• আফ্রিকান নেশন্স কাপ
  • " />

     

    আফকন ২০২৪ প্রিভিউ: শিরোপা ধরে রাখবে মানেরা না-কি দেখা মিলবে নতুন চ্যাম্পিয়নদের?

    আফকন ২০২৪ প্রিভিউ: শিরোপা ধরে রাখবে মানেরা না-কি দেখা মিলবে নতুন চ্যাম্পিয়নদের?    

    আইভরি কোস্টে এই মাসে বসতে যাচ্ছে আফ্রিকান নেশনস কাপের ৩৪-তম আসর। বলা হচ্ছে, এবারের আসরটা হয়ত এই শতাব্দীর এমনকি এই টুর্নামেন্টের ইতিহাসেরই সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক হতে যাচ্ছে। চ্যাম্পিয়ন সেনেগালকে চ্যালেঞ্জ জানাতে এবার মুখিয়ে থাকবে বহু দল।

    সেনেগালের শক্তিশালী দলের পাশাপাশি গতবারের ফাইনালিস্ট ও সাত বারের চ্যাম্পিয়ন মিশর এবারও মোহামেদ সালাহর অধীনে আবারও শিরোপার দাবীদার। তবে এবারের সবচেয়ে শক্তিশালী দল তর্কাতীতভাবেই হয়ত মরক্কো। বিশ্বকাপে চমক দেখানো অ্যাটলাস লায়নরা আফকনেও প্রায় একই দল নিয়েই যাচ্ছে। শিরোপার জন্য তাই তাদের কাছ থেকে কঠিন সব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে অন্য দলগুলোকে। তবে ভিক্টর ওসিমেনের নাইজেরিয়া, মোহামেদ কুদুসের ঘানারাও কম যান না; সেই সাথে আফকনে তাদের দাপটটা তো বরাবরই জারি থাকে।

    ২৪ দল নিয়ে ছয়টি গ্রুপে বিভক্ত গ্রুপ রাউন্ডের লম্বা লড়াই শেষে আলাসানে উত্তারা স্টেডিয়ামে ১২ ফেব্রুয়ারিতে উঠবে ফাইনালের পর্দা। প্রতি গ্রুপের শীর্ষ দুই দলের পাশাপাশি চারটি সেরা তৃতীয় স্থানের দল যাবে নকআউট রাউন্ডে। এবারের গ্রুপ গুলোর পর্যালোচনায় করা যাক এই প্রতিবেদনে।

     

    গ্রুপ এ: আইভরি কোস্ট, নাইজেরিয়া, ইকুয়েটরিয়াল গিনি, গিনি-বিসাউ

    দুবারের চ্যাম্পিয়ন আইভরি কোস্ট ও গিনি-বিসাউয়ের ম্যাচ দিয়েই শনিবারে উঠবে এবারের আফকনের পর্দা। দ্রগবাদের আমলের সেই জৌলুশটা না থাকলেও এবার আইভরি কোস্ট একেবারেই ফেলে দেওয়ার মত দল নয়। অধিনায়ক সার্জ অরিয়েরের সাথে রক্ষণে উইলি বলি, মিডফিল্ডে ফ্র্যাঙ্ক কেসি, আর সামনে সেবাস্তিয়ান আলেয়ারের মত খেলোয়াড়দের নিয়ে এবার শিরোপার দিকেই নজর থাকবে তাদের। তবে গ্রুপেই তাদের সেই পথে পড়বে সবচেয়ে বড় কাটাগুলোর একটা - নাইজেরিয়া। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ভিক্টর ওসিমেনের নাইজেরিয়া আফকনে বরাবরই পরাশক্তি। তিন বারের চ্যাম্পিয়নদের দলে এবার সেই সাথে আছে চুকুয়েজি, বনিফেসদের মত দারুণ প্রতিভাবান সব তরুণ তারকা। নাইজেরিয়া এবার তাই শিরোপা ছাড়া কোনও কিছুই ভাববে না। তবে গ্রুপের বাকি দুই দল ইকুয়েটরিয়াল গিনি ও গিনি-বিসাউ চতুর্থবারের মত এই টুর্নামেন্ট খেলতে এসে গ্রুপ পর্ব পার করতে পারলেই হয়ত নিজেদের ভাগ্যবান মনে করবে।

     

    গ্রুপ বি: মিশর, ঘানা, কেপ ভার্দে, মোজাম্বিক

    মোহামেদ সালাহ যেই দলে থাকে সেই দল তো এমনি শিরোপার দিকে ধেয়ে যাওয়ার কথা। গতবার ফাইনালে হৃদয়ভঙ্গের বেদনা ভুলে এবারও সালাহরা শিরোপার জন্য শক্ত দাবীদার হিসেবেই নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চাইবেন শুরু থেকেই। গ্রুপে তাদের সবচেয়ে শক্ত প্রতিপক্ষ ঘানা। এক কালের পরাশক্তি ঘানার শক্তিমত্তায় কিছুটা ভাটা পড়েছে বটে; তবে ইনাকি উইলিয়ামসের দলে ফেরাটা তাদের নতুন করে আত্মবিশ্বাসের যোগান দিতেই পারে। গ্রুপের বাকি দুই দল কেপ ভার্দে আর মোজাম্বিকের নজর থাকবে অঘটন ঘটানোর দিকেই।

     

    গ্রুপ সি: সেনেগাল, ক্যামেরুন, গিনি, গাম্বিয়া

    বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা তাদের দলের ঐক্য। সেনেগালের বড় সব তারকারা আছেন এবারও। সাদিও মানে, এদুয়ার্দো মেন্ডি, কালিদু কুলিবালি, ইসমাইলি সাররা এবারও প্রতিপক্ষের জন্য আতঙ্ক হয়েই থাকবেন। অবশ্য বড় তারকাদের অনেকেই সৌদি প্রো লিগে পাড়ি দেওয়ায় সেই অর্থে প্রতিযোগিতার মধ্যে তারা ছিলেন কি না সেটা নিয়ে থাকতে পারে প্রশ্ন। আর সেই প্রশ্নটা আরও কঠিন করে তুলতে পারে গ্রুপে থাকা পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন ক্যামেরুন। দলের সাথে মনোমালিন্য হওয়ার পর সব হিসাব চুকিয়ে আবারও ফিরেছেন আন্দ্রে ওনানা। সেই সাথে গতবারের সর্বোচ্চ গোলদাতা ভিনসেন্ট আবুবকর তো আছেন অধিনায়ক হিসেবে। বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে হারানো সেই গোলের মতই এবারের আফকনে অসাধারণ কিছু করার প্রত্যয় থাকবে তার। এই গ্রুপে চমক দেখাতে পারে গিনি। দলের আক্রমণে এবার থাকছেন স্টুটগার্টের হয়ে দুর্দমনীয় সেইরু জুরাসি। সেই সাথে মাত্র দ্বিতীয়বার খেলতে আসা গাম্বিয়াকেও হালকাভাবে নিলে পস্তাতে পারে অন্য দলগুলো। প্রথমবার খেলতে এসেই যে গতবার কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল দলটি! সব মিলিয়ে গ্রুপ সি হয়ত হয়ে উঠবে এবারের গ্রুপ অফ ডেথ।

     

    গ্রুপ ডি: আলজেরিয়া, বুরকিনা ফাসো, মৌরিতানিয়া, অ্যাঙ্গোলা

    রিয়াদ মাহরেজের আলজেরিয়া আফকন জেতার পর গতবার গ্রুপ পর্ব পার হতে পারেনি; এরপর বিশ্বকাপেই জায়গা করে নিতে পারেনি দলটি। আলজেরিয়ার দুর্দশাগ্রস্ত পরিস্থিতির মধ্যে তাদের সুসংবাদ একটাই - গ্রুপের বাকি দলগুলো শক্তিমত্তায় তাদের কাছাকাছি নয়। তবে গতবার চতুর্থ হওয়া বুরকিনা ফাসো বাধা পেরুতে হয়ত তাদের বেশ কাঠখড় পোড়াতে হতে পারে। আদেবায়োর যুগের পর অ্যাঙ্গোলার অবস্থাও খুব একটা আশা জাগানিয়া নয়। এই গ্রুপ থেকে তাই এগিয়ে রাখতে হচ্ছে আলজেরিয়া ও বুরকিনা ফাসোকেই।

     

    গ্রুপ ই: তিউনিসিয়া, মালি, দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া

    এই গ্রুপে রয়েছে একবার করে শিরোপার স্বাদ পাওয়া তিউনিসিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা। গ্রুপে মাত্র চতুর্থ বার খেলতে আসা নামিবিয়ার পাশাপাশি ১৩-তম বার খেলতে আসা মালি হয়ত তাদের জন্য বড় কোনও মাথাব্যথার কারণ হবে না। সেইদু কেইটাদের সেই যুগ বহু আগেই পেছনে ফেলে আসা মালিকে অবশ্য সহজভাবে নেওয়ার সুযোগ নেয়। তবে হানিবাল, ইউনিয়ন বার্লিনের আইসা লাইদুনি, আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টের এলিস স্খিরিদের নিয়ে গড়া আক্রমণভাগ নিয়ে তিউনিসিয়া গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন বৈ অন্য কিছু ভাববে না। তবে থেম্বা জুয়ানে ফেরার পর দক্ষিণ আফ্রিকাও সেই অবস্থানের জন্য জোরেশোরেই ডাক দিবে বলা যায়।

     

    গ্রুপ এফ: মরক্কো, কঙ্গো, জাম্বিয়া, তানজানিয়া

    এবারের আফকন মাতাবে কোন দল সেটা নিয়ে জানতে হলে সবাই হয়ত এক বাক্যে মরক্কোর নাম নিবে। প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে সেমি-ফাইনাল খেলা দলটার প্রায় পুরোটায় থাকছে এবারের আফকনে। রক্ষণে হাকিমি, মাজরাউইর মত দুর্দান্ত ফুলব্যাক, মিডফিল্ডে সোফিয়ান আমরাবাতের মত ইঞ্জিন, সামনে এন-নেসরির মত ধূর্ত ফরওয়ার্ডকে নিয়ে অ্যাটলাস লায়নসরা এবারের সবচেয়ে বড় ফেবারিট। ওয়ালিদ রেগরাগির মরক্কো এবার শিরোপা ছাড়া অন্য যেকোনো ফলাফলকেই ব্যর্থতা হিসেবেই দেখবে হয়ত। গ্রুপের অন্য দুই দল কঙ্গো আর জাম্বিয়া অবশ্য হালকা প্রতিপক্ষ নয় মোটেও। তৃতীয় শিরোপার আশায় এবার কঙ্গো রেকর্ড বিশতম বারের মত আসছে খেলতে। সেই সাথে জাম্বিয়ার কোচ হিসেবে থাকছেন আভরাম গ্রান্টের মত ইউরোপের অভিজ্ঞতার ঝুলি ভর্তি কোচ। তবে মাত্র তৃতীয় বার খেলতে আসা তানজানিয়াকে নিয়ে হয়ত এবার ভাববে না কেউ সেই অর্থে।