শুধু টসেই হাসতে পারলেন মুশফিক
১ম দিন শেষে
দক্ষিণ আফ্রিকা ৯০ ওভারে ২৯৮/১ (এলগার ১২৮*, মার্করাম ৯৭, আমলা ৬৮*)
সবভাবেই চেষ্টা করলেন মুশফিকুর রহিম। ষষ্ঠ ওভারেই নিয়ে এলেন মিরাজকে, চার বোলারকে ব্যবহার করলেন শুরুতেই। সাব্বির রহমান, মাহমুদউল্লাহ, মুমিনুল হকদের হাতেও বল উঠল। তবে লাভ হলো না কোনো, এক রান আউট বাদ দিলে বা দিনটা হাপিত্যেশ করেই কাটাতে হলো বাংলাদেশকে। ভুল যা করার, তা যে সকালেই করে ফেলেছেন মুশফিক! টসে জিতে বল করার সিদ্ধান্তের জন্য আর কতটা আফসোস করতে হয়, সেটাই এখন প্রশ্ন। পচেফস্ট্রুমের উইকেটে এখনই ৩০০ রান করে ফেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশের ঘাড়ের ওপর চেপে বসছে রানের এভারেস্ট।
বোলারদের অবশ্য সেজন্য খুব একটা দোষ দেওয়া কঠিন। উইকেটে মুস্তাফিজদের জন্য বলতে গেলে কিছুই ছিল না। বাউন্স তোপ নেই-ই, প্রথম দিনেই বল মাঝে মাঝে নিচু হয়েছে। স্পিনও নেই খুব একটা। ব্যাটসম্যানদের স্বর্গে রান করার এমন সুযোগ হেলায় হারাননি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম তিন ব্যাটসম্যান। সেটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছেন ডিন এলগার। টেস্ট ক্যারিয়ারে নবম সেঞ্চুরি পেয়ে গেছেন, এই বছর টেস্টে সবচেয়ে বেশি রান দক্ষিণ আফ্রিকা ওপেনারেরই। শেষ দিকে অ্যাঙ্কেলে চোট পেয়েই যা একটু ভুগেছেন, নইলে বাংলাদেশের কোনো বোলারই তাঁকে খুব একটা সমস্যায় ফেলতে পারেননি।
শেষ সেশনে অবশ্য হাশিম আমলাই বেশি উজ্জ্বল ছিলেন। এইডেন মার্করাম আউট হওয়ার পর দ্বিতীয় উইকেটে এলগারের সঙ্গে তাঁর অবিচ্ছিন্ন জুটিটা ১০২ রানের। এর মধ্যে আমলা একাই করেছেন ৬৮। কাল সেটি নিশ্চয় আরও অনেক দূর নিয়ে যেতে চাইবেন।
প্রথম দিনে একমাত্র উদযাপনের উপলক্ষ বাংলাদেশ পেয়েছে দ্বিতীয় সেশনেই। মার্করাম না ডিন এলগার, দুজনের সেঞ্চুরিটা মনে হছিল সময়ের ব্যাপার। বরং তিন অঙ্ক কার আগে হবে, সেটারই ছিল অপেক্ষা। একবার এ আগে যান তো আরেকবার ও আগে। শেষ পর্যন্ত ছয় মেরে এলগারই আগে পৌঁছে গেলেন ৯৯তে। তখনই ঘটল অঘটন। মিরাজের বলে ভুল বোঝাবুঝিতে অনেকটা পথ এসে পড়লেন মার্করাম। মুমিনুলের থ্রো ধরে মিরাজ যখন স্টাম্প ভেঙে দিয়েছেন, মার্করাম ক্রিজ থেকে অনেকটাই দূরে। এক বল করেই সেঞ্চুরি পেলেন এলগার, কিন্তু সংযত উদযাপনে বুঝিয়ে দিয়েছেন অনুজ সতীর্থের রান আউটের দায়টা নিজের ওপরেই নিয়েছেন খানিকটা। ৯৭ রানে রান আউট হয়ে ফিরে গেলেন মার্করাম, অভিষেক ইনিংসে সেঞ্চুরিটা পাওয়া হলো না তিন রানের জন্য। টেস্ট ইতিহাসে অভিষেকে নব্বইয়ের ঘরে কাঁটা পড়েছেন ৩০ জন, আর রান আউটে সেটি হয়েছে শুধু তিন জনের। পাকিস্তানের আবদুল কাদির ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের গর্ডন গ্রিনিজের পর সেই দুর্ভাগ্য হলো মার্করামের।
অথচ দুজন যেভাবে খেলছিলেন, তাতে আউট হওয়ার আভাসও ছিল না কোনো। দ্বিতীয় সেশনে কোনো সুযোগই দেননি কেউ। শুধু একবার মুমিনুলের বলে একটা রিভিউ নিয়েছিলেন মুশফিক। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায়, বল ভালোভাবেই লেগ স্টাম্প মিস করবে। এলগারের রান তখন ৯১, বাংলাদেশ নতুন নিয়মে হারিয়েছে নিজেদের প্রথম রিভিউ।
তার আগে বাংলাদেশের সকালের সেশনটা কেটেছে উইকেটবিহীন। সুযোগ বলতে একটাই হাফ-চান্স এসেছিল। ১৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে তাসকিনের বলটা পয়েন্টে ক্যাচ প্রায় তুলেই দিয়েছিলেন মার্করাম। কিন্তু মুস্তাফিজ একটুর জন্য সেটা হাতে জমাতে পারেননি। শুরুর কয়েক ওভার পর থিতু হয়ে দুই ওপেনার খেলতে শুরু করেছেন দারুণ সব শট। মার্করামের কিছু শট তো জানান দিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকা লম্বা দৌড়ের আরেকজন ঘোড়াই পেয়ে গেল।
বাংলাদেশের একাদশে অবশ্য সেই অর্থে চমক ছিল না। চোটের জন্য থাকবেন না সৌম্য সরকার, সেই আভাস পাওয়া গিয়েছিল আগেই আগের দিন মুশফিকুর রহিম তিন পেসার নিয়ে নামার কথা বলেছেন, সেটিই হয়েছে। মুস্তাফিজ, শফিউলের পাশাপাশি জায়গা পেয়েছেন তাসকিন। দলে ফিরেছেন লিটন দাশও, উইকেটের পেছনে থাকছেন তিনিই।
বাংলাদেশ একাদশঃ তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, মুমিনুল হক, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমান, লিটন দাশ, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, শফিউল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান.
দক্ষিণ আফ্রিকা একাদশঃ এইডেন মার্করাম, ডিন এলগার, হাশিম আমলা, টেন্ডা বাভুমা, ফাফ দু প্লেসি, কুইন্টন ডি কক, অ্যান্ডিল ফেলুকোয়াও, কেশব মহারাজ, কাগিসো রাবাদা, মরনে মরকেল, ডোয়াইন অলিভিয়ের