খেলাঘরে স্তব্ধ আবাহনী, 'হারা ম্যাচ' জিতল ব্রাদার্স, দোলেশ্বরের শেষের নায়ক রেজা
খেলাঘর-আবাহনী, বিকেএসপি ৩
খেলাঘর সমাজকল্যাণ সমিতি ১৬৪/৬, ২০ ওভার (ইমতিয়াজ ৬৬, মিরাজ ৩৩, রাফসান ১৮, মোসাদ্দেক ২/২৪, আরাফাত সানি ২/২৫, সাইফউদ্দিন ১/২৭, তানজিম ১/৩৩)
আবাহনী লিমিটেড ১৫৬/৫, ২০ ওভার (নাইম ৪৯, শান্ত ৪৯, আফিফ ২২*, মোসাদ্দেক ২১, রনি ২/২৩, খালেদ ২/৩২, রাফসান ১/৫)
খেলাঘর ৯ রানে জয়ী
ইমতিয়াজ হোসেনের ৪৬ বলে ৬৬ রানের ইনিংসে ভর করে ১৬৪ পর্যন্ত যাওয়া খেলাঘর আটকে দিয়েছে আবাহনীকে। রানতাড়ায় নাইম শেখ ও নাজমুল হোসেন শান্তর দুটি ৪৯ রানের ইনিংসে ঠিক পথে থাকলেও শেষদিকে মোসাদ্দেক হোসেনের ১৯ বলে ২১ ও আফিফের ১৮ বলে ২২ রানের অপরাজিত ইনিংস যথেষ্ট হয়নি আবাহনীর জন্য।
টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নামা খেলাঘরকে ভাল শুরু এনে দিয়েছিল ইমতিয়াজের সঙ্গে রাফসান আল মাহমুদ ও মেহেদি হাসান মিরাজের প্রথম দুই জুটি- যে দুটিতে এসেছে যথাক্রমে ৪২ ও ৬২ রান। ১২ বলে ১৮ করে রাফসান ফিরলেও মিরাজ করেছেন ২৫ বলে ৩৩। জহুরুল ইসলাম অবশ্য টেকেননি বেশিক্ষণ, তবে ওপেনিংয়ে নামা ইমতিয়াজ আউট হয়েছেন ১৬তম ওভারে গিয়ে, মোসাদ্দেকের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ১৪৩.৪৭ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসে তিনি মেরেছেন ৬টি চার ও ৩টি ছয়। অবশ্য শেষ ২৬ বলে ৩০ রানের বেশি তুলতে পারেনি খেলাঘর, তবে লড়াই করার মতো স্কোর পেয়ে গেছে তারা তাতেই।
রানতাড়ায় ১২ রানেই ২ উইকেট হারিয়েছিল আবাহনী, মুনিম শাহরিয়ার ৩ বলে ০ ও অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ফিরেছিলেন ৮ বলে ৫ রান করে- দুজনই শিকার রনি চৌধুরির। এরপর তৃতীয় উইকেটে নাইম ও শান্তর ৮৫ রানের জুটি অনেকখানি এগিয়ে দিয়েছিল আবাহনীকে, তবে দুজনই আউট হয়েছেন অসময়ে। প্রথম ৩৩ বলে ৭ চার ও ১ ছয়ে ৪৯ করা শান্ত ক্যাচ দিয়েছেন রাফসানের বলে, আর ৪২ বলে ৪৯ করা নাইম হয়েছেন খালেদের বলে বোল্ড। নাইমের উইকেটের পর শেষ ৩৩ বলে ৫২ রান প্রয়োজন ছিল আবাহনীর, তবে মিরাজ-খালেদ-নোমান চৌধুরিরা সেটি নিতে দেননি তাদের।
মৌসুমে এটি প্রথম হার আবাহনীর, আর প্রথম দুই ম্যাচ হারা খেলাঘর জিতল টানা দুই ম্যাচ।
****
শাইনপকুর-দোলেশ্বর, মিরপুর
শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব ১৬২/৭, ২০ ওভার (অঙ্কন ৪৪, সাব্বির ৩৬, রবি ৩৪, শামিম ২/২১, রাজা ২/২২, কামরুল ১/১৮, রেজা ১/৪৮)
প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব ১৬৩/৬, ১৯.৪ ওভার (সাইফ ৫০, ফজলে ৪১, রেজা ২৭*, শামিম ২২, মোহর ২/২৯, হাসান ১/১৪, তানভির ১/৩৫)
দোলেশ্বর ৪ উইকেটে জয়ী
১৬ বলে ২২ রান করে তুলে মারতে গিয়ে যখন ক্যাচ দিলেন শামিম পাটোয়ারি, তখনও প্রাইম দোলেশ্বরের প্রয়োজন ছিল ৮ বলে ১৮ রান। তাদের অন্যতম ভরসা ছিলেন শামিম- এর আগে বোলিংয়েও যিনি নিয়েছেন ২১ রানে ১ উইকেট- তার আউট হয়ে ফেরার পথে ফরহাদ রেজা এগিয়ে গিয়ে একটু সান্ত্বনা দিলেন। অবশ্য এরপর রেজা যা করলেন, তাতে শামিমকে আদতে তিনি যেন দিয়েছিলেন ভরসাই!
১৯তম ওভারের শেষ বলে মোহর শেখকে ছয় মারলেন রেজা, শেষ ওভারের প্রথম বলে শরিফুল্লাহ সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক দিলে সুমনকে মারলেন ছয়-চার, এরপরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে মাতলেন উল্লাসে। বোলিংয়ে ৪ ওভারে গুণেছিলেন ৪৮ রান, অথচ শেষে গিয়ে দোলেশ্বরের নায়ক ওই রেজাই! ১১ বলে ২৭ রানের অপরাজিত ইনিংসে ম্যাচসেরাও হয়েছেন তিনি।
আগে ব্যাটিং করা শাইনপুকুর ১৬২ পর্যন্ত গিয়েছিল টপ অর্ডারে তানজিদ হাসান তামিমের ১৬ বলে ২৫, সাব্বিরের ১৯ বলে ৩৬ রানের সঙ্গে রবিউল ইসলাম রবির ৩৬ বলে ৩৪ রানের পর মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের ৩২ বলে ৪৪ রানের ইনিংসে ভর করে। অবশ্য প্রথম ১০ ওভারেই ৯৮ রান তোলা শাইনপুকুর মোমেন্টামটা ঠিক ধরে রাখতে পারেনি, মাঝের ওভারগুলিতে শামিম ও রেজাউর রহমান রাজার আঁটসাঁট বোলিংয়েই। তবে শেষ ৩ ওভারে ৩০ রান তুলে ১৬০ পেরিয়েছিল তারা।
রানতাড়ায় পাওয়ারপ্লেতেই দুই ওপেনার ইমরান উজ জামান ও তৌফিক খানকে হারিয়েছিল দোলেশ্বর। মিডল অর্ডারে এরপর সাইফ হাসান ও শামিমের সঙ্গে ফজলে মাহমুদ রাব্বির ৫৫ ও ৪৪ রানের জুটিতে ভিত পেয়েছিল তারা শক্ত। সাইফ ফিরেছিলেন ৩৫ বলে ৫০ রান করে, আর রাব্বি আউট হয়েছেন ৩১ বলে ৪১ রান করার পর। এরপরই শামিমে আশা জাগিয়েও ফিরে যাওয়া, আর রেজার নায়ক বনে যাওয়া।
****
ওল্ড ডিওএইচএস-ব্রাদার্স, বিকেএসপি ৪
ব্রাদার্স ইউনিয়ন ১৩৯/৫, ২০ ওভার (মাইশুকুর ৬৮*, রাহাতুল ২৬, মিজানুর ২১, আলিস ২/২৩, মোহাইমিনুল ১/১১, শান্ত ১/২০)
ওল্ড ডিওএইচএস ১৩৭/৩, ২০ ওভার (ইমন ৬৪, জয় ৩৪, রাকিন ৩৩, রাহাতুল ১/১৫, মানিক ১/১৪)
ব্রাদার্স ২ রানে জয়ী
শেষ ১২ বলে ওল্ড ডিওএইচএসের প্রয়োজন ছিল ১৩ রান, বাকি ছিল ৯ উইকেট। ৪ বলের ব্যবধানে এরপর ফিরলেন দুই সেট ব্যাটসম্যান আনিসুল ইসলাম ইমন ও মাহমুদুল হাসান জয়। শেষ ৪ বলে সুজন হাওলাদারের বলে ২ রানের বেশি নিতে পারলেন না প্রিতম কুমার ও রাফসান রহমান। যে ম্যাচে ব্রাদার্সের হার ৩৮ ওভার পর্যন্ত ছিল আনুষ্ঠানিকতা, সেই তারাই জিতে গেল সেটি!
এদিন সকালের অন্য দুই ম্যাচে বড় স্কোর থাকলেও এটিতে প্রথমে ব্যাটিং করা ব্রাদার্স তুলতে পারেনি ১৩৯-এর বেশি। চারে নামা মাইশুকুর রহমান অপরাজিত ছিলেন ৪৮ বলে ৬৮ রান করে, তবে ইনিংসে দুই অঙ্কের ইনিংস ছিল আর দুটি- ওপেনিংয়ে মিজানুর রহমানের ১৬ বলে ২১-এর পর ছয়ে নামা রাহাতুল ফেরদৌসের ২৪ বলে ২৬। মাইশুকুর তার ইনিংসে মেরেছিলেন ৪টি করে চার-ছয়, ছয়ের পর চারে ফিফটিতে গিয়েছিলেন ৩৯ বলে। ক্যারিয়ারে এই ডানহাতির এটিই প্রথম ফিফটি।
ডিওএইচএসের সেরা বোলার ছিলেন আলিস আল ইসলাম, ৪ ওভারে ২৩ রানে তিনি নিয়েছিলেন ২ উইকেট। ১ উইকেট নিলেও ৩ ওভারে মাত্র ১১ রান দিয়েছিলেন মোহাইমিনুল খান।
রানতাড়ায় ইমনের সঙ্গে রাকিনের ওপেনিং জুটিতেই উঠেছিল ৫৭ রান, ৩১ বলে ৩৩ করে ফিরেছিলেন রাকিন। এরপরই ইমন-জয়ের ৭৫ রানের জুটি। এরপর ৫০ বলে ৩ চার ও ৪ ছয়ে ৬৪ রান করা ইমন প্রথমে ফিরলেন মানিক খানের বলে ক্যাচ দিয়ে, পরের ওভারে ৩৩ বলে ৩৪ রান করে জয় হলেন রান-আউট। শেষ বলে প্রয়োজন ছিল ৩ রান, অফস্টাম্পের বাইরে করা সুজনের বলটা ছেড়ে দিয়ে বোকা বনলেন প্রিতম, আর ডিওএইচএস হারল জেতা ম্যাচ, হারা ম্যাচ জিতে গেল ব্রাদার্স।