• ইংল্যান্ডের বাংলাদেশ সফর
  • " />

     

    'হিসেবী ব্যাটিং', 'সুইপের সদ্ব্যবহার' - যেভাবে মিরপুরের ভয়কে জয় করলেন রয়

    'হিসেবী ব্যাটিং', 'সুইপের সদ্ব্যবহার' - যেভাবে মিরপুরের ভয়কে জয় করলেন রয়    

    বছরটা শুরু আগেও প্রায় সবাই ধরেই নিয়েছিলেন এই বিশ্বকাপের দলে আর জায়গা পাওয়া হবে না তার; এমনকি ছিলেন না টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াডে, মাঝে ব্রাত্য ছিলেন ওয়ানডে দলেও। তবে ইংল্যান্ডের সাদা ও লাল বলের ভিন্ন স্কোয়াড এবং জনি বেইরস্টোর দীর্ঘ ইনজুরি তাকে দিয়েছিল দ্বিতীয় সুযোগ। আর সেই সুযোগ দুহাত ভরেই লুফে নিয়েছেন জেসন রয়। বাংলাদেশের ঘরের মাঠে টানা সাত সিরিজ জয়ের রেকর্ড চুরমার করে দিয়ে দ্বিতীয় ম্যাচে খেললেন ম্যাচ জয়ী ইনিংস; এর আগের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও পেয়েছেন সেঞ্চুরি। উপমহাদেশের স্পিনিং কন্ডিশনে তার দুর্বলতা নিয়ে কথা হয়েছে সবসময়ই। তবে মাঠে যেভাবে বোলারদের সপাটে মাঠছাড়া করে দোর্দণ্ড প্রতাপে হয়ে উঠেছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর সাদা বলের ওপেনারদের একজন, মিরপুরে সেভাবেই সব শঙ্কাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন। তবে এবার সেই মারমুখী ভঙ্গিমায় নয়, হিসেবী কায়দায় - এ যেন রয় ২.০!

    রয় কীভাবে নিজের খেলার ধারা থেকে বেরিয়ে এসে কিছুটা ভিন্ন পথে হেঁটেছেন সেটার ছক তিনি কেটে রেখেছিলেন প্রথম ম্যাচেই মাত্র ৪ রানে ফেরার পর, “প্রথম ম্যাচে বলটা আকাশে ভাসিয়ে দেওয়ার সাথে সাথেই আমি বিষয়টা ধরতে পেরেছি। সেদিন মালানের খেলা দেখার পরে আমার তখনই মনে হয়েছে পরের ম্যাচে আমাকে কী করতে হবে - ধীরে সুস্থে খেলতে হবে, মাথা ঠান্ডা রেখে দীর্ঘ সময় ধরে মাঠে থাকার জন্য খেলতে হবে।”

    মিরপুরের পিচে ব্যাট করতে হলে তাকে যে হিসেব কষেই আগাতে হবে সেটা অনুধাবন করেছিলেন তিনি। সেই সাথে বিপদের মাঝেও মাথা ঠান্ডা রাখার কোনও বিকল্প তিনি ভাবেননি, যার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে দুর্দান্ত এই সেঞ্চুরিটিতেই। তাসকিন বেশ কয়েকবার তার ব্যাটের কাণা খুঁজে নিয়েছিলেন। তবে সেসবের মাঝেও অবিচল থেকে তিনি ছিলেন বদ্ধপরিকর, “শুধু মনে হয়েছে যে আর যাই হোক আমাকে লম্বা সময় ধরে ব্যাট করতেই হবে। একদম সহজভাবে বলতে হলে -  আমি জানি ক্রিজে সময় কাটালেই আমি প্রচুর রান করতে পারব। সেটার জন্যই আমি বাউন্ডারি বের করার নিরাপদ পথেই হেঁটেছি। যেই বলটায় আমি ফিরে গেলাম ওটাই বোধহয় পুরো ইনিংসে বাউন্ডারি বের করার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা ছিল আমার জন্য। সেটার মাশুল দিয়েছি আমি গর্দভের মত!”

    দ্বিতীয় দিনের পিচ যে কিছুটা ভিন্ন ছিল সেটা তিনি পড়ে ফেলেছিলেন দ্রুতই, আর সেটাই তাকে ঘূর্ণিজাল এড়িয়ে ঠান্ডা মাথায় এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে বলেই দাবী তার, “আগের দিন তো মোটে চার বল (৬ বল) টিকতে পেরেছি। আমার কাছে অবশ্যই আজকে খেলাটা আরও সহজ মনে হয়েছে। তবে হ্যাঁ, এটা বলব যে আগের ম্যাচের চেয়ে এই ম্যাচে উইকেটে স্পিন ধরছিল বেশি; যদিও সেটা ধারাবাহিক ছিল। আগের ম্যাচে স্পিন কম থাকলেও স্পিন, বাউন্স দুটোই আঁচ করা কঠিন হয়ে গিয়েছিল, একেবারেই ধারাবাহিক ছিল না। সেই কারণেই আগের দিনে রান করা দুষ্কর হয়ে উঠেছিল। এদিন বাউন্স কম হলেও ধারাবাহিক থাকায় পড়াটা সোজা ছিল।”

    উইকেটের স্পিন পড়ে তার নিজের শট বেঁছে নিতে সময় লাগেনি। যেই সুইপ খেলতে গিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটাররা প্রথম ম্যাচে উইকেট বিলিয়ে এসেছেন সেটাই যে দ্বিতীয় ম্যাচের উইকেটে মারণাস্ত্র হতে পারে সেটা তিনি পড়ে ফেলেছিলেন। নিজের শক্তির জায়গার ওপর আস্থা রেখে ফন্দি এঁটেছিলেন সেভাবেই, “সেখান থেকেই এই বাঁকটা ধরতে পেরেই আমার এই সুইপ আর রিভার্স সুইপের পরিকল্পনা। পয়েন্টের ওপর দিয়ে খেলাটা আমার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ মনে হয়েছে। কাভারের ওপর দিয়েও উড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছিলাম দুই-একবার। কিন্তু দ্রুতই সেই পরিকল্পনা বাদ দিয়েছিলাম কারণ উইকেট যেমন মন্থর ছিল তেমনই স্পিনটাও ধরছিল বেশ। আর সাকিব যখন বল আন্ডারকাট করা শুরু করে তখন ওকে সাইট স্ক্রাইন সাঁই করে উড়িয়ে মারা উচিৎ ছিল। কিন্তু আমি সুইপ করতে গিয়েছিলাম, এটা আমার বাজে সিদ্ধান্ত মানতেই হবে। সেটা ছাড়া বাউন্ডারির পথগুলো ঠিকঠাক বেঁছে নিয়েছিলাম বলেই মনে হয়েছে আমার।”

    “আমার কাছে সবসময় মনে হয় আপনার বাউন্ডারির পথগুলো হওয়া উচিৎ সবচেয়ে সোজা ও নিরাপদ। একবার আপনি উইকেটে থিতু হয়ে গেলে তখন এমনি মাঠের সব জায়গা জুড়ে খেলতে পারবেন। তো এদিন আমার মনে হয়েছিল সুইপ আর রিভার্স সুইপ বাউন্ডারির জন্য সবচেয়ে নিরাপদ দুটো শট।”

    সুইপ, রিভার্স সুইপ অনেকের জন্যই হয়ে দাঁড়ায় বিপদের কারণ, আবার অনেকের জন্য হয়ে ওঠে তাক করা নিশানা ভেদের মোক্ষম অস্ত্র। তবে সেটার জন্য মাঠটা বোঝাটা জরুরী, সেই সাথে নিজের শক্তির জায়গাটাও। রয় সেটাই ঠাহর করেছেন, ব্যাট হাতে দেখিয়েও দিয়েছেন। হিসেব কষে ইনিংস পরিচালনা, বাউন্ডারির জন্য সীমিত কিন্তু পরীক্ষিত অস্ত্রের ব্যবহারে রয় মিরপুরের জুজুকে বুড়ো আঙুল দেখালেন নতুন আঙ্গিকে।