• ইউরো ২০২৪
  • " />

     

    সাহারা থেকে বিলবাও: দ্য উইলিয়ামস জার্নি

    সাহারা থেকে বিলবাও: দ্য উইলিয়ামস জার্নি    

    ইউরোতে স্পেনের দুই ফরোয়ার্ড নিকো উইলিয়ামস আর লামিন ইয়ামালের খুনসুটি অনেকেরই হয়তো চোখে পড়েছে। স্পেনের নিকো এবার দুর্দান্ত খেলছেন, বড় অনেক ক্লাবের নজর আছে তার ওপর। অথচ ২২ বছর বয়সী নিকোর পরিবারের জীবনই বিপন্ন হতে পড়েছিল সাহারা মরভূমিতে। ঘানা ছেড়ে নিকো আর তার ভাই ইনাকি উইলিয়ামসের পরিবারের স্পেনে পাড়ি জমানোর গল্পটা হার মানাবে অনেক হলিউড ম্যুভির গল্পকেও। 

    ঘানাতে পিতৃভুমি হলেও ইনাকি আর নিকো দুজনই জন্মেছেন স্পেনে। ইনাকির বাবা মা ফেলিক্স আর মারিয়া উন্নত জীবনের আশায় ঘানা ছেড়েছিলেন যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে। ঘানা থেকে উত্তপ্ত সাহারা মরুভূমি ফেলিক্সের সাথে গর্ভবতী মারিয়া পাড়ি দিয়েছিলেন পায়ে হেঁটে আর ট্রাকের পেছনে চড়ে। কিন্তু মাঝপথে বাঁধে বিপত্তি। যুক্তরাষ্ট্রে যারা তাদের পৌঁছে দেয়ার কথা বলেছিল,তারাই সর্বস্ব কেড়ে নেয়।

    বাকিদের সাথে দুজন গ্রেফতার হন স্পেনের ছিটমহল মেলিলায়। এক আইনজীবির সহযোগিতায় তখন খানিকটা দিশা খুঁজে পান দুজন। তার পরামর্শে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন স্পেনে, লাইবেরিয়ার শরণার্থী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিয়ে।সেই আইনজীবি উইলিয়ামসদের মা বাবাকে তুলে দেন তখন বিলবাওয়ের ক্যাথলিক চার্চের এক পাদ্রির হাতে। অচেনা সেই পাদ্রিই ঘোরালেন তাদের জীবনের মোড়।

    বিলবাওয়ের এক হাসপাতালে জন্ম নেন মারিয়া-ফেলিক্স দম্পতির বড় সন্তান। এই দম্পতি তাদের বড় সন্তানের নাম ইনাকি রেখেছিলেন সেই পাদ্রির নামের আদলে, তার প্রতি কৃতজ্ঞতারূপে। ইনাকি মারদোনেস নামের সেই পাদ্রি ছোট্ট ইনাকিকে প্রথম কী উপহার দিয়েছিলেন জানেন? অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের লাল-সাদা স্ট্রাইপের জার্সি।

    এসব কিছুই ইনাকি জানতেন না, বিল্বাওয়ের হয়ে প্রথম ম্যাচটা খেলার আগ পর্যন্ত। তার বয়স যখন ১৮, তখন একদিন মারিয়া তাকে জানান তাদের আদোপান্ত, সাহারা পাড়ি দেয়ার ঝুকিপূর্ণ সেই যাত্রার কথা। সেসবই ছিল তার এগিয়ে যাওয়ার শক্তি। মা বাবার সেই ত্যাগ তিতিক্ষার গল্পই যেন তার ফুটবলের রসদ।

    বিলবাওয়ের ইয়উথ একাডেমিতে হাতেখড়ি ইনাকির। সেখান থেকে মূল দল। টানা খেলে যাচ্ছেন দশ মৌসুম ধরে।স্পেনের হয়েও একটা প্রীতি ম্যাচ খেলেছেন। তবে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার এগিয়েছে ঘানার জার্সিতেই। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ঘানার নাগরিকত্বকে কাজে লাগিয়েছেন। খেলেছেন গত বিশ্বকাপেও।

    ফুটবলার হিসেবে তার ছোট ভাই নিকোর উঠে আসার গল্পটাও একই। বিলবাওয়ের ইয়ুথ একাডেমি ধাপে ধাপে পাড়ি দেয়া বয়সভিত্তিক দল; এরপর মূল দল। সেই পারফরম্যান্সেই এলো স্পেন জাতীয় দলের জার্সি। গত বিশ্বকাপের আগে নেশন্স লিগে অভিষেক। এরপর এবার খেলছেন ইউরোতে। জর্জিয়ার বিপক্ষে ইউরোর শেষ ষোলোর ম্যাচটাতে ছিলেন দুর্দান্ত। এক গোলের সাথে এক এসিস্ট।

    ইনাকি-নিকো; দুই সহোদর উড়ে বেড়াচ্ছেন ফুটবলের ময়দানে। জানেন এর জন্য কত কী ত্যাগ করতে হয়েছে তাদের মা-বাবাকে। সেই কৃতজ্ঞতা-ভালোবাসা আর দায়বদ্ধতা থেকেই দুই ভাই বলেন, ‘আমরা যা ই করি, মা বাবার জন্য করি। এই স্পিরিটটা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছেন দুই ভাই। কে জানে! ছোট উইলিয়ামস নিকো আরও দারুণ কিছু করে বসেন কিনা এবারের ইউরোতে!