• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    লিভারপুলের অধঃপতন: কীভাবে শুরু, কারা দায়ী এবং সামনে পরিত্রাণ কোথায়?

    লিভারপুলের অধঃপতন: কীভাবে শুরু, কারা দায়ী এবং সামনে পরিত্রাণ কোথায়?    

    মাত্র আট মাস আগেই কোয়াড্রপলের জন্য লড়াই করছিল লিভারপুল। প্রথম ইংলিশ ক্লাব হিসেবে অমরত্বের খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছিল তারা। শেষদিনের দুই হার্টব্রেকে শেষ পর্যন্ত দুই শিরোপা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় অলরেডদের। 

    কিন্তু এই মৌসুমে এসে যেন একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে সেই পরাক্রমশালী দল। দুই কাপ থেকে ইতোমধ্যে বিদায় নেওয়া লিভারপুল লিগে অবস্থান করছে দশম স্থানে। মাঠে প্রতিটি ম্যাচেই ধুঁকছে ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যরা।  

    লিভারপুলের এই দৈন্যদশা আকস্মিক মনে হলেও এর বীজ বোনা হয়েছে কয়েক বছর আগেই। ২০২০-২১ মৌসুমের মতো এবার শুধু ইনজুরি বা ফলাফল বের করতে ভুগছে না লিভারপুল। এই মুহূর্তে মাঠ ও মাঠের বাইরের নানা সংকটে জর্জরিত হয়ে আছে ক্লাবটি। এসব সংকটকে বুঝতে হলে আমাদের প্রথমে বুঝতে হবে ক্লাবের মূল দুই স্তম্ভকে। 

    প্রথম স্তম্ভ: এফএসজি, ক্লাবের মালিকপক্ষ

    জন হেনরির নেতৃত্বাধীন ফেনওয়ে স্পোর্টস গ্রুপ লিভারপুলের মালিকানা পায় ২০১০ সালে। এর আগে বেজবল ও অন্যান্য খেলায় বিনিয়োগ করা ফেনওয়ে তাদের পরিচিত বিজনেস মডেলটা প্রয়োগ করে লিভারপুলে এসেও। সেই মডেলটার মূল ভিত্তি সাসটেইনেবিলিটি। অর্থাৎ, ক্লাব যত উপার্জন করবে, তত খরচ করবে। ক্লাবে কোনো বাড়তি বিনিয়োগ আসবে না। 

    এরজন্য একটি ডাটা-নির্ভর সিস্টেম গড়ে তুলে লিভারপুল। খেলোয়াড় স্কাউটিং থেকে শুরু করে কোচ নির্ধারণ, সবই চলে যায় ডাটার আওতায়। 

    এই ডাটা-নির্ভর সিস্টেমের কেন্দ্রে ছিলেন মাইকেল এডওয়ার্ডস। ২০১১ সালে স্পার্স থেকে লিভারপুলে যোগ দেন এডওয়ার্ডস, ক্লাবের পারফরম্যান্স এন্ড এনালাইসিস দলের প্রধান হিসেবে। ২০১৩ থেকে তার পদোন্নতি হয় টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে। ২০১৬ সালে তাকে দেওয়া হয় স্পোর্টিং ডিরেক্টরের দায়িত্ব। 

    এডওয়ার্ডসের অধীনে লিভারপুলের দলবদল নীতি ছিল ‘বাই চিপ, সেল হাই’ (কম দামে কেনো, বেশি দামে বিক্রি করো)। এই নীতি লিভারপুলের জন্য ভালোভাবেই কাজ করে আসছিল। দলবদল ও ডাটা-নির্ভর ক্লাব পরিচালনায় লিভারপুল দ্রুতই একটি অনুকরণীয় উদাহরণ হয়ে ওঠে। 

    কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এই নীতি ধরে রেখে ফুটবল পিরামিডের একদম শীর্ষে অর্থনৈতিকভাবে কমপিট করাটা প্রায় অসম্ভব। তারপরও দক্ষ স্কাউটিংয়ের জন্য এতো কম খরচ করেও দেশ সিটি, ও বাইরে রিয়াল মাদ্রিদের মতো দলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছিল লিভারপুল। কিন্তু ১০ বছরে প্রথম অর্থনৈতিক দুর্যোগেই ভেঙে পড়তে শুরু করে লিভারপুলের বিজনেস মডেল। এই প্রসঙ্গে পরে আসছি।  

    দ্বিতীয় স্তম্ভ: ইয়ুর্গেন ক্লপ, ক্লাব ম্যানেজার  

    বর্তমান ফুটবলে যে হাতেগোনা কজন ম্যানেজার তাদের দর্শন নিয়ে আপোসহীন, তাদের মধ্যে একজন ইয়ুর্গেন ক্লপ। তার কাউন্টার প্রেস নির্ভর ফুটবলকে বলা হয়ে থাকে গেগেনপ্রেসিং। এই ফুটবল দিয়েই জার্মানিতে সাফল্য পেয়েছেন ক্লপ, ইংল্যান্ডেও এসে কুড়িয়েছেন সম্ভাব্য সব শিরোপা। ফলশ্রুতিতে বৈশ্বিকভাবেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে গেগেনপ্রেসিং। সিটি, আর্সেনাল, ইউনাইটেডের মতো রাইভাল ক্লাবগুলোও অল্প-বিস্তর রপ্ত করেছে এই স্টাইল। তবে বলা বাহুল্য, এই ধারার ফুটবলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া যেকোনো খেলোয়াড়ের জন্যই চ্যালেঞ্জিং। 

    ক্লপের দর্শন আর এফএসজির মডেলকে শুরুতেই মনে হয়েছিল ‘পারফেক্ট ম্যাচ’। ক্লপের দর্শনকে ডাটার ছকে বসিয়ে ক্লাব খেলোয়াড় খুঁজতে শুরু করে। সেই মাফিক সাদিও মানে, মোহামেদ সালাহ, অ্যান্ডি রবার্টসন, ডিয়গো জটার মতো দুর্দান্ত সব খেলোয়াড়কে বের করে আনে তারা। প্রথমে একটি স্কোয়াড দাঁড় করানোর পর ক্লপ নিশ্চিত করেন তার মূল দলের কাউকে যেন বিক্রি না করা হয়। এরকম শক্ত অবস্থান না নেওয়ার কারণেই ডর্টমুন্ডে তার সাজানো দলকে ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল কি না। 

    ২০২০ সাল পর্যন্ত সবকিছু ভালোভাবেই চলছিল। এই পর্যায়ে এসে লিভারপুলের মডেলটা এতোটাই কার্যকর প্রমাণিত হচ্ছিল যে পুরো ইউরোপজুড়েই তা নকল করা শুরু করেছে ক্লাবগুলো। এদিকে আগের দুই মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও প্রিমিয়ার লিগ জেতা, এবং রেকর্ড পরিমাণ আয় করা লিভারপুলের পরিকল্পনা ছিল ২০’র গ্রীষ্মে দলবদল বাজারে বড়সড় খরচ করার। কিন্তু এতে বাগড়া বাধায় কোভিড।  লিভারপুলের বর্তমান অধঃপতনের শুরুটা হয় মূলত কোভিডের কারণেই। 

     

    যেভাবে শুরু দুর্যোগের: কোভিডের মহামারী

    কোভিড মহামারীতে বাকি সব ক্লাবের মতো লিভারপুলও অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু কোভিডের ক্ষয়ক্ষতির জন্য লিভারপুল হাত বন্ধ করে বসে থাকলেও দেখা যায় রাষ্ট্র ও অলিগার্ক-নিয়ন্ত্রিত রাইভাল ক্লাবগুলো ঠিকই খরচ করে যাচ্ছে। ম্যান সিটি সেই মৌসুমেও খরচ করে ১৭৩ মিলিয়ন ইউরো। চেলসি ২৪৭ মিলিয়ন।  

    আর কোভিডের জন্য বাজারে মন্দা নামায় দেখা যায় লিভারপুল তাদের স্বল্প বা অপ্রয়োজনীয় খেলোয়াড়দেরও বিক্রি করতে পারছে না। জিনি ভিনাল্ডাম, দিভক অরিগি ক্লাব ছেড়েছেন বিনামূল্যে। এই ফ্রি এজেন্টের তালিকায় এবার যোগ হচ্ছেন নাবি কেইটা, অ্যালেক্স অক্সালেড চ্যাম্বারলিন, জেমস মিলনার এবং রবার্তো ফিরমিনো। 

    পূর্বে স্কোয়াডের বাড়তি খেলোয়াড়দের বিক্রি করাতেও মুনশিয়ানা দেখিয়েছে লিভারপুল। দেজাঁন লভ্রন ১২ মিলিয়ন, ড্যানি ইংস ২৫ মিলিয়ন, ডমিনিক সোলানকি ২১ মিলিয়ন, ড্যানি ওয়ার্ড ১৪ মিলিয়ন, সিমোন মিনোলে ৭ মিলিয়ন ও রিয়ান ব্রুস্টারকে ২৬ মিলিয়ন ইউরোতে বিক্রি করেছে তারা। সব মিলে এই খেলোয়াড়দের বিক্রি করেই এসেছে ১০৫ মিলিয়ন ইউরো। 

    এদিকে ক্লপের শক্ত অবস্থানের কারণে মূল দলের কাউকে বিক্রি করার কথা চিন্তাও করতে পারেনি ক্লাব কর্তৃপক্ষ। চুক্তি শেষ মৌসুমে চলে যাওয়ায় গতবার ব্যালন ডি অর র‍্যাংকিংয়ে তৃতীয় হওয়া সাদিও মানেকে তারা বিক্রি করেছে মাত্র ৩২ মিলিয়ন ইউরোয়। 

    দলবদল নীতি ভেঙে যাওয়ায় সমস্যা বাঁধে ক্লাবের মডেলমাফিক পরিকল্পনায়। এরপরও বাড়তি খরচ করতে নারাজ এফএসজি ক্লাবের অর্থনীতিকে চাঙা করতে প্রথমে যুক্ত হয় ‘প্রজেক্ট বিগ পিকচার’, এবং পরবর্তীতে ‘সুপার লিগ’ পরিকল্পনায়। নতুন লিগের এই দুই পরিকল্পনাই যথারীতি মুখ থুবড়ে পড়ে।  

    ২০২১ সালের নভেম্বরে ক্লাব ছাড়ার ঘোষণা দেন স্পোর্টিং ডিরেক্টর ও বর্তমান লিভারপুলের আর্কিটেক্ট মাইকেল এডওয়ার্ডস। তার স্থলাভিষিক্ত হন জুলিয়ান ওয়ার্ড। যদিও ক্লাব থেকে বলা হয়েছিল সুপরিকল্পিতভাবেই হচ্ছে এই ট্রানজিশন, কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে এক বছরের মধ্যে ক্লাব ছাড়ার ঘোষণা দেন ওয়ার্ডও। 

    ক্লাব ছাড়ার ঘোষণা দেন ক্লাবের গবেষণা দলের প্রধান, ইয়ান গ্রাহাম। ডাটা-কেন্দ্রিক গবেষণায় যাকে সেরাদের একজন হিসেবে দেখা হয়। এই দুজনের ক্লাব ছাড়ার কারণ হিসেবে স্কাই স্পোর্টস বলে, “তারা নিজেদের সক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ পাচ্ছিলেন না”।  

    সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে ক্লাবের একজন কর্মী স্কাই স্পোর্টসকে বলেছেন, “স্কোয়াডে যথেষ্ট পরিবর্তন না আনা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। এটা সত্য। কিন্তু মাঠের বাইরেও একই পরিস্থিতি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ক্লাব ছেড়েছেন। যে কারণে কিছু লোক অনেক বেশি ক্ষমতা পেয়ে গেছে। সব সিদ্ধান্তের প্রতি এখন আস্থা কমে এসেছে।”

    ইনজুরি ও ফিটনেস

    স্বাভাবিকভাবেই মাঠের বাইরের এসব কোন্দল লিভারপুলের মাঠের খেলাতেও প্রভাবিত করেছে। গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, দুটি বড় প্রতিযোগিতা শেষদিনে গিয়ে হারা খেলোয়াড়দের মানসিকভাবে দুর্বল করে দিয়েছে কিছুটা। 

    এদিকে চুক্তি নবায়ন করা দলের সিনিয়র খেলোয়াড়দের প্রায় সবাই পেরিয়েছেন ৩০। বিনিয়োগের অভাব ফুটে উঠতে শুরু করেছে দলের চেহারায়, বিশেষ করে মিডফিল্ডে। যেখানে ২০১৮ সালের পর মাত্র একজন সিনিয়র খেলোয়াড় যোগ করেছে লিভারপুল। সেই খেলোয়াড়ের বয়সও ত্রিশোর্দ্ধ, এবং যথেষ্ট ইনজুরি-প্রোন। অবশ্য শুধু থিয়াগো না, বর্তমানে পুরো লিভারপুল দলই এক অর্থে ইনজুরি-প্রোন। 

    লিভারপুলের এই ইনজুরি সমস্যাও কিন্তু দৈবভাবে দেখা দেয়নি। দ্য অ্যাথলেটিক, স্কাই স্পোর্টসের মতো অনেক নেটওয়ার্কের দাবি এর পিছনেও ভিতরের কোন্দল দায়ী। ক্লাবে খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে দুটি দল। এক দলে ফিজিওথেরাপিস্টরা, আরেক দলে ফিটনেস কোচ বা স্পোর্টস সায়েন্টিস্টরা। লিভারপুলে এই দুই দলের মধ্যে রয়েছে দীর্ঘদিনের টানাপোড়ন। নিয়ম অনুযায়ী, এই দুই দলের মধ্যে সমঝোতা স্থাপন করার দায়িত্ব ক্লাব ডাক্তারের। তা করতে বার বার ব্যর্থ হয়ে এই মৌসুমের শুরুতেই পদত্যাগ করেন লিভারপুলের ক্লাব ডাক্তার জিম মক্সন। 

    কয়েকমাস ডাক্তারবিহীন থাকার পর জোনাথান পাওয়ারকে ক্লাব ডাক্তার হিসেবে নিয়োগ দেয় লিভারপুল। পাওয়ার তার পদে কেমন করবেন, তা সময়ই বলে দিবে। কিন্তু ফিজিও বনাম ফিটনেস কোচদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব এত সহজে সুরাহা হচ্ছে না। অ্যাথলেটিক, স্কাই দুই নেটওয়ার্কই এই টানাপোড়েনের জন্য আঙুল তুলেছে ক্লপের ফিটনেস কোচ আন্দ্রে কর্নমেয়ারকে, যার সঙ্গে কাজ করাটা নাকি অনেকের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। 

    লিভারপুলের ফিটনেস সমস্যার পিছনে আরেকটি বড় কারণ শারীরিক ফ্যাটিগ। অন্য যেকোনো খেলার ধরনের চেয়ে গেগেনপ্রেসে একজন খেলোয়াড়কে বেশি পরিশ্রম করতে হয়, বেশি দৌড়াতে হয়। আর বেঞ্চ তেমন ভারী না হওয়ায় একটি একাদশের উপরই পুরোপুরি নির্ভর করতে হয় ক্লপকে। বিগত মৌসুমে ইউরোপের যেকোনো টিমের চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছে লিভারপুল। চারটি বড় টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছে তারা, এবং সবকটিতেই খেলেছে সম্ভাব্য সকল ম্যাচ। 

    প্রতি ম্যাচের পর কতটুকু বিশ্রাম জরুরী তার ভিত্তিতে গত বছর একটি মেট্রিক স্থাপন করে ফিফপ্রো। তাতে দেখা যায় অ্যান্ডি, রবার্টসন, মোহামেদ সালাহ, ট্রেন্ট আলেকজান্ডার আর্নল্ড, অ্যালিসন বেকারের মতো লিভারপুলের অনেক খেলোয়াড় মৌসুমের সিংহভাগ ম্যাচ খেলেছে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম বিশ্রাম নিয়ে। এই বাড়তি ম্যাচ খেলার প্রভাব যে তাদের শরীরে একসময় পড়বে, তা অনুমিতই ছিল। ক্লপের পূর্বের দলগুলোতেও এক মৌসুমে এসে এরকম ফ্যাটিগ দেখা গেছে।   

    অকেজো গেগেনপ্রেসিং

    এটাও সত্য, ২০২২ সালে এসে লিভারপুলের খেলার ধরণের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে অনেক ক্লাব, বিশেষ করে প্রিমিয়ার লিগে। এটা ক্লপের জন্য নতুন সমস্যা না। এর সমাধান করতে এর আগে তিন থেকে চারবার নিজেদের খেলার ধরনে পরিবর্তন এনেছেন  ক্লপ। কিন্তু এবার উপরের সব সমস্যার সঙ্গে একের পর এক ইনজুরি মিলিয়ে লিভারপুলের অবস্থা দাঁড়িয়েছে এমন, নিজেদের পরিচিত ফুটবলটাই খেলতে পারছে না তারা। এই মৌসুমের প্রায় সবকটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেই প্রতিপক্ষের তুলনায় কম দৌড়েছে লিভারপুল। ক্ষিপ্রতার অভাবে ক্লপের কাউন্টার প্রেসিং সিস্টেম পুরোপুরি ভেঙে গেছে। এবং কাউন্টার প্রেস কাজ না করায় রক্ষণ ও আক্রমণভাগ দুই জায়গাতেই মার খাচ্ছে লিভারপুল। 

    মৌসুমের শুরুতে যখন সব সমস্যা মাথাচাড়া দিতে শুরু করে, স্কোয়াডে বড়সড় বিনিয়োগ করার ডাক আসতে শুরু করে, তখন এ থেকে পালিয়ে বাঁচার ফন্দি আটে এফএসজি। ঘোষণা দেয় ক্লাব বিক্রি করে দেওয়ার। এফএসজির এই ‘কাপুরুষোচিত’ সিদ্ধান্ত লিভারপুলকে আরও একঘরে করে দেয়। 

    এফএসজির অনিচ্ছায় জানুয়ারি উইন্ডোতেও কোনো মিডফিল্ডার দলে ভেড়ায়নি লিভারপুল। যার মানে, এই মৌসুমকে রক্ষা করার আশা এক অর্থে ছেড়েই দিয়েছে ক্লাবের কর্তারা। 

    সামনে কী? 

    এই সংকট থেকে রক্ষা পাওয়ার সহজ কোনো রাস্তা নেই লিভারপুলের। ক্লাবের পুরো কাঠামো এক অর্থে ভেঙে গেছে। যা সারাই করতে সময়, ধৈর্য ও মেধা লাগবে। নতুন মালিক এসে সবকিছু গুছাবে, সেই আশা হয়তো এফএসজিও করছিল। কিন্তু ক্লাব বিক্রির ঘোষণা দিলেও এখনো জুতসই কোনো অফার পায়নি এফএসজি। আরব দেশগুলো থেকে বিনিয়োগ গ্রহণ করার ব্যাপারেও রয়েছে এফএসজি, ক্লপ ও স্থানীয়দের আপত্তি। 

    এই অবস্থায় পুরোপুরি বিক্রির চিন্তা দূরে সরিয়ে মাইনরিটি ইনভেস্টমেন্ট নেওয়ার কথাও ভাবছে এফএসজি। কিন্তু একাধিক ব্যক্তি বা কোম্পানির মালিকানা ক্লাবের দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনার জন্য দুঃসংবাদ। এর সাথে, ক্লাবের হায়ারার্কি থেকে যে পরিমাণ মেধা পাচার হয়েছে সেটি পূরণ করতেও এফএসজি কতটা ইচ্ছুক তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।  

    ক্লাব বর্তমানে যে ট্রানজিশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তার দেখভাল করছেন ক্লপ নিজেও। নতুন মালিকানা নিয়ে তার পরামর্শ শুনবে ক্লাব। নতুন মালিক আসলে তারা ক্লপকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়ার অঙ্গীকার করেই আসবে। এবং ক্লাবের কাঠামো যদি/যখন নতুন করে গড়ে তোলা হবে, সেখানে ক্লপের মতামতই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে। 

    তবে ক্লপের ওপর লিভারপুলের এই মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরতা একদিক দিয়ে ক্লাবের জন্য অশনী সংকেত হয়ে আসতে পারে। একই সঙ্গে কোচের দায়িত্ব থেকে শুরু করে সবকিছু ক্লপ একা কীভাবে সামাল দেবেন, সেটা বড় প্রশ্ন। তবে ঝড়ের সময়ে জাহাজের দায়িত্ব যদি একজনকে দিতে হয়, লিভারপুল ভক্তরা সেটা ইয়ুর্গেন ক্লপকেই দেবে।