মানে এবং আফ্রিকার সেরা ফুটবলারের অভিশাপ
চোটটা শুরুতে নিরীহই মনে হচ্ছিল। বুন্দেসলিগায় বায়ার্নের হয়ে খেলার সময় সাদিও মানের অভিব্যক্তি দেখেও বোঝা যায়নি, সেটা এতোটা গুরুতর ছিল। সেই চোট মানের বিশ্বকাপ স্বপ্নই শেষ করে দিল। আফ্রিকান বর্ষসেরা ফুটবলার, ব্যালন ডি অরে দ্বিতীয় মানের আর বিশ্বকাপে খেলা হলো না। আফকন চ্যাম্পিয়ন হয়েও মানেকে এখন বসে থাকতে হবে দর্শক হিসেবে। আর মনে করিয়ে দিল পুরনো সত্যটা, আফ্রিকান বর্ষসেরা ফুটবলারের জন্য বিশ্বকাপ কি অভিশাপ?
চার বছর পিছিয়ে যাওয়া যাক। চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে রিয়ালের মুখোমুখি লিভারপুল। রামোসের সাথে ধাক্কায় কাঁধের হাড় নড়ে গেল মো সালাহর। মিশরের হয়ে বিশ্বকাপ খেলাই সংশয়ে। সেবারের আফ্রিকান বর্ষসেরা ফুটবলার সালাহ অবশ্য ঠিকই বিশ্বকাপে খেলেছিলেন। তবে শতভাগ ছন্দে ছিলেন না রাশিয়ায়। বলার মতো কিছু করতে পারেননি, মিশরও বিদায় নেয় কিছু না করেই।
শুধু সালাহ নন, ২০১০ সালে দিদিয়ের দ্রগবারও একই পরিণতি। সেবার বিশ্বকাপ শুরুর আগে চোটে পড়েন দ্রগবা। তখন চেলসির হয়ে দারুণ ফর্মে ছিলেন, আইভরি কোস্টেরও বিশ্বকাপে বড় কিছু করার কথা ছিল। দ্রগবা বিশ্বকাপে খেললেন, কিন্তু তার মতো নয়। বিদায় নিল প্রথম রাউন্ড থেকেই।
২০১৪ সালে আবার আইভরি কোস্টের আরেকজন বর্ষসেরা। ইয়াইয়া তোরের বিশ্বকাপে শুরুটা ভালোই হয়েছিল, ম্যাচসেরাও হয়েছিলেন। কিন্তু বড় কিছু আর করতে পারেননি পরে। ২০০৬ সালে স্যামুয়েল ইতোর ভাগ্য আরও খারাপ। তখন বার্সার হয়ে ফর্মের তুঙ্গে থাকা ইতোর ক্যামেরুন সেবার বিশ্বকাপে খেলারই সুযোগ হয়নি।
এই তালিকায় একমাত্র ব্যতিক্রম বলা যায় এ হাজি দিউফকে। সেনেগালের এই তারকা ২০০২ বিশ্বকাপে সাড়া ফেলেছিলেন, দলকে নিয়ে গিয়েছিলেন কোয়ার্টার ফাইনালে। কোনো আফ্রিকান বর্ষসেরার বিশ্বকাপে ভালো করার এটাই বোধ হয় একমাত্র উদাহরণ।
তার আগে যাওয়া গেলেও আফসোসের গল্পই সব। জর্জ উইয়াহকে মনে করা হয় আফ্রিকার সর্বকালের সেরাদের একজন। কিন্তু নিজ দেশ লাইবেরিয়ার হয়ে কখনো বিশ্বকাপে খেলা হয়নি এসি মিলান কিংবদন্তি উইয়ার। এমনকি আফ্রিকার আরেক কিংবদন্তি আবেদি পেলেও কখনো সুযোগ পাননি বিশ্বকাপে খেলার। এবার পেলের সেই আক্ষেপ দূর করবেন তার দুই ছেলে আন্দ্রে ও জর্দান আইয়ু।
তবে আফ্রিকার তারাদের জন্য বিশ্বকাপ দিন শেষে হতাশারই। মানের জন্য আরও বেশি, কারণ তার মতো ফর্ম নিয়ে বিশ্বকাপে আসা হয়নি সম্ভবত আফ্রিকার কোনো ফুটবলারেরই।