• ইংল্যান্ডের বাংলাদেশ সফর
  • " />

     

    চেষ্টা চালিয়েও 'ম্যাজিকাল মালান'-এর কাছে বাংলাদেশের নতি স্বীকার

    চেষ্টা চালিয়েও 'ম্যাজিকাল মালান'-এর কাছে বাংলাদেশের নতি স্বীকার    

    ১ম ওয়ানডে, মিরপুর (টস-বাংলাদেশ/ব্যাটিং)
    বাংলাদেশ- ২০৯, ৪৭.২ ওভার (শান্ত ৫৮, মাহমুদউল্লাহ ৩১, তামিম ২৩, উড ২/৩৪, মঈন ২/৩৫, আর্চার ২/৩৭)
    ইংল্যান্ড- ২১২/৭, ৪৮.৪ ওভার (মালান ১১৪*, জ্যাকস ২৬, রশিদ ১৭*, তাইজুল ৩/৫৪, মিরাজ ২/৩৫, তাসকিন ১/২৬)
    ফলাফল: ইংল্যান্ড ৩ উইকেটে জয়ী

     

    জয়ের আশা জাগিয়েও ডাভিড মালানের অনবদ্য সেঞ্চুরির কাছে হার মানতে হল বাংলাদেশকে। নাজমুল হোসেন শান্তর প্রথম ওয়ানডে ফিফটির পর বাংলাদেশের ইনিংসের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান অতিরিক্ত থেকে আসায় বাংলাদেশের আশার জায়গা ছিল কমই। তা সত্ত্বেও মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, তাইজুল ইসলামদের দারুণ স্পেলে ইংল্যান্ডকে চেপে ধরলেও ১৪৫ বলে ১১৪* রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে ইংল্যান্ডকে প্রায় একাই জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েছেন মালান।

    ২০৯ রানের সংগ্রহ নিয়েও বাংলাদেশের শুরুটা অবশ্য হয়েছিল নিজদের মনমত। প্রথম বলেই সাকিব আল হাসান নিজেই সুযোগ তৈরি করেও লুফে নিতে ব্যর্থ হলেও ওভারের শেষ বলে ঠিকই মাত্র ৪ রানেই ফেরান জেসন রয়কে। তাসকিন আহমেদের দারুণ স্পেলের সাথে সাকিবের আঁটসাঁট বোলিংইয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়া ইংল্যান্ডকে চেপে ধরে আক্রমণে এসে উইকেট পেয়ে যান তাইজুল ইসলাম। নিজের দ্বিতীয় ওভারে সল্টকে ফেরানোর পর ১৩তম ওভারে দারুণ এক অফ ব্রেকে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে আসা জেমস ভিন্সকেও ফেরান তিনি। আক্রমণে ফিরে বাংলাদেশের জয়ের আশার পালে সবচেয়ে জোর হাওয়াটা দেন তাসকিন, মাত্র ৯ রানে জস বাটলারকে স্লিপে তালুবন্দি করে। তবে সেখান থেকে উইল জ্যাকসকে নিয়ে মাটি কামড়ে পড়ে থেকে ইংল্যান্ডের ইনিংসকে পথ দেখান মালান। ৯ রানে থাকার সময় মোস্তাফিজকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়া জ্যাকস উইকেটে সুবিধা করতে না পারলেও অন্য প্রান্তে অবিচল ছিলেন মালান। উইকেটে জবুথবু হয়ে থাকা জ্যাকস তাই গিয়ার পাল্টাতে গিয়ে মিরাজের সাদাসিধে এক বলে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ করে দিয়ে ২৬ রানে ফেরেন তিনি।

    জ্যাকস ফিরলে মালান নিজেও কিছুটা সাবধানী হয়ে যান। সেই ৭ ওভারে ইংল্যান্ড মাত্র ১৫ রান তুললেও ৯২ বলে মালান তুলে নেন ফিফটি। মঈনকে সাথে নিয়ে তিনি কিছুটা মন্থর হয়ে পড়লে সেটার সুযোগ নিয়ে নিজের স্পেলের শেষ বলে দারুণ এক আর্ম ডেলিভারিতে ৩২ বলে ১৪ রানে থাকা মঈনের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন মিরাজ। ৩৯তম ওভারে ক্রিস ওকসও তামিমের দারুণ এক ঝাঁপিয়ে পড়া ক্যাচে ৭ রানে ফিরলে জয়ের স্বপ্ন বুনতে শুরু করে বাংলাদেশ। শেষ ১০ ওভারে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ৪৪ রান, বাংলাদেশের প্রয়োজন ৩ উইকেট - এমন সমীকরণ সামনে নিয়ে মালান যেন হয়ে উঠলেন অপ্রতিরোধ্য। সেই সাথে উইকেটে আসা আদিল রশিদও তাকে দেন দারুণ সঙ্গ। উইকেট পড়ে ফেলা মালান অনড় থেকে এরপর তুলে নেন নিজের ৪র্থ ও টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। সেখান থেকেই চাপের মুখে মালান-রশিদের ৫৯ বলে ৫১* রানের অসাধারণ জুটিতে কঠিন একটা ম্যাচ শেষদিকে যেন সহজেই জিতে নেয়।  

    এর আগে পিচে কিছুটা ঘাস থাকায় সেটার সুযোগ নিয়ে দারুণ পেস-বাউন্সের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন ক্রিস ওকস-মার্ক উডরা। প্রথম ওভারে ওকসকে সরাসরি ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়া তামিম অবশ্য আর্চারের করা পরের ওভারে ১২ রান নিয়ে ছন্দে আসার ইঙ্গিত দেন। এর পরের দুই ওভারেও লিটনকে সঙ্গী করে ১২ করে নেওয়ার পর ওকসের আঘাতে রণে ভঙ্গ দেন লিটন, ৭ রানে। উইকেটে আসা শান্ত ৮ম ওভারে ৪ রানে থাকার সময়ে রয়ের দুর্দান্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বেঁচে যান। অন্য প্রান্তে অবশ্য বাঁচতে পারেননি তামিম। ছন্দে থাকলেও আক্রমণে আসা উডের অতিরিক্ত পেসে বিভ্রান্ত হয়ে উইকেটে বল ডেকে এনে তিনি ফেরেন ২৩ রানে। মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে এরপর ইনিংস গড়া চেষ্টা চালাচ্ছিলেন শান্ত। সময় যত গড়িয়েছে ততই স্পিন বান্ধব হয়েছে উইকেট। তা সত্ত্বেও হুট করেই যেন মতিভ্রম হয় মুশফিকের। এর আগের ওভারেই সুইপ করতে যেয়ে বল আকাশে ভাসিয়ে বেঁচে গেলেও ২০তম ওভারে রশিদের হালকা লাফিয়ে ওঠা বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ করে দিয়ে মুশফিক ফেরেন ৩৪ বলে ১৬ রানে। কিছুক্ষণ পরে সাকিব আল হাসানও হাঁটলেন একই পথে। উইকেটের লেগে থেকে সুইপ করতে যেয়ে স্টাম্প খুইয়ে মঈনকে উইকেট উপহার দিয়ে ৮ রানে ফেরেন তিনি।

    মাহমুদউল্লাহকে সঙ্গী করে এরপর ধীর লয়ে ইনিংস মেরামতের কাজ সেরেছেন শান্ত। মাঝে আর্চারকে আরও একবার আধা সুযোগ দিয়েছিলেন, তবে মাথা ঠাণ্ডা রেখে এরপর ৬৭ বলে তুলে নিয়েছেন কারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে ফিফটি। তবে উড-রশিদের দারুণ স্পেলে দুজনকেই বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল। তারই পরিক্রমায় শিকল ছিড়ে বের হতে গিয়ে রশিদের মামুলি এক বলে তাকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে থামেন শান্ত, ৮২ বলে ৫৮ রানের ইনিংস শেষে। ঠিক পরের ওভারেই উডের লেগ সাইড দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা মেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে থামেন মাহমুদউল্লাহ, ৪৮ বলে ৩১ রানের ইনিংস খেলে। বিপদের গন্ধ পেয়ে ৩ ওভারের মাঝেই ৪ রানে আফিফ হোসেন ও ৭ রানে মিরাজকে ফেরায় ইংল্যান্ড। ৩ রানে থাকার সময় তাসকিন রিভিউ নিয়ে বেঁচে যাওয়ার পর তাইজুলকে সাথে নিয়ে গড়েন ২৬ রানের মহাগুরুত্বপূর্ণ জুটি; বাংলাদেশের সংগ্রহ পেরোয় ২০০। তাদের সেই প্রচেষ্টা অবশ্য দিন শেষে একাই ভেস্তে দিয়েছেন মালান।