• ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
  • " />

     

    নিউজিল্যান্ডকে 'হিসেবটা' মাঠেই বুঝিয়ে দিল উড়ন্ত পাকিস্তান

    নিউজিল্যান্ডকে 'হিসেবটা' মাঠেই বুঝিয়ে দিল উড়ন্ত পাকিস্তান    

    সুপার ১২, শারজাহ (টস- পাকিস্তান/ বোলিং)
    নিউজিল্যান্ড ১৩৪/৮, ২০ ওভার (মিচেল ২৭, কনওয়ে ২৭, উইলিয়ামসন ২৫, রউফ ৪/২২, হাফিজ ১/১৬, আফ্রিদি ১/২৪ )
    পাকিস্তান ১৩৫/৫ , ১৮.৪ ওভার (রিজওয়ান ৩৩, আসিফ ২৭*, মালিক ২৬*, সোধি ২/২৮, সাউদি ১/২৫, বোল্ট ১/২৯)
    ফলাফল: পাকিস্তান ৫ উইকেটে জয়ী

     

    ভারতের পাশাপাশি নিজেদের “হিট লিস্টে” নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডকে যোগ করার ডাক দিয়েছিলেন রমিজ রাজা। পিসিবি সভাপতির রণহুঙ্কারে সাড়া দিয়ে অপমানের জবাব মাঠেই দিল পাকিস্তান, তুলে নিল ৫ উইকেটের জয়। হারিস রউফের ৪ উইকেটের সাথে বোলারদের দুর্দান্ত সম্মিলিত পারফর্ম্যান্সে নিউজিল্যান্ডকে ১৩৪ রানে বেঁধে ফেলার পর রানতাড়ায় মাঝপথে খেই হারিয়ে ফেলে পাকিস্তান। এরপর অভিজ্ঞ শোয়েব মালিকের সাথে আসিফ আলির ২৩ বলে ৪৮* রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে টানা দ্বিতীয় জয় নিশ্চিত করে বাবর আজমের দল।

    শারজাহর আগের দুই ম্যাচেই রানপ্রসবা উইকেটের দেখা মিললেও এদিন উইকেট ছিল নতুন। তাই বাবর আজম-মোহাম্মদ রিজওয়ানের শুরুটা ছিল সাবধানী। ট্রেন্ট বোল্ট-টিম সাউদি পেস জুটির আঁটসাঁট বোলিংয়ে অবশ্য রয়েসয়ে খেলা ছাড়া উপায়ও ছিল না। নিজের তৈরি করা চাপের ফল পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে এসে নিজেই পান সাউদি। স্লোয়ারে শট খেলতে গিয়ে স্টাম্প খুইয়ে মাত্র ৯ রানে বাবর ফিরলে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন এই কিউই পেসার। পাওয়ারপ্লেতে অধিনায়ককে হারিয়ে পাকিস্তান তোলে ৩০ রান।

    এরপর আক্রমণে এসেই ইশ সোধি এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে ফেরান উইকেটে ধুঁকতে থাকা ফাখার জামানকে। এক ওভার পরেই ডেভন কনওয়ের অতিমানবীয় ক্যাচে ফেরেন মোহাম্মদ হাফিজ; বাম দিকে অনেকটুকু দৌড়ে গিয়েও এরপর সুপারম্যানস্বরূপ ঝাপ দিয়ে যেই ক্যাচ কনওয়ে নিয়েছেন তা টুর্নামেন্টের সেরাই বলা যায়। এরপরের ওভারে সোধির বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে রিজওয়ানও ৩৩ রান করে থামলে ম্যাচে শক্তভাবে ফিরে আসে কিউইরা। কিউইদের দুর্দান্ত বোলিং-ফিল্ডিংয়ে রানতাড়ায় খেই হারিয়ে এরপর বোল্টের শিকার হয়ে ফিরে যান ইমাদ ওয়াসিম।

    উইকেটে অবশ্য তখনও ছিলেন অভিজ্ঞ শোয়েব মালিক। আসিফ আলিকে নিয়ে এরপর যেই জুটি গড়লেন তা দিয়েই আরও একবার প্রমাণ দিলেন নিজের সক্ষমতার, অভিজ্ঞতার। প্রান্ত বদল করেছেন দক্ষতার সাথে, খারাপ বল পেয়ে যোগ্য সাজা দিতেও ভুল করেননি। মালিক এক প্রান্ত আগলে রাখায় আসিফ আলি শুরু থেকেই তাই ছিলেন নিজের পরিচিত রুপে। ফিল্ডিংয়ের সময় হাত ফস্কে বাউন্ডারি গুনেছিলেন বলে শাদাব খানের তোপের মুখে পড়েছিলেন। সেই শাপমোচনেই যেন বদ্ধপরিকর আসিফ সাউদি-স্যান্টনারের ওপর চড়াও হয়ে মুহূর্তের মধ্যে ম্যাচ পাকিস্তানের পক্ষে নিয়ে আসেন। নিউজিল্যান্ডের সব পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়ে ৮ বল হাতে রেখেই ১২ বলে ২৭* রানের দারুণ ক্যামিও খেলে দলকে এরপর পৌঁছে দেন জয়ের বন্দরে।    

    এর আগে প্রথম ওভারে এদিন কোনও উইকেট না পেলেও মেইডেন দিয়ে শুরু করেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। শুরুর চাপ সামলে হাসান আলির করা ৫ম ওভারে মার্টিন গাপটিল-ড্যারিল মিচেল জুটি নেয় ১৫ রান। তবে পরের ওভারে আক্রমণে এসেই প্রায় ১৫০ কিমি গতির ইয়র্কার দিয়ে শুরু করেন হারিস রউফ। পরের বলেও জায়গা বানিয়ে খেলতে যাওয়া গাপটিলকে অনুসরণ করে ফুল লেংথে বল করলে পায়ে লেগে বল বেল উপড়ে ফেলে। ঐ ওভারে রউফ মাত্র ৬ রান দিলে পাওয়ারপ্লেতে গাপটিলকে হারিয়ে নিউজিল্যান্ড তোলে ৪২ রান।

    পাওয়ারপ্লের পর গিয়ার পাল্টানোর চেষ্টা করতে গিয়ে এরপর থামতে হয় মিচেলকেও। ইমাদ ওয়াসিমকে আগের বলেই মাঠছাড়া করার পর একই কায়দায় বল আকাশে তুলে দিলে লং অনে ফাখার জামানের তালুবন্দি হয়ে ২০ বলে ২৭ রান করে ফিরে যান মিচেল। পরের ওভারে আক্রমণে এসে প্রথম বলেই মোহাম্মদ হাফিজ ফেরান এদিন চারে নামা জিমি নিশামকে। এরপর উইকেটে এসে থিতু হতে কিছুটা সময় নেন ডেভন কনওয়ে, অপর প্রান্তে থাকা কেন উইলিয়ামসনও খুব একটা সুবিধা করতে পারছিলেন না। তবে শাদাব খানের ১৩তম ওভারে মিসফিল্ডিংয়ের দরুন চার পেয়ে যাওয়ায় পরের দুই বলেও চার মারেন কনওয়ে, ঐ ওভারে আসে ১৫ রান। সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে পারত নিউজিল্যান্ড, হয়নি পরের ওভারের প্রথম বলেই রান আউট হয়ে উইলিয়ামসন ফেরায়। হাসানের বল আলতো ছুঁয়েই সিঙ্গেল বের করতে চেয়েছিলেন। হাসানও তড়িৎগতিতে বল তুলে নিয়ে সরাসরি থ্রোতে স্টাম্প ভেঙে দিলে ২৫ রানেই থামেন উইলিয়ামসন।

    উইলিয়ামসনের বিদায়ের পর উইকেটে নবাগত গ্লেন ফিলিপসও ধুঁকছিলেন। উইকেটে বেশ কিছু সময় ব্যয় করার পরে দুজনেই যখন হাত খুলতে চেয়েছিলেন তখনই ১৮তম ওভারে এসে অসাধারণ এক ওভার করেন রউফ। ফিলিপস ও কনওয়ে দুজনকেই ফেরানোর পর ঐ ওভারে মাত্র ২ রান গোনেন তিনি। পরের ওভারের শেষ বলে আগের ম্যাচের নায়ক আফ্রিদি টিম সাইফার্টকে ফেরানোর পর শেষ বলে মিচেল স্যান্টনারের উইকেট তুলে নেন রউফ। পাকিস্তান বোলারদের দারুণ বোলিংয়ে নিউজিল্যান্ড তাই থামে ১৩৪ রানে। সেটা শেষ পর্যন্ত জয়ের জন্য যথেষ্ট হয়নি আর।