• ইমরুল কায়েসের বিশ্লেষণ
  • " />

     

    'অধিনায়কের ওপর সব দোষ চাপানো ঠিক নয়'

    'অধিনায়কের ওপর সব দোষ চাপানো ঠিক নয়'    

    শ্রীলংকার সাথে হারের পর বাংলাদেশ দল দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি ইংল্যান্ডের। তার আগে দলের অবস্থা, অধিনায়কের দায়, টিম ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব, ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশন, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একাদশ এসব নিয়ে কথা বলেছেন ইমরুল কায়েস


     

    লিটনের ক্যাচ মিস

    একটা প্লেয়ার যখন ফর্মে থাকে না, তখন অনেক কিছু কাজ করে। তার মাথায় অনেক রকম চাপ থাকে, ক্যারিয়ার নিয়ে বা পরের ম্যাচ নিয়ে। তখন হয়তো ফোকাসটা ওই জায়গায় থাকে না। তখন মিস হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। একজন প্লেয়ার রান না করলে তাকে জোর করে খেলালে সেটা তার ক্যারিয়ারের জন্যও খারাপ। লিটনের জায়গায় আমি থাকলে হয়তো আমারও একই অবস্থা হতো। তখন তার কাছে ক্যাচ গেলে সেটা মিস হতেই পারে।  আমি আসলে এখানে লিটনের দোষ দেখি না।

    টিম ম্যানেজমেন্টেরও দায় আছে

    অনেকেই অধিনায়কের ওপর সব দায় চাপিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু দিন শেষে মনে রাখতে হবে, একজন অধিনায়কের জন্য কিন্তু এটা ডু অর ডাই। তাকে মাঠের ওই মুহূর্তে তাৎক্ষণিকভাবে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। তার সিদ্ধান্তটা যদি পক্ষে যায় তাহলে সে হিরো, আর না গেলে জিরো। রিয়াদ ভাই আমার চোখে দেখা বাংলাদেশের সেরা দুয়েকজন অধিনায়কের একজন। তিনি খুবই ঠাণ্ডা মাথার একজন মানুষ। ওই সময় রিয়াদ ভাই একটা ওভার ভালো করেছিল। পরে আফিফ ১৫ দিয়েছিল, এরপর রিয়াদ ভাই আবার এসেছে। আমার কথা হচ্ছে, ওই সময় একটা ব্রেক ছিল। রিয়াদ ভাই কিন্তু একা সিদ্ধান্ত নেয়নি। কোচিং স্টাফ ছিল, হেড কোচ মাঠে ঢুকেছিল। ওরা তো সিদ্ধান্ত দিতে পারে যে এরকম করলে ভালো হয়। ম্যানেজমেন্ট যদি এ নিয়ে কিছু জানাত তাহলে কিন্তু তার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হতো। সেজন্য আমি রিয়াদ ভাইয়ের একদমই দোষ দেখছি না। দলের ভালোর জন্য যেটা করার, তিনি সেটাই চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ম্যানেজমেন্টের কাছ থেকে আরেকটু সাপোর্ট পেলে তার জন্য হয়তো ভালো হতো।

    আমার কাছে মনে হয়েছে, ম্যানেজমেন্টের সাথে একটু যোগাযোগের ঘাটতি ছিল। অধিনায়ককে তো অনেক কিছু নিয়ে চিন্তা করতে হয়। এখানে বোলিং কোচ বা হেড কোচের কাছ থেকেও পরামর্শ আসতে হবে, এই সময়ে এটা করলে ভালো হয় বা ওটা করলে ভালো হয়। আপনি অধিনায়ককে একটা মেসেজ দিলে তখন তার কাছেও ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে। আমি নিশ্চিত, এই ব্যাপারগুলো নিয়ে টিম মিটিংয়ে প্ল্যান হয় এই পরিস্থিতি থাকলে কী হবে বা এর চেয়ে খারাপ পরিস্থিতি থাকলে কী হবে। ফিল্ডিং পজিশন কে কোথায় দাঁড়াল, এরপর কে বল করবে- এত কিছু খেয়ালের পর একজন অধিনায়ককে দোষ দেওয়া আনফেয়ার।

    ডানহাতি-বাঁহাতি নিয়ে ভাবনা ভুল

    ডানহাতি বাঁহাতির কম্বিনেশনের কথা যদি বলি, আমরা কিন্তু ওপেনিংয়ে নাসুম আহমেদকে দিয়ে বল করিয়েছি। তখন কিন্তু স্ট্রাইকে কুশল পেরেরা ছিল লেফট হ্যান্ডেড। তাকে কিন্তু নাসুমই আউট করেছে। কিন্তু নাসুমকে তাহলে পাওয়ারপ্লেতে আনা হলো কেন? একজন লেফট হ্যান্ডেড ব্যাটসম্যানের সামনে যে একজন লেফটি বল করতে পারবে না, এই ধারণা খুবই ভুল। সাকিব আল হাসান তো একজন চ্যাম্পিয়ন অলরাউন্ডার, বিশ্বের এক নম্বর। ক্যারিয়ারে সে অসংখ্য উইকেট পেয়েছে। সবগুলো নিশ্চয় ডান হাতি ব্যাটসম্যানকে আউট করে পায়নি। সে জানে কোন জায়গায় বল করতে হবে। ওই জায়গায় যদি সাকিব বা মোস্তাফিজের একজন বল করত আর টাইট দিতে পারত, তাহলে ম্যাচের পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারত।

    মুশফিকের ফেরা সময়ের ব্যাপার ছিল

    আমাদের দেশে যখন একজন বড় প্লেয়ার যে কোনো ম্যাচে রান না পেলে কিন্তু আমরা কাউন্ট করা শুরু করি। আমরা বলতে থাকি, মুশফিক তো এখন ফর্মে নেই। বা রিয়াদ রানে নাই, বা সাকিব বা তামিম রানে নাই। কিন্তু একজন ইয়াং প্লেয়ার যখন একই ভুল করতে থাকে তখন কিন্তু সেটা কাউন্ট করা হয় না।  আমি কিন্তু শুরু থেকেই বলে এসেছি, মুশফিক এমন একজন প্লেয়ার যে কিন্তু মূল পর্বের প্লেয়ার। ঠিক জায়গায় কিন্তু সে রান করবে। মুশফিকের অফ ফর্ম নিয়ে টেনশনের কিছু নেই, আগেও বলে এসেছি। কারণ মুশফিক অনেক পরিশ্রম করে, তার রান না পাওয়া সময়ের ব্যাপার। এখন সে যদি কয়েকটা ম্যাচে রান না পেলে শোরগোল হয়, তাহলে সেটার মানে তাকে আসলে মানসিকভাবে চাপে রাখা।

    স্পিনে ইংল্যান্ডের বৈচিত্র্য বেশি

    আমাদের চেয়ে কিন্তু ইংল্যান্ডের স্পিন অপশন বেশি বৈচিত্র্যময়। ওদের মঈন আলী আছে অফ স্পিনার, আদিল রশিদ আছে লেগস্পিনার। আর লেগস্পিনার হিসেবে অবশ্যই সে বাড়তি সুবিধা আছে। তাই স্পিনিং উইকেট হলে যে আমাদের জন্য বেশি ভালো হবে সেটা আমার মনে হয় না। আমার মনে হয়, ্ট্রু উইকেটে খেলা হলেই আমাদের জন্য ভালো। আগে বল করে যদি ওদের ১৭০-৮০ এর মধ্যে রাখা যায় তাহলে আমাদের সেটা তাড়া করার একটা সম্ভাবনা থাকে।

    তাসকিনের খেলা উচিত

    আমার মনে হয়, তাসকিনকে কাল খেলানো উচিত। আবু ধাবির উইকেটে একটু ঘাস থাকে, ওখানে শারজার চেয়ে একটু বেশি সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা আছে পেসারদের। সেই হিসেবে আমাদের একজন পেসারকে খেলানো যেতে পারে।

    খেলোয়াড়দের নির্ভার রাখতে হবে

    দল এখন মানসিকভাবে অনেক চাপে আছে। ম্যানেজমেন্টেরও প্লেয়ারদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। তারা যত বেশি প্লেয়ারদের নির্ভার রাখতে পারবে তত ভালো। আমার মনে হয়, এখন আমাদের সবার দলের পাশে দাঁড়ানো উচিত। খেলোয়াড়েরা তো স্যাক্রিফাইস করছে, দেশের জন্য খেলছে। এরকম বড় ইভেন্টে যদি আমরা ইতিবাচকভাবে সব কিছু দেখি তাহলে প্লেয়ারদের ওপর থেকে চাপ কমে যাবে। সমালোচনা তো হবেই, তবে আমাদের মাথায় রাখতে হবে সেগুলো যাতে সীমা অতিক্রম না করে।