• ইংল্যান্ডের বাংলাদেশ সফর
  • " />

     

    রশিদ-কারানের স্পিন-সুইংয়ে বাংলাদেশের অসহায় আত্মসমর্পণ

    রশিদ-কারানের স্পিন-সুইংয়ে বাংলাদেশের অসহায় আত্মসমর্পণ    

    ২য় ওয়ানডে, মিরপুর (টস-বাংলাদেশ/বোলিং)
    ইংল্যান্ড- ৩২৬/৭, ৫০ ওভার (রয় ১৩২, বাটলার ৭৬, মঈন ৪২, তাসকিন ৩/৬৬, মিরাজ ২/৭৩, তাইজুল ১/৫৮)
    বাংলাদেশ- ১৯৪, ৪৪.৪ ওভার (সাকিব ৫৮, তামিম ৩৫, মাহমুদউল্লাহ ৩২, কারান ৪/২৯, রশিদ ৪/৪৫, মঈন ১/২৭)
    ফলাফল: ইংল্যান্ড ১৩২ রানে জয়ী


     

    ইংল্যান্ডের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেই সিরিজ খোয়াল বাংলাদেশ। জেসন রয়ের দারুণ সেঞ্চুরির সাথে জস বাটলারের মারমুখী ফিফটি, মঈন আলী ও স্যাম কারানের ত্রিশোর্ধ্ব ইনিংসে বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ পেয়েছিল ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ডের সেই রানের পাহাড় টপকানোর সাহসটাও দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসান একা ফিফটি পেলেও আদিল রশিদের স্পিনের সাথে স্যাম কারানের সুইংয়ে বাংলাদেশ রীতিমত খাবি খেয়েছে।

    ৩২৭ রানের লক্ষ্যে স্যাম কারানের প্রথম ওভারেই টানা দুই বলে গোল্ডেন ডাকের শিকার হয়ে ফিরে যান লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত। কারানের পরের ওভারে হালকা লাফিয়ে ওঠা বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মুশফিকুর রহিম। ৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বসা বাংলাদেশ মানসিকভাবে ম্যাচটা নিজেদের ইনিংস শুরুর সাথে সাথেই যেন হেরে বসে। সাকিবের সাথে তামিম ইকবাল জুটি বেঁধে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করলেও রানের চাকা সচল রাখার প্রচেষ্টা সেই অর্থে পরিলক্ষিত হয়নি। তামিমকে এমনকি প্রান্ত বদল করতেও বেগ পেতে হচ্ছিল। তারই পরিক্রমায় মঈনকে তুলে মারতে গিয়ে লং অফে ক্যাচ দিয়ে তিনি ফেরেন ৬৫ বলে ৩৫ রানের বিদঘুটে এক ইনিংস শেষে। সেখান থেকে হাত খুলে খেলার কোনও বিকল্প না থাকায় সাকিব চেষ্টা চালান বাংলাদেশকে খোলস থেকে বের করতে; তুলে নেন ৫১তম ওয়ানডে ফিফটি।

    তবে ততক্ষণে অন্য প্রান্তে থাকা মাহমুদউল্লাহও রশিদ-মঈনের স্পিনে ধুঁকছেন। আক্রমণের দায়িত্ব বুঝে নিতে সাকিব জায়গা বানিয়ে রশিদকে তুলে মারতে গেলে মিড অফে ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ করে দিয়ে তিনি ফিরেন ৬৯ বলে ৫৮ রানের ইনিংস শেষে। উইকেটে এসে এরপর প্রথম ১১ বলে রানের খাতাই খুলতে পারেননি আফিফ হোসেন। সেখান থেকে পরে তিনি হাত খোলা শুরু করলে মাহমুদউল্লাহও চেষ্টা চালান। আফিফের ক্ষণিকের সেই চেস্তার অবসান ঘটে ৩৩ বলে ২৩ রানের ইনিংস শেষে, রশিদের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। রশিদের পরের ওভারে প্রায় একই ভঙ্গিমায় ৪৯ বলে ৩২ রানের ইনিংস শেষে থামেন মাহমুদউল্লাহ। শেষদিকে তাসকিন একা কিছুটা চেষ্টা করলেও সমানসংখ্যক বলে ২১ রানের ইনিংস শেষে সরাসরি রান আউটের শিকার হয়ে থামেন তিনি। অন্য প্রান্তে উইকেটের আসাযাওয়ার মিছিল বইয়ে রশিদ-কারানরা বাংলাদেশকে তাই গুটিয়ে ফেলেন ১৩২ রানে। ২০১৬ সালের পর বাংলাদেশে এসে আবারও তাই সিরিজ জয়ের তৃপ্তি নিয়ে ফেরাটাই নিশ্চিত করে ফেলে ইংলিশরা।

    এর আগে দুই স্পিনার দিয়ে শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে তামিম দ্রুতই তাসকিনকে আক্রমণে আনলে সেই তিনিই ফিরিয়েছিলেন ফিল সল্টকে। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ডাভিড মালান এই ম্যাচে সুবিধা করতে না পেরে ফিরেছিলেন মিরাজের দুর্দান্ত এক অফ স্পিনে। তবে অন্য প্রান্তে বিপদ পাড়ি দিয়ে হলেও ৫৪ বলে ফিফটি তুলে নেন রয়। অন্য প্রান্তে জেমস ভিন্স মাত্র ৫ রানে তাইজুল ইসলামের শিকার হয়ে ফিরলে ইংল্যান্ডের জন্য সেটা যেন আশীর্বাদ হয়েই আসে। উইকেটে এসেই বাটলার বাংলাদেশের বোলারদের সব পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেন। সেটার সদ্ব্যবহার করে রয় ১০৪ বলে তুলে নেন নিজের ১২তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরির পরেই দুজনে মিলে বাউন্ডারির উৎসবে মাতলে কিছুটা স্রোতের বিপরীতেই সুইপ খেলতে গিয়ে সাকিবের শিকার হয়ে থেমেছিলেন ১২৪ বলে ১৩২ রানে।

    রয়ের ফেরার পরের ওভারেই উইল জ্যাকসকে ফিরিয়ে দারুণ বল করতে থাকা তাসকিন বাংলাদেশের ফেরার রাস্তা তৈরি করলেও সেই পথ মাড়িয়ে বাটলার ৫০ বলে তুলে নেন ফিফটি। মিরাজকে টানা দুই ছয় মেরে লাগামছাড়া হওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে তার পরের বলেই অসাধারন এক ফিরতি ক্যাচে তিনি থামেন ৬৪ বলে ৭৬ রান করে। বাটলারের রেখে যাওয়া ব্যাটনটা তুলে নিয়ে ৩৫ বলে ৪২ রানের ইনিংস খেলে মঈন ও শেষ ওভারে টানা দুই ছয় মেরে ১৯ বলে ৩৩* রান করে কারান ইংল্যান্ডের জন্য গড়েছিলেন রানের পাহাড়; যেই পাহাড় পাড়ি দিতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে এই ইংল্যান্ডের কাছেই ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজ হারার পর টানা ৭ সিরিজে অপরাজিত বাংলাদেশের জয়ের ধারায় ছেদ পড়ল তাই কিছুটা নির্মম ভঙ্গিতেই।