• আইপিএল ২০২৪
  • " />

     

    ব্যাটিং শক্তিশালী, অনভিজ্ঞ বোলিংয়ে কলকাতার ভরসা হতে পারবেন স্টার্ক?

    ব্যাটিং শক্তিশালী, অনভিজ্ঞ বোলিংয়ে কলকাতার ভরসা হতে পারবেন স্টার্ক?    

    এলেন কারা, গেলেন কারা

    গতবারের স্কোয়াডের প্রায় অর্ধেক (১২) নামকেই ছাটাই করে ফেলেছে কলকাতা। দুই কিউই লোকি ফার্গুসন ও টিম সাউথিকে বিদায় করে দিয়ে কিনেছে যে দুই বিদেশি পেসার, ২০২৪ আইপিএল নিলামের শিরোনাম বনে যাওয়া একজনের নাম বলে দিতে হয় না। রেকর্ড ২৪ কোটি ৭৫ লাখ রুপির মিচেল স্টার্কের সঙ্গে ইংল্যান্ডের গাস এটকিনসনকে কিনেছিল কলকাতা। তিনি নিজেকে সরিয়ে নেওয়ায় বদলি এনেছে দুশমন্ত চামিরাকে। লিটন-সাকিবের সাথে ছেড়ে দেওয়ার তালিকায় নাম উঠেছে জনসন চার্লস ও ডেভিড ভিসার। নতুন যুক্ত হয়েছেন মুজিব উর রহমান ও শেরফেইন রাদারফোর্ড। বিদেশির মতো দেশি ছয়জনকেও ধরে রাখেনি কলকাতা, তার মধ্যে পরিচিত নাম শার্দুল ঠাকুর ও উমেশ যাদব। দুই ব্যাটার মান্দীপ সিং ও নারায়ণ জাগাদিশানকে ছেড়ে কিনেছে শ্রীকর ভারত ও আংক্রিশ রাগুভানশিকে। পুরোনো ঠিকানায় মানিশ পান্ডেকে ফেরানোর সঙ্গে দলে ভিড়িয়েছে চেতন সাকারিয়া, রামানদীপ সিং ও আনক্যাপড সাকিব হুসেইনকে। আর জেসন রয় খেলবেন না বলে তার বদলি এনেছে ফিল সল্ট। 

    সম্ভাব্য ১২

    অতিরিক্ত ব্যাটারের জায়গায় অপশন মানিশ পান্ডে, শ্রীকর ভারত।

    ১। সল্ট/ গুরবাজ

    ২। ভেঙ্কটেশ আইয়ার

    ৩। শ্রেয়াস আইয়ার

    ৪। নিতিশ রানা

    ৫। রিঙ্কু

    ৬। রাসেল

    ৭। রামানদীপ

    ৮। নারাইন

    ৯। স্টার্ক

    ১০। বরুণ 

    ১১। সুয়াস

    ১২। হারশিত রানা

    ব্যাটিং- শক্তিশালী দেশি ব্যাটিংয়ের মাথায় ওপেনিং দুশ্চিন্তা

    সাকিব আল হাসান টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার পর নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন গেল আসর থেকে। স্পিন অলরাউন্ডারের জায়গায় তখন কলকাতা এনেছিল একজন ওপেনারকে। জেসন রয় এসে এরপর ৮ ম্যাচে ২৮৫ রান করে কিছুটা স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছিলেন কলকাতার ওপেনিংয়ে। তবু ইনিংসের শুরুতেই কতটা পিছিয়ে গিয়েছিল কলকাতা, তা বোঝা যায় পাওয়ারপ্লে পরিসংখ্যানে। পাওয়ারপ্লেতে সবচেয়ে বেশি ২৯টি উইকেট হারিয়েছিল কলকাতা। তাদের চেয়ে কম ব্যাটিং গড়ও আর কোন দলেরই ছিল না। এক টুর্নামেন্টেই ওপেনিংয়ে পাঠিয়েছিল সাতজনকে। এবার অন্তত সে অস্থিরতাটা দূর হবে, কলকাতা সমর্থকদের মনে সে প্রার্থনাই থাকবে।

    গেলবার তিন-চারে নিয়মিত ব্যাট করা ভেঙ্কটেশ আইয়ারকে এবার ফেরানোর কথা ওপেনিংয়ে। তবে ওপেনিংয়ের অপর পাশে কে, এই প্রশ্নের উত্তরেই সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করতে হবে কলকাতাকে। আক্রমণাত্মক সল্ট নাকি গেলবার ১১ ম্যাচে ২০.৬৩ গড়ে ২২৭ রান করা রহমানউল্লাহ গুরবাজ। ইমপ্যাক্টফুল পারফরম্যান্স দিতে সক্ষম সল্ট কতটুকু ধারাবাহিক হতে পারবেন, গুরবাজের এখনই বড় কিছু করার সামর্থ্য আছে কিনা- সেসব দ্বিধা তবু থেকেই যায়। তবে ইনজুরিতে গেল আসর মিস করা শ্রেয়াস আইয়ারের ফেরাটা কলকাতার ব্যাটিংয়ের শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছে নিঃসন্দেহে। 

    ওপেনিংয়ের পর তাদের যে ব্যাটিং অর্ডার এমনিতেই শক্তিশালী। নিতিশ রানা গতবারও করেছিলেন ১৪১ স্ট্রাইক রেটে ৪১৩ রান। চারশের বেশি রান করা রিঙ্কু সিং তো যেকোন পরিস্থিতিতেই খেলতে সক্ষম, সময় বুঝে গিয়ার পাল্টানোর সামর্থ্য রাখেন। তাদের সঙ্গে ভেঙ্কটশ আইয়ারও গেলবার চারশের কম রান করেননি। তাইতো মিডল ওভারে কলকাতা প্রতি ছয় বলে যা রান (৮.৪১) এনেছিল, তার থেকে বেশি পেরেছে শুধু একটি দল। কলকাতার বহু সুদিনের কারিগর আন্দ্রে রাসেল কেমন করেন এবার, সেটি তো মহাগুরুত্বপূর্ণই। 

    ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় চলে আসা এই ক্যারিবিয়ান এখনও হাল ধরতে পারবেন কলকাতার ফিনিশিংয়ের? গতবার সাত ম্যাচে আউট হয়ে গিয়েছিলেন দশ বলের বেশি খেলার আগেই। ত্রিশোর্ধ্ব তিনটি দেড়শোর বেশি স্ট্রাইক রেটের ইনিংস খেলা রাসেল শেষমেশ রান করেছিলেন ২২৭। কলকাতা আরেক যে ব্যাটারকে খেলাতে পারে, তিনি হতে পারেন লেট-মিডল অর্ডারে রামানদীপ কিংবা মানিশ পান্ডে। অথবা ভেঙ্কটেশ, শ্রেয়াসদের এক পজিশন করে নামিয়ে ওপেনিংয়ে শ্রীকর ভারত। যেভাবেই হোক, কলকাতার ওপেনিংয়ের নৌকা দিক খুঁজে না পেলে, ভরসার মিডল অর্ডার থাকা সত্ত্বেও দিন ফেরানো কঠিনই হবে। 

    বোলিং- অনভিজ্ঞ পেস আক্রমণে দিনবদলের ছবি স্টার্ককে ঘিরে

    কিছু কিছু ক্রিকেটার আছেন, যাদের উপস্থিতি একটা দলের শক্তি অনেকটুকুই বাড়িয়ে দেয়। মিচেল স্টার্ক এমনই, কিন্তু তার আগেও তো এরকম ছিলেন। তবু এত অর্থকড়ি কেউ কারো পেছনে ঢালেনি। কেন ২৪ কোটি ৭৫ লাখ রুপি একজনের পেছনেই ব্যয় করলো কলকাতা? এই অঙ্ককে প্রয়োজনের মাপকাঠি হিসেবেই ধরতে পারেন। কলকাতার সিইও ভেঙ্কি মাইসোর যেমন বলেছিলেন নিলামের সময় রুপির দিকে খেয়াল ছিল না, প্রয়োজনের কথাই মাথায় ছিল তাদের। কলকাতার কতটা প্রয়োজন ছিল স্টার্কের মতো একজন বোলারের, কিছু সংখ্যাই আপনাকে বুঝিয়ে দিবে। 

    পাওয়ারপ্লেতে ওভারপ্রতি কলকাতার চেয়ে বেশি রান দেয়নি আর কোন দলই (৯.৭৮)। ডেথে তাদের ইকোনমি ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (১১.৫৫)। ডেথে তো প্রায় সময়ই বল তুলে দিতে হয়েছিল বরুণের হাতে। বরুণ তার মোট ওভারের প্রায় ২০ ভাগ করেছেন শেষ চার ওভারেই। খারাপের মাত্রাটা বেড়ে যায় স্পিনারদের আলাদা করে শুধুই পেসারদের সংখ্যায় তাকালে। পাওয়ারপ্লেতে কলকাতার পেসাররা মাত্র ১০টি উইকেট পেয়েছেন, প্রত্যেক উইকেটে খরচ করেছেন প্রায় ৫৬ রান। ডেথেও একই হাল, রান দিয়েছেন ১২ এর বেশি করে। দেশি, বিদেশি- ঘুরেফিরে কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছিলো না।

     

    স্টার্ক নতুন বলে যেমন দক্ষ, ডেথেও ভরসা করার মতো বলেই তো এত প্রয়োজন দেখলো কলকাতা। পেসের দুর্দিনেও গেলবার ভালো করেছিল টুর্নামেন্টেরই অন্যতম সেরা কলকাতার স্পিন আক্রমণ। বরুণ ১৪ ম্যাচে ২০ উইকেট নিয়েছিলেন। নারিন ১১ উইকেটের বেশি নিতে না পারলেও কিপটে বোলিং করে যান নিয়মিত। তবে কোন আইপিএলে সর্বোচ্চ ইকোনমি ছিল গতবছরই (৭.৯৮)। নারিনের সময় ফুরিয়ে এসেছে, সে কথা বলার সাহস করবেন না কেউ সহজেই, তবে তার যোগ্য বদলি হিসেবেই কলকাতা ডাগআউটে থাকবেন মুজিব উর রহমান। স্পিনার হয়েও পাওয়ারপ্লেতেই যার কারুকাজ। পাওয়ারপ্লেতে দারুণ এই অপশনকে নিয়ে ভিন্ন পরিকল্পনায়ও যাওয়ার পথ খোলা আছে কলকাতার। তাদের সঙ্গে লেগি সুয়াসও নিজেকে মেলে ধরেছেন গেলবার। 

    কিন্তু পেস আক্রমণের সব ভার কি স্টার্কের উপরই পড়ে যাবে? লম্বা টুর্নামেন্টে স্টার্ককে সঙ্গ দেবেন কে, প্রশ্ন সেটিই। গতিশীল হারশিত রানা গেলবার ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছেন। ডেথ ও মিডল ওভার বিবেচনায় চেতন সাকারিয়া হতে পারেন ভালো অপশন, যদিও সেই আবির্ভাবের আসরের পর তিনি যেন হারিয়েই গেছেন। ভইবব আরোরা সুইংয়ে দক্ষ আছেন, তার সঙ্গে সাকিব হুসেইন বিকল্প থাকবেন। অনভিজ্ঞ এই দেশি পেসাররা অবদান রাখতে পারলে কলকাতার বোলিংয়ে ভিন্ন ছবি দেখা যেতেই পারে। যে ছবি স্টার্ককে ঘিরে তৈরি হয়েছিল নিলামের মঞ্চেই। 

    কুঁড়ি থেকে ফুল হওয়ার পালা

    সুয়াস শর্মা ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে নামছেন কলকাতার বোলিং ইনিংসে। ২০২৩ আইপিএলে তা নিয়মিত চিত্রই হয়ে গিয়েছিল। আবির্ভাবে ভালোই সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন ১০ ম্যাচে ৮.২৩ ইকোনমিতে ১১ উইকেট নিয়ে। হুট করেই বড় মঞ্চে চলে আসা এই বোলার সময়ের সাথে পরিণত হয়েছেন নিশ্চয়ই। প্রথম আইপিএলের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার টুর্নামেন্টেরই অন্যতম ‘ইমপ্যাক্টফুল প্লেয়ার’ হতে চাইবেন।

    গেলবারের অবস্থান

    ১৪ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে থেকেছিল সপ্তম স্থানে।