মুস্তাফিজের হ্যাটট্রিকের আফসোস
অভিষেকের পর থেকেই আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন মুস্তাফিজুর রহমান। ২ টেস্ট, ৯ ওয়ানডে আর ১৩ টি-টোয়েন্টি ম্যাচেই উইকেট সংখ্যা পঞ্চাশ ছাড়িয়ে গেছে। তাঁর চেয়ে অবাক করা বিষয়, এই ২৪ ম্যাচেই মোট ছয়বার হ্যাট্রিকের সুযোগ পেয়েছিলেন ‘দ্য ফিজ’!
মুস্তাফিজের হ্যাট্রিক চান্সের শুরুটা ওয়ানডে অভিষেকের ম্যাচ থেকেই। ভারতের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট পাওয়া সেই ইনিংসে পরপর দুই বলে সুরেশ রাইনা এবং অশ্বিনকে কুপোকাত করেছিলেন দ্য ফিজ। কিন্তু, তৃতীয় বলে আর উইকেটের দেখা মিলে নি; নামটা লেখা হয় নি অভিষেক ম্যাচে হ্যাট্রিক করা তাইজুল ইসলামের পাশেও। সুযোগ পেয়েছিলেন দ্বিতীয় ম্যাচেও; এবারের শিকার মহেন্দ্র সিং ধোনী ও অক্ষর প্যাটেল। তবে এবারও হ্য্যাট্রিকের আফসোস রয়েই গেল।
ওয়ানডে অভিষেকের কিছুদিন পরেই পড়লেন টেস্ট ক্যাপ; দক্ষিন আফ্রিকার বিপক্ষে। হ্যাট্রিকের সুযোগটা সেখানেও পেয়ে গেলেন। ইনিংসের ৬০তম ওভারের প্রথম বলেই অফ-কাটার; উইকেটরক্ষকের হাতে ধরা পড়লেন হাশিম আমলা। তাঁর পরের বলেই এলবিডব্লিউ’র শিকার জেপি ডুমিনি। প্রথমবারের মত টেস্টে আম্পায়ারিংয়ে অভিষেক হওয়া আম্পায়ার জো উইলসন আউট হয়নি বলেই জানিয়েছিলেন।কিন্তু, রিভিউ নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় উইকেটটি হাতছাড়া হলো না মুস্তাফিজের। তবে তৃতীয় বলে হ্যাট্রিকের সুযোগ আবারো হাতছাড়া হয়ে গেল। ক্রিজে আসা নতুন ব্যাটসম্যান কুইন্টন ডি ককের উইকেটটা পেলেন চতুর্থ বলে।
ওয়ানডেতে হ্যাট্রিকের সুযোগ পেয়েছিলেন আরো একবার; জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩য় ওয়ানডে ম্যাচে। সিকান্দর রাজা ও লুক জংগুয়ে দু’জনই ফিরলেন সাব্বির রহমানের হাতে ক্যাচ দিয়ে। তবে হ্যাট্রিক বলের ভাগ্য মন্দ মুস্তাফিজের; এবারো অধরা সেই হ্যাট্রিক!
ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণেও হ্যাট্রিক বল করেছেন দুইবার। এশিয়া কাপে ঘরের মাঠে আরব আমিরতের মোহাম্মদ শাহজাদ ও স্বপ্নিল পাতিলকে আউট করেছিলেন পরপর দুই বলে; পুরো ম্যাচে তাঁর উইকেট সংখ্যা সেই দুটিই। আর দ্বিতীয় সুযোগটা ছিল সদ্য শেষ হওয়া বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। পুরো ম্যাচে পাঁচ উইকেট পাওয়া মুস্তাফিজুরের হ্যাট্রিক সুযোগ এসেছিল ইনিংসের শেষ তিন বলে। প্রথম দুই বলে স্যান্টনার ও ন্যাথান ম্যাককালামকে ফিরিয়েছিলেন ‘দ্য ফিজ’। তবে তৃতীয় বলে ছয় মেরে হ্যাট্রিক স্বপ্ন ধুলিসাৎ করে দেন কিউই টেল এন্ডার ম্যাকক্লেনাঘান।
আইপিএল এ সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে অভিষেকেও হ্যাট্রিকের সুযোগ এসেছিল। পরপর দুই বলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের ব্যাটসম্যান ডি ভিলিয়ার্স ও শেন ওয়াটসনকে ফিরিয়েছিলেন মুস্তাফিজ। তবে হ্যাট্রিকের আফসোস রয়েই গেল দ্য ফিজের। টেস্ট এবং ওয়ানডে অভিষেকে হ্যাট্রিকের সুযোগ পাওয়া মুস্তাফিজ হয়ত একমাত্র বোলার যিনি হ্যাট্রিকের দেখা পান নি; সাথে রয়েছে আইপিএল অভিষেকের আক্ষেপটাও।
তবে বিশ্ব ক্রিকেটে মুস্তাফিজের চেয়েও হ্যাট্রিকের জন্য অনেক বেশি আফসোস থেকে যাবে মুত্তিয়া মুরালিধরনের। শুধুমাত্র টেস্টেই মোট ১৭ বার হ্যাট্রিকের সুযোগ পেয়েছিলেন এই লঙ্কান স্পিনার। মুরালির চেয়ে বেশি হ্যাট্রিক চান্স পাওয়া বোলার কেবল ওয়াসিম আকরাম। তবে টেস্টে দু’টো হ্যাট্রিক রয়েছে এই বাঁহাতি পেসারের। মুস্তাফিজ তাই আশায় বুক বাঁধতেই পারেন; একদিন ঠিকই দেখা মিলবে অধরা ‘হ্যাট্রিক’ এর!