• ইংল্যান্ডের বাংলাদেশ সফর
  • " />

     

    ডেথে দারুণ হাসান, শান্তর সাঁড়াশি আক্রমণ, অলরাউন্ড সাকিবে বাংলাদশের ঐতিহাসিক 'প্রথম'

    ডেথে দারুণ হাসান, শান্তর সাঁড়াশি আক্রমণ, অলরাউন্ড সাকিবে বাংলাদশের ঐতিহাসিক 'প্রথম'    

    ১ম টি-টোয়েন্টি, চট্টগ্রাম (টস-বাংলাদেশ/বোলিং)
    ইংল্যান্ড- ১৫৬/৬, ২০ ওভার (বাটলার ৬৭, সল্ট ৩৮, ডাকেট ২০, হাসান ২/২৬, সাকিব ১/২৬, নাসুম ১/৩১)
    ইংল্যান্ড- ১৫৮/৪, ১৮ ওভার (শান্ত ৫১, সাকিব ৩৪*, হৃদয় ২৪, উড ১/২৪, রশিদ ১/২৫, মঈন ১/২৭)
    ফলাফল: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী

     

    বাংলাদেশে প্রথমবারের মত দ্বিপাক্ষিক টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে আসায় এমনিতেই এই সিরিজকে ঘিরে ছিল অনেক আলোচনা। সেই আলোচনায় বাংলাদেশ আরও উপকরণ যোগ করল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই ফরম্যাটে প্রথম জয় তুলে নিয়ে। জস বাটলারের ফিফটির পরেও হাসান মাহমুদের দুর্দান্ত ডেথ বোলিংয়ে ইংল্যান্ডকে লাগামছাড়া হতে দেয়নি বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্তর দারুণ ফিফটির সাথে সাকিব আল হাসানের দায়িত্বশীল ইনিংসে সেই লক্ষ্য উৎরিয়ে গিয়ে ঘরের মাটিতে এই ঐতিহাসিক সিরিজের প্রথম ম্যাচেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের পর্যুদস্ত করেছে বাংলাদেশ।

    ১৫৭ রানের লক্ষ্যে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল টি-টোয়েন্টি-সুলভ। রনি তালুকদার খেলেছেন স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে; সেই সাথে স্যাম কারানের সুইং মোকাবোলা করতে লিটনও উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন। তবে তৃতীয় ওভারেই রনির ১৪ বলের ২১ রানের ইনিংস শেষ হয় আদিল রশিদের দুর্দান্ত এক গুগলিতে স্টাম্প খুইয়ে। ঠিক পরের ওভারেই আর্চারের বলে ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ করে দিয়ে ১২ বলে থামেন লিটন। তবে উইকেটে এসেই এবার সিলেটের হয়ে বহুবার জুটি বাঁধা শান্ত ও অভিষিক্ত তৌহিদ হৃদয় হয়ে ওঠেন মারমুখী। পাওয়ারপ্লেতে বাংলাদেশ ৫৪ রান তুলে ফেলার পরের ওভারে উড আক্রমণে এলে তাকে টানা ৪ চারে স্বাগত জানান শান্ত; ওভারে নেন ১৭ রান। ১১তম ওভারেই বাংলাদেশ দলীয় শতরান ছুঁয়ে ফেলে, সেটাও রশিদের বলে হৃদয়ের দারুণ এক ছয়ে। হৃদয়ের সহজাত ইনিংসের ইতি অবশ্য পরের ওভারেই টানেন মঈন আলী। তাকে মাঠছাড়া করতে গিয়ে ১৭ বলে ২৪ রান করে হৃদয় থামলেও ওই ওভারেই ২৭ বলে শান্ত ছুঁয়ে ফেলেন নিজের ৩য় আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ফিফটি। পরের ওভারেই অবশ্য ১৪৬ কিমি/ঘন্টার ডেলিভারিতে শান্তর স্টাম্প উপড়ে মধুর প্রতিশোধ নেন উড।

    ৩০ বলে শান্তর ৫১ রানের দারুণ ইনিংস শেষ হলেও আফিফকে নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় এগিয়ে যান অধিনায়ক সাকিব। বেশ কয়েকবার ব্যাটের কানায় লেগে বল আকাশে ভাসিয়ে দুজনেই বেঁচে গেলেও স্নায়ু ধরে রেখে সুযোগ মত বাউন্ডারি বের করতে থাকেন দুজনেই। আফিফ অবশ্য ৫ রানে পয়েন্টে কঠিন এক ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান। তবে ১৬তম ওভারে মঈনকে টানা দারুণ দুই চার মেরে সাকিব যেন গা ঝাড়া দিয়ে ওঠেন, সেই সাথে আফিফকেও দেন স্বস্তি। জর্ডানের করা ১৮তম ওভারে এরপর ১১ রান নিয়ে তুলির শেষ আঁচড়টাও যথাযথভাবেই আসে সাকিবের ব্যাট থেকেই। ২৪ বলে ৩৪* রান করে সাকিব ও ১৩ বলে ১৫* রান করে আফিফ বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচেই নিজেদের প্রথম জয়ের বন্দরে।  

    এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার পেয়েছিলেন আশাব্যাঞ্জক শুরু। তবে পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে দুই ব্যাটারই পেয়েছিলেন সুযোগ; নাসুম আহমেদের দুর্ভাগ্যই বলতে হয়। প্রথমে সল্টের ফিরতি এক কঠিন ক্যাচ লুফে নিতে পারলেন না নাসুম নিজেই। এরপর বাটলার মিড অনে ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ করে দিলেও মামুলি সেই ক্যাচ নিতে পারলেন না সাকিব! দুজনেই ২০ রানে জীবন পাওয়াতে পাওয়ারপ্লেতে তার ইংল্যান্ডকে নিয়ে যায় ৫১ রানে। নাসুম অবশ্য নিজের স্পেলের একদম শেষ বলে গিয়ে সল্টকে ফিরিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে সক্ষম হয়েছিলেন। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ৩৫ বলে ৩৮ রান করে সল্ট ফিরলেও জীবন পাওয়ার সুযোগ নিয়ে ৩২ বলে নিজের ২০তম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ফিফটি পেয়ে যান বাটলার।

    হাসানকে টানা দুই ছয়ে ওই ওভারে গিয়ার পাল্টানোর দিকে বাটলারকে আগাতে হয় মাঝে সাকিবের আঘাগে ডাভিড মালান ফেরার কারণেই। বেন ডাকেটকে সঙ্গী করে বাটলার ভয়ংকর হয় উঠলে ১৬তম ওভারের শেষ বলে দারুণ এক বলে ২০ রানে থাকার ডাকেটের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন মোস্তাফিজ। ঠিক পরের ওভারের প্রথম বলেই ৪২ বলে ৬৭ রান শেষে বাটলারকে থামিয়ে যেন প্রতিশোধটাও নিয়ে নেন হাসান। ওই ওভারে মাত্র ১ রান দেওয়ার পর ১৯তম ওভারে এসেও মাত্র ৪ রান দেন হাসান; সেই সাথে ফেরান স্যাম কারানকেও। হাসানের দুর্দান্ত ডেথ বোলিংয়ের পর শেষ ওভারে তাসকিন আহমেদ ফেরান ক্রিস ওকসকে। ইংল্যান্ড তাই পৌঁছাতে পেরেছিল ১৫৬ রান পর্যন্ত। দারুণ দক্ষতায় সেই সংগ্রহ টপকে বাংলাদেশ পরে পেয়েছে ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথম জয়ের স্বাদ।