• আইপিএল ২০২৪
  • " />

     

    চেন্নাইয়ের 'উপহার' মৌসুমে বদলে যাবে ধোনি ও মোস্তাফিজের গল্প?

    চেন্নাইয়ের 'উপহার' মৌসুমে বদলে যাবে ধোনি ও মোস্তাফিজের গল্প?    

    এলেন কারা, গেলেন কারা

    আম্বাতি রাইডু অবসরে, বেন স্টোকস খেলবেন না এই আসর। ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসকেও ছেড়ে দিয়েছে চেন্নাই। অলরাউন্ডার ক্যাটাগরিতে দেশি-বিদেশি মজুত এনেছে চেন্নাই। শার্দুল ঠাকুরকে ফিরিয়েছে চেনা ঠিকানায়, রাচিন রবীন্দ্রকেও কিনেছে দুই কোটির কম রুপিতে। রাইডুর অনুপস্থিতিতে মিডল অর্ডারের শক্তি বাড়াতে ১৪ কোটিতে এনেছে ড্যারিল মিচেলকে। আট কোটির বেশি রুপি চেন্নাই ঢেলেছে আনকোরা সামির রিজভীর পেছনে। দুই বিদেশি পেসার কাইল জেমিসন ও সিসান্ডা মাগালাকে ধরে রাখেনি চেন্নাই। গেল মৌসুমে ছয় ম্যাচ খেলা বাঁহাতি পেসার আকাশ সিংকেও ছেড়ে দিয়েছে। একই ভূমিকার মোস্তাফিজুর রহমানকে কিনেছে ধোনির দল। উইকেটকিপিংয়ে বিকল্প এনেছে আনকোরা আরাভেল্লি আভিনাশ।

    সম্ভাব্য ১২

    চোটে পড়ে ডেভন কনওয়ে থাকছেন না প্রথম অংশে। ওপেনিংয়ে অপশন রবীন্দ্র, আজিঙ্কা রাহানে। মিডল অর্ডারে রাইডুর রেখে যাওয়া ‘ফাঁকা’ জায়গায় খেলতে পারেন রিজভী। মিচেলও আছেন বিকল্প হিসেবে। দেশি পেসে বিকল্প মুকেশ চৌধুরী, সিমারজিত সিং। 

    ১। গায়কোয়াড়

    ২। রবীন্দ্র/রাহানে

    ৩। রাহানে

    ৪। দুবে

    ৫। মঈন/মিচেল

    ৬৷ জাদেজা

    ৭। ধোনি

    ৮। রিজভী

    ৯। চাহার

    ১০। তুশার/ শার্দুল

    ১১। পাথিরানা/ মোস্তাফিজ

    ১২। থিকশানা/ স্যান্টনার

    ব্যাটিং- ওপেনিংয়ের এক পাশে কে?

    গেলবার চেন্নাইয়ের সাফল্যে সবচেয়ে বড় কারিগর ছিল ওপেনিং জুটি। পাওয়ারপ্লেতে সর্বোচ্চ ৮৯ গড়! প্রথম ছয় ওভারে স্ট্রাইক রেটও ছিল তাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। দুই ওপেনারই রান দিয়েছিলেন পাঁচশের বেশি। এবারের আসরের অর্ধেকে সেই সফল জুটিকে না পাওয়া চেন্নাইয়ের দুশ্চিন্তার কারণ। কনওয়ের সঙ্গে রবীন্দ্রর বন্ধুত্ব বেশ গাঢ়, এবার তার জায়গা নিতে পারেন রবীন্দ্র। প্রথমবারের মতো আইপিএলের মঞ্চে পা রেখে কতটুকু সে জায়গা পূরণ করতে পারেন, এতেই চেন্নাইয়ের ফলাফলের অনেক কিছু নির্ভর করবে। 

    ওপেনিংয়ে হাতে অপশন আছে আরও। মিচেল তো ক্রিকেটবিশ্বে নাম কুড়িয়েছিলেন প্রথম সেই ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওপেনিংয়ে নেমেই। দেশি বিকল্প হিসেবে অভিজ্ঞ রাহানের সঙ্গে আছেন আনক্যাপড শাইখ রশিদ। তবে মিডল অর্ডারই হবে এবছর চেন্নাইয়ের পথচলায় নির্ধারক। 

    মঈন আলীর মান নিয়ে সন্দেহ নেই, তবে তার গ্রাফ এখন আর উপরের দিকে উঠছে না অন্তত। গেল আসরে তিনি ১৮ এর কম গড়ে রান করেছেন মোটে ১২৪। জাদেজা ফাইনালের ‘নায়ক’ বনে গিয়েছিলেন, কিন্তু তার আগে তিনিও ব্যাট হাতে ছিলেন বিবর্ণই। সবমিলিয়ে দিতে পারেননি ১৯০ রানের বেশি। তবুও মিডল ওভারে চেন্নাই প্রতি ছয় বলে রান তুলেছে ৮.৪১ করে, যা ছিল টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর পেছনের কারণ দেড়শোর বেশি স্ট্রাইক রেটে খেলা শিবাম দুবে ও রাহানের দুর্দান্ত ফর্ম। সেই ফর্ম এবারও তারা ধরে রাখতে পারবেন, আশায় থাকবে চেন্নাই। নতুন মুখ ৮ কোটি ৪০ লাখ রুপির রিজভীর কাঁধেও পড়তে পারে দায়িত্ব।

    শেষে ঝড় তোলার জন্য এমএসডি তো আছেনই, আজও! ৪১ এ এসেও গত আসরে পেশির জোর দেখিয়েছিলেন ৫৭ বলে ১০টি ছক্কা মেরে। যদিও হাটুর ইনজুরি নিয়ে খেলা ধোনি একেবারে শেষের দিকেই নামতেন। এবার শেষটা রাঙিয়ে দিতেই চাইবেন। শেষ? ২০২৩ আইপিএলের ফাইনাল জিতে ধোনি বলেছিলেন, বিদায় বলে দেওয়ার মোক্ষম সময় তখনই, কিন্তু যে ভালোবাসা পেয়েছেন তার ভক্তকূলের থেকে, আরও একটা মৌসুম শুধু তাদেরকে উপহার দিতে চান। উপহারের মৌসুমে ধোনির হাতে শেষবার শিরোপা উঠতে গেলে মিডল অর্ডারের প্রশ্ন তাড়ানো চাই চেন্নাইয়ের। 

    বোলিং- আরও পরিণত আক্রমণ, কিন্তু...

    চেন্নাইয়ের শিরোপার পথে সবচেয়ে বড় পার্থক্য গেলবার গড়ে দিয়েছিল ডেথ বোলিং। শেষ চার ওভারে চেন্নাইয়ের ইকোনমি ছিল ১০.১, যা টুর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বনিম্ন। ডেথের নায়ক ছিলেন মাথিশা পাথিরানা। ১২ ম্যাচে ১৯ উইকেট নিয়েছিলেন মাত্র ৮ ইকোনমিতে বল করে, তার মধ্যে ১৮ উইকেটই এসেছে ডেথে। পাথিরানা আইপিএলের আগেআগে চোটে পড়েছেন।

    চেন্নাইয়ে এক পাথিরানা, অন্যখানে ভিন্ন। চেন্নাইয়ের পাথিরানাকে মারাই যায় না, অন্যখানে লাইন-লেংথেরই ঠিক নেই। ধোনির অধীনে বদলেই যান পাথিরানা, এমন কথাও শোনা যায় ক্রিকেটপাড়ায়। বাংলাদেশিদের মনে তাহলে এখন আগ্রহ থাকবে, ধোনির অধীনে মোস্তাফিজকে দেখার। সাম্প্রতিক ফর্ম যে মোটেই ভালো যাচ্ছে না কাটার মাস্টারের। সবশেষ খেলা তিন টি-টোয়েন্টিতে রান দিয়েছেন চল্লিশের বেশি করে। চেন্নাইয়ের পিচ ঐতিহাসিকগতভাবে কিছুটা স্লো। বল আঁকড়ে ধরে এমন পিচে মোস্তাফিজ হতে পারেন কার্যকরী। ধোনির অধীনে অনেক ক্রিকেটারের পুনর্জন্মই হয়েছে বলতে গেলে, অনেক ক্রিকেটারই বদলে গেছেন। মোস্তাফিজের ক্ষেত্রেও কী তাই হবে? যদি তা-ই হয়, ধোনি-মোস্তাফিজের সেই ২০১৫ সালের ধাক্কা ছাপিয়ে গল্পটাও তাহলে বদলেই যাবে।

    গেলবারের মতো এবারও সাফল্যের গল্প লেখার জন্য অবশ্য ধোনি আরও পরিণত বোলারদেরই পাচ্ছেন। অলরাউন্ডারদের ছেড়ে ও চাহার বাদে যেসব বোলার খেলেছিলেন ২০২৩ সালে, তাদের কেউই এর আগে আইপিএলে দশ ম্যাচ পর্যন্ত খেলেননি। সে কারণে ফুল ফিট না থাকা সত্ত্বেও চাহারকে খেলিয়েছিল, পেসে কমতি দেখেই তা বোঝা যাচ্ছিল। ফিট চাহারের সাথে সুইংয়ে দক্ষ শার্দুলকেও এবার পাওয়ারপ্লেতে ব্যবহারের জন্য পাচ্ছেন ধোনি, সঙ্গে থিকশানা তো থাকবেনই। 

    গত আসরে জাদেজার চেয়ে বেশি মিডল ওভারে আর কোন বোলারই উইকেট এনে দিতে পারেননি। তার ২০ উইকেটের সাথে মঈন শিকার করেছিলেন ৯ উইকেট। এবারও তাদের সঙ্গে থিকশানার স্পিন চেন্নাইয়ের ভরসা। বিকল্প হিসেবে বসে থাকবেন স্যান্টনারের মতো মানসম্পন্ন স্পিনার। দেশি পেসারদের মধ্যে তুশার দেশপান্ডে সময়ের সাথে উন্নতির ছাপ দেখিয়েছেন তার বোলিংয়ে। গেল আসরে নিয়েছিলেন ২০ উইকেট ৯.৯২ গড়ে। এবার ফিরেছেন ২০২২ আইপিএলে সম্ভাবনা দেখানো মুকেশ চৌধুরী। রাজবর্ধন হাঙ্গারগেকার, সিমারজিতদের ডাক পড়তে পারে। অনভিজ্ঞ পেস আক্রমণকে নিয়েই হলদে শিবির শিরোপার মুখ দেখেছিল বলে চেন্নাই সমর্থকদের বাড়তি প্রত্যাশাই থাকবে এবার। দেশি পেসাররা আরও পরিণত হচ্ছেন ঠিকই, তবে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে চেন্নাইয়ের পেস আক্রমণটাই যা খামতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। অবশ্য চেন্নাইয়ে খামতি, চেন্নাইয়ের বেলায় এসব বলতে নেই…

    কুঁড়ি থেকে ফুল হওয়ার পালা

    এক বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের প্রথম ব্যাটার হিসেবে তিন সেঞ্চুরি হাঁকানো রাচিন রবীন্দ্রর দিকেই আলাদা করে চোখ থাকবে। সত্তরের বেশি ম্যাচ খেলে ১৭ এর কম গড়ে টি-টোয়েন্টি রেকর্ড মোটেও ভালো নয় যদিও। তবে পেসে অস্বস্তি নেই, স্পিনে বেশ ভালো মারতে পারেন। টি-টোয়েন্টির সুরটা ধরতে পারলেই সফলতার উপকরণ রয়েছে তার মাঝে। টি-টোয়েন্টির হিসেবে এখনও উঁচুমানের না হলেও মাঝেমধ্যে কার্যকরী হয়ে যাওয়ার মতো বোলিংও আছে।

    গেলবারের অবস্থান

    ১৪ ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থেকে প্লেঅফে পা রেখেছিল। প্রথম কোয়ালিফায়ারের পর আবার ফাইনালে গুজরাটকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল চেন্নাই।