'তাসকিনের পেস এই উইকেটে কাজে দিতে পারে'
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজুরে প্যাভিলিয়নের সাথে থাকছেন জাতীয় ক্রিকেটার ইমরুল কায়েস। স্কটল্যান্ডের সাথে প্রথম ম্যাচের আগে কথা বলেছেন বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতি, একাদশ কেমন হওয়া উচিত, স্কটল্যান্ড কতটা কঠিন প্রতিপক্ষ এমন আরও অনেক কিছু নিয়ে...
স্কটল্যান্ডের সাথে এগিয়ে থাকব
আমার কাছে যেটা মনে হয় বাংলাদেশ দল নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারে তাহলে আমার মনে হয় না স্কটল্যান্ডের সাথে আমরা হেরে যাব। আমার মনে হয় আমরা ভালোভাবেই জিতব, দাপট দেখিয়েই জিতব। হয়তো কেউ কেউ মনে করতে পারেন এটা ঢাকায় খেলা হচ্ছে না। ঢাকায় খেলা হলে আমাদের সবসময় একটা বাড়তি সুবিধা থাকে। কিন্তু আমাদের মনে করতে হবে, এই কন্ডিশনেও আমরা ভালো একটা দল। সাকিব, মোস্তাফিজ এই কন্ডিশনে মাত্র খেলে এসেছে, ওদের এখানে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। ওখানকার কন্ডিশনে খেলার অভিজ্ঞতা আমাদের আরও অনেক খেলোয়াড়ের আছে। তো ওদিক থেকে আমি বলব, আমরা স্কটল্যান্ডের সাথে পিছিয়ে নেই। বরং এগিয়ে আছি।
প্রস্তুতি ম্যাচ নিয়ে ভাবনার কিছু নেই
আমার কাছে মনে হয় না, ওয়ার্ম আপ ম্যাচ খুব একটা এফেক্ট করে। আগেও দেখা গেছে, বিভিন্ন সফরের আগে আমরা এরকম গা গরমের ম্যাচে হেরে গেছি। কিন্তু মূল টুর্নামেন্টে গিয়ে কিন্তু ঠিকই হারিয়ে দিয়েছি। এসব ম্যাচে অনেক রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়, প্লেয়াররা সবসময় ওইভাবে সিরিয়াস থাকে না। সবাই চেষ্টা করে, নিজের শেপ ঠিক আছে কি না। অনেকে নিজেদের ছোটোখাটো সমস্যা নিয়ে এক্সপেরিমেন্টের চিন্তা করে। ওখানে হারজিতের চিন্তা করলে সেটা আসলে ঠিক হবে না। আমাদের মূল খেলাগুলো সামনে, আমার মনে হয় না ওয়ার্ম আপ ম্যাচ খুব বেশি প্রভাব ফেলবে।
যেমন ২০১৫ সালে বিশ্বকাপের সময় আমি বাংলাদেশ দলের সাথে ছিলাম। সেবার আমাদের প্রস্তুতি কিন্তু ভালো হয়নি। কিন্তু বিশ্বকাপটা ভালো গিয়েছিল আমাদের। অনেক সময় ব্যাটসম্যানরা মনে করে যে প্রস্তুতি ম্যাচেই যদি সব রান করে ফেলি হয়তো মূল ম্যাচে ফোকাস পুরোপুরি থাকবে না। সেই সিরিয়াসনেস প্রস্তুতি ম্যাচে থাকে না। আবার ওয়ার্ম আপে সেঞ্চুরি পেলে অনেক সময় মেন্টালি বেশি রিল্যাক্স হয়ে যায়। যে কারণে মূল ম্যাচে গিয়ে বড় স্কোর হয় না। সেজন্য প্রস্তুতি ম্যাচে রান না পেলে সেটা নিজের ফোকাস বাড়াতেও সাহায্য করতে পারে।
স্কটল্যান্ড আলাদা করে বড় কিছু নয়
খেলার আগে কিন্তু সবাই বড় বড় কথা বলে, আমি হেন করব, তেন করব। আমিও শুনেছি যে এরকম কথা হয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয় না স্কটল্যান্ড বাংলাদেশের জন্য আলাদা করে কোনো কঠিন প্রতিপক্ষ। বাংলাদেশ যদি নিজেদের মতো খেলতে পারে তাহলে স্কটল্যান্ড বা পাপুয়া নিউ গিনি বা ওমান কোনো বড় হুমকি হবে বলে মনে হয় না।
ব্যাটসম্যানদের প্রস্তুতি আরও ভালো হতে পারত
আমার মনে হয়, বাংলাদেশের জন্য অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড সিরিজে রান না পাওয়া একটা বড় চিন্তা। দেশে এই দুইটি সিরিজ আমাদের কিন্তু ভালো গেছে, আমরা কিন্তু ১২০-১৩০ ডিফেন্ড করে জিতেছি। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের জন্য কাজটা কঠিন হয়ে গেছে, কারণ ব্যাটসম্যানরা রান পাননি। কেউ ৮০-৯০-১০০ বা বড় স্কোর করতে পারেনি। টি-টোয়েন্টিতে বড় রান করার জন্য কিন্তু হ্যাবিট লাগে। এই অভ্যাস আসবে ভালো উইকেটে ব্যাটিং করলে। মিরপুরের যে উইকেটে আমরা ব্যাটিং করেছি এরপর আসলে ৬০-৭০-৮০ করা একজন ব্যাটসম্যানের জন্য বেশ কঠিন। যদি আপনার টি-টোয়েন্টিতে বড় বড় ইনিংস থাকত তাহলে বিশ্বকাপের মতো জায়গায় গিয়ে আপনি সাহসী ক্রিকেট খেলতে পারতেন। কিন্তু দিন শেষে মানুষ দেখবে, জাতীয় দলের পর আপনার ১০ ম্যাচে কত রান। তখন কিন্তু একটা চাপ চলে আসে। সেকারণে ব্যাটসম্যানদের ওপর একটা চাপ থাকতে পারে, আমাদের বড় রান করতেই হবে। সবা চিন্তা করবে যে গত ১০ ইনিংস ভালো যায়নি, আমার এবার ভালো করতেই হবে। এই ভালো করার বাড়তি তাড়াটা অনেক সময় খারাপ হয়ে যায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, যাওয়ার আগে আমাদের যে ধরনের উইকেটে খেলা দরকার ছিল সেটা আমরা খেলতে পারিনি। এটা হয়তো ব্যাটসম্যানদের জন্য একটা নেতিবাচক দিক। আবার বোলাররা ভালো করেছে, তাদের অবশ্যই আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। কিন্তু এটাও ঠিক, ওই জায়গায় গিয়ে সেই স্পিনিং ট্র্য্যাক হয়তো তারা পাচ্ছে না। ওখানে আবার পেস বোলিং অ্যাটাক শুরু করতে হচ্ছে। আমার কাছে মনে হয়, যে কোনো বড় আসরের আগে ছোট প্ল্যান না করে বড় চিন্তা করা উচিত। আমরা যদি যাওয়ার আগে অন্তত একটা সিরিজে ইভেন ট্রু উইকেটে খেলতে পারতাম, তাহলে হয়তো ব্যাটসম্যানরা এখন যে স্ট্রাগল করছে সেটা এতোটা হতো না।
তাসকিনের পেস কাজে লাগানো উচিত
আমার মনে হয় একাদশে একজন বাড়তি পেসার খেলানো উচিত। আমার মনে হয় বাড়তি স্পিনার যদি একজন নেন সেটা হতে পারে একস্ট্রাওর্ডিয়ারি, রশিদ খান বা মুজিব উর রেহমানের মতো কেউ। এরকম কেউ থাকলে আপনি খেলাতে পারেন। কিন্তু অর্থোডক্স স্পিনার থাকলে যে কোনো কিছু হতে পারে। কিন্তু জেন্টল স্পিনারের চেয়ে পেস বোলার খেলানো ভালো। আইপিএলের ম্যাচেও দেখুন, পেসাররা বেশি সাহায্য পেয়েছে। স্পিনারদের চেয়ে পেসারদের মারা কঠিন ছিল। আইপিএলের ফাইনালেই যেমন মঈন আলীর মতো স্পিনারকে বোলিং করাননি ধোনি। তো এটা আমাদেরও মাথায় রাখা উচিত। এরকম উইকেটে স্পিনারদের লেংথ একটু কমবেশি হলেই সমস্যা হতে পারে। এদিক থেকে চিন্তা করে আমি বলব, তাসকিনের পেসটা আমাদের কাজে আসতে পারে। আমি তাই বাড়তি পেসার খেলানোর পক্ষে।