• ইমরুল কায়েসের বিশ্লেষণ
  • " />

     

    'ওমানের সাথে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে হবে'

    'ওমানের সাথে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে হবে'    

    টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজুড়ে প্যাভিলিয়নের সাথে থাকছেন জাতীয় ক্রিকেটার ইমরুল কায়েস। ওমানের সাথে দ্বিতীয় ম্যাচের আগে কথা বলেছেন বাংলাদেশের মানসিক অবস্থা, একাদশ ও কৌশল নিয়ে


    মানসিকভাবে এখন শক্ত থাকতে হবে

    আসলে এমন একটা হারের পর সবাই হতাশ। স্কটল্যান্ডের কাছে হারব আমরা কেউই আশা করিনি। তবে একদিন পরেই যেহেতু আরেকটা ম্যাচ, প্র্যাকটিস করে তো রাতারাতি কিছু বদলে দেওয়া যায় না। যেটা চেঞ্জ করতে হয়, মানসিকভাবে কিছু বদল আনতে হয়। আরও শক্তিশালী হতে হয়। আমার কাছে মনে হয়, টিম  মিটিং হচ্ছে। সবাই নিশ্চয় বসেছে। কোনটা করলে ভালো হয়, এই কন্ডিশনে কীভাবে খেলতে হবে- সেটা নিয়েই কথা হয়েছে। এখন আসলে অনুশীলন করার সময় নেই। মানসিকভাবেই আসলে শক্ত হতে হবে, নইলে একটু কঠিন।

    অধিনায়ককে তো অবশ্যই সবাইকে সমর্থন দিতে হবে।  আমি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ভাইয়ের সাথে খেলেছি। অধিনায়ক হিসেবে তিনি অনেক অভিজ্ঞ। তার সাথে যতটুকু খেলেছি, উনি প্লেয়ারদের মোটিভেট করতে হয় সেটা জানেন। আমি এর মধ্যেই বাংলাদেশ দলের একজন ক্রিকেটারের সাথে কথা বলেছি। স্বাভাবিকভাবেই সবাই একটু আপসেট, মনও খারাপ। আবার সবাই এটাও জানে, আমাদের যে কোনোভাবে হোক কোয়ালিফাই করতেই হবে। সেই ক্ষুধাটা আমার মনে হয় দলের মধ্যে আছে।

    নাঈমকে না দেখে অবাক হয়েছি

    আমি আসলে কালকে বেশ অবাক হয়েছি, নাঈম শেখকে খেলানো হয়নি। গত এক দেড় বছর ধরে কিন্তু নাঈম টি-টোয়েন্টি দলে ধারাবাহিকভাবে খেলেছে। সে কিন্তু এর মধ্যে বাদ যায়নি। ওমানে গিয়েও সে একটা ম্যাচ ভালো খেলেছে। কিন্তু একটা অনুশীলন ম্যাচের জন্য একজন প্লেয়ারকে বসিয়ে দেওয়া আমার কাছে মনে হয় খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল না। সৌম্যকে আসলে সৌম্যর জায়গাতে তার মতো করে খেলতে দেওয়া উচিত। ওকে একবার তিনে খেলাচ্ছেন, একবার চারে , আরেকবার ছয়ে- এভাবে করলে সেটা ওর জন্যও ভালো না, বাংলাদেশ দলের জন্যও ভালো না। নাঈম যেটা করতে পারে, সেটা আমাদের তামিম করত। একদিক থেকে ইনিংস বিল্ডআপের রোলটা প্লে করে যেত। ওই ব্যাপারটা হয়নি হয়িনি কাল। সৌম্য-লিটন দুজনেই আউট হয়ে গেছে। এজকজন টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানকে ওই দায়িত্ব নিতে হবে, ওপর থেকে একটা বড় ইনিংস খেলে দিতে হবে। যেটা স্কটল্যান্ডের সাথে আমাদের হয়নি।

    আগেই বড় ওভার টার্গেট করা উচিত ছিল

    দেখুন, কালকের ম্যাচের আগ পর্যন্তও কিন্তু মুশফিক বাংলাদেশের চার নাম্বারে সেরা। সেটা সব ফরম্যাটেই। কালকের ম্যাচে হয়তো ওর খেলাটা একটু স্লো হয়ে গিয়েছিল। ওর একটু অফ ফর্মে আছে, রান সেভাবে পাচ্ছে না। সাকিবও চেষ্টা করেছে, কিন্তু ও  কানেক্ট করতে পারছিল না। হয়তো ওর দিন ছিল না। ওরা একটু বেশি সময় নিয়ে ফেলেছে হয়তো। তবে টি-টয়েন্টিতে যে উইকেট ছিল, আমার কাছে মনে হয়েছে বলের চেয়ে ২০-২৫ রান বেশি থাকাটা ওই উইকেটে খুব সমস্যা নয়। আমার কাছে মনে হয়েছে, মুশফিক-সাকিব আউট হওয়ার পর ১৪-১৫ ওভারে গিয়েই যদি একটা বড় ওভারের টার্গেট নিতাম, তাহলে হয়তো অন্য কিছু হতো। যেটা আমরা ১৭-১৮ ওভারে গিয়ে ঝুঁকি নিয়েছি, কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত এত কিছুর পরও আমরা মাত্র ৬ রানে ম্যাচটা হেরেছি। আমি বলব, আমরা আগে আরেকটু হাত খুলে খেললে ম্যাচটা বের করে আনতে পারতাম।

    বোলিংই এখন আমাদের শক্তি

     প্রথম পাঁচ-ছয় ওভারে আমাদের বোলিং হয়েছে, সেটা একদম পরিকল্পনা অনুযায়ী ছিল। আমরা যখন রান বন্ধ করে দিয়েছি, এরপর মারতে গিয়ে তারা উইকেট দিয়েছে। আপনি টাইট বোলিং করলে ব্যাটসম্যান ভুল করবে। আমার কাছে মনে হয় ওদের ৫-৬ উইকেট পরে যাওয়ার পর ভেবেছিলাম, ওরা ১১০-১২০ রানের বেশি করতে পারবে না। খেলাটা কিন্তু ওভাবেই যাচ্ছিল। পরে এক দুই ওভারে চেঞ্জ হয়ে গেছে। ওই উইকেটে ১১০-১২০ রান হয়তো সহজে চেজ করা যেত। ওই জায়গায় আমাদের আরেকটু সতর্ক হতে হবে। এখন যেহেতু আমাদের ব্যাটসম্যানরা ভালো করতে পারছে না, বোলিংয়ে যথাসম্ভব কম রান দিতে হবে। আমাদের এখন ১৭০-১৮০ রান তাড়া করা কঠিন। আমাদের এজন্য ১৪০ বা তার নিচে বেঁধে ফেলতে হবে। আমরা কিন্তু গত কিছুদিনে ১৫০ও করতে পারিনি। সেজন্য আমাদের মাথায় রাখতে হবে, আমাদের প্রতিপক্ষকে ১২০-১৩০ রানের ভেতর যাতে বেঁধে রাখা যায়। এরপর ব্যাটিংয়ে যদি ভালো শুরু হয়ে যায়, সেটা আলাদা ব্যাপার। তখন পরিস্থিতি বলে দেবে, কী করতে হবে।

    আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে হবে

    এখন আসলে ডু অর ডাই। এখন বেসিক ওয়েতে , যেভাবে ক্রিকেট খেলেছি সেটা হলে হবে না।, ওমানের মাঠে খেলা, দর্শক বা কন্ডিশন ওদের পক্ষে। আমাদের এখন আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে হবে। আগের ম্যাচে হেরে গেছি, সেটা আমাদের মাথায় থেকে খেললে ফল ভালো নাও হতে পারে। আমরা ভালো দল, এই বিশ্বাস নিয়ে আমাদের খেলতে হবে। শক্তির বিচারে আমরা ওদের চেয়ে অনেক ভালো দল। আমার কাছে মনে হয়, এই জায়গাটা আমাদের বুঝিয়ে দিতে হবে।

    ব্যাটিং অর্ডারে দলের কথা ভাবা উচিত

    আমার মনে হয়, নাসুমের জায়গায় ওই উইকেটে তাসকিনের খেলানো ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। কারণ ওই উইকেটে তাসকিনকে দরকার ছিল। এখন সে জায়গায় হয়তো আজকে একটা স্পিনার আসতে পারে। আবার নাঈম দলে ঢুকতে পারে। এর বেশি আমি পরিবর্তন দেখছি না। তবে ব্যাটিং অর্ডারে কিছু চেঞ্জ হয়তো হতে পারে। সেক্ষেত্রে আফিফ বা মাহেদীকে ওপরে নিয়ে আনা যেতে পারে। যেহেতু সাকিবের ব্যাটে ভালো যাচ্ছে না, সেখানে হয়তো একটু চিন্তা করা যেতে পারে। আমি বলছি না, সাকিবকে তিন থেকে সরিয়ে দিতে হবে। তবে দলের কথা চিন্তা করে সাকিবকে যদি ওপেনেও আনতে হয় বা পাঁচে খেলাতে হয়, সেটা চিন্তা করা উচিত।