মোস্তাফিজ-লিটনদের কাছ থেকে খালি হাতেই ফিরছে জিম্বাবুয়ে
জিম্বাবুয়ে ১১৯/৭, ২০ ওভার (টেইলর ৫৯, আরভিন ২৯, আল-আমিন ২/২২, মোস্তাফিজ ২/২৫)
বাংলাদেশ ১২০/১, ১৫.৫ ওভার (লিটন ৬০*, নাঈম ৩৩)
বাংলাদেশ ৯ উইকেটে জয়ী ও সিরিজ ২-০তে জয়ী
জিম্বাবুয়ের জন্য ম্যাচটা ছিল দুঃস্বপ্নের এক সফরের শেষটা একটু স্বস্তি নিয়ে শেষ করার। আর বাংলাদেশের জন্য ছিল স্কোয়াডের বাইরে থাকা ক্রিকেটারদের সুযোগ করে দেওয়ার। তামিম ইকবালকে বিশ্রাম দেওয়া হলো, বিপ্লবের বদলে হাসান মাহমুদকে করানো হলো অভিষেক, আর শফিউলের বদলে এলেন আল-আমিন।
মিরপুরের অপেক্ষাকৃত ধীরগতির ও নীচু বাউন্সের উইকেটে জিম্বাবুয়েকে বাংলাদেশ আটকে দিল ১১৯ রানেই, ব্রেন্ডন টেইলরের ৪৮ বলে ৫৯ রানের ইনিংসের পরও। এমনিতেই বাংলাদেশের টপ অর্ডার আছে দুর্দান্ত ফর্মে, তার ওপর এই রানের লক্ষ্য তাদেরকে চাপে ফেলতে পারলো না কোনোমতেই। লিটন দাসের আরেকটি ফিফটিতে ভর করে বাংলাদেশ জিম্বাবুয়েকে টপকে গেছে ৯ উইকেট ও ২৫ বল বাকি থাকতেই। বাংলাদেশ থেকে জিম্বাবুয়ে ফিরছে খালি হাতেই। ২০০৬ ও ২০১৪ সালের পর আবারও একাধিক ফরম্যাটের সিরিজে বাংলাদেশে এসে জয়শূন্য থাকলো জিম্বাবুয়ে।
আগেরদিন টসে জিতেও ফিল্ডিং নিয়েছিলেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক শন উইলিয়ামস, এদিন আর মাহমুদউল্লাহ তার হাতে কোনও অপশন রাখলেন না আগে ব্যাটিং করা ছাড়া। অবশ্য শুরুতেই ক্ষ্যাপাটে হতে গিয়ে ফেঁসে গেলেন তিনাশে কামুনহুকামওয়ে, অফস্টাম্পের বাইরে গিয়ে আল-আমিন হোসেনের শর্ট অফ আ লেংথের বলটায় পুল-হুক-স্কুপের সমন্বয়ে অদ্ভুত এক শট খেলতে গিয়ে ধরা পড়লেন মুশফিকুর রহিমের হাতে।
অবশেষে রানের দেখা পেলেন টেইলর, তবে অসময়ে যেন ফর্মটা খুঁজে পেলেন তিনি, এক ক্রেইগ আরভিন ছাড়া কেউই যে তেমন সঙ্গ দিতে পারলেন না। এ দুজনের দ্বিতীয় উইকেটে ৫৭ রানের জুটির পরও তাই জিম্বাবুয়ে আটকে গেছে অল্পর ভেতরই।
অভিষিক্ত হাসান মাহমুদ অবশ্য সফল হতে পারতেন প্রথম ওভারেই, তবে ব্রেন্ডন টেইলরের স্কুপ করতে গিয়ে তোলা ক্যাচটা ফেলে দিয়েছেন আল-আমিন। এদিন আর উইকেট পাওয়া হয়নি হাসানের, ৪ ওভারে ২৫ রান দিয়ে বোলিং শেষ করেছেন তিনি।
জিম্বাবুয়ের সবচেয়ে সফল জুটি ভাঙার আরেকটি সুযোগ প্রায় পেয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ, মাহেদির বলে ক্রেইগ আরভিনকে এলবিডব্লিউ দিয়েছিলেন আম্পায়ার, তবে বল লেগস্টাম্পের বাইরে দিয়ে যাওয়ায় বেঁচে গেছেন তিনি।
এ দুজনের জুটি ভেঙেছেন ‘ম্যান উইথ দ্য গোল্ডেন আর্ম’ আফিফ, নিজের প্রথম বলেই। তাকে হোয়্যাক করতে গিয়ে লিডিং-এজে লং-অফে সৌম্যর হাতে ধরা পড়েছেন আরভিন। উইলিয়ামস এসে ডট বলে চাপ সামাল দিতে পারেননি, ক্রিজ ছেড়ে বেড়িয়ে এসে মাহেদির নীচু হওয়া বল মিস করে হয়েছেন স্টাম্পড। এক বল পরই ফিরতে পারতেন সিকান্দার রাজাও, তবে লং-অনে সৌম্য যে ক্যাচটা মিস করেছেন, সেটিকে শুধু লোপ্পা নয়, বলা যায় ‘সুপার লোপ্পা’।
মোস্তাফিজ ও সাইফের বলে দুই চারের মাশুল আদায় করতে পেরেছেন রাজা, সাইফের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে। পরের ওভারে মুতুমবামি সহজ ক্যাচ দিয়েছেন আল-আমিনের বলে। একদিকে টেইলর সঙ্গীহীন হয়ে পড়ছিলেন, হাসানকে একটা চার মেরে একলা চলো-রে নীতি অনুসরণ করতে চাইলেন।
পরের ওভারে মোস্তাফিজ করলেন জোড়া আঘাত, প্রথমে মুতোমবদজি, পরে ওয়েসলি মাদহেভেরে দিলেন ক্যাচ। এ দুইয়ের স্যান্ডউইচে রিভার্স স্কুপে চার মেরে সফরের প্রথম ফিফটিটা করলেন টেইলর। শেষ ওভারে সাইফকে আরেকটি রিভার্স ‘চেক-স্কুপ’-এর মতো শটে আরেকটি চার মেরেছেন, তবে ওই পর্যন্তই।
জিম্বাবুয়ে শুরুতে বেশ আঁটসাঁট বোলিংয়েরই ইঙ্গিত দিয়েছিল, প্রথম দুই ওভারে হয়েছিল মাত্র একটি বাউন্ডারি। তবে শীঘ্রই আলগা বল পেতে লাগলেন দুই বাংলাদেশ ওপেনার, কাজেও লাগালেন সেসব সুযোগ। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সবাইকেই আনলেন উইলিয়ামস, তবে ব্রেকথ্রুর দেখা তারা শীঘ্রই পেলেন না।
শুরুতে কাট শটে নাঈম ছিলেন বেশ স্বচ্ছন্দ্য, তবে হুট করেই যেন একটু ছন্দপতন হলো তার। টাইমিং করতে পারছিলেন না, অফস্টাম্পের বাইরের বলে একটু ভুগছিলেন। স্ট্রাইক বদলানোর দিকে অবশ্য মনযোগ দিলেন এরপর, ওপাশে লিটনকে সুযোগ করে দিলেন তার গেমটা খেলার। দুজন মিলে ১০ উইকেটের জয়কেও নাগালের মধ্যে এনে দিয়েছিলেন, তবে ক্রিস এমপোফুকে ‘প্রিয়’ পুল শট করতে গিয়ে ধরা পড়লেন নাঈম মিডউইকেটে, ৭৭ রানের ওপেনিং জুটির পর।
অন্যপ্রান্তে লিটন অবশ্য তার ফর্মটাই টেনে আনলেন। বেশ কিছুক্ষণ তার ব্যাটিংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল প্রায় শতভাগ। এদিন কাট শটে দুর্দান্ত ছিলেন তিনি। সিকান্দার রাজাকে এমন দুই কাটে ৪৯-এর পর ফিফটিতে গেলেন সিঙ্গেল নিয়ে, ৩৫ বলে। সৌম্যকে নিয়ে এরপর বাকি দূরত্বটা অনায়াসেই পার করেছেন লিটন।