• বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা সফর ২০২১
  • " />

     

    দীর্ঘ দিনের পর শ্রীলঙ্কার আশা করুনারত্নে, বাংলাদেশের সুযোগ তৈরির সম্ভাবনা

    দীর্ঘ দিনের পর শ্রীলঙ্কার আশা করুনারত্নে, বাংলাদেশের সুযোগ তৈরির সম্ভাবনা    

    ১ম টেস্ট, পাল্লেকেলে (টস- বাংলাদেশ/ব্যাটিং)
    ৩য় দিন, স্টাম্পস
    বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ৫৪১/৭ ডিক্লে., ১৭৩ ওভার (শান্ত ১৬৩, মুমিনুল ১২৭, তামিম ৯০, মুশফিক ৬৮*, লিটন ৫০, ভিশ্ব ফার্নান্ডো ৪/৯৬, কুমারা ১/৮৮, লাকমাল ১/৮১, ধনঞ্জয়া ১/১৩০)
    শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস ২২৯/৩, ৭৩ ওভার (করুনারত্নে ৮৫*, থিরিমান্নে ৫৮, ডি সিলভা ২৬*, তাসকিন ১/৩৫, তাইজুল ১/৫৬, মিরাজ ১/৬০)
    শ্রীলঙ্কা ৩১২ রানে পিছিয়ে


    পাল্লেকেলেতে দীর্ঘ এক দিন। মাঝে মাঝেই মৃত মনে হওয়া ম্যাচে হুট করেই ছড়িয়েছে উত্তেজনা, রঙ-ও বদলেছে বারবার। প্রথম সেশনে বাংলাদেশের কিছুটা মন্থর ব্যাটিংয়ের পর ইনিংস ঘোষণা, এরপর পেসারদের আশা জাগানো, সেটি আবার মিলিয়ে গিয়ে দৃশ্যপটে হাজির হওয়া স্পিনাররা, সেসব মিলিয়ে পাওয়া ব্রেকথ্রু, রিভিউ নাটক আর শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নের অপরাজিত লড়াকু ৮৫ রানের ইনিংসের পর দিনশেষে ৩১২ রানে পিছিয়ে স্বাগতিকরা। তবে বাংলাদেশ সুযোগ তৈরি করেছে, প্রায় মরা উইকেটেও সেটিই তাদের আশার ব্যাপার। তাসকিন আহমেদ তার ভাল বোলিংয়ের পুরষ্কার পেয়েছেন, ব্রেকথ্রু দিয়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলামও। উইকেট ব্যাটিং-সহায়ক আছে এখনও, তবে টার্নের সঙ্গে আঁটসাঁট বোলিং এখানে হতে পারে কার্যকর। 

    শ্রীলঙ্কা এদিন ব্যাটিং করেছে দুই সেশনের বেশি, আগেরদিন আলোকস্বল্পতায় আগেই খেলা শেষ হয়ে যাওয়ার পর খোয়ানো ওভার পুষিয়ে দিতে খেলা হয়েছে সময়ের হিসেবে প্রায় ৪৫ মিনিট বেশি, তবে সব মিলিয়ে হয়েছে ৯১ ওভার। প্রথম সেশনে উইকেট যায়নি শ্রীলঙ্কার, চা-বিরতির ঠিক আগে ৫৮ রান করা লাহিরু থিরিমান্নেকে এলবিডব্লিউ করেছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। এর আগে থিরিমান্নে একবার তাসকিনের বলে বেঁচেছিলেন রিভিউ নিয়ে, আরেকবার রিভিউ না নিয়ে তাকে আউট করার সুযোগ হাতছাড়া করেছিল বাংলাদেশ। অবশ্য পরেরটির মাশুল খুব বেশিক্ষণ গুণতে হয়নি। ফুললেংথ থেকে ভেতরের দিকে ঢোকা বলে প্লাম্ব হয়েছেন তিনি, আম্পায়ার রুচিরা পালিয়াগুরুগের সিদ্ধান্ত রিভিউ করেও বাঁচেননি থিরিমান্নে। এর আগেই শেষ ৫ ইনিংসে ৪র্থ ফিফটি পেয়েছেন তিনি, সেটি পূর্ণ করেছেন ৯৫ বলে। করুনারত্নের সঙ্গে তার ওপেনিং জুটিতে এসেছিল ১১৪ রান। 

    থিরিমান্নের মতো করে এরপর করুনারত্নকে সঙ্গ দিতে পারেননি ওশাদা ফার্নান্ডো ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, এ দুজনের জুটিতে যথাক্রমে উঠেছিল ৪৩ ও ৩৩ রান। প্রথম সেশনেই আশাজাগানিয়া শুরু করা তাসকিনের ডাউন দ্য লেগের বলে ব্যাট চালিয়ে এজড হয়েছেন ফার্নান্ডো, পেছনে ভাল ক্যাচ নিয়েছেন লিটন দাস। চা-বিরতির পর থেকে বাংলাদেশ বোলারদের ওপর চড়াও হয়েছিলেন করুনারত্নে-ফার্নান্ডো, তবে ড্রিংকস-ব্রেকের ঠিক পরই এসেছিল এ ব্রেকথ্রু। 

    পরের উইকেট নিয়েছেন তাইজুল ইসলাম, যাকে বোলিংয়ে আনতে ২৬তম ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলেন মুমিনুল- তার ওভার দ্য উইকেট থেকে করা বলে ব্যাকফুটে গিয়ে লেংথ মিস করে ইনসাইড-এজে বোল্ড হয়েছেন ম্যাথিউস, আক্রমণাত্মক শুরুর পর তিনি ফিরে গেছেন ৩২ বলে ২৫ রান করে। ম্যাথিউসের আগে থিরিমান্নের উইকেটটা পেতে পারতেন তিনি, ৩৪তম ওভারে ফুললেংথ থেকে টার্ন করা ডেলিভারিটা মিস করে গিয়েছিলেন থিরিমান্নে। বাংলাদেশের আবেদন নাকচ করেছিলেন কুমার ধর্মসেনা, রিভিউও নেননি মুমিনুল। তবে বল ট্র্যাকিং দেখিয়েছে, সেটি হিট করে যেতো লেগস্টাম্প। 

    শেষদিকে রিভিউ-নাটক হয়েছে করুনারত্নকে ঘিরেও। তাইজুলের ৩ বলের ব্যবধানে হয়েছে দুটি রিভিউ- প্রথমটি নিয়েছেন করুনারত্নে, পরেরটি বাংলাদেশ। প্রথমটি বড় টার্নে মিস করে যেত লেগস্টাম্প, আর পরেরটিতে ব্যাটে লেগেছে বলে নাকচ করে দিয়েছিলেন টিভি আম্পায়ার। যদিও পরে রিপ্লেতে দেখানো হয়েছে, বল ব্যাটের আগে লেগেছিল বুটে, সেক্ষেত্রে অবশ্য ইমপ্যাক্ট বাইরে হতো, কিন্তু টিভি আম্পায়ার সেটি চেক না করলে প্রশ্ন থেকেই যায়। এছাড়া ধনঞ্জয়া ডি সিলভার একটা ক্যাচ এবাদতের বলে গিয়েছিল ঠিক আগের ডেলিভারিতে সেখানে থাকা ফিল্ডারের শূন্যস্থান দিয়ে, করুনারত্নে প্রায় ফিরতি ক্যাচ তুলতে ধরেছিলেন তাইজুলের কাছে, এবাদতের বলে আরেকটা পুল শটে ক্যাচ উঠলেও শর্ট লেগে থাকা সাইফের পিঠে গিয়েই লেগেছে সেটি। এসব মিলিয়ে বা বাদ দিয়ে করুনারত্নে টিকে আছেন ঠিকই। ১২২ বলে ফিফটি করেছেন, এখন পর্যন্ত খেলেছেন ২১১ বল, মেরেছেন ৮টি চার। 

    এর আগে তৃতীয় দিন সকালে দেড়ঘন্টা ব্যাটিং করে নিজেদের ইতিহাসে চতুর্থবারের মতো প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ, এদিন ১৮ ওভার ব্যাটিং করে ৬৭ রান তোলার পর। লিটন দাস বেশ দ্রুতগতিতে ফিফটি করেছেন, ফিফটি করে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন মুশফিকও। তবে মুশফিক করেছেন মন্থর ব্যাটিং, তৃতীয় নতুন বল নেওয়ার পর উইকেট থেকে একটু সুবিধা আদায় করতে পেরেছিলেন ভিশ্ব ফার্নান্ডো, এদিন তিনি পেয়েছেন আরও ২ উইকেট, একটি পেয়েছেন সুরাঙ্গা লাকমাল। 

    আগেরদিন ২৫ রানে অপরাজিত লিটন এদিন ফিফটি পূর্ণ করেছেন ৬৫ বলে, এদিন ২৬ বলে ২৫ রান করেছেন তিনি। তবে ফিফটির ঠিক পরের বলেই ফার্নান্ডোর বেশ বাইরের বলে জায়গা থেকে স্ল্যাশ করতে গিয়ে গালিতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন তিনি। ক্যারিয়ারে এটি লিটনের ৮ম ফিফটি, সেঞ্চুরি ছাড়া বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের মাঝে এখন সবচেয়ে বেশি ফিফটি তার। 

    লিটনের আগেই ফিফটি করেছিলেন মুশফিক, ১২০ বলে। সে সময় প্রথম ১৩ বলে ৭ রান করেছিলেন তিনি, তবে এরপর থেকে আবারও ঢুকে গেছেন খোলসের ভেতর। এদিন সব মিলিয়ে ৪৯ বলে তিনি করেছেন ২৫ রান। অবশ্য ইনিংসের এ সময়ে তামিম ইকবালকে টপকে টেস্টে আবারও বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রানের মালিক হয়ে গেছেন তিনি। 

    লিটনের পর মিরাজ আউট হয়েছেন নাটকীয় ভঙিমায়- লাকমালের অফস্টাম্পের বাইরের তিন বলে ব্যাট চালিয়েছেন তিনি- প্রথমবার তিনি রিভিউ নিয়ে বেঁচেছেন, পরেরবার শ্রীলঙ্কার রিভিউ ব্যর্থ হয়েছে, শেষবার কেউই রিভিউ করেনি, ফিরেছেন তিনিও- ১৫ বলে ৩ রান করে। আর তাইজুলকে ফিরিয়ে ভাল বোলিংয়ের পুরষ্কার পেয়েছিলেন ভিশ্ব ফার্নান্ডো।