• অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফর ২০২১
  • " />

     

    সাকিব-সাইফ উদ্দিনে অস্ট্রেলিয়াকে গুঁড়িয়ে সিরিজ শেষ করল বাংলাদেশ

    সাকিব-সাইফ উদ্দিনে অস্ট্রেলিয়াকে গুঁড়িয়ে সিরিজ শেষ করল বাংলাদেশ    

    বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়া, মিরপুর (টস- বাংলাদেশ/ ব্যাটিং)
    বাংলাদেশ ১২২/৮, ২০ ওভার (নাইম ২৩, মাহমুদউল্লাহ ১৯, সৌম্য ১৬, এলিস ২/১৬, ক্রিশ্চিয়ান ২/১৭, জাম্পা ১/২৪)
    অস্ট্রেলিয়া ৬২, ১৩.৪ ওভার ( ওয়েড ২২, ম্যাকডারমট ১৭, সাকিব ৪/৯, সাইফউদ্দিন ৩/১২, নাসুম ২/৮)
    ফলাফল: বাংলাদেশ ৬০ রানে জয়ী

     

     


    সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল আগেই। তবে বাংলাদেশের বোলাররা যেন নিজেদের সেরাটা জমিয়ে রেখেছিলেন শেষ ম্যাচের জন্য। সাকিব আল হাসানের ইতিহাস গড়ার রাতে অস্ট্রেলিয়াকে বাংলাদেশ হারাল ৬০ রানে। সেই সঙ্গে টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড নতুন করে লিখল অস্ট্রেলিয়া। ১২২ রান করেও সাকিব আল হাসান ও সাইফ উদ্দিনে বড় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।

    আগের ম্যাচে ঝড় তোলা ক্রিশ্চিয়ানকে এদিন ওপেনিংয়ে নামানোর সিদ্ধান্ত নেয় ১২৩ রানের লক্ষ্যে নামা অস্ট্রেলিয়া। নাসুমের করা দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে মাত্র ৩ রানে ফিরে গেলে সেই ফাটকাটা অবশ্য কাজে লাগেনি। ক্রিজে এসে শুরু থেকেই ধুঁকছিলেন সিরিজের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক মিচেল মার্শ। নাসুমের বলে জায়গা বানিয়ে সুইপ করতে গেলে এলবিডব্লিউ হয়ে মাত্র ৪ রানেই ফিরতে হয়ে তাকে, সিরিজে যা তার প্রথম এক অঙ্কের স্কোর। এক প্রান্ত অবশ্য আগলে রেখেছিলেন অধিনায়ক ম্যাথিউ ওয়েড। পাওয়ারপ্লে শেষে ঐ দুই উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া তাই তোলে ৩১ রান।

    অধিনায়ক হিসেবে কেটেছে বিভীষিকাময় সিরিজ, ওয়েডের ব্যাটেও চলছিল রানখরা। শেষ ম্যাচে এসে সেটা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিলেও সপ্তম ওভারে সাকিব আল হাসান আক্রমণে এলে তার দ্রুতগতির আর্ম বল তুলে মারতে গিয়ে মিস করে বোল্ড হয়ে ফিরে যান ২২ রান করে। ঐ ওভারের প্রায় প্রতিটি বলেই উইকেটের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন সাকিব। পরের ওভারে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ নিজেকে আক্রমণে আনলে তার ওপর চড়াও হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বেন ম্যাকডারমট। লং অনের ওপর দিয়ে বিশাল ছয় মারার এক বল পরেই মাহমুদউল্লাহকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে তিনি ফিরে যান ১৭ রান করেই, কাজে লেগে যায় অধিনায়কের সিদ্ধান্তও। ১০ ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর তাই হয়ে দাঁড়ায় ৫১-৪।

    টানা দুই ওভারে দুই উইকেট হারানোর চাপ যেন পেয়ে বসে অজিদের। এগারতম ওভারে সাইফউদ্দিনের অফ কাটারে কাট করতে গেলে মিস করে বোল্ড হয়ে ফিরে যান শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকা অ্যালেক্স ক্যারি। এক বল পরেই নাকলবলে আবারও বাজিমাত করেন সাইফউদ্দিন, অফ স্টাম্পের ওপর আগে থেকেই সরে আসায় ভিতরে ঢোকা বলের জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না মইসেস হেনরিকস। ফলাফল উইকেটের পিছনে নুরুল হাসানের তালুবন্দি হয়ে মাত্র ৩ রানেই তার ইনিংসের অবসান। এক ওভারেই দুই উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকে ওখানেই কার্যত ম্যাচ ছিনিয়ে নেন সাইফউদ্দিন।

    পরের ওভারে এক্সট্রা কাভারে অ্যাশটন টার্নারকে মাহমুদউল্লাহর তালুবন্দি করে সাকিব পান তার ১০০তম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি উইকেট। স্পিনার হিসেবে প্রথম আর লাসিথ মালিঙ্গার পর মাত্র দ্বিতীয় বোলার হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। ঐ ওভারে উইকেট মেইডেন নিয়ে সাকিব জয়ের মঞ্চ প্রস্তুত করে ফেলেন। বাকি আনুষ্ঠানিকতা সারেন তিনি নিজেই। সাইফউদ্দিন আরও একবার স্লোয়ারে পরাস্ত করে অ্যাশটন অ্যাগারকে ফেরালে পরের ওভারে দুই উইকেট নিয়ে সাকিব বাংলাদেশকে এনে দেন ৬০ রানের বিশাল জয়। সিরিজ শুরুর আগে যেটা মনে হয়েছিল স্বপ্ন, সেটাকেই বাস্তবে পরিণত করে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ।  

    তার আগে দুঃস্বপ্নের মত একটা সিরিজ কাটানো সৌম্য সরকার এদিন দলে থাকলেও তার জায়গায় ওপেন করতে নামেন আগের ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্যামিও খেলা মাহেদী হাসান। অস্ট্রেলিয়া তবুও শুরু করেছিল অ্যাশটন টার্নারকে দিয়েই। প্রথম তিন ওভারই করেন তিন স্পিনার। আর সিরিজে প্রথমবারের মত বাংলাদেশের ওপেনিং জুটিকেও মনে হয় সপ্রতিভ, তিন ওভারে আসে ৩৩ রান।  মোহাম্মদ নাইম শেখ দুই স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা ও অ্যাশটন অ্যাগারের উপর বেশ চড়াও হয়েছিলেন। তবে পরের ওভারে এসেই নাথান এলিস মাত্র ২ রান দেন। আর সেই চাপ থেকেই হয়ত টার্নারের ওপর পরের ওভারে চড়াও হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখেন মাহেদী। পূর্বপরিকল্পিত শট খেলতে গিয়েই লাফিয়ে ওঠা বলে ব্যাটও হারিয়েছন, বলও তুলে দিয়েছেন আকাশে। ১২ বলে ১৩ রান করেই শেষ হয় মাহেদীকে ওপেন করতে নামানোর পরীক্ষা। তারপরও ওপেনিং জুটিতে এই সিরিজের সর্বোচ্চ ৪২ রান উঠে গেছে তখন। পরের ওভারেও এলিস মাত্র ৩ রান দিলে পাওয়ারপ্লে শেষে এক উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ করে ৪৬ রান।

    শুরুর ঝড় সামলে অস্ট্রেলিয়ানরা লাগাম টেনে ধরতেও সময় নেননি বেশি। এলিসের পরে ড্যান ক্রিশ্চিয়ানকে সামলাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল, সাকিব আল হাসান একবার আকাশে বল ভাসিয়ে বেঁচেও গেছেন। ক্রিশ্চিয়ানের পরের ওভারেই চাপ কমানোর চেষ্টা করতে গেয়ে নাইম চেষ্টা করেছিলেন রিভার্স। পয়েন্টে সহজ ক্যাচ দিয়ে আরও একবার ভাল শুরুর পরেও লম্বা ইনিংস খেলতে পারেননি নাইম, ২৩ বলে ২৩ করে শেষ হয় তার ইনিংস। আর সেই সাথেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৭ বছর পর প্রথম উইকেট পেয়েছেন ক্রিশ্চিয়ান, ২০১৪ সালে ভারতের সাথে পেয়েছিলেন শেষ উইকেট।

    নাইম ফেরার পরে রান বের করতে আরও ধুঁকতে হয় সাকিবকে। জাম্পার নিরীহ একটা সোজা ডেলিভারি ব্যাটে বলে করতে না পেরে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেন ২০ বলে ১১ রান করে। নিজের ৮২তম ইনিংসে এসে প্রথম এলবিডব্লিউয়ের শিকার হলেন সাকিব, এলবিডব্লিউ না হয়ে তার থেকে বেশি ইনিংস খেলেছেন কেবল ভারতের মহেন্দ্র সিং ধোনি (৮৫)। অপর প্রান্তে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ শুরুটা করেছিলেন দারুণ, জাম্পাকে স্লগ সুইপ করে ডিপ মিডউইকেটের ওপর দিয়ে মেরেছিলেন বিশাল ছয়। তবে অ্যাগারের একটি নিরীহ বলে জায়গা বানিয়ে ফাঁকায় ঠেলে দিতে গেলে টপ এজ হয়ে ১৪ বলে ১৯ রানে শেষ হয় তার ইনিংস।

    মিডল অর্ডারে নেমে সৌম্যের ভাগ্যের খাতাও খুলবে বলেই মনে হচ্ছিল। তিনিও একই ভঙ্গিতে মেরেছিলেন বড় ছয়। ক্রিশ্চিয়ানের পরের ওভারে আগের বলেই খেলেছিলেন নিখুঁত কাট। পরের বলে জায়গা বানিয়ে বল মাঠ ছাড়া করতে চাইলে লং অফে সহজ ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার ১৮ বলে ১৬ রানের ইনিংস। তবে ইনিংসের সেরা শটটা এসেছে এসেছে আফিফ হোসেনের ব্যাট থেকে। ক্রিজে এসেই বেরিয়ে এসে এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে ক্রিশ্চিয়ানের বল আছড়ে ফেলেছেন গ্যালারিতে, পুরো সিরিজ জুড়ে দারুণ খেলা আফিফের চোখমুখ থেকে যেন ঠিকরে পড়ছিল আত্মবিশ্বাস। তবে এর পরের ১৫ বলে আসে মাত্র ৮ রান। এলিসের স্লোয়ারে দিশেহারা হয়ে বল স্টাম্পে ডেকে এনে ফিরে যান নুরুল হাসান ১৩ বলে মাত্র ৮ রান করে। ১৬তম ওভার থেকে বাউন্ডারির জন্য হাতড়ে বেড়ানো বাংলাদেশের উইকেটের খাতায় শেষ ওভারে স্কুপ করতে গিয়ে নাম লেখান ঐ আফিফ, ফেরেন ১১ বলে ১০ করে। ২১ বল পরে মোসাদ্দেক হোসেনের ব্যাট থেকে বাউন্ডারি আসার পরের বলেই বাই রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে ফিরেন সাইফউদ্দিন। সপ্তম বলে এসে ঐ বাউন্ডারিতে নিজের প্রথম রান পান মোসাদ্দেক হোসেন। শেষ ৫ ওভারে মাত্র ২০ রান তুলতে সমর্থ্য বাংলাদেশ তাই গিয়ে থামে ১২২ রানে। সেই সংগ্রহকেই অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে গিয়ে সাকিবের রেকর্ড গড়ার দিনে তিনি নিজেই নিশ্চিত করেছেন বড় জয়।