• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    লওরি ১-০ ক্যান্সার

    লওরি ১-০ ক্যান্সার    

    ২০১১ সাল। ইংল্যান্ডের হার্টেলপুলের কার্ল ও গেমা লওরি দম্পতির ঘর আলো করে আসলো ব্র্যাডলি লওরি। ২০১৩-এর শুরুর দিকে হঠাৎই ব্র্যাডলির শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এমতাবস্থায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন লওরি দম্পতি। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডাক্তার জানান,ব্র্যাডলির শরীরে ধরা পড়েছে মরণব্যাধি ক্যান্সার ‘নিউরোব্লাস্টোমা’। ব্র্যাডলিকে সর্বোচ্চ ২-৩ মাস সময় দিলেন ডাক্তাররা। আকাশ ভেঙ্গে পড়লো লওরি পরিবারের ওপর।
     
    ব্র্যাডলি কিন্তু এত সহজে হার মানার পাত্র নয়। ডাক্তারদের বক্তব্যের পরও মনোবল হারায়নি সে। বেঁচে থাকার তীব্র ইচ্ছা ও পরিবারের প্রার্থনার কাছে আবারো হার মানলো চিকিৎসাবিজ্ঞান। ২০১৪ সালে ডাক্তারদের হতবাক করে ক্যান্সারকে বিদায় জানালো ব্র্যাডলি। কাহিনীটা শেষ হতে পারতো এখানেই। ব্র্যাডলি ও তার পরিবার সুখী জীবনযাপন করতে পারতো। কিন্তু সব গল্পের যে ‘হ্যাপি এন্ডিং’ নেই! নিষ্ঠুর বাস্তবতা তখনো অপেক্ষা করছিলো ব্র্যাডলি ও তার পরিবারের জন্য।
     
    মাসকয়েক আগে রুটিন চেক আপেব্র্যাডলির শরীরে আবারো ধরা পড়লো নিউরোব্লাস্টোমা, এবার একেবারে সর্বশেষ স্টেজে। পুনরায় চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ৭ লক্ষ পাউন্ড, যা আগেরবারের প্রায় তিনগুণ। আর সবচেয়ে বড় কথা হল, যুক্তরাজ্যে এর কোনো সমাধানই নেই। যেতে হবে সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে। গেমা লওরির ব্লগের মাধ্যমে ব্র্যাডলির কথা জানতে পারলো সমগ্র বিশ্ব। এগিয়ে আসলো সবাই, ব্র্যাডলির মুখে হাসি ফোটাতে।
     

                          
    ব্র্যাডলির প্রিয় দল সান্ডারল্যান্ড। ব্র্যাডলির কথা জেনেই এভারটনের বিপক্ষের ম্যাচে তাকে দলের ‘ম্যাস্কট’বানিয়ে দিল সান্ডারল্যান্ড। চিকিৎসার জন্য এভারটন ২ লক্ষ পাউন্ড দান করলো লওরি পরিবারকে। বুধবার সান্ডারল্যান্ড-চেলসি ম্যাচের আগে  প্রিয় তারকাদের সাথে ফুটবলও খেলেছে ব্র্যাডলি। তার সম্মানে ম্যাচের ৫ মিনিটে উভয় দলের সমর্থকদের করতালিতে মুখরিত হয়ে গিয়েছিল স্টেডিয়ামটি। ব্র্যাডলির স্বপ্ন ছিল সান্ডারল্যান্ডের জার্সিতে গোল করা। ম্যাচের আগে পেনাল্টি থেকে গোল করতে দিয়ে ব্র্যাডলির সেই স্বপ্নও পূরণ করে দিয়েছে তার প্রিয় ক্লাবটি।
     
    চিকিৎসকদের আশঙ্কা করছেন, এই বছরের বড়দিনই ব্র্যাডলির শেষ বড়দিন। সান্ডারল্যান্ড খুদে ভক্তের কঠিন সময়ে এগিয়ে এসেছে পাশে। এই বড়দিনে ব্র্যাডলির প্রিয় হ্যারি পটার থিম পার্কে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করেছে । ওদিকে পারিবারিক বন্ধু লিন মার্ফির কল্যাণে বিশ্বের একাধিক দেশ থেকে ইতোমধ্যেই বড়দিনের সহস্রাধিক কার্ড পেয়েছে ব্র্যাডলি।
     
    লওরি পরিবারকে তিনটি বিকল্প দিয়েছে ব্র্যাডলির চিকিৎসক। প্রথমটি হল, সবধরনের চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়া, যেক্ষেত্রে ব্র্যাডলি বাঁচবে সর্বোচ্চ দুমাস। অথবা ব্র্যাডলিকে ‘ওরাল কেমোথেরাপি’ দেওয়া, যার কার্যকারীতা নিয়ে সন্দেহ আছে চিকিৎসকদেরই। আর শেষ বিকল্প হল, ব্র্যাডলিকে অ্যান্টিবডি ও কেমোথেরাপির একটি কম্বিনেশন দেওয়া, যেটায় ব্র্যাডলির মৃত্যুও হতে পারে। ব্র্যাডলির মায়ের ব্লগ অনুযায়ী, তারা দ্বিতীয় ও তৃতীয় অপশন দুটি বেছে নিয়েছেন। বড়দিনের আগ পর্যন্ত ব্র্যাডলিকে ওরাল কেমোথেরাপি দেওয়া হবে। সেটায় কাজ হলে ব্র্যাডলিকে নিয়ে যাওয়া হবে যুক্তরাষ্ট্রে, যেখানে তৃতীয় থেরাপিটি দেওয়া হবে। ইতোমধ্যেই ‘ব্র্যাডলি লওরি ডট কম’ এ জমা হয়েছে প্রায় ৭ লক্ষ পাউন্ড, যেটা লওরি পরিবারের দরকার ছিল।
     
    আগেরবার ক্যান্সারকে হার মানালেও এবার চ্যালেঞ্জটা আরও বড়। ব্র্যাডলি লওরির জীবন কাহিনী ছুঁয়ে গেছে সমগ্র বিশ্বকে। বিশ্বের একাধিক উপাসনালয়ে প্রার্থনাও বসেছিল ব্র্যাডলির জন্য। বিশ্ববাসীর এহেন উদ্যোগে গেমা লওরির কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। শেষ কেমোথেরাপির আগে ব্র্যাডলি তার মাকে বলেছিল, “মা দেখো, আগেরবারের মত এবারো হার মানাবো ক্যান্সারকে”। চিকিৎসা বাবদ খরচ হওয়ার পর যদি কিছু বেঁচে থাকে, তা দিয়ে ‘ব্র্যাডলি লওরি ফাউন্ডেশন’ খুলবে লওরি পরিবার। কার্ল লওরির মতে, “এই দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভোগা শিশুদের সাহায্য করতে চাই। আমরা চাই, প্রত্যেকটি শিশুই যেন শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যেতে পারে”।
     
    ব্র্যাডলি লওরি ১-০ ক্যান্সার...