড়েছে ৪০ মিনিটে ডি ব্রুইন যখন দ্বিতীয় গোলটি করেছেন। প্রায় ৪০ গজ দূর থেকে মাতেও গুন্দোজিকে ছিটকে ফেলে আর্সেনালের বক্সের সামনে গিয়ে থামলেন ডি ব্রুইন। এর পর বাঁকানো নিচু শটে করে ফেললেন আরও একটি গোল। এর ৩ মিনিট পরই ২৫ গজ দূর থেকে দেখার মতো আরেকটি গোল পেতে পেতেও ডি ব্রুইন পাননি লেনোর দুর্দান্ত এক সেভের কারণে।

    বিরতির পর ম্যাচের বাকি ছিল না তেমন কিছুই। শুরুটা অবশ্য ভালোই করেছিল দুইদল। আর্সেনাল দুইটি সুযোগ পেয়েছিল- তবে একবারও গোলেই শট করা হয়নি তাদের। ৫০ মিনিটের দিকে হেসুসও ভালো জায়গা থেকে মেরেছেন বাইরে দিয়ে। এর পর আস্তে আস্তে গতিও কমে আসে খেলার।

    বের্নার্দো সিলভা একাদশে ছিলেন না। ৫৬ মিনিটের পর সিলভা, ৭০ মিনিটের পর রিয়াদ মাহরেজ আর শেষদিকে ইনজুরি থেকে ফেরা জিনচেঙ্কোকে সুযোগ দিয়ে গার্দিওলা ঝালিয়ে দেখেছেন বাকিদের। অন্যদিকে অ্যালেক্সান্ডার লাকাজেত আরও একবার ইউনবার্গের অধীনে পুরো ম্যাচ কাটিয়েছেন সাইডবেঞ্চে বসেই। মেসুত ওজিলকে উঠিয়ে নিতে গিয়ে অবশ্য কিছুটা বিপাকেই পড়েছিলেন ইউনবার্গ। ম্যাচের আগে চীনের মুসলিমদের নিয়ে ওজিলের মন্তব্যের কারণে সে দেশে এই ম্যাচে সম্প্রচারই করা হয়নি। ওজিল অবশ্য ম্যাচে শিরোনাম কাড়ার মতোও কিছু করেননি। তবে বদলি হয়ে মাঠ ছাড়ার সময় রাগটাও আড়াল করেননি।

    আর্সেনালের ব্রাজিলিয়ান তরুণ স্ট্রাইকার মার্তিনেলি অবশ্য ভালোই শুরু করেছিলেন। কিন্তু স্থায়ী হয়নি সেটাও। পিয়ের এমেরিক অবামেয়াং কিক অফ সহ প্রথমার্ধে বলে টাচ করেছেন মাত্র ৮ বার, আর সিটির বক্সে একবারও না। দ্বিতীয়ার্ধে সেটা বদলেছে, কিন্তু আর্সেনালের ভাগ্য বদলাতে যা দরকার ছিল তার কিছুই হয়নি। সেসব হতে হলে অবশ্য নাটকীয় পরিবর্তন ঘটাতে হত আর্সেনালকে। আপাতত আর্সেনালের এই নড়বড়ে রক্ষণ আর অকার্যকর মিডফিল্ডের উন্নতি না হলে আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের এমন দিন দেখতে হবে আরও।