'লিটনের একটা ব্রেক দরকার'
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজুড়ে প্যাভিলিয়নের সাথে থাকছেন জাতীয় ক্রিকেটার ইমরুল কায়েস। পাপুয়া নিউ গিনির সাথে ম্যাচের আগে কথা বলেছেন বাংলাদেশের মানসিক অবস্থা, একাদশ ও কৌশল নিয়ে
ওমানের সঙ্গে টার্নিং পয়েন্ট কী ছিল?
আমার কাছে মনে হয় ওমানের ম্যাচের টার্নিং ছিল মাহেদীর ওভার। ওই চারটা ওভারই ম্যাচটা বদলে দিয়েছে। মাহেদী রানটা ধরে রেখছে, টাইট বোলিং করেছে। যে জায়গায় ওটা দরকার ছিল। সবাই তখন ৭-৮ করে রান দিচ্ছিল। প্রথম ৫-৬ ওভার তারা কিন্তু পাওয়ারপ্লে খুব ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছে। একটা সময় মনে হচ্ছিল ওরা ম্যাচটা বের করে নিয়ে যাবে। একটা সময় ওদের ৬ ওভারে ৪৭ এর মতো রান হয়ে গেছে। মাহেদী আসার পর চার ওভারে ১৪ এর মতো রান দিয়েছে। সেই সময় ওরা ব্যাকফুটে চলে গেছে। ওই সময় ওরা তাকে মারতেও পারেনি। সেজন্য পরের বলাররা যখন এসেছে, তখন তারা চার্জ করতে গিয়ে উইকেট দিয়ে এসেছে।
সাকিবই টেম্পো বাড়িয়ে দিয়েছে
ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে ব্যাটসম্যানরা চেষ্টা করেছে, বিশেষ করে লিটন-নাঈম শুরু থেকে চেষ্টা করেছিল। তবে ওরা খুব একটা ঝুঁকি নিচ্ছিল না, শুধু বেসিকটা খেলছিল। মারার বলটা মারছিল। আমার মনে হয় ওরা একটু সতর্ক ছিল। ওমানও অবশ্য অনেক ভালো বোলিং করেছে। সাকিব যেটা করে গেছে, সে রানের ফ্লো বাড়িয়ে দিয়েছে। সে একটু অ্যাগ্রসিভ করার ট্রাই করেছে। নাঈম বল বাই রান করে খেলছিল, যেটা আমার কাছে মনে হয় দলের জন্য ভালো হচ্ছিল না বেশি। কিন্তু সাকিব এসে টেম্পো বাড়িয়ে দিয়েছে। এরপর ওরা ১০ ওভারের পর একটা বড় ওভার পাওয়ায় রানের গতি বেড়ে গেছে।
তাড়াহুড়োয় শেষটা ভালো হয়নি
কালকে দল বেশ চাপে ছিল। দ্বিতীয়ত ওমান দলের সাথে খেলতে অনেক চিন্তা করতে হয়, যেটা বাংলাদেশ দলের জন্য অনেক বড় ধাক্কা। আমার মনে হয় আমরা ওই সময় স্বাভাবিক ক্রিকেট খেলতে পারিনি। আমাদের বুঝতে হতো, সেই মুহূর্তে দলের কন্ডিশন ভালো না। আমরা বেসিকে থাকতে থাকতে পারলে হয়তো রান ১৬০-১৬৫ হতো। কিন্তু বেশি তাড়াহুড়ো করায় সেটা হয়নি।
মুশফিক আট নম্বরের ব্যাটসম্যান নয়
আমি প্লেয়ার হিসেবে মনে করি মুশফিক আট নম্বরের ব্যাটসম্যান না। হ্যাঁ, কালকে হয়তো সিদ্ধান্তটা নিতে হয়েছে দলকে বিভিন্ন কারণে, দলও জিতেছে। কিন্তু তারপরও আমি বলব মুশফিক যেভাবে মারতে পারবে বা মারতে পারবে, আমার মনে হয় না আফিফ, সোহান বা অন্যরা সেটা করতে পারবে। আমি কাউকে ছোট করছি না। কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে, মুশফিক অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। প্রথম ম্যাচে হয়তো ওর ব্যাটে বল আসছিল না। কিন্তু মুশফিক ছয়টা বল খেলতে পারলে সে যতটা বিপজ্জনক হবে, অন্যরা হবে না। কারণ সে ৩৬০ ডিগ্রি ব্যাট করতে পারে, যেটা অন্যদের নেই। ওইদিক থেকে মুশফিক আগে নামলে সে খেলাটা ফিনিশ করতে পারত। শেষের দিকে একটা বল ডট দেওয়াটাও তার জন্য সম্ভব ছিল না। আউটও হয়েছে মারতে গিয়েই। কিন্তু থার্ডম্যান দিয়ে কানেক্ট করতে না পারায় ওটা হয়নি। আমার কাছে মনে হয় প্লেয়ার হিসেবে সিদ্ধান্তটা অন্যরকম লেগেছে।
আমাদের ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিং অর্ডার চেঞ্জ করতে হবে। আপনি যদি দেখেন যে উইকেট পড়ে যাচ্ছে প্রথম ৬ ওভারে হয়তো তিন উইকেট পড়ে গেছে, তাহলে কিন্তু ওখানে মাহেদীকে ট্রাই করাতে পারেন না। মাহেদীকে ওর খেলা খেলতে দিতে হবে। মাহেদী কিন্তু মুশফিকের মতো খেলতে পারবে না। যখন ৩-৪ ওভারে যদি রান না ওঠে, তাহলে একটা ট্রাম্পকার্ড হিসেবে ট্রাই করতে পারেন। সেজন্য ম্যাচের পরিস্থিতি অনুয়ায়ী আমাদের ভাবতে হবে।
দলের আবহ এখন ভালো
সাকিব কিন্তু কালকেই বলেছে, ড্রেসিংরুমের আবহ এখন ভালো। বিশ্বকাপ মানেই কিন্তু বাড়তি চাপ। আপনি স্কটল্যান্ডকে বাংলাদশকে আনলে ওদের দশটা ম্যাচের মধ্যে দশটা ম্যাচই হারার সম্ভাবনা থাকে। বাংলাদেশও একটু চাপে ছিল। আগের প্রস্তুতি ম্যাচগুলো ভালো হয়নি তাদের। যার কারণে সবাই একটু পাজলড ছিল। পাপুয়া নিউ গিনির সাথে আমাদের ফ্রন্টফুটে চিন্তা করতে হবে। ওদের সমীহ করতে হবে। কিন্তু ওদের সাথে হেরে যাব, এই চিন্তা করলে হবে না। এখন আমাদের তাকাতে হবে সামনের দিকে।
টি-টোয়েন্টি অভিজ্ঞদের খেলা
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট কিন্তু আসলে অভিজ্ঞদের খেলা, এখানে মুহূর্তের মধ্যে খেলাটা বদলে যায়। চাপও অনেক বেশি। একজন নতুন একজন এসে কিন্তু এই চাপ নিতে পারে না। মাঠে কোন জায়গায় কী করতে হবে সেটা এই অভিজ্ঞরাই বলে দেবে। সবসময় হয়তো হবে না, কিন্তু বেশির ভাগ সময় হবে। তাই নতুনদের এই পরিস্থিতিটা বুঝার জন্য সময় দরকার। আমার মনে হয় এই কারণেই টি-টোয়েন্টিতে অভিজ্ঞদের সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
লিটনের হয়তো ব্রেক দরকার
বাংলাদশ দলে কারও জায়গাই সেট না। এখন লিটন দাসকে আমরা খেলাচ্ছি, কিন্তু ও তো সেট প্লেয়ার না। সে কিন্তু অনেকগুলো ম্যাচে রান পায়নি। ওর জায়গায় আপনি আরেকজনকে ট্রাই করতেই পারেন। এখন হয়তো লিটনের ওই আত্মবিশ্বাস নেই। অবশ্যই ও অনেক প্রতিভাবান, কিন্তু এখন ওর ফর্ম নেই। সেক্ষেত্রে ও যদি রান না পায় তাহলে সেটা ওর আত্মবিশ্বাসের জন্যও খারাপ। তাই আমার মনে হয় ওর একটা ব্রেক দরকার। মাহেদীকে হয়তো ওপেনিংয়ে নিয়ে আসা যেতে পারে।