মুশফিকদের স্তব্ধ করে রাসেল ও রাজশাহীর গর্জন
রাজশাহী রয়্যালস ১৭০/৪, ২০ ওভার
খুলনা টাইগার্স ১৪৯/৮, ২০ ওভার
রাজশাহী ২১ রানে জয়ী ও বঙ্গবন্ধু বিপিএল ২০১৯ চ্যাম্পিয়ন
আন্দ্রে রাসেলের উদযাপনটাই বলে দিচ্ছিল সব। মুশফিকের পর শহিদুল ইসলামের স্টাম্প উড়িয়ে নিলেন তিনি। খুলনা ততক্ষণে আইসিইউতে চলে গেছে, আর রাজশাহী পেয়ে গেছে শিরোপার সুবাস। কোয়ালিফায়ারে হারের প্রতিশোধটা নিতে সবচেয়ে বড় মঞ্চটাই বেছে নিল রাসেল অ্যান্ড কো., হয়ে গেল বিপিএলের চ্যাম্পিয়ন।
টসে জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার সময় বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন মুশফিক, তবে শুরুতে তার পেসাররা তেমন সুইং আদায় করে নিতে পারেননি। অবশ্য বিকল্প উপায়েও তারা ছিলেন সফল, ওপেনিং জুটি দ্রুতই ভেঙেছিলেন তারা। ইরফান শুক্কুরের গুরুত্বপূর্ণ ফিফটির পর নওয়াজ-রাসেলের ঝড়ে ১৭০ রান পর্যন্ত যাওয়া রাজশাহী ইনিংসের দ্বিতীয় ধাপে পেয়ে গিয়েছিল মোমেন্টাম।
রানতাড়ায় শুরুতেই চাপে পড়া খুলনাকে উদ্ধারের চেষ্টা করেছিলেন শামসুর রহমান ও রাইলি রুশো, তবে মোক্ষম সময়ে ব্রেকথ্রু পেয়ে খুলনার ওপর চড়াও হয়েছে রাজশাহী। মুশফিক বা ফ্রাইলিঙ্ক, সে চাপ থেকে খুলনাকে উদ্ধার করতে পারেননি কেউই।
সাতবারের চেষ্টায় ফাইনালে এসেও তাই খালি ফিরতে হচ্ছে মুশফিককে। অবশ্য সেসব কিছু ভাবতে বয়েই গেছে রাসেল বা রাজশাহীর!
শহিদুল বনাম লিটন
১ম পাওয়ারপ্লের পর প্রথম ওভারেই শহিদুল ইসলাম এসেছিলেন বোলিংয়ে। উইকেটের গতির ধরন বুঝে শুরু করলেন দারুণ কৌশলি বোলিং। ব্যাক অফ দ্য হ্যান্ড স্লোয়ার, সিমের ওপর হাত চালিয়ে বলের পেস কমে আনা- ধুঁকতে থাকা লিটন দাস ক্রমেই মরিয়ে হয়ে উঠছিলেন। অবশ্য একটা স্লোয়ার বুঝে থেমে থেকে পুলের মতো শটে একটা চার মারলেন লিটন, তবে পরের ওভারের প্রথম বলেই প্রতিশোধটা নিয়ে নিলেন শহিদুল। লিটন এবার টাইমিং করেছিলেন ভাল, তবে সেটিই শেষ পর্যন্ত কাল হয়েছে তার। লিটনের পর রাসেলের উইকেটও প্রায় পেয়ে গিয়েছিলেন শহিদুল, তবে ডিপ এক্সট্রা কাভারে শান্ত ক্যাচ ফেলায় সেটি হয়নি। শহিদুল বোলিং শেষ করেছেন ৪ ওভারে ২৩ রানে ১ উইকেট নিয়ে।
রাজশাহীর প্রথম ত্রাতা শুক্কুর
দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে তার ব্যাটিংয়ের ধরন নিয়ে হয়েছিল আলোচনা, তবে এদিন মিরপুরের উইকেট সবার আগে সবচেয়ে ভাল বুঝলেন তিনিই। জোরের ওপর খেলতে গিয়ে আফিফ-লিটনরা ফিরে গেলেও তিনি ছিলেন, উইকেটের গতি বুঝে করেছেন দারুণ ব্যাটিং। তানভীরকে দুই চারে শুরু করেছিলেন, এরপর মেরেছেন আরও দুইটি করে চার ও ছয়- ছয় দুটিই মেরেছেন মিরাজকে। দলে আসলে উইকেটকিপিংয়ের দায়িত্ব পালন করেন, তবে এদিন তার ফিফটি ব্যাটিংয়েও রাজশাহীর জন্য হয়ে উঠলো দারুণ গুরুত্বপূর্ণ।
রাসেলের ক্যাচ মিস করবেন না, নওয়াজকে ভুলে যাবেন না
৭ রানে রাসেল ক্যাচ দিয়েছিলেন, শান্ত সেটি ধরতে পারেননি ডিপ এক্সট্রা কাভারে। রাসেল এরপর ৮ বলে করেছেন ১৮, আমিরকে ১১৫ মিটারের একটি ছয়সহ। তবে খুলনার জন্য মূল ক্ষতিটা করেছেন মোহাম্মদ নওয়াজ। ৩ ওভারে ১২ রান দেওয়া রবি ফ্রাইলিঙ্কের শেষ ওভারে তুলেছেন ২১ রান, শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ২০ বলে ৪১ রানে। কোয়ালিফায়ারের রাসেল ঝড়ে শেষ পর্যন্ত তার গুরুত্বপূর্ণ ক্যামিও হারিয়ে গেছে, তবে এদিন নওয়াজই কেড়ে নিলেন আলো। আর খুলনা ডুবল (আপাতত) আঁধারে।
বড় উপলক্ষ্যে ম্লান শান্ত-মিরাজ
দুজনের ওপেনিং জুটি একটা চমকের মতো ছিল খুলনা টাইগার্সের জন্য এ টুর্নামেন্টে। তবে সবচেয়ে বড় ম্যাচে ব্যর্থ হলেন দুজনই। আবারও রাজশাহীকে ব্রেকথ্রু এনে দিলেন ইরফান, অবশ্য শান্তর সে উইকেটে লিটনের অবদানও কম নয়। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ডানদিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ ক্যাচ নিয়েছেন লিটন। মিরাজ চাপ কমাতে রাহিকে ক্রিজ ছেড়ে বেড়িয়ে এসে খেলতে গিয়ে মালিককে দিয়েছেন লোপ্পা ক্যাচ। ১১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে দারুণ চাপেই পড়েছিল খুলনা।
শামসুর-রুশোতে উদ্ধার, তবে…
১৮ রানে রুশোর মোটামুটি সহজ ক্যাচ ছেড়েছিলেন রাহি, ৩০ রানে দাঁড়িয়ে রান-আউট হতে গিয়েও বেঁচে গিয়েছিলেন শামসুর। দুজন মিলে টানছিলেন খুলনাকে, শুরুতে একটু নড়বড়ে হলেও রুশো মানিয়ে নিয়েছিলেন বেশ। আর শামসুর ছিলেন অসাধারণ- বাউন্ডারি হিটিং, স্ট্রাইক রোটেট করা- সবকিছুতেই। তবে অসময়ে ফিরে গেলেন দুজনই। নওয়াজকে প্রায় সীমানাছাড়া করেই ফেলেছিলেন রুশো, তবে রাসেলকে টপকাতে পারেননি, তার উইকেটে ভেঙেছে ৭৪ রানের জুটি।
… হাজির রাব্বি!
রুশো ফিরলেও শামসুর ছিলেন আরও কিছুক্ষণ, নওয়াজকে চার মেরে পেয়ে গেলেন গুরুত্বপূর্ণ ফিফটিও। রাব্বির এক ওভারে আবার বদলে গেল চিত্রটা। চড়াও হতে গিয়ে কাভারে ধরা পড়লেন শামসুর, আফিফের হাতে। দুই বল পর নাজিবুল্লাহ জাদরানকে এলবিডব্লিউ দিলেন আম্পায়ার, তবে রিভিউয়ে ধরা পড়লো ইনসাইড-এজ। অবশ্য দ্বিতীয় জীবনে নাজিবুল্লাহ টিকলেন না, পরের বলেই দ্বিধায় ভুগে তুললেন ক্যাচ। ৫ রান, ২ উইকেট- রাব্বির ওভারে আবারও মোমেন্টাম চলে এলো রাজশাহীর দিকে।
অধিনায়ক বনাম অধিনায়ক : শেষ দ্বৈরথ
আগেরদিন রাসেল যা করেছিলেন, এদিন মুশফিককে করতে হতো কাছাকাছি কিছু। যখন নেমেছিলেন, ৫৫ বলে প্রয়োজন ছিল ৮৬ রান। খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে একটু সময় নিলেন মুশফিক, রাব্বির এক লো-ফুলটসে ছয় মেরে যেন মোমেন্টামটা আবার নিজের দিকে আনার চেষ্টা করেছিলেন। এরপর ইরফানের বলে টানা দুই চার, ম্যাচ তখনও ঝুলছিল। রাজশাহী ও চ্যাম্পিয়ন ট্রফির মাঝে বাধা হয়ে ছিলেন যেন ওই মুশফিকই। রাসেল এরপর করলেন পারফেক্ট ইয়র্কার, যেটির জবাব দিতে পারলেন না মুশফিক। শেষ পর্যন্ত সেই ছবিটাই হয়ে থাকলো এই ফাইনালের প্রতীকি।