এবার 'ডিআরএস' নাটকে হ্যাজলউডের জরিমানা
আগের টেস্টটিতেই মাঠের আম্পায়ার হিসেবে ভুল ‘নো’ বল ডেকে আদতে খেলার মোড়টাই বদলে দিয়েছিলেন। সপ্তাহ না ঘুরতেই ক্রাইস্টচার্চ টেস্টেও নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়ে বসেছেন ইংলিশ আম্পায়ার রিচার্ড ইলিংওয়ার্থ। এ যাত্রায় অবশ্য তিনি ‘নেপথ্য নায়ক’। আজ চতুর্থ দিনের খেলা চলাকালে টিভি আম্পায়ার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার একটি এলবিডব্লু আবেদন প্রযুক্তির ব্যবহারে খারিজ করে দেন ইলিংওয়ার্থ। কিন্তু মাঠের বড় পর্দায় দেখানো তাঁর ‘রিভিউ’র ধরণটা মোটেও পছন্দ হয় নি অজি ক্রিকেটারদের। কিন্তু টিভি আম্পায়ারকে যেহেতু তৎক্ষণাৎ সামনে পাওয়া যায় নি, স্মিথ-হ্যাজলউডরা রাগটা ঝেড়ে দেন মাঠের আম্পায়ার র্যানমোর মার্টিনেজের উপর। দিন শেষে সে জন্য জরিমানাও গুণতে হয়েছে পেসার হ্যাজলউডকে।
ঘটনাটা চতুর্থ দিনের খেলায় মধ্যাহ্ন বিরতির আগে শেষ ওভারে। প্রথম বলে রাউন্ড দ্য উইকেটে গিয়ে হ্যাজলউডের করা ইনসুইং ইয়র্কারটি ঠেকাতে গিয়ে মাটিতেই পড়ে যান নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যান কেন উইলিয়ামসন। ওদিকে এলবিডব্লুর জন্য সমস্বরে আবেদন করেন বোলারসহ অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডাররা। কিন্তু সে আবেদনে সাড়া দেন নি আম্পায়ার র্যামিরেজ। পুরো সেশনজুড়ে একটিও উইকেট ফেলতে না পারার ক্ষোভ-হতাশা ঠিকরে বেরোচ্ছিল অজি ক্রিকেটারদের চোখে-মুখে। ক্ষিপ্ত অধিনায়ক স্মিথ হাতের ব্যবহারে নির্দিষ্ট ইশারার সাথে বেশ জোরে শব্দ করেই আম্পায়ারকে সিদ্ধান্তটি রিভিউ করতে বলেন।
আরও পড়ুনঃ 'গণদাবী'র মুখে আউট
রিভিউতে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছিল বল সরাসরিই উইলিয়ামসনের পায়ে আঘাত হানে। কিন্তু এরপর হটস্পট ব্যবহারে ব্যাটের নীচের কোণায় হালকা ‘স্পট’ খুঁজে পেয়ে টিভি আম্পায়ার সিদ্ধান্তে আসেন যে উইলিয়ামসনের প্যাডে আঘাত হানার আগে তাঁর ব্যাট স্পর্শ করেছে বল।
ফলশ্রুতিতে মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই বহাল রেখে দেন ইলিংওয়ার্থ। তবে আপাতদৃষ্টে হটস্পটের সিদ্ধান্তটা খানিক তড়িঘড়ি করেই দেয়া হয়েছে বলে মনে হচ্ছিল। ‘রিভিউ’র সিদ্ধান্ত আসার পর ক্ষোভটুকু আর ধরে রাখতে পারেন নি স্মিথ-হ্যাজলউডরা। দু’জনকেই মার্টিনেজের দিকে এগিয়ে গিয়ে অশোভন কিছু বলতে শোনা যায়।
দিন শেষে আম্পায়ারের সাথে অমন আচরণের জন্য ম্যাচ ফি’র পনেরো শতাংশ জরিমানা করা হয় হ্যাজলউডকে।
মাঠে উত্তরসূরিদের এমন আচরণে মিশ্র প্রতিক্রিয়াই জানাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেকরা। গত বছর অবসরে যাওয়া ওপেনার ক্রিস রজার্স এ ধরণের ব্যবহার গ্রহণযোগ্য নয় বলেই মনে করছেন, “ব্যাপারটা দুর্ভাগ্যজনক। ছেলেরা জয়ের জন্য এতোটাই মরিয়া হয়ে উঠেছে যে এ ধরণের পরিস্থিতিতে সংযত আচরণ করতে ভুলে যাচ্ছে।”
সাবেক অজি পেসার ডেমিয়েন ফ্লেমিং অবশ্য হ্যাজলউডের পক্ষ নিচ্ছেন, “চতুর্থ দিনের খেলা চলছে। জয়ের জন্য তাঁরা মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে অথচ সে অনুযায়ী ফল পাচ্ছে না...একজন ফাস্ট বোলারের এই সময়টায় কেমন লাগে আমি তো বুঝি। যেভাবে চাইছেন সেভাবে কিছুই হচ্ছে না, আপনার মেজাজ যাচ্ছে চড়ে...সে চড়া মেজাজ প্রশমিত জন্য মাঝেমধ্যে আপনি একটু-আধটু সীমালঙ্ঘন করবেনই।”
তবে অধিনায়ক হিসেবে স্টিভ স্মিথের অমন রুদ্রমূর্তি ধারণটা অশোভন বলেই ধারণা ফ্লেমিংয়ের, “ও এখনও ছোট। আশা করি সময়ের সাথে সে ব্যাপারগুলো শিখে যাবে। ওকে বুঝতে হবে যে, মাঠে আর দশজন খেলোয়াড় যা করবে সে-ও তাই করতে পারে না। এ ধরণের পরিস্থিতিতে অন্যদেরকে সঠিক নির্দেশনা দেওয়াটাই অধিনায়ক হিসেবে তাঁর কাজ।”
রজার্সও মনে করেন ‘ছোট’ স্মিথ বয়সের সাথে এ ধরণের পরিস্থিতি আরও ভালোভাবে সামাল দেয়া শিখবে, “নেতা হিসেবে ওকে আরও সতর্ক হতে হবে। কিন্তু এটাও বুঝতে হবে যে ওর নেতৃত্বের বয়সটা খুব বেশী দিনের নয়। আজকের ঘটনা থেকেই সে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে এ ধরণের পরিস্থিতি আরও ভালোভাবে সামাল দেবে আশা করি। তাছাড়া বেশ কিছুদিন ধরে ওরা টানা ক্রিকেটের মধ্যে আছে। কিছুটা তো ক্লান্তিও ভর করেছে নিশ্চয়ই। জেতার জন্য তাঁর মরিয়া ভাবটুকু লক্ষ্যনীয়। এই প্যাশনটাকে অবশ্যই আমরা ভালোবাসি এবং উৎসাহিত করি।”
অজিদের আরেক সাবেক পেসার মিচেল জনসন অবশ্য এ ধরণের আলাপচারিতা দর্শকদের শোনানোরই পক্ষপাতী নন, “স্ট্যাম্পের মাইক্রোফোনগুলো বন্ধ করে দেয়ার সময় হয়েছে। হতাশা থেকে আমরা সবাই কখনও না কখনও কটু কথা বলেছি।”
জনসনের সাথে একমত ফ্লেমিংও, “আপনি বোলারদের আবেদন কিংবা চিৎকারগুলো বড়োজোর শুনতে চাইতে পারেন, মাঠের আলাপচারিতা নয়।”
তবে ভিন্নমত পোষণ করছেন রজার্স, “কেন দর্শকরা এসব শুনবে না? এখন সবাই খেলা দেখার পাশাপাশি খেলার অংশও হতে চায়। মাঠের আলাপচারিতা খেলা দেখার আনন্দে বাড়তি মাত্রাই যোগ করে।”
কিন্তু নানাবিধ শাস্তির বেড়াজালে বোলারদের আবেগের প্রকাশে বাঁধ দেয়ার চেষ্টা মেনে নিতে পারছেন না মিচেল স্টার্ক। মিচেল জনসনের দাবীর সাথে একমত পোষণ করে নিজের হতাশাটুকুও গোপন করছেন না এ সময়ের অন্যতম সেরা অজি পেসার, “হতাশা, ক্ষোভ কিংবা আনন্দ প্রকাশেও এতোটুকু মাত্রা ছাড়ানোর সুযোগ নেই। এটার কোনো মানে হয় না।”