জাকের, মাহমুদউল্লাহদের উজ্জ্বীবিত লড়াইয়ের পর সেই চেনা সমাপ্তি
১ম টি-টোয়েন্টি, বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা (টস-বাংলাদেশ/বোলিং)
শ্রীলঙ্কা - ২০৬/৩, ২০ ওভার (সামারাভিক্রমা ৬১*, মেন্ডিস ৫৯, আসালাঙ্কা ৪৪, রিশাদ ১/৩২, তাসকিন ১/৪০, শরিফুল ১/৪৭)
বাংলাদেশ - ২০৩/৮, ২০ ওভার (জাকের ৬৮, মাহমুদউল্লাহ ৫৪, শান্ত ২০, ম্যাথিউজ ২/১৭, শানাকা ২/৩৬, বিনুরা ২/৪১)
ফলাফল - শ্রীলঙ্কা ৩ রানে জয়ী
তীরে এসে তরী ডুবতে দেখে বাংলাদেশ সমর্থকদের দৃশ্যটা মুখস্থ হয়ে গিয়েছে। আজও সেটাই হল। তবে প্রথম ইনিংসেই অনেকে ম্যাচের শেষ দেখে ফেললেও নিজেদের সর্বস্ব নিংড়ে দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও অভিষিক্ত জাকের আলী অনিক। আজ অবশ্য তাদের ভাগ্য সহায় হয়নি। সেই সাথে শ্রীলঙ্কাও স্নায়ু ধরে রেখে বের করে নিয়েছে ৩ রানের জয়।
অবশ্য ম্যাচটা এতো কাছাকাছি যাওয়ার কথাও ছিল না। পাওয়ারপ্লের মধ্যেই ৩ উইকেট খুইয়ে ২০৭ রানের লক্ষ্য তো পাড়ি দেওয়াটাই বিলাসিতা বাংলাদেশের কাছে। তবে এদিন হারার আগেই হাল ছাড়েনি বাংলাদেশ। সেই সাথে নবম ওভারে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত যখন ফিরলেন তখনও ম্যাচে জয়ের পর্যায়েও নেই বাংলাদেশ। ২২ বলে ২০ রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশ অধিনায়ক যখন ফিরলেন তখন ৪ উইকেট খুইয়ে মোটে ৬৮ রান তুলেছে বাংলাদেশ।
সেখান থেকেই মাহমুদউল্লাহ ও জাকের গড়লেন প্রতিরোধ। দলে ফিরে মাহমুদউল্লাহ আরও একবার দেখালেন তিনি ফুরিয়ে যাননি। বিপিএলে ফিনিশার ভূমিকায় নজর কাড়া জাকেরও অভিষেকেই দেখালেন কেন তাকে পরে দলে ভেড়ানো হয়েছে। দুজনের জুটিটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি বটে, তবে ২৯ বলে ৪৭ রানের জুটিটা পথ তৈরি করে দিয়েছিল ফিরে আসার। থিকশানার ফাঁদে পড়ে ৩১ বলে ৫৪ রানে আভিস্কাকে ক্যাচ দিয়ে মাহমুদউল্লাহ থামলেও জাকের নিজেকে প্রমাণের জন্য ছিলেন বদ্ধপরিকর। পাথিরানাকে লক্ষ্য বানিয়ে তার করা ১৭-তম ও ১৯-তম ওভারে ৩৪ রান তোলেন জাকের-মাহেদী। জাকের তার অসামান্য লড়াইয়ের পথেই ২৫ বলে নিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ফিফটি পেয়ে যান জাকের। অভিষেকেই সেই সাথে গড়েন আরও একটি রেকর্ড - বাংলাদেশের হয়ে এক টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডটা নিজের করে নেন অনিক, ৬টি ছয়ে। এতকিছু করেও শেষটা করে আসতে পারলেন না অনেকটা সঙ্গের অভাবেই। শানাকার হাতে শেষ ওভারে বল তুলে দেওয়া হলে সেখান থেকে ১২ রান নিতে হত বাংলাদেশকে। তবে তিন বলের মধ্যেই রিশাদের পর জাকেরের ৩৪ বলে ৬৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংসের ইতি টেনেই গল্পের শেষটা লিখে ফেলেছিলেন শানাকা। শেষ ৩ বলে ১০ রান লাগলে শরিফুল চার মেরে শুরু করলেও শেষমেশ পরাজয়ের দুঃখেই ডুবতে হয়েছে তাদের।
এর আগে সিলেটের ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে শ্রীলঙ্কার শুরুটাও নড়বড়ে হয়েছিল। তবে সেখান থেকেই আসালাঙ্কা-মেন্ডিস দারুণ এক জুটি গড়ে ম্যাচ থেকে বাংলাদেশকে মনস্তাত্ত্বিকভাবেই অনেকটা ছিটকে দিয়েছিল এই জুটি। ৬১ বলে ৯৬ রানের সেই জুটিটাই কোনও বোলারকেও তাদের লাইন লেংথে থিতু হওয়ার সুযোগ দেননি এই দুজন। কুশল মেন্ডিস তো ৩৬ বলে ৫৯ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছিলেনই, তবে সামারাভিক্রমা সেখানেই ক্ষান্তি দেননি। কুশল মেন্ডিসের মত ঝড়ো একটা ইনিংস খেলতে না পারলেও শেষ পর্যন্ত থেকেই তিনি ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে বাকি কাজটূকু করেছেন ম্যাচ সেরা চারিথ আসালাঙ্কা। ২১ বলে ৪৪* রানের ইনিংসে ৬টি ছয়ের পসরা সাজিয়ে শরিফুলদের মনোবল প্রায় একাই ভেঙে দিয়েছিলেন।। ২০৬ রানের সেই সুবিশাল লক্ষ্যটার কাছাকাছি এসে তাই স্নায়ুর লড়াইয়েই হার মানতে হয়েছে তাকে।