• আফগানিস্তানের বাংলাদেশ সফর ২০২৩
  • " />

     

    তামিমের 'আনফিট' অবসরে বিসিবি সভাপতি কতটুকু ফিট?

    তামিমের 'আনফিট' অবসরে বিসিবি সভাপতি কতটুকু ফিট?    

    অবসরের আগে তো আলোচনা হয়েছেই, অবসরের পরেও। তামিম ইকবালের ফিটনেস জনিত সে মন্তব্য আপনার জানা আছে হয়তো। তারপরও আরেকবার জেনে নেওয়া যাক, যে মন্তব্যকেই ধরতে পারেন তামিম ইকবালের অবসর-কান্ডের 'ওপেনিং' হিসেবে।

    ম্যাচের আগে তামিম বলেছিলেন, 'শরীরটা আগের চেয়ে ভালো, তবে এটা বলব না পুরোপুরি ১০০%। কালকে(প্রথম ম্যাচ) খেলার পর আরও ভালো বুঝতে পারব যে কী অবস্থা। কিন্ত এখন পর্যন্ত, কালকে আমি খেলছি।' 

    এরপর থেকেই তীব্র সমালোচনার সুর ধরতে পেরে ভাবছিলাম, ১০০% ফিট না হয়ে খেলার কী এটাই প্রথম উদাহরণ? ১০০% ফিট না হয়েও, যদি কেউ খেলতে পারেন, তাহলে সমস্যাটা কোথায় আসলে? ক্রিকেটারদের ছোটখাট ইনজুরি তো লেগেই থাকে, অনেক সময় সেসব নিয়েই খেলেও যেতে হয় তাদের। শতভাগ ফিট না হলেও, খেলতে হলে যতটুকু ফিটনেস থাকার দরকার, ততটুকুই যদি থাকে, তাহলেই তো হয়। এটা নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার বান এভাবে লাগামহীন ছুটে যাবে! 

    মনে মনে এটাকে কোনও ইস্যু ভাবিনি। উদাহরণ ভাবার চেষ্টা করছিলাম, ফুল ফিট না হয়েও মাঠে নেমে যাওয়ার। টাটকা উদাহরণ একটাই মনের দরজায় উঁকি দিল চটজলদি। এই যে বেন স্টোকস অ্যাশেজে তৃতীয় টেস্ট খেলতে নেমেছেন, ম্যাচের আগে একাদশ ঠিক করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে কারণ জানিয়েছেন তা হচ্ছে- তিনি যদি বোলিং একেবারেই করতে পারেন না তাহলে সেরা দল কোনটা হবে, সে চিন্তা। 

    বোলিং করতে পারা নিয়ে আদতে স্টোকস ভুগছেন বেশ কিছুদিন ধরেই। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে বোলিংই তো করেননি। অ্যাশেজের প্রথম টেস্টে করেছেন কিছুটা। আস্তে আস্তে ওভারের সংখ্যা বাড়িয়ে যাচ্ছেন। কিন্ত কতটুকু করতে পারবেন এখনও নিশ্চিত হতে পারছেন না। তার মানে তো তিনি পুরোপুরি ফিট না। কিন্ত, কিন্ত, যতটুকু ফিটনেসের প্রয়োজন ব্যাটিংয়ের জন্য, খেলতে পারার জন্য, ততটুকু আছে বলেই খেলে যাচ্ছেন তিনি। সেদিনও তো ব্যাটিংয়ের সময় দেখা গেল, রানিংয়ে ভোগান্তির পর খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছেন, ভুগছেন নিশ্চয়ই হাটুর ওই ইনজুরিতেই!

    হার্দিক পান্ডিয়া আজকাল বোলিং-ব্যাটিং সবই করে যাচ্ছেন। অথচ মাঝখানে কোমরের অস্ত্রপাচারের পরে, লম্বা সময়ের ইনজুরি কাটিয়ে ফেরার পর বোলিং করেননি প্রায় বছরখানেক তো হবেই। তার মানে অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া ফুল ফিট ছিলেন না তখন। তবু তিনি খেলেছেন, তার ব্যাটিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ফিটনেসটুকুই ছিল বলে। শুধুমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবেই খেলে গেছেন অনেক সময়, এমনকি ভারত দলেও নিয়মিত। 

    ইনজুরি থেকে ফেরার পর 'ফিট' সার্টিফিকেট পেয়ে গেলেও, শরীর কোন অবস্থায় আছে, সেটি জানতে হলে কিংবা বুঝতে হলে নাকি ম্যাচের ধকলের মধ্যে যেতে হয়, অনেক ক্রিকেটারের মুখেই তা শুনেছি। এইতো জফরা আর্চারের ঘটনাটাই দেখুন না! দুটো অপারেশন করিয়েছিলেন তিনি, মাঠের বাইরে ছিলেন প্রায় বছর দুয়েক সময়। এত লম্বা সময়ের ইনজুরি থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন এই বছরের জানুয়ারীতে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সে সিরিজের আগে সংবাদ সম্মেলনে আর্চার বলেছিলেন, 'আমি বলব সম্ভবত আমি ৮০% এর আশেপাশে ফিট আছি'। সেই জফরা আর্চার খেলেছেন। সে সিরিজে, এরপরেও, আবার ইনজুরিতে পড়ার আগে অনেক ম্যাচ।

    তামিম ইকবালের ফুল ফিট না হয়ে খেলা যেন দন্ডনীয় অপরাধই হয়ে গেল! কোচ-অধিনায়ক মিলে যে সুন্দর সংসার সাজাবেন, সেখানে কোচও উল্টো পথে হাটলে সুন্দর আর কিছু অন্তত থাকে না। বিসিবি সভাপতি তামিমের পেশাদারিত্ব নিয়ে তো প্রশ্ন তুলেছেন খোলামেলা। প্রতিদিনের বাংলাদেশে নাজমুল হাসান পাপন বলেছিলেন, 'তামিমের এমন কথা আমার মেজাজ খারাপ করে দিয়েছে। হাতু (হাতুরেসিং) আমাকে ফোন দিয়ে আধঘণ্টা চিল্লাচিল্লি করছে। এটা কি সে পাড়ার খেলা পেয়ে গেছে নাকি! যে আমি ফিট আছি কি না, তা খেলে দেখব।'

    কেন এমন মন্তব্য করেছিলেন নাজমুল হাসান? আরেকটি মন্তব্য নজর দিন তো, 'আমাকে কয়েকজন সাংবাদিক ফোন দিল পরশুদিন। ফোন করে বলল যে, কী ব্যাপার, একটা প্লেয়ারের ইনজুরি থাকতে পারে না? তাকে জোর করে খেলাচ্ছেন। আমার রাগ উঠে গেল। বললাম, এটা হতেই পারে না, কাকে জোর করে খেলানো হচ্ছে? তো বলল যে, একটু আগে তামিম এই কথা বলেছে। তো এটা শুনে আমি আরও রাগ হয়েছি।' তামিম ইকবালের ইনজুরি থাকা সত্ত্বেও তাকে জোর করে খেলানো হচ্ছে, এমন সমালোচনার আশঙ্কাতেই কী তাহলে নাজমুল হাসানের সেই মন্তব্য? 

    তামিম ইকবাল তার অবসরের প্রসঙ্গে 'দ্যা এন্ড' লিখে ফেলতে বলেছেন। কেন এই আচমকা অবসর, জানতে আর 'গুতাগুতি' না করতেই বলেছেন তামিম। তা বিসিবি সভাপতির সেই 'আনফিট' প্রসঙ্গের মন্তব্যই কী তামিমকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করলো? উঁহু, এ প্রশ্ন কেন! বিসিবি সভাপতি যে বলে দিয়েছেন সে প্রশ্নই উঠে না, 'আমার কাছে মনে হয়, প্রশ্নই উঠে না। কারণ এরকম ঘটনা বা সিদ্ধান্ত (ফিটনেসের) আরও এক হাজার বার আসলে, আমি এক হাজার বার বলব। ওইটার (মন্তব্য) সাথে এটাকে (অবসর) আমি মিলাতেই চাই না কোনওভাবেই।'

    তামিম ইকবাল ফিরে আসুন, বিসিবি সভাপতি সে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সেসব ভবিষ্যতের ব্যাপার, তবে এখন যা সত্য, তামিম ইকবালের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি এখানেই। বিশ্বকাপের তিন মাস আগে এভাবে হুট করে সিরিজের মাঝখানে অবসরে চলে যাওয়াটা, নিশ্চয়ই এটাকে 'আনফিট' বলা চলে! যেমনটা বিসিবি সভাপতির ওই মন্তব্য। অবশ্য বিসিবি সভাপতি এসব ক্ষেত্রে 'ফিট' ছিলেনই-বা কোন সময়!

    প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিসিবি সভাপতির আরেক মন্তব্য দিয়েই শেষ করি। একজন ক্রিকেটার দেশের হয়ে আর কখনো খেলবে না, অবসর ঘোষণার সময়ে আবেগপ্রবণ হওয়াটা মোটেও অস্বাভাবিক কিছু নয়। তামিম ইকবালও চোখের জল আটকাতে পারেননি। বিসিবি সভাপতি পরে বললেন, 'আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, কান্নারই-বা কী হলো। নিজে থেকেই করেছে, এরপর কাঁদছে কেন?' 

    বেফাঁস মন্তব্যের বেলায় কিন্ত বিসিবি সভাপতি ঠিকই শতভাগ ফিট!