'রিজার্ভে আরও তিন-চারজনকে নিয়ে যেতে পারতাম'
প্রথম তিন ম্যাচ হারের পর সুপার-১২ এ মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি বাংলাদেশ। তার আগে ইমরুল কায়েস কথা বলেছেন দলের অবস্থা, দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচের পরিস্থিতি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাবসহ নানা কিছু নিয়ে।
সাকিব না থাকাটা দুই দিক দিয়ে ক্ষতি
সাকিব না থাকাটা আসলে দলের জন্য দুই থেকে কঠিন। ও না থাকলে একই সঙ্গে একজন ব্যাটসম্যান আর বোলার কমে যায়। আবার সাকিব যখন মাঠে থাকে, ওর কথাগুলো দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টিম মিটিংয়ে, কোনো একটা পরিকল্পনার সময় অথবা মাঠে যখন রিয়াদ ভাই কোনো সিদ্ধান্ত নেয় সাকিব সেখানে নিজের অবদান রাখে। আবার সাকিব তরুণদেরও উৎসাহ দেয়। এটা দলের জন্য বড় একটা প্রভাব রাখে। এরকম একজন যখন দলের সঙ্গে থাকে, ভালো কিছু বলে, সেটা আরও পাঁচজনকে প্রেরণা জোগায়। এখন কিন্তু আমাদের সিনিয়র বলতে শুধু মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ভাই ও মুশফিক আছেন। উনারা সেই অভাব পূরণ করার চেষ্টা করবেন, কিন্তু সাকিব তো সাকিবই। এদিক দিয়ে সাকিবের অভাবও টের পায় দল।
বাংলাদেশে অভিজ্ঞতার দাম কম
আমার কাছে মনে হয় বাংলাদেশ বাদে প্রতিটা দল কিন্তু অভিজ্ঞদের নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ দলেই শুধু উলটো, এখানে অভিজ্ঞদের বাদ দিয়ে তরুণদের নিয়ে আসা হচ্ছে। আমি জানি না কেন। হয়তো কোচিং স্টাফরা মনে করেন ইয়াং প্লেয়াররা বেশি জোরে দৌড়াতে পারেন, রানিং করেন। হয়তো মাঠে তারা বেশি ভোকাল থাকে। আপনি শ্রীলংকার দল দেখেন, তারা কিন্তু দীনেশ চান্ডিমালের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড় নিয়ে এসেছে। যদিও খেলায়নি, কিন্তু তারা অভিজ্ঞতার দাম দেয়।
শামীম কাল খেলতে নামছে। অবশ্যই তার জন্য এটা বড় মুহূর্ত, তার প্রতি আমার শুভকামনাও রইল। ও ভালো একজন ব্যাটসম্যান। কিন্তু এরকম একটা ইভেন্টে এমন একটা প্রতিপক্ষের সাথে ওকে অভিষেক করাতে হচ্ছে, যেখানে ব্যর্থ হলে মানুষজন বলবে সে এই দেশের জন্য যথেষ্ট ভালো নয়। আমাদের দেশের কালচারে এমনই বলে। আমার মনে হয় না একজন তরুণের জন্য এটা ঠিক আদর্শ একটা উপলক্ষ। অন্য দেশে যেটা হয় বেশ কিছু ম্যাচ খেলিয়ে একজন তরুণকে বিশ্বকাপের জন্য তৈরি করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশেই কেবল এটা একটু উলটো হয়ে গেছে। ইয়াং প্লেয়াররা কিন্তু চাইবে আগে নিজের পজিশন স্টেবল করতে। আপনি দেখেন, আমাদের টপ অর্ডাররাও খেলছে কিন্তু বলে বলে। কারণ তারা চাইছে নিজের জায়গা আগে ঠিক থাকুক। যেটা হয়তো দলের ওপর বড় একটা প্রভাব ফেলছে, যে কারণে পাওয়ারপ্লেতে আমরা ঠিকমতো রান পাচ্ছি না।
রিজার্ভে আরও তিন-চারজন নিতে পারতাম
আমার কাছে মনে হয় ব্যাপারটা বেশ সরল। এক বা দুজনকে যদি বাড়তি নিয়ে যান সেটা বোর্ডের জন্য খুব কঠিন হওয়ার কথা নয়। কত টাকাই বা খরচ হবে তাদের জন্য? কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে ওরা যদি ওই পরিবেশে থাকত, নেটে বল করত, দলের সঙ্গে থাকত তাহলে একটা আবহের সঙ্গে পরিচয় হতো। যেটা তার ক্যারিয়ারের জন্য ভালো হতো। ভারত বা অন্য দল দেখেন সেখানে সাত থেকে আটজন বাড়তি খেলোয়াড়কে নেওয়া হয়েছে। কোভিডের কারণে বাইরে থেকে আনাও কঠিন। সেদিক দিয়ে মনে হয় আমরাও তিন থেকে চারজনকে নিয়ে যেতে পারতাম। যদিও সাকিব-সাইফ উদ্দিন-সোহান ইনজুরড গেছে, যেটা কেউ ভাবেনি। সবকিছু চিন্তা করে আমরা যখন ১৬ জন গেছি, তাহলে তিন-চারজন খেলোয়াড় নিলে আমাদের জন্য ক্ষতি হতো না।
শামসি হবে বড় হুমকি
ওদের রাবাদা আর নরকিয়া এখন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত্তম বোলারদের মধ্যে পড়ে। ওদের বিরুদ্ধে পাওয়ারপ্লে কাজে লাগানো অবশ্যই কঠিন হবে। তবে আমার কাছে মনে হয় আমাদের জন্য হুমকি হতে পারে ওদের চায়নাম্যান তাব্রাইজ শামসি। সে একজন উইকেট টেকিং বোলার, ফর্মেও আছে। ওকে উইকেট না দিলে মিডল ওভারে উইকেট নেওয়ার বেশি বোলার নেই। শুরুতে তাই উইকেট না গেলে ১২-১৩ ওভারের পর থেকে ব্যাপারটা সহজ হবে।
ছক কষেই আটকাতে হবে
এবি ডি ভিলিয়ার্স অবসর নেওয়ার পর আমার মনে হয় না ওদের ব্যাটিং আর সেরকম শক্তিশালী। ডি কক, বাভুমারা যারা আছে যারা সেরকম ফর্মে নেই। মিলার আগের ম্যাচ চেঞ্জ করেছে। তবে আমার কাছে মনে হয় আমাদের গেমপ্ল্যান একদম ঠিকমতো কাজে লাগাতে হবে। ওরা যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো না যে উড়িয়ে মারতে গিয়ে উইকেট দিয়ে আসবে। ওরা নিজেদের পরিকল্পনাতেই আগাবে। সেজন্য বাংলাদেশের ছক কষেই ওদের আটকাতে হবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে দূরে থাকাই ভালো
দিন শেষে প্লেয়াররা কিন্তু মানুষ। বাইরের কথা কিছু কিছু ওদের কানে আসবেই। তবে আমার কাছে মনে হয়, খেলা চলার সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে দূরে থাকাই ভালো। আমি নিজে যখন খেলতাম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে পুরোপুরি দূরে থাকতাম। আমাকে নিয়ে মানুষ অনেক কথা বলেছে, আমি জানিও না কী বলেছে। আমি জানি, সাকিবও একই কাজ করে। টুর্নামেন্ট খেলার সময় সে ফেসবুক বা এসব ডিঅ্যাক্টিভেট করা রাখে, যাতে চাপ থেকে দূরে থাকা যায়। বাইরের কথা যত কানে আসবে, অত চাপ বাড়বে। আমাদের সংস্কৃতিটাই এমন হয়ে গেছে, মানুষের সমালোচনা নিয়ে বেশি কথা হয়।
সাকিবদের ওপর আইপিএলের প্রভাব পড়ার কথা নয়
আমরা কিন্তু ভারতের খেলোয়াড়দের মতো এত ক্রিকেট খেলিনি। ওরা বেশ কয়েক মাস ধরেই টানা খেলে যাচ্ছে। ইংল্যান্ডে এসে টেস্ট শেষ করে আইপিএলে এসেছে। সেই তুলনায় লং সিরিজ আমরা খেলিনি। আমরা ছোট সিরিজই খেলি। সেভাবে বড় সিরিজ আমাদের খেলতে হয়নি। আমার মনে হয় না, আইপিএলের ব্যাপারটা সাকিব-মোস্তাফিজের ওপর খুব বেশি প্রভাব ফেলেছে। আমরা খেলতে পারিনি বলে এসব কথা উঠেছে। সাকিব যখন বিশ্বকাপে গিয়ে ভালো খেলেছে, তখন মানুষই বলেছে সে বিশ্বকাপে ভালো প্রস্তুতি নিয়ে গেছে। আইপিএলের সময় সে নিজেকে ঝালিয়ে নিয়েছে। ব্যাপারটা হচ্ছে, খারাপ হচ্ছে বলেই এখন এসব কথা উঠছে। তবে এটা ঠিক, ভারতের ক্রিকেটারদের একটু ক্লান্ত মনে হচ্ছে। ওরা গত কয়েক মাস ধরে অনেক বেশি ক্রিকেট খেলেছে, সেজন্য ওদের ধকলটা বেশি মনে হচ্ছে। বাংলাদেশের ব্যাপারটা ওরকম নয় বলেই মনে হয়।