• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    কিক অফের আগে : ক্লপ-গার্দিওলার ধাঁধা মেলানোর ম্যাচ

    কিক অফের আগে : ক্লপ-গার্দিওলার ধাঁধা মেলানোর ম্যাচ    

    কবে, কখন
    ম্যানচেস্টার সিটি-লিভারপুল
    ৮ অক্টোবর, রাত ১০.৩০
    ইতিহাস স্টেডিয়াম


    ঠিক এক বছর আগে এই নভেম্বর মাসেই অ্যানফিল্ডে মুখোমুখি হয়েছি লিভারপুল ও ম্যানচেস্টার সিটি। সেবার সিটিকে হারিয়ে মৌসুমের অর্ধেক পার না হতেই প্রিমিয়ার লিগ শিরোপার পথে অনেকটুকু পথও এগিয়ে গিয়েছিল লিভারপুল। একবছর পর মাসটা নভেম্বরই, তবে এবার তেমন উত্তাপ নেই। শিরোপা এখনও অনেকদূরের পথ। শিরোপার চেয়ে বরং দুই কোচ পেপ গার্দিওলা ও ইউর্গেন ক্লপের নতুন সমস্যাগুলো এই ম্যাচের আগে আলো কাড়ছে বেশি। আসলে জটিলতাগুলো মূল আকর্ষণ নয়, কে আগে সমস্যার সমাধান বের করেন সেটাই ভাগ্য গড়ে দেবে ম্যাচে।

    ম্যান সিটি ইতিহাদে শেষবার লিভাপুলকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু লিভারপুল ততোদিনে প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন। ওই ম্যাচের ফলের কোনো প্রভাবই পড়েনি লিভারপুলের ওপর। বরং নতুন মৌসুমে আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরেছিল ইউর্গেন ক্লপের দল। যদিও এবার আর সেই পুরোনো দাপট নেই। দলের চোট সমস্যা, অধারাবাহিক কয়েকটি পারফরম্যান্স আর দল বাছাইয়ে আরও অনেকগুলো অপশন যোগ হওয়ায় ক্লপকে চিন্তা-ভাবনার মাত্রা প্রসারিত করতে হয়েছে আরও। গার্দিওলার ম্যান সিটির অবস্থা অবশ্য আগের মতোই। গেল মৌসুমের বিবর্ণ সিটি এবারও দিশা খুঁজে পায়নি এখন পর্যন্ত।

    সিটি এখনও বল পজেশন ধরে রেখে খেলা নিয়ন্ত্রণ করছে বটে, কিন্তু আক্রমণে সেই ধার নেই সিটির। গ্যাব্রিয়েল জেসুস চোট থেকে ফিরে সবশেষ ডিনামো কিয়েভেয়ের বিপক্ষে বদলি হয়ে ফিরেছিলেন। সার্জিও আগুয়েরো কবে ফিরবেন সেটা এখনও অজানা। এই ফাঁকে ফেরান তোরেসকে মূল ফরোয়ার্ডের ভূমিকায় খেলিয়ে ফল মিলেছে গার্দিওলার। কিন্তু হারানোও সেই ছন্দ যেন কিছুতেই ফিরে আসছে না।

    সিটির এই মৌসুমের খেলায় আরেকটা ব্যাপার স্পষ্ট। শুরুটা বেশ ভালোই করে সিটি, পুরোদস্তর আক্রমণাত্মক খেলে গোল পেয়ে গেলে এরপর ঢিলেঢালা ফুটবলে ফিরে যায় সিটি। প্রতিপক্ষকে দুর্বল করে দেওয়া থাকে তখন তাদের লক্ষ্য। পুরো ৯০ মিনিট একই তালে খেলা যাওয়ার কৌশল যে এই সিটি এখনও রপ্ত করতে পারেনি তা পরিষ্কার। কিন্তু লিভারপুলের প্রেসিংয়ের বিপরীতে এই ধারায় খেলা চালানোর সুফল, কুফল দুটোই আছে। 

    আয়মেরিক লাপোর্তে এবার সেন্টব্যাক পজিশনে বেশিরভাগ সময় জুটি বাধছেন রুবেন ডিয়াজের সঙ্গে। এই জুটি গত কয়েক ম্যাচে ধারাবাহিকভাবে ভালোই করেছেন। কিন্তু আসলেই তারা ভরসা যোগানোর মতো কি সে পরীক্ষার লিভারপুলের বিপক্ষেই দিতে হবে তাদের। আক্রমণভাগে ঘুরে-ফিরে মাহরেজ, স্টার্লিং, বের্নার্দো সিলভারাও গোল করছেন, কিন্তু দলের ওপর চাপ কমাতে পারতেন যারা সেই জেসুস আর আগুয়েরোকে এই মৌসুমে একসঙ্গে গার্দিওলা এখনও সেভাবে পাননি। গার্দিওলার সিটি তাই এখনও আলো-আঁধারে ধাঁধা মেলাতে ব্যস্ত। সব প্রতিযোগিতায় শেষ ম্যাচে সিটি হারেনি, কিন্তু গার্দিওলার বিচারটা আরও একবার হবে তার নেমেসিস ক্লপের বিপক্ষেই। ক্যারিয়ারে ক্লপের কাছেই সবচেয়ে বেশি হেরেছেন গার্দিওলা। প্রতিপক্ষ লিভারপুল হলেই, আরও সতর্ক হয়ে যান সিটি কোচ। লিভারপুলের ওপর নিজের ধরন চাপিয়ে না দিয়ে বরং ক্লপকে 'সেকেন্ড গেস' করার চেষ্টা নিয়মিত ঘটনা বানিয়ে ফেলেছেন গার্দিওলা। এবারও কি ছক কষবেন সিটি কোচ?

    ক্লপ কী ভাবছেন সেটা আগে থেকে অনুমান করে ফেলা এবারও কঠিন ধাঁধা গার্দিওলার জন্য। ক্লপের নিজেরও তো ভাবনার অন্ত নেই। ভার্জিল ভ্যান ডাইককে ছাড়া দিন একেবারে মন্দ যাচ্ছে না লিভারপুলের। বিশেষ করে অ্যালিসন গোলবারের নিচে ফিরে পর স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এনেছেন। কিন্তু ক্লপ ঝামেলায় পড়েছেন আক্রমণভাগ নিয়ে। সেটা অবশ্য 'ঝামেলা' ঠিক নয়,  'মধুর সমস্যা'। শব্দটা ক্লিশে কিন্তু ক্লপের সমস্যা তো আর ক্লিশে নয়!

    ডিয়েগো জোতা লিভারপুলের হয়ে শেষ ৪ ম্যাচে গোল করেছেন ৬টি। সবশেষ চ্যাম্পিয়নস লিগে আটালান্টার বিপক্ষে জোতা করেছেন হ্যাটট্রিক। এর আগ পর্যন্তও রবার্তো ফিরমিনোকে নিয়ে তেমন কোনো প্রশ্ন শুনতে হয়নি ক্লপকে। কিন্তু এবার জোতাকে বসিয়ে রাখবেন কী করে? ফিরমিনো যেখানে জাল খুঁযে পেতে হন্যে হয়ে ঘুরছেন, জোতা সেখানে গোল করে যাচ্ছেন নিয়মিতই। ফিরমিনোর বদলে জোতা কেন থাকবেন না একাদশে?

    ২০১৭ সাল থেকে মোহামেদ সালাহ, রবার্তো ফিরমিনো, সাদিও মানের জুটি সিটির বিপক্ষে সব প্রতিযোগিতায় গোল করেছে মোট ১০টি। তার চেয়েও বড় কথা ক্লপ যে পদ্ধতি অনুসরণ করেন তাতে ফিরমিনো মূল স্ট্রাইকার হিসেবে শুরু করলেও তিনি আসলে গোলের সামনে থাকেনই কম সময়। মিডফিল্ডে নেমে গিয়ে লিভারপুলকে বলের দখল এনে দেওয়া, প্রতিপক্ষকে প্রেস করা আর আক্রমণভাগে নিউমেরিকাল অ্যাডভান্টেজ এনে দেওয়া ফিরমোর প্রধান কাজের অংশ। ফিরমিনো উইং ধরেও খেলেন প্রায় সময়। আর তাতে গোল করার গুরু দায়িত্বটা স্বাভাবিকভাবেই সালাহ আর মানের ওপর বর্তায়। এই পুরো সিস্টেমের ইঞ্জিন বলা যায় ফিরমিনোকে। গেল কয়েক মৌসুমে ফিরমিনো না খেললেই লিভারপুল বারবার রঙ হারিয়েছে। 

    জোতা অন্য ধাঁচের খেলোয়াড়। বল পজেশন ধরে রাখার কাজ ঠিক তার জন্য  নয়। তিনি মূলত কাউন্টার অ্যাটাকে দারুণ কার্যকরী। জোতা বেশিরভাগ সময় লিভারপুলে মাঠের বাম পাশ থেকে খেলেছেন, তখন মানে হয়ে গেছেন মূল ফরোয়ার্ড। আর সালাহ তার রাইট উইং ধরেই এগিয়েছেন। এই পদ্ধতিতে লিভারপুলের আক্রমণও আগের চেয়ে ধারালো মনে হয়েছে। কিন্তু সেটা আবার রক্ষণের দিক দিয়ে লিভারপুলকে ঢিলেঢালা করে দেয়। জোতাকে নিয়ে তাই যত কথাই হোক, সিটির বিপক্ষে ফিরমিনোর ওপরই ভরসা রাখার কথা ক্লপের। কিন্তু এমন পরিস্থিতি কোচদেরও বড় পরীক্ষায় ফেলে দেয়। লিভারপুল কাঙ্ক্ষিত ফল না পেলে, ক্লপ যে সিদ্ধান্তই নেন না কেন অবধারিতভাবে আরও একবার প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে তাকে।

    ম্যাচটা সিটি-লিভারপুল বলেই দুই কোচের নতুন সব সমস্যার সমাধান খুঁজতে পেতে হবে এখানেই। এক ম্যাচে, এক ডাগ আউটে। এই দুইদলের ম্যাচে মাঠের চেয়ে ডাগ আউটের দু ভদ্রলোকের বুদ্ধির খেলাও কম হয় না!
     

    দলের খবর
    ভ্যান ডাইক, থিয়াগো, ফাবিনহো, সার্জিও আগুয়েরো, ফার্নান্দিনহো, মেন্ডিরা থাকলে এই ম্যাচের অনেককিছুই হয়ত বদলে যেতে পারত। তবে দুই দলের আসল শক্তি দেখতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন। তার আগে আপাতত কোচদের শক্তিপরীক্ষা হয়ে যাবে ইতিহাদে। 

    সম্ভাব্য একাদশ
    ম্যান সিটি

    এডারসন, ওয়াকার, ডিয়াজ, লাপোর্তে, ক্যান্সেলো, রদ্রি, ডি ব্রুইন, ফোডেন, মাহরেজ, স্টার্লিং, তোরেস

    লিভারপুল
    অ্যালিসন, অ্যালেক্সান্ডার-আর্নল্ড, মাটিপ, গোমেজ, রবার্টসন, হেন্ডারসন, ওয়াইলান্ডাম, জোনস, সালাহ, মানেম ফিরমিনো 

    প্রেডিকশন
    ম্যান সিটি ১-১ লিভারপুল