• ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
  • " />

     

    কারান-স্টোকসে '৯২-এর প্রতিশোধ নিয়ে মেলবোর্নে শিরোপা ইংল্যান্ডের

    কারান-স্টোকসে '৯২-এর প্রতিশোধ নিয়ে মেলবোর্নে শিরোপা ইংল্যান্ডের    

    ফাইনাল, মেলবোর্ন (টস- ইংল্যান্ড/ বোলিং)

    পাকিস্তান- ১৩৭/৮, ২০ ওভার (মাসুদ ৩৮, বাবর ৩২, রশিদ ২/২২, কারান ৩/১২)

    ইংল্যান্ড- ১৩৮/৫, ১৯ ওভার (স্টোকস ৫২*, বাটলার ২৬, রউফ ২/২৩)

    ফলঃ ইংল্যান্ড ৫ উইকেটে জয়ী।


     

    পাকিস্তানের জন্য '৯২ ফিরে আসেনি। ফাইনালের আগে মিলেছিল অনেক হিসেব, ফাইনালের হিসেব মেলেনি। স্টোকস তা মিলতে দেননি। পাকিস্তানি ব্যাটাররা লড়াইয়ের জন্য বোলারদের দিয়েছিলেন মাত্র ১৩৭ রানের পুঁজি। তাতেই সব নিংড়ে দিয়ে রউফ-শাহিনরা ইংল্যান্ডের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্ত একজনের গায়ে ওসবের ছিটেফোঁটাও লাগার কথা না, লাগেনিও। সবশেষ ফাইনালের স্মৃতি স্টোকসকে বহুদিন তাড়িয়েছে, এবার ফাইনালের স্মৃতি তাকে সুখের অনুভুতিও দেবে। ৫২ রানের ইনিংস খেলে ইংল্যান্ডকে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জেতানোর নায়ক যে বেন স্টোকসই!

    শাহিন আফ্রিদি এর আগে সাতবার প্রথম ওভারেই উইকেট এনে দিয়েছিলেন। তবে শাহিনের কাছে তা যেদিন সবচেয়ে বেশি চাইত পাকিস্তান, সেটি আজকেই। শাহিনও নিরাশ করেননি, ভয়ঙ্কর হেলসকে ফিরিয়ে দিয়েছেন ১ রানেই। কিন্ত ওপাশে থাকা বাটলার ঠিকই চেনা ছন্দে খেলে যাচ্ছিলেন। নাসিম এসে দ্বিতীয় ওভারে তিন চারের মার খেয়ে বসেন। রউফ এসে এরপর আগুন ঝরান, প্রথম ওভারেই এসে ফিরিয়ে দেন সল্টকে। কিন্ত পাকিস্তানের জয়ের পথে সবচেয়ে বড় বাঁধার নাম বাটলার। সেই বাটলারকে ২৬ রানেই প্যাভিলিয়নে পাঠিয়ে দেন রউফ। ১৩৭ রানের পুঁজি থেকে পাওয়ারপ্লেতে ৪৯ রান হারালেও তিন উইকেট তুলে নেয় পাকিস্তান।

    স্টোকস-ব্রুক মিলে দেখেশুনে খেলতে থাকেন। নিয়মিত সিঙ্গেল-ডাবলস বের করে আস্কিং রেট নাগালের বাইরে যেতে দেননি। ইনিংসের অর্ধেক পথে আস্কিং রেট চলে আসে ছয়ের কাছাকাছি। ২০ রানে ব্রুক চলে গেলেও একপাশে থাকেন স্টোকস। থাকেন একেবারে শেষ পর্যন্ত। ৫ ওভারে ৪১ রানে হিসেব নিয়ে এসে পাকিস্তান টিকে ছিল ম্যাচে। কিন্ত দুই ওভারেই আবার ছিটকে যায় তারা। ভিন্ন দুটি ওভারে টানা চার বলে বাউন্ডারি মারে ইংলিশরা, ইফতিখার-ওয়াসিমের দুই ওভার থেকে চলে আসে ২৫ রান। ১৮ বলে ১২ রানের সহজ সমীকরণ মিলিয়ে ফেলতে এরপর স্টোকস বল ব্যবহার করেছেন ছয়টি কম। এক ওভার হাতে রেখেই দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ের উল্লাসে মেতেছে ইংল্যান্ড।

    ইংল্যান্ডের ফাইনালের শুরুটা যদিও হয়েছিলো এক ভুল দিয়ে। ফাইনালের আগে ইংল্যান্ড একটিও নো বল করেনি, এদিন প্রথম বলেই স্টোকস করে ফেলেন নো। প্রথম ওভারে কিছুটা এলোমেলো বোলিং করলেও ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ চলে যায় ইংল্যান্ডেরই হাতে। বোলিংয়ে বৈচিত্র্য রেখে চতুরতার সাথে ওয়েকস-কারান মিলে পাওয়ারপ্লেতে বাবর-রিজওয়ানকে বেধে রাখেন। প্রথম ছয় ওভারে পাকিস্তান মারতে পারে মাত্র তিন বাউন্ডারি। পাওয়ারপ্লেতে ৩৯ রান তুলতেই হারিয়ে ফেলে রিজওয়ানের উইকেট। হারিস এসে আগ্রাসী মনোভাব দেখালেও ইংলিশ আক্রমণের সামনে পেরে উঠেননি, এক অঙ্কেই ফিরে যেতে হয় তাকে। 

    বাবর-মাসুদের জুটিতে পাকিস্তান ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যায়। দুজনে নিয়মিত স্ট্রাইক বদলে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন পাকিস্তানকে, কিন্ত বাউন্ডারি খুঁজে নিতে বেগ পেতে হচ্ছিলো। ১০ ওভার শেষেও তাই তাদের স্কোর ৬৮ এর বেশি হয়নি। ড্রিংকস ব্রেকের পরেই আক্রমণাত্মক রুপ ধরেন মাসুদ, লিভিংস্টোনকে চার-ছয় মেরে সে ওভার থেকে মোট তারা এনে ফেলেন ১৬ রান। এরপরেই আবার খেই হারিয়ে ফেলে পাকিস্তান। চতুর্থবারের মতো রশিদের গুগলিতে পরাস্ত হন বাবর, ৩২ বলে ৩৮ রান করে বাবরের ফেরার পর ইফতিখারও ফিরে যান পরের ওভারেই। 

     

    শাদাব-শান মিলে ইনিংসে প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন কিছুটা। স্বাচ্ছন্দ্যে খেলে যাচ্ছিলেন শাদাব। ১৫তম ওভারে একশ পেরিয়ে যায় পাকিস্তান। লড়াকু স্কোর গড়ার সম্ভাবনা জাগিয়েছিল তখন পাকিস্তান। কিন্ত শাদাবের ইনিংসটা ২০ রানের বড় হয়নি। শান মাসুদের ইনিংসও থেমে যায় ৩৮ রানেই। মেলবোর্নের বড় বাউন্ডারি ক্লিয়ার করতে পাকিস্তানের একের পর এক ব্যাটসম্যান ফিরে যান প্যাভিলিয়নে। 

    শেষ পাঁচ ওভারে চার উইকেট হারিয়ে ফেলে পাকিস্তান, শেষ ৩০ বলে আনতে পারে মাত্র ৩১ রান। পাওয়ারপ্লেতে দুই ওভারে পাঁচ রানে ১ উইকেট নেওয়া কারান ডেথে এসে ১২ বলে ৭ রানে নেন ২ উইকেট। পার স্কোরের কমেও আটকে যায় পাকিস্তান, ১৩৭ রানের সম্বল নিয়েও লড়ে গিয়েছিল তাদের বোলাররা। কিন্ত স্টোকস তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটির জন্য এদিনটাই যে বেছে নিয়েছিলেন। যেদিন তিনি ফাইনালের খলনায়ক হবেন না, হবেন নায়ক!