• লা লিগা
  • " />

     

    শেষ মুহূর্তে ক্লাসিকো জেতালেন মেসি

    শেষ মুহূর্তে ক্লাসিকো জেতালেন মেসি    

    ৭৭ মিনিটে লাল কার্ড দেখে রামোস মাঠ ছাড়ার সময় জয়টা হাতছানি দিচ্ছিল বার্সেলোনাকেই। দশ জনের দলের বিপক্ষে তখনও ম্যাচে ২-১ গোলে এগিয়ে এনরিকের দল। ম্যাচে ফেরার শেষ চেষ্টায় বেনজেমার বদলে ৮২ মিনিটে হামেস রদ্রিগেজকে নামিয়ে দেন জিদান। মাঠে নামার চার মিনিটের ভেতরই দশ জনের দলকে সমতায় ফিরিয়ে বার্নাব্যুতে স্বস্তি এনে দিয়েছিলেন হামেস। উত্তেজনা আর রোমাঞ্চে ঠাসা ক্লাসিকো এগুচ্ছিল ড্রয়ের দিকেই। এমন এক লড়াইয়ের সমাপ্তিটা পয়েন্ট ভাগাভাগিতে শেষ হোক- এমনটি বোধ হয় চাননি ফুটবল বিধাতা নিজেও! এরপরই তাই নাটকের শেষ ছত্রে আবির্ভাব ফুটবল 'মায়েস্ত্রোর'!

    ম্যাচের যোগ করা সময়েও দাপটটা বেশি ছিল রিয়ালেরই। রোনালদো, অ্যাসেনসিওর এমন এক বিফল আক্রমণ থেকে বল পেয়ে যান সার্জি রবার্তো। নিজেদের অর্ধ পেরিয়ে রিয়ালের আক্রমণভাগে ঠেলে পাঠান বল। ম্যাচের তখন ৯২ মিনিট। জর্দি আলবার বাঁ প্রান্ত থেকে করা মাইনাস বাঁ পায়ের বাঁকানো শটে রিয়ালের জালে ঢুকিয়ে দিয়ে গোটা বার্নাব্যুকে স্তব্ধ করে দেন লিওনেল মেসি। আর তাতেই ৩-২ গোলে রিয়ালকে তাদেরই মাঠে হারিয়ে লা লিগার শিরোপা লড়াই উন্মুক্ত করে দিল বার্সা। মেসির ওই গোলের মাহাত্ম্য অবশ্য এখানেই শেষ নয়! আজকের ম্যাচ শুরুর আগে বার্সেলোনার হয়ে নিজের ক্যারিয়ার গোলের সংখ্যা ছিল ৪৯৮। জোড়া গোল করে রিয়ালের বিপক্ষেই ছুঁয়েছেন ক্যারিয়ারের ৫০০তম গোল!  

    ২০১৪ তে শেষবারের মত লক্ষ্যভেদ করেছিলেন ক্লাসিকোতে। চিরশত্রু রিয়ালের বিপক্ষে টানা ৬ ম্যাচ গোলশূন্য থাকায় গঞ্জনাও সইতে হয়েছে ঢের। নেইমার না থাকায় বার্সা সমর্থকরা তাকিয়ে ছিলেন ত্রাণকর্তা মেসির দিকেই। হতাশ করেননি 'লা পুলগা', দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া সময়ে ঠিকই জ্বলে উঠলেন এই আর্জেন্টাইন। প্রথমার্ধে দলকে সমতায় ফেরানোর পর অন্তিম মূহুর্তে মিনিটে মেসি জয়সূচক গোল করেই ছুটলেন বার্নাব্যুর মাদ্রিদ সমর্থকদের সামনে! জার্সি খুলে রিয়ালের কিংকর্তব্যবিমূঢ় সমর্থকদের সামনে তুলে ধরে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েও থাকলেন 'এলএম ১০'!

    অন্তিম মূহূর্তের গোলে মৌসুমের প্রথম ক্লাসিকোতে বার্সার হাসি কেড়ে নিয়েছিল রিয়াল। এবার যেন বার্নাব্যুতে সেই প্রতিশোধটাই নিলেন মেসি। আর আগের ক্লাসিকোর নায়ক রামোসের জন্য ম্যাচটা হয়ে থাকল ভুলে যাবার মতো। লিওনেল মেসিকে শেষ ডিফেন্ডার হিসেবে টু ফুটেড চ্যালেঞ্জ করার অপরাধে সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় রিয়াল অধিনায়ককে। 



     

    শুরু থেকেই ধ্রুপদী লড়াইয়েরই হাতছানি দিচ্ছিল আজকের ক্লাসিকো। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে জমে ওঠা খেলায় প্রথমে এগিয়ে গিয়েছিল জিদানের দলই। ২৩ মিনিটে দলকে এগিয়ে দিয়েছিলেন ক্যাসেমিরো। সেই জবাব দিতেও বেশি দেরি করেনি বার্সা। ৩৩ মিনিটে একক দক্ষতায় গোল করে বার্সাকে সমতায় এনেছিলেন লিওনেল মেসিই। বক্সের বাইরে থেকে রাকিতিচের কাছ থেকে পাওয়া বল চোখ ধাঁধানো ক্ষীপ্রতা ও ড্রিবলিং দিয়ে রিয়ালের তিন জন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে নাভাসের জালে ঢুকিয়ে সমতাসূচক গোলটি করেন মেসি।

    ম্যাচ শুরুর আগে গ্যারেথ বেলের ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন ছিল। শুরুর একাদশে ওয়েলশনম্যানের সংযোগজন চমকে দিয়েছিল অনেক রিয়াল ফ্যানকেই। কিন্তু বেল হতাশই করেছেন শেষ পর্যন্ত। ৩৯ মিনিটে মাঠ ছেড়েছেন ইনজুরি নিয়ে। তার জায়গায় মাঠে নামেন অ্যাসেনসিও। প্রথমার্ধ শেষ হয় ১-১ গোলেই।


    দ্বিতীয়ার্ধটাও শক্তিশালীভাবে শুরু করেছিল রিয়াল মাদ্রিদই। একের পর এক আক্রমণ করে বার্সার রক্ষণকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছিলেন মদ্রিচ, অ্যাসেনসিওরা। অন্যদিকে রিয়ালের আক্রমণের চাপ সামলে ধীরগতিতে মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ রেখে কিছুক্ষণ পর আবারও ম্যাচে ফেরত আসে বার্সা। ফল পেতেও দেরী হয়নি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুটা রিয়ালের হলেও গোলটা পেয়ে যায় বার্সাই। ৭৩ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে দারুণ এক গোল করে ম্যাচে প্রথমবারের মতো বার্সাকে এগিয়ে দিয়েছিলেন রাকিতিচ। এর আগেই অবশ্য রিয়ালকে এগিয়ে দিতে পারতেন রোনালদো। অ্যাসেনসিওর ক্রস থেকে ফাকায় বল পেয়ে গিয়েও রোনালদো গোল করতে ব্যর্থ না হলে গল্পটা অন্যরকমও হতে পারত! রোনালদোর মতো দ্বিতীয়ার্ধে গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন নেইমারের জায়গায় খেলতে নামা পাকো আলকাসারও। কিন্তু স্প্যানিশ এই স্ট্রাইকারের দূর্বল শট সহজেই ঠেকিয়ে দেন কেইলর নাভাস।
     

    ৫ গোলের থ্রিলার অবশ্য দুই গোলকিপারের দূর্গ হয়ে বারপোস্ট সামলানোর কথা বলছে না। দশ জনের দলে পরিণত হওয়ার পরও রিয়ালকে ম্যাচে টিকিয়ে রেখেছিলেন কেইলর নাভাসই। পিকে, মেসি, সুয়ারেজদের নিশ্চিত গোলের সুযোগ একাই ব্যর্থ করে দিয়েছেন কোস্টারিকান এই গোলকিপার। নাভাসের মতো ব্যস্ত সময় পার করতে হয়েছে টার স্টেগানকেও। জার্মান গোলকিপারের বেশ কয়েকটি ভালো সেভই শেষ পর্যন্ত বার্নাব্যু থেকে তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে সাহায্য করেছে বার্সাকে। বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে করিম বেনজেমার গোলমুখী হেড ঠেকিয়ে দিয়ে দিন শেষে ম্যাচ জয়ের নায়ক টার স্টেগানও! 

    পুরো ম্যাচের হাড্ডহাড্ডি লড়াইয়ের প্রতিফলন মিলছে পরিসংখ্যানেও। দুই দল মিলে ৯০ মিনিটে শট টার্গেটই করেছে ২৩ বার! যার ভেতর ১৪ টিই ছিল রিয়ালের। শট অন টার্গেটে পিছিয়ে থাকলেও বরাবরের মতোই বল পজেশনে এগিয়েই ছিল বার্সা।

    বার্সেলোনার এই জয়ের পর লা লিগার শিরোপা দৌড়টা উন্মুক্তই হয়ে গেল। দু'দলেরই পয়েন্ট এখন ৭৫। আজকের ম্যাচে জয়ের সুবাদে হেড টু হেডে এগিয়ে থেকে রিয়ালকে টপকে শীর্ষস্থানে চলে গেছে বার্সা। তবে রিয়ালের হাতে রয়েছে একটি ম্যাচ। 


    আরও পড়ুনঃ এল ক্লাসিকোতে কে কত?