• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    দুই গোলে এগিয়ে থেকেও উলভসের থাবায় সিটির হার

    দুই গোলে এগিয়ে থেকেও উলভসের থাবায় সিটির হার    

    ফুল-টাইম

    উলভস ৩-২ ম্যানচেস্টার সিটি


    ম্যানচেস্টার সিটির মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়ামে শেষ ১০ মিনিটে আদামা ট্রায়োরের জোড়া গোলে জয় ছিনিয়ে এনেছিল উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্স। পেপ গার্দিওলার দল যখন উলভসের মাঠ মলিনিউতে ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল, তখন হয়তো জয়ের আশা করছিলেন না উলভস ফুটবলাররাই। কিন্তু দুই গোলে এগিয়ে থাকা সিটির জন্য কাল হয়ে দাঁড়াল ১০জন নিয়ে প্রায় পুরো ম্যাচ খেলা। লাল কার্ড, 'ভিএআর' বিতর্ক, পেনাল্টি, অন্তিম মুহূর্তের গোল- মলিনিউতে অভাব হয়নি কিছুরই। নিজেদের মাঠে রাউল হিমেনেজ এবং ম্যাট ডোহার্টির শেষদিকের গোলে ৩-২ ব্যবধানে সিটিকে হারিয়ে দিয়েছে নুনোর দল। প্রথম দল হিসেবে এই মৌসুমে সিটির বিপক্ষে 'ডবল' পূরণ করল উলভস।

    মলিনিউতে ম্যাচের শুরুতেই চাপে পড়ে যায় সিটি। ১১ মিনিটে উলভস অধিনায়ক কনোর কোডির লম্বা পাস বাড়ান দিয়েগো ইয়োটার দিকে। পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড বল নিয়ন্ত্রণে আনার আগে ডিবক্স থেকে বেরিয়ে এসে তাকে ফাউল করে বসেন সিটি গোলরক্ষক এডারসন মোরায়েস। ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষককে সরাসরি লাল কার্ড দেখান মার্টিন অ্যাটকিনসন। এডারসনের বদলে ক্লদিও ব্রাভোকে নামাতে স্ট্রাইকার সার্জিও আগুয়েরোকে উঠিয়ে নেন গার্দিওলা। ইনজুরির কাটিয়ে মাসখানেক পর দলে ফেরা 'কুন'-কে তাই উঠে যেতে হয় মিনিট দশেক পরই।

    ম্যাচের শুরুতেই এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনায় অবশ্য ভেঙে পড়েনি সিটি। উল্টো উলভসের মাঠে লিড নেয় তারাই। ২১ মিনিটে বল দখলের লড়াইয়ে রিয়াদ মাহরেজকে ডিবক্সে ফেলে দেন উলভস ডিফেন্ডার লিয়ান্দ্রো ডেনডঙ্কার। প্রথমে পেনাল্টির বাঁশি না দিলেও 'ভিএআর'-এ সিদ্ধান্ত বদলান রেফারি। কিন্তু ভিডিও রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়েও আছে ধোঁয়াশা। রিপ্লেতে দেখা যায়, মাহরেজকে ইচ্ছাকৃতভাবে ফেলে দেননি বেলজিয়ান ডিফেন্ডার। উলভস ফুটবলারদের অসন্তোষ বা সমর্থকদের দুয়ো- কোনোকিছুতেই বদলায়নি রেফারির সিদ্ধান্ত। ১২ গজ থেকে আগুয়েরোর অনুপস্থিতিতে এগিয়ে আসেন রহিম স্টার্লিং। কিন্তু তাকে ফিরিয়ে দেন উলভস গোলরক্ষক রুই প্যাট্রিসিও।

     

     

    এতক্ষণ রেফারির ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে থাকলেও কিছুক্ষণ বাদে অ্যাটকিনসনের সিদ্ধান্তে রীতিমত ফুঁসে ওঠে মলিনিউ। পেনাল্টির আগে ডিবক্সে উলভসের দুজন ফুটবলার ঢুকে পড়ায় পেনাল্টির আবার নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন রেফারি। এবারও একই দিকে শট নেন স্টার্লিং, এবারও ফিরিয়ে দেন প্যাট্রিসিও। কিন্তু ফিরতি বল গোলের একেবারে সামনে থেকে আলতো টোকায় দলকে লিড এনে দেন ইংলিশ ফরোয়ার্ড। পিছিয়ে পড়লেও সিটিকে ছেড়ে কথা বলেনি উলভস। ট্রায়োরে-হিমেনেজ-ইয়োটার ত্রিফলা সামলাতে রীতিমত হিমশিম খেতে হয়েছে সিটির ডিফেন্ডারদের।

    তবে গোলমুখে ফিনিশিংয়ের দূর্বলতায় প্রথমার্ধে আর সমতায় ফেরা হয়নি নুনোর দলের। প্রথমার্ধে সমতায় ফেরার একাধিক সুযোগ হাতছাড়া করার চড়া মাশুলই দিতে হয়েছে স্বাগতিকদের। ৫০ মিনিটে কেভিন ডি ব্রুইনের থ্রু পাসে প্যাট্রিসিওকে একা পেয়ে যান স্টার্লিং। এগিয়ে আসা পর্তুগিজ গোলরক্ষককে চিপ করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন তিনি। প্রথমার্ধে রেফারির ওপর উলভস সমর্থকদের অসন্তোষ আরও বেড়ে যায় কিছুক্ষণ বাদে। কাইল ওয়াকারের চ্যালেঞ্জে ডিবক্সে পড়ে যান ইয়োটা। পেনাল্টির বাঁশি দেননি রেফারি, সিদ্ধান্ত বদলাননি ভিডিও রেফারিও। তবে কিছুক্ষণ বাদে সেই অসন্তোষের কালো মেঘ সরে উলভস সমর্থকদের ম্যাচে ফেরার স্বপ্ন দেখান ট্রায়োরে।

     

     

    ৫৫ মিনিটে প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে তার মাপা শট পরাস্ত করে ব্রাভোকে। এই গার্দিওলার অধীনেই বার্সেলোনায় ফুটবলে হাতেখড়ি হয়েছিল ট্রায়োরের, এই মৌসুমে তার দলের বিপক্ষে ২ ম্যাচে করলেন ৩ গোল। দ্বিতীয়ার্ধে সময় যত গড়িয়েছে, উলভসের আক্রমণের ধার বেড়েছে ততটাই। ৬৮ মিনিটে সমতায় ফেরার সুযোগ পেয়েছিলেন হিমেনেজ, কিন্তু দক্ষহাতে তাকে ফিরিয়ে দেন ব্রাভো। তবে মিনিট দশেক পর মেক্সিকান স্ট্রাইকারকে আর ফেরাতে পারেননি চিলিয়ান ব্রাভো।

    ডিবক্সের বাঁ-প্রান্তে সিটি লেফটব্যাক বেনজামিন মেন্ডির পা থেকে বল কেড়ে নেন ট্রায়োরে। তার ক্রস থেকে দলকে সমতায় ফেরান হিমেনেজ। সমতায় ফেরার পর এবার জয়ের স্বপ্নও দেখতে থাকে নুনোর দল। ৮৯ মিনিটে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করেন ডোহার্টি। হিমেনেজের সাথে দারুণ এক 'ওয়ান টু' করে সিটি ডিবক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত এক শটে দলকে প্রথমবারের মত লিড এনে দেন তিনি। ১০জন নিয়ে ম্যাচের শেষদিকে আর ফিরতে পারেনি গার্দিওলার দল। লিগে নিজেদের ৫ম হারে টেবিলের ৩-এই থাকল সিটি, ১৯ ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ৩৮ পয়েন্ট। দুর্দান্ত এক জয়ে টটেহাম হটস্পার, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে টপকে ৩০ পয়েন্ট নিয়ে ৫-এ উঠে আসল উলভস।