কেন ফ্যান্টাসিতে ভাগ্যের চেয়ে জ্ঞান আর দক্ষতা বেশি লাগে?
ফ্যান্টাসি ধারণার সঙ্গে এখন সবাই কমবেশি পরিচিত। ফ্যান্টাসি স্পোর্টস এখন বিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রি, বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে ফ্যান্টাসির বিশাল বাজার। প্রিমিয়ার লিগ ফুটবল ফ্যান্টাসি বা এফপিএলে এখন অনেক বাংলাদেশীরাই নিয়মিত খেলেন, এই বছর প্রায় ৪৫ হাজার বাংলাদেশী খেলছেন এই লিগ। ফ্যান্টাসি নিয়ে মৌলিক প্রশ্নগুলোর প্রথমটি হচ্ছে এই খেলায় কি ভাগ্যের না দক্ষতার? বা আরও নির্দিষ্ট করে বললে ফ্যান্টাসির সঙ্গে বেটিং বা জুয়ার তফাত কতটুকু?
ফ্যান্টাসি নামে খেলার দুনিয়ার এই নতুন বিপ্লবে আপনাকে বেছে নিতে হবে একগুচ্ছ খেলোয়াড়ের একটা দল। সেটা আপনি কোনো ম্যাচের জন্য বেছে নিতে পারেন বা পুরো টুর্নামেন্টের জন্যও বেছে নিতে পারেন। আপনার বেছে নেওয়া সেই দলের খেলোয়াড়েরা বাস্তবে কে কেমন পারফরম্যান্স করল, সেটার ওপর ভিত্তি করে ঠিক হবে স্কোর। এই স্কোর যার সবচেয়ে বেশি হবে, সেই দিন শেষে হবে বিজয়ী।
একটু খতিয়ে দেখলে দেখা যায় এই যে খেলোয়াড় বেছে নেওয়ার যে প্রক্রিয়া, সেটা আসলে পুরোপুরি আপনার দক্ষতা ও জ্ঞানের ওপর নির্ভর করে। যেমন ধরুন এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আপনাকে বাংলাদেশ-ওমান ম্যাচের জন্য একটা একাদশ বেছে নিতে বলা হলো। আপনি বাংলাদেশ দল থেকে সাতজন বেছে নিতে পারেন। কিন্তু আপনাকে এমন সাতজন বেছে নিতে হবে যারা প্রথমত সেই ম্যাচে খেলবেন এবং সেই ম্যাচে তারা পারফর্ম করবেন।
এই দুই ব্যাপারেই আপনার ক্রিকেট, বিশেষ করে বাংলাদেশের ক্রিকেট দল নিয়ে সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে। আপনাকে জানতে হবে বাংলাদেশের শেষ কয়েকটা ম্যাচে একাদশে কারা ছিলেন, সেই ম্যাচগুলোতে কাদের পারফরম্যান্স ভালো ছিল। কোন ব্যাটসম্যান বা কোন বোলাররা ফর্মে আছে, সেটাও জানতে হবে আপনাকে। আবার যে নির্দিষ্ট ম্যাচের জন্য আপনি দল বেছে নিচ্ছেন, সেখানে কাদের খেলার সম্ভাবনা বেশি সেটাও জানতে হবে। উইকেট স্পিনসহায়ক হলে স্পিনারদের খেলার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে, আবার পেস সহায়ক হলে পেসারদের দলে নিতে চাইবেন আপনি। এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আপনাকে নিয়মিত খেলার খবর রাখতে হবে। আবার আপনার দলের অধিনায়ক কাকে করবেন সেখানেও আপনার জ্ঞানের দরকার আছে।
এখানেই ফ্যাণ্টাসির সঙ্গে বেটিং বা জুয়ার তফাত। জুয়ায় যেমন তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয়, ফ্যান্টাসিতে আপনার যথেষ্ট ‘হোমওয়ার্ক’ করে এরপরেই দল সাজাতে হবে। হ্যাঁ, এরপরও ফ্যান্টাসিতে কিছু ভাগ্যের দরকার আছে আপনার, কিন্তু আপনার জানাশোনা যদি যথেষ্ট পোক্ত হয় তাহলে আপনার ভালো করাটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। যেই গ্যারান্টি আপনি জুয়ায় দিতে পারবেন না।
ভারতে যখন ফ্যান্টাসি ইন্ডাস্ট্রি দাঁড়াতে শুরু করেছিল তখনই এই প্রশ্নটা এসেছিল। ড্রিম ইলেভেন যাত্রা শুরুর পর ২০১৭ সালে একজন ফ্যান্টাসি খেলোয়াড় হাইকোর্টে মামলা ঠুকে দেন, এই ফ্যান্টাসির কারণে তার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ভারতে জুয়া অবৈধ, তাই আদালতের কাছে তার অভিযোগ ছিল ফ্যান্টাসি বন্ধ করে দেওয়া হোক। কিন্তু ভারতের আদালত নতুন একটা আইন জারি করল যে ফ্যান্টাসি দক্ষতা ও জ্ঞানভিত্তিক খেলা। তাই এটিকে জুয়া হিসেবে গণ্য করা হবে না। এই নতুন আইনের পর ভারতের ফ্যান্টাসি জগত আরও ফুলেফেঁপে উঠতে শুরু করল। এখন ড্রিম ১১, মাই ইলেভেন সার্কেল, এমপিএলসহ আরও অনেক ফ্যান্টাসি প্লাটফর্ম আছে ভারতে। আর যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা জগতে তো ফ্যান্টাসির অগুণিত বড় প্লাটফর্ম আছে।
বাংলাদেশে এখনো সেভাবে বড় কোনো ফ্যান্টাসি প্লাটফর্ম দাঁড়ায়নি। আমার ইলেভেন সেই লক্ষ্য নিয়েই যাত্রা শুরু করেছে। মাথা খাটিয়েই খেলুন ফ্যান্টাসি- এটাই 'আমার ইলেভেনের' মূলমন্ত্র।