• ক্রিকেট ফ্যান্টাসি
  • " />

     

    বিশ্বকাপের তিন ভেন্যু: কেমন হবে রান, স্পিন না পেস বান্ধব, কতটা প্রভাব ফেলবে আইপিএল?

    বিশ্বকাপের তিন ভেন্যু: কেমন হবে রান, স্পিন না পেস বান্ধব, কতটা প্রভাব ফেলবে আইপিএল?    

    করোনাকালীন বাস্তবতায় ভারতেরও ‘বিপদের বন্ধু’ বনে যাওয়া আরব আমিরাতের তিনটি ভেন্যুতেই হবে বিশ্বকাপ। আইপিএলের ৩১ ম্যাচের পর হবে বিশ্বকাপের ৩৯ ম্যাচ। তা দেখে নেওয়া যাক- আইপিএলে কেমন আচরণ করলো এই ভেন্যুগুলো, গড় স্কোর ছিল কেমন, কারা হয়েছেন সফল, বিশ্বকাপে পিচের চরিত্র হতে পারে কেমন... 

    দুবাই

    এবারের আইপিএলের আগে আলোচনার বিষয় ছিল আইপিএলের পরে একই জায়গায় হওয়া বিশ্বকাপে কি পিচ স্লো হয়ে যাবে কিনা। কিন্ত দেখা গেল আইপিএলের শুরু থেকেই দুবাইয়ের পিচ কিছুটা ধীরগতির। মুলত দুবাইয়ের উইকেটকে বলা যায় টু পেসডই ছিল। যেখানে মাঝে মধ্যে বল থেমে আসে। তবে সেই স্লোনেসটা অতিমাত্রায়ও ছিল না। এবারের আইপিএলে তাই দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে গড়ে প্রতি ইনিংসে রান উঠেছে ১৫০। ২০২০ আইপিএলেও দুবাইয়ের এই স্টেডিয়ামে গড় স্কোর ১৬১ এর বেশি ছিল না। তবে সেবার প্রথম ইনিংসে গড় স্কোর ছিল ১৭২। 

    সে আসরে শুরুর দিকে টসে জিতে লক্ষ্য তাড়ার দিকে সবাই ঝুঁকলেও আগে ব্যাট করা দলই জিতেছে বেশিরভাগ ম্যাচেই। শেষের দিকে দৃশ্যপটে কিছু বদল এলেও সবমিলিয়ে আগে ব্যাট করা দলই জিতেছে প্রায় ৬২% ম্যাচ। এবার অবশ্য ঘটছে উল্টোটাই। প্লেঅফের আগে হওয়া ১১ ম্যাচের ৮টিতেই পরে ব্যাট করা দল জিতেছে। শুরুতে ‘স্লো’ আচরণ দেখালেও ধীরে ধীরে উইকেট ভালো হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার, শেষের কয়েক ম্যাচে শিশিরের ক্ষীণ প্রভাবের কথাও বলেছেন। এমনটা হলে পরে ব্যাট করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে দলগুলো। 

    ২০২০-২০২১ আইপিএলের জয়ের হিসাব-নিকাশ

      আগে ব্যাট করে জয় লক্ষ্য তাড়ায় জয়
    দুবাই ১৭ ১৭
    আবুধাবি ১১ ১৮
    শারজা ১২

     

     

    দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামের যে পিচেই খেলা হোক না কেন, সাধারণত বাউন্ডারি সাইজে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এক পাশ তুলনামুলকভাবে ছোট থাকলে অন্য পাশ কিছুটা বড় হয়, তারতম্যটা বিশেষ করে স্কোয়ার বাউন্ডারিতেই অর্থাৎ স্কোয়ার লেগ বা পয়েন্ট অঞ্চলের দিকে দেখা যায়। তবে বাকি সব বাউন্ডারি সাইজ অপেক্ষাকৃত বেশ দীর্ঘই হয়। পিচের প্রভাবের সাথে দলগুলোর কৌশল সাজানোয় বাউন্ডারি সাইজেরও প্রভাব আছে যথেষ্ট। বাউন্ডারি সাইজের তারতম্যটা বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন বোলাররা। দুবাইয়ে পাওয়াপ্লে ও মিডল ওভারে রান রেট ছিল আটের নিচে, ডেথেও ছিল নয়ের আশেপাশে। অবশ্য পেসারদের উপরই নির্ভরতা দেখিয়েছেন অধিনায়কেরা। প্রায় ৬৭ শতাংশই ওভারই করেছেন পেসাররা। সেখানে স্পিনারদের ৩৬ উইকেটের বিপরীতে পেসাররা নিয়েছেন ৮৭টি উইকেট।

    আবুধাবি 

    আবুধাবি শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়াম। আইপিএলের পর সেখানেই হবে বিশ্বকাপের ১১টি ম্যাচ। এবারের আইপিএলে অবশ্য আবুধাবি আর দুবাইয়ের পিচের চরিত্র প্রায় একই ধরনেরই ছিল বলা চলে। বাউন্ডারি সাইজের পার্থক্যটা সাধারণত থেকে যায় এখানেও। দুবাই স্টেডিয়ামে ব্যাটসম্যানদের প্রতি ছয়ে বল লেগেছে প্রায় ২৪টি (২৩.৬১), আবুধাবিতে ২৫টি (২৪.৮৯)। প্রতি চারে যেখানে দুবাইয়ে বল লেগেছে প্রায় ১০টি (৯.২৭), আবুধাবিতে বলের প্রয়োজন পড়েছে প্রায় ৮টি (৭.৬৭)। 

    তিন ভেন্যুর মধ্যে একমাত্র আবুধাবির জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামেই ২০২১ আইপিএলে রান রেট ছিল আটের উপরে। তিন ভেন্যুর মধ্যে সব পর্যায়েই আবুধাবিতে রান রেট সর্বোচ্চ থাকলেও দুবাইও ছিল কাছাকাছিই। 

     

    ২০২১ আইপিএলে ভেন্যুভেদে বিভিন্ন পর্যায়ে রান রেট

     

    পাওয়ারপ্লে

    (১-৬)

    মিডল ওভার

    (৭-১৫)

    ডেথ ওভার

    (১৬-২০)

    দুবাই

    ৭.৫৫  ৭.২৬ ৯.০৮
    আবুধাবি ৮.৪২ ৭.৬৯ ৯.১১
    শারজা ৬.৯৫ ৬.৬৮ ৭.৯২

     

    আবুধাবির এই স্টেডিয়ামে স্কোরের ক্ষেত্রে ২০২০ আইপিএলের সাথে এবারের আইপিএলেরও তফাত খুব একটা ছিল না। ২০২০ আইপিএলে গড়ে প্রতি ইনিংসে স্কোর ছিল ১৫৮, এবার তা ১৫৫। সেবারও লক্ষ্য তাড়ায় নামা দলই জিতেছিল অধিকাংশ ম্যাচে, এবারও তাই। ২০২০ আইপিএলে পরে ব্যাট করা দল জিতেছিল ২১ ম্যাচের ১৩টিতেই, ২০২১ আইপিএলে ৮ ম্যাচে ৫টিতেই। 

    আবুধাবির পিচেও সামান্য ‘মন্থরতা’ থাকলেও কাটার-স্লোয়ার কাজে লাগিয়ে পেসাররা কন্ডিশনের ফায়দা লুটে সফল হয়েছেন দুবাইয়ের মতো এখানেও। স্পিনারদের কম ব্যবহার করলেও খারাপ ছিলেন না তারাও। মোট ওভারের ৩৪.৪২% বল করে মোট উইকেটের ৩০.৬৮% নিতে পেরেছেন স্পিনাররা। উইকেটপ্রতি ২৯.৪৮ রান খরচায় তারা নিয়েছেন ২৭ উইকেট। পেসারদের ৬১ উইকেট এসেছে ২৭.১৮ গড়ে। 

    শারজা

    গেলবারের আইপিএলেও শেষের দিকে ‘স্লো’ হয়ে গিয়েছিল শারজা, কিন্ত এবার চমকে দিয়েছে শুরুতেই। ছিল ‘ভেরি স্লো’, টার্নিং যদিও ছিল না খুব একটা। তবে ধীরে ধীরে হয়েছে ‘ভেরি লো’। শারজা ব্যাটিংয়ের জন্য তাই হয়ে উঠেছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং। যেখানে ২০২০ আইপিএলে গড় স্কোর ছিল ১৭১, সেখানে এবার গড়ে প্রতি ইনিংসে রান উঠেছে ১৩২। গেলবারের আইপিএলে শারজায় প্রথম আট ইনিংসের সাতটিতেই ২০০ বা তার অধিক রানের স্কোরের দেখা মিলেছে। সবমিলিয়ে হওয়া ১২ ম্যাচে ২৪ ইনিংসের মধ্যে ১৪০ এর নিচে দলীয় স্কোরের দেখা মিলেছে মাত্র ৬ বার। এবারের আইপিএলে যেখানে ১৬ ইনিংসে মাত্র পাঁচটিতেই স্কোর ১৪০ ছাড়িয়ে যেতে পেরেছে। লো-স্কোরে গুটিয়ে দিতে পারলে চেজ সহজ না হলেও সম্ভব হচ্ছে শেষমেশ। ৮ ম্যাচের ৫টিতেই পরে ব্যাট করা দলই জিতেছে এই মৌসুমে। শারজায় সময় যত গড়ায়, বল পুরোনো হওয়ার সাথে সাথে পিচও ব্যাটিংয়ের জন্য কঠিন হতে থাকে। প্লেঅফের আগের আট ম্যাচের সবটিতেই যে দল পাওয়ারপ্লেতে এগিয়ে ছিল, সে দলই দেখা গেছে ম্যাচ শেষে ছিল এগিয়ে। 

    আগেরবার শারজার ছোট বাউন্ডারি উপভোগ করেছেন ব্যাটসম্যানেরা। তবে সেবার হরহামেশাই বলকে সীমানাছাড়া করতে পারলেও এবার বেশ কাঠখড়ই পোড়াতে হয়েছে তাদের। ২০২০ আইপিএলে গড়ে প্রতি ১৩ (১২.৬৫) বলেই যেখানে একেকটি ছয় হাঁকিয়েছেন ব্যাটাররা, এবার তাদের লেগেছে প্রায় ২৩ বল (২২.৩২)। প্রতি চারে এবার লেগেছে ১৩ বল (১২.২৯), সেবার লেগেছিল ১০টি (৯.৭৯)। এবার শারজা উপভোগের জায়গা বোলারদের জন্যই। পিচ বেশ ধীরগতির হলেও এখানেও অবশ্য পেসাররাই এগিয়ে। স্লোয়ার-কাটার ও নানা ভ্যারিয়েশনে পেসের পরিবর্তন বেশ কার্যকরী ছিল, লো বাউন্সটাকেও অনেকেই কাজে লাগিয়েছেন দারুণভাবে। মোট উইকেটের প্রায় ৭২ শতাংশই গেছে পেসারদের ঝুলিতে। মোট ওভারের ৩৩.০৭% বোলিং করে স্পিনাররাও নিরাশ করেননি, ২৫.৬২ গড়ে নিয়েছেন ২৭টি উইকেট। 

    বিশ্বকাপে কেমন পিচ হবে? 

    আইপিএলে শারজায় দশ ম্যাচ ও আবুধাবিতে আট ম্যাচের পর বিশ্বকাপে আরও যথাক্রমে ১১ ও ১৫ ম্যাচ। দুবাইয়ের মাঠে আইপিএলের ম্যাচ ১৩টি, বিশ্বকাপে হবে আরও ১৩টি। এত ম্যাচের কারণে অনেকের মনেই আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তাহলে কি বিশ্বকাপে ছক্কা-চারের ফুলঝুরির বদলে দেখা মিলবে লো-স্কোরিং ম্যাচের? যেহেতু বিশ্বকাপের মতো বৈশ্বিক ইভেন্ট, আয়োজকেদেরও সে ভাবনা থাকাটাই স্বাভাবিক বলে এ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তাটাও নিশ্চয়ই থাকবে তাদের মাথায়। ভরসা রাখতে পারেন সেসব পিচ খুব কাছ থেকে দেখা মোস্তাফিজের কথায়, ‘বিশ্বকাপ বড় ইভেন্ট। ধরুন, ছয়টা উইকেট আছে। তিনটা ব্যবহার করা হয়েছে (আইপিএলে)। তিনটা রেখে দিয়েছে বিশ্বকাপের জন্য। বিশ্বকাপের উইকেটে আইপিএলের ম্যাচ তেমন একটা হয়নি।’

    ‘আইপিএলের চেয়ে বিশ্বকাপে উইকেট ভালো হবে। আইপিএলের উইকেটও খুব বেশি খারাপ বলা যাবে না। যে উইকেটগুলোয় বিশ্বকাপের খেলা হবে, সেগুলো ঢেকে দেওয়া দেখলাম। মাঝের এই উইকেটগুলো ভালো হতে পারে। আমার মনে হয় না... (আইপিএলের মতো উইকেট হবে)। আমার যেটা মনে হয়, শারজা বাদে আবুধাবি আর দুবাইয়ের উইকেট ভালো হবে।’ আজকের পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন মোস্তাফিজ।

    ২০২১ আইপিএলের লিগ পর্বের শেষ ম্যাচ পর্যন্ত পরিসংখ্যানের অন্তর্ভুক্ত।