• আফগানিস্তানের বাংলাদেশ সফর ২০২৩
  • " />

     

    তামিমের অবসর ও প্রত্যাবর্তন সমাচার: তিন দিনে যেসব বাঁকে ঘুরল ঘটনার মোড়

    তামিমের অবসর ও প্রত্যাবর্তন সমাচার: তিন দিনে যেসব বাঁকে ঘুরল ঘটনার মোড়    

    ইদের আমেজ কাটতে না কাটতেই বাংলাদেশ ক্রিকেটে অস্থিতিশীলতার অশনি সংকেত। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের আগে এক সংবাদ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে শুরু হল যেই আলোচনা, সেটা দিয়েই শুরু বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে ঘটনাবহুল তিন দিনব্যাপী সমাচার- তামিম ইকবালের অবসর ও প্রত্যাবর্তন।

    বৃহস্পতিবার সকালেই যখন হুট করে তামিম সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন তখনই অনেকে বুঝে ফেলেছিলেন কী হতে যাচ্ছে। আশঙ্কা সত্যি হয়ে হল সেটাই, সেই সিদ্ধান্ত বদলে বিভিন্ন মহল থেকে তোরজোড় শুরু হবে সেটাও বোঝা যাচ্ছিল সেদিন থেকেই। তবে যেই অনড় তামিমকে কেউ ফেরাতে পারেননি বৃহস্পতিবারের সেই সম্মেলন থেকে, সেই তামিমের অটল অবস্থান যে এতো দ্রুত টলিয়ে দেবেন প্রধানমন্ত্রী সেটা হয়ত আঁচ করেননি অনেকেই। সে যাই হোক, ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলানো এই তিন দিন শেষে তামিম ইকবাল আবারও বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার হিসেবেই আবির্ভূত হলেন। এক নজরে চোখ বুলিয়ে আসা যাক ৭২ ঘণ্টার ঘটনাবলীতে।

     

    মঙ্গলবার দুপুর ১২টা - এর আগের সিরিজে খেলতে পারেননি, ইনজুরিও পিছু ছাড়েনি। স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচের আগের প্রেস কনফারেন্সে তামিমকে ফিটনেস সংক্রান্ত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। বিরক্তির বশে না কি সকল ধোঁয়াশা কাটাতে স্বপ্রণোদিত হয়ে বিষয়টা পরিষ্কার করতে - কারণ যাই হোক, তামিম সাফসাফ জানালেন তিনি পুরোপুরি ফিট নন। সাথে এটাও বললেন শতভাগ ফিটনেস নিয়ে কেউ কোনও সিরিজ খেলে না; মাঠে নেমেই ফিটনেসটা তাই ঝালাই করতে চান।

    বুধবার - তামিমের সেই ফিটনেস সংক্রান্ত বক্তব্য নিয়ে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হোসেন পাপন রেগেমেগে আগুন। ছাড়লেন না তামিমের আচরণকে ‘অপেশাদার’ বলতেও! ক্ষোভের কারণটাও জানা গেল তার মুখ থেকেই। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ওই প্রেস কনফারেন্সের পরপরই বোর্ড সভাপতির সাথে কথা বলে তামিমের এমন মন্তব্য নিয়ে রীতিমত ক্ষোভ উগড়েছেন। ফিটনেস নিয়ে এমন একটা মন্তব্য কোনও খেলোয়াড়ের কোনও এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না সেটা নিয়ে দুজন আবার একমত।

    বুধবার রাত ১০.৩০ - ম্যাচের শুরু থেকেই আফগানদের কাছে নাস্তানাবুদ হতে থাকা বাংলাদেশ হেরে বসল প্রথম ওয়ানডে। বৃষ্টি কেবলই ফলাফলটা বিলম্বিত করেছে। ফজলহক ফারুকী জুজু যেমন কাটাতে পারেননি তামিম নিজে, তেমনি পুরো দলটাকেই এদিন যেন নিজেদের ছায়া মনে হল।

    বৃহস্পতিবার সকাল - চট্টগ্রামে আচমকা এক প্রেস কনফারেন্স ডেকে বসলেন তামিম। জুবিলী রোডের সেই সম্মেলনে বোর্ডের সাথে যে কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই, এটা যে একান্তই তামিমের ডাকা সেটাও জানা হয়ে গেল দ্রুতই।

    বৃহস্পতিবার দুপুর ১.৩০ - যা আঁচ করা হচ্ছিল ঘটল সেটাই। অশ্রুসিক্ত তামিম ভাঙা গলায় জানালেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তৎক্ষণাৎ সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা। কথা বলতেই হিমশিম খেতে থাকা আবেগতাড়িত তামিম জানালেন, অব্যক্ত থাকছে অনেক কথাই। তবে সবকিছুর ওপরে দল, চলছে দলের সিরিজ। তাই তার অবসরের বিষয়টারও এখানেই ইতি টানা হোক।

    বৃহস্পতিবার রাত - শুক্রবারে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে ডাক পড়তে পারে তামিম ইকবালের, চারদিকে খবর এমনটাই। ওই রাতেই বোর্ড সভাপতি পাপন মুখ খুললেন তামিমের আচমকা অবসর নিয়ে। প্রথমে তার কণ্ঠে সহানুভূতির কোনও রেশ তো মিললই না, সেই সাথে তিনি জানালেন বহুবার তামিমের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার কোনও খোঁজ মেলেনি। তবে শেষদিকে পাপন জানালেন, তামিমকে বিশ্বকাপের আগে ফেরানোর চেষ্টা করবেন তারা।

    শুক্রবার সকাল - খবর মিলল, দুপুরে গণভবনে তামিমকে ডেকে পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা - প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের পর অবসর প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের কথা জানালেন তামিম। সেই সাথে জানালেন ইনজুরি সংক্রান্ত সকল সমস্যার পাশপাশি মানসিকভাবে নিজেকে গুছিয়ে নিতে দেড় মাস ক্রিকেট থেকে দূরে থাকবেন।

     

    প্রধানমন্ত্রীর সাথে সেই আলোচনায় যেমন তামিমকে ফেরানো গেল, তামিমও একটা আবদার রেখেছেন একজনকে ফেরানোর। ওই আলোচনায় অনেকটা মধ্যস্থতাকারীর ভুমিকাতেই গণভবনে গিয়েছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। সেই বৈঠকের মাঝেই তামিম প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন যেন ভারতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপে মাশরাফিকে দলের ‘মেন্টর’ হিসেবে পাঠানো হয়। জবাবে প্রধানমন্ত্রী সেখানেই বলেছেন, “অবশ্যই, মাশরাফি যাবে।” তবে মাশরাফি সেখানেই ইতিবাচক কোনও উত্তর দেননি। প্রধানমন্ত্রীর কথা তিনি ফেলে দেননি, তবে সেটা নিয়ে এখন ভাবার সময় আসেনি বলেই সিদ্ধান্ত জানাননি - বক্তব্য মাশরাফির। দলের অবস্থা এখন ভাল; সময় এলে যদি তার আসলেই প্রয়োজন পড়ে তাহলে বিষয়টা তিনি ভেবে দেখবেন বলেই জানালেন মাশরাফি। ৭২ ঘণ্টার এই সমাচারের শুরু আর শেষটাই তামিমের পরিচয় একই থাকলেও নতুন ঘটনা এটাই। নতুন এই প্রস্তাবের বাস্তবায়ন যদি আসলেই হয় তাহলে ভারত দলের সাথে এমএস ধোনির ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সংযোজনের মতই কিছু দেখা যেতে পারে বাংলাদেশ দলেও।