লঙ্কাবধেই এল শততম টেস্টে জয়
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
শ্রীলঙ্কা ৩৩৮ ও ৩১৯
বাংলাদেশ ৪৬৭ ও ১৯১/৬ (তামিম ৮২, সাব্বির ৪১, মুশফিক ২২*, পেরেরা ৩/৫৯, হেরাথ ৩/৭৫)
ফলঃ বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী
হেরাথের বলটা স্কয়্যার লেগে সুইপ করেই ফেটে পড়লেন উল্লাসে। অন্য প্রান্তে মুশফিকুর রহিম তখন দুই হাত ছুঁড়ে শুরু করে দিয়েছেন উদযাপন। ঠিক ছয় মাস আগে ইংল্যান্ডের সঙ্গে তাঁর উইকেটেই এসেছিল মিরপুর জয়। নিয়তিই বোধ হয় ঠিক করে রেখেছিল, মেহেদি হাসান মিরাজের ব্যাট থেকেই আসবে সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে টেস্টের প্রথম জয়টা এলো নিজেদের শততম টেস্টে।
সেই জয়টা এলো কত নাটক, কত স্নায়ুক্ষয়ী মুহূর্তের পর। পঞ্চম দিনের ১৯১ রানের লক্ষ্যটা যখন হাতের নাগালে চলে এলো, তখনই যেন হঠাৎ খেই হারাতে শুরু করল বাংলাদেশ। সাকিব-মুশফিকের ব্যাটে যে জয়টা সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছিল, তখনই হঠাৎ পেরেরার বলে কাট করতে গিয়ে আউট হয়ে গেলেন সাকিব আল হাসান। তখনও জয়ের জন্য দরকার ২৯ রান, ক্রিজে মুশফিকের সঙ্গী নবীন মোসাদ্দেক।
কিন্তু হঠাৎ করেই যেন স্নায়ুচাপে পড়ে গেলে দুজন। পেরেরার একটা বল শট না খেলে ছেড়ে দিলেন মুশফিক, সমস্বর আবেদনে আঙুল তুলে দিলেন আম্পায়ার। রিভিউ নিলেন মুশফিক, দেখা গেল বল স্টাম্প মিস করেছে। অল্পের জন্য বেঁচে গেলেন মুশফিক। এক ওভার পরে আবার হেরাথকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ দিলেন মোসাদ্দেরক, হেরাথ সেটা ধরতে ধরতেও পারলেন না। হাত থেকে সেটি ফেলে দিলেন। কে জানে, নিজের জন্মদিনে ছেড়ে দিলেন হয়তো ম্যাচটাও।
তবে স্নায়ুচাপ বেশি হয়ে যাচ্ছিল ভেবেই হয়তো খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এলেন দুজন। পরের বলে কভারের ওপর দিয়ে হেরাথকে উড়িয়ে চার মারলেন মোসাদ্দেক। লক্ষ্যটা নেমে এলো ১৬ রানে। এবার মুশফিকও বেশ আক্রমণাত্মক, পেরেরার পরের ওভারে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে মারলেন চার।
হেরাথের পরের ওভারে আবারও আক্রমণে গেলেন মোসাদ্দেক, এবার আবারও চার মেরে বাংলাদেশকে প্রায় তীরে নিয়ে এলেন। দরকার আর ছয় রান। দুজনের ব্যাটই যখন জয়টা আসবে মনে হচ্ছিল, আবারও হেরাথের বলেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলেন মোসাদ্দেক। জয়টা অবশ্য তখন সময়ের ব্যাপার, দরকার মাত্র ২ রান। শেষ পর্যন্ত মিরাজের ব্যাটেই এলো সেই মুহূর্ত।
তবে তার আগে জয়ের রাস্তাটা দেখিয়ে দিয়ে গেছেন তামিম ইকবাল ও সাব্বির রহমান। ২২ রানে সৌম্য সরকার ও ইমরুল কায়েসকে হারিয়ে ফেলার পর যখন বাংলাদেশ বিপদে, দুজনের ১০৯ রানের জুটিটাই আবার পথ দেখিয়েছে। সেঞ্চুরির সুবাস যখন পেতে শুরু করেছেন, ৮২ রানে আউট হয়ে গেছেন তামিম। সাব্বিরও ৪১ রানে ফিরে গেলে হঠাৎ করে আবার বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত এক প্রান্তে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক, দলকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন। অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর চতুর্থ দল হিসেবে শততম টেস্টে জয় পেল বাংলাদেশ। খুব সম্ভবত নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে স্মরণীয় জয়ও বটে।