• আফগানিস্তান-বাংলাদেশ, ২০২৪
  • " />

     

    'শারজাহ খরা' কাটিয়ে সিরিজে ফিরল বাংলাদেশ

    'শারজাহ খরা' কাটিয়ে সিরিজে ফিরল বাংলাদেশ    

    ২য় ওয়ানডে, শারজাহ (টস - বাংলাদেশ/ব্যাটিং)
    বাংলাদেশ - ২৫২/৭,৫০ ওভার (শান্ত ৭৬, অনিক ৩৭*, সৌম্য ৩৫, খারোটে ৩/২৮, রশিদ ২/৩২, ঘাজানফার ২/৩৫)
    আফগানিস্তান - ১৮৪, ৪৩.৩ ওভার (রহমত ৫২, আতাল ৩৯, গুলবদিন ২৬, নাসুম ৩/২৮, মিরাজ ২/৩৭, মোস্তাফিজ ২/৩৭)
    ফলাফল - বাংলাদেশ ৬৮ রানে জয়ী


     

    প্রথম ওয়ানডেতে নাস্তানাবুদ হওয়ার পর পূর্ণাঙ্গ পারফরম্যান্সে ঘুরে দাঁড়াল বাংলাদেশ। শারজাহ'র ব্যবহৃত উইকেটে আগে ব্যাটিং হয়ে ২৫৩ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেওয়ার পর বোলারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সিরিজে আনল ১-১ সমতা। ২৯ বছর পর তাই শারজাহতে কোনো ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ।

    এই উইকেটে বাংলাদেশের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্য চ্যালেঞ্জিং হত অবশ্যই। সেই লক্ষ্যে আরো একবার রহমানউল্লাহ গুরবাজকে আজ শুরুতেই ফেরান তাসকিন। তবে রহমত শাহকে নিয়ে সেদিকুল্লাহ জুটি গড়ে বসেন। জাকের আলী সহজ ক্যাচ ফেলে দেওয়ায় রহমতের উইকেটটা মিরাজের ভাগ্যে জুটেনি। সেটার সুযোগ নিয়েই রহমত এগিয়ে যেতে থাকেন। মাঝে বেপরোয়া হয়ে রিভিউও নষ্ট করে বসে বাংলাদেশ। ম্যাচের মোড় ঘুরাতে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মিরাজ ১৭তম ওভারে আক্রমণে আনেন নাসুমকে। তৃতীয় বলেই নাসুম দেখালেন ভেল্কি, অবশ্য বলা ভালো দেখালেন মিরাজ নিজেই। ব্যাকওয়ার্ড স্কয়্যার লেগে লাফিয়ে উঠে দারুণ ক্যাচ নিয়ে থামালেন সেদিকুল্লাহ'র ৫১ বলে ৩৯ রানের ইনিংস। সেদিকুল্লাহকে ফেরানোর পর রহমত ও শহীদির ওপর চেপে বসে বাংলাদেশ। এর মধ্যে রিভিউ নিয়ে একবার বেঁচে গেলেও আফগান অধিনায়ক একেবারেই সুবিধা করতে পারছিলেন না। মোস্তাফিজের এক বাউন্সারে হুট করেই হুক করে ডিপ ফাইন লেগে শরিফুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার ৪০ বলে ১৬ রানের ইনিংস।

    এর আগে রহমত পেয়ে যান তার ৩০তম ওয়ানডে ফিফটি। তবে এরপর ক্ষণিকের ঝড়ে ঘুরে যায় ম্যাচ। শহীদি ফেরার পর উইকেটে আসা ওমরযাই নাসুমের প্রথম বলেই স্টাম্প খুইয়ে বসেন। এর কিছুক্ষণ পর একেবারেই বালখিল্য এক রান আউট হয়ে ৭৬ বলে ৫২ রানের ইনিংস শেষে রহমত ফিরলে বিপদে পড়ে যায় আফগানরা। দুই প্রান্ত থেকে পেসারদের এনে নবি-নাঈব জুটিকে চাপে ফেলেন মিরাজ। তবে উইকেট পড়ে দুজনেই হাত খুলতে শুরু করেন পেসারদের বিপক্ষেই। তেমন একটা শিশির না থাকায় মিরাজ ফেরেন স্পিন-মন্ত্রে। ক্ষণিকের চাপে অন্য প্রান্ত থেকে অবশ্য ব্রেকথ্রু এনে দেন শরিফুল; দুটো বাউন্ডারি হজম করার পর গুলবদিনকে থামান ২৫ বলে ২৬ রানের ইনিংস শেষে।

    পরের ওভারে মিরাজ নিজেই ২১ বলে ১৭ রানে থাকা নবীর স্টাম্প উপড়ে ফেলেন। ম্যাচের ভাগ্য ওখানেই লিখে ফেলেন তিনি। খারোটে ও রশিদের অবশ্য ম্যাচ যেকোনো মুহূর্তে ঘুরিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য ছিল। নিজের স্পেল শেষ করার আগে খারোটেকে মিরাজ ফেরালে সেই দায়িত্ব গিয়ে পড়ে রশিদের একার কাঁধে। সেই চাপটা কাজে লাগিয়েই মোস্তাফিজ অফ কাটারের ফাঁদে ফেলে ১৪ রান করা রশিদকে আটকে ফেলেন লং অফের বাউন্ডারিতে। শেষ উইকেটটা নিয়ে এরপর দলে ফেরা নাসুম বাংলাদেশকে এনে দেন স্বস্তির জয়।

    এর আগে ব্যাটিং নেওয়া বাংলাদেশ শুরুটা করে তেড়েফুঁড়ে, বলা চলে করেন তানজিদ তামিম। তবে ঘাজানফারের ফুল টসে ছক্কা হাঁকানোর পরের বলেই মিড অনে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার ১৭ বলে ২২ রানের আক্রমণ। এরপর অবশ্য অধিনায়ক শান্তকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন সৌম্য। ফারুকীকে একেবারেই চেপে বসার সুযোগ না দিয়ে স্পিনারদেরও দুজনে সামলে নেন। তবে স্রোতের বিপরীতে সৌম্য পড়ে যান রশিদের এলবিডব্লিউর ফাঁদে। আলোচনা করেও রিভিউ না নেওয়া সৌম্য বেঁচে যেতেন অন্য সিদ্ধান্ত নিলেই, বল যে পিচের লাইনে পড়েনি। সৌম্য তাই ফেরেন ৪৯ বলে ৩৫ রান শেষে।

    মিরাজকে নিয়ে এরপর শান্ত জুটি গড়ার চেষ্টা করলেও দুজনেই এগুচ্ছিলেন মন্থর গতিতে। রশিদের গুগলি পড়তে না পেরে মিরাজ স্টাম্প খুইয়ে ৩৩ বলে ২২ রানে ফিরলে আরও খোলসে ঢুকে যান শান্ত। অবশ্য পেয়ে যান নবম ওয়ানডে ফিফটি। জুটি গড়ার প্রয়োজনের সময়ে ডিপ স্কয়্যার লেগে এরপর সরাসরি ক্যাচ দিয়ে হৃদয় ফিরলে সেখান থেকে খারোটে একে একে পেয়ে যান আরও দুটো উইকেট। নিজের পরের ওভারে ধুঁকতে থাকা শান্তকে ১১৯ বলে ৭৬ রানে থামান; লং অনে ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ করে দিয়ে বরং সেটা আসলে দিয়েই আসেন শান্ত। তিন বল পরেই মাহমুদউল্লাহও ফিরলেন ৩ রানে।

    ভালো ভিত তৈরি করেও আরো একবার সেটা ছুঁড়ে দিয়ে আসার সম্ভাবনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে দলে আসা দুজনে আবির্ভূত হন ত্রাণকর্তা রূপে। নাসুম এক হাত নেন স্পিনারদের, অন্যদিকে ফারুকীকে দুজনেই তুলোধোনা করে ছাড়েন। হাত খুলে খেলতে গিয়েই ঘাজানফারের শেষ ওভারে ফেরার আগে নাসুম খেলেন ২৪ বলে ২৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। ছয় দিয়ে ইনিংস শেষ করে অন্যদিকে অভিষিক্ত জাকের আলী অনিক বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসের পারদটাই যেন চড়িয়ে দেন। মাঠ ছেড়েছেন ২৭ বলে ৩৭* রানের ঝলমলে ইনিংস শেষে। সেই সাথে অভিষেকে বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে সেই সাব্বির রহমানের পর গড়েছেন তিন ছয়ের রেকর্ড। জাকের আলীর ক্যামিওতে পাওয়া সংগ্রহের ওপর দাঁড়িয়েই বাংলাদেশ পরে পেয়ে যায় সিরিজে সমতা ফেরানো জয়।