• বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা
  • " />

     

    অধিনায়কত্বের সেই দুঃস্মৃতি ভুলে গেছেন সাকিব

    অধিনায়কত্বের সেই দুঃস্মৃতি ভুলে গেছেন সাকিব    

    কথাবার্তায় তিনি বরাবরই ভাবাবেগহীন। এই তো, মাস কয়েক আগের কার্ডিফ বা মিরপুরের সেই কীর্তির পরেও প্রায় নির্লিপ্তই ছিলেন। বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়কের দায়িত্ব  আবার তাঁর কাঁধে উঠেছে, সেটিও সাকিব আল হাসানকে একেবারেই আপ্লুত করল না। বিপিএল ফাইনালের আগে আজ ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে অনুশীলন ছিল তাঁর। সেটি শুরুর আগে নিজের স্বভাবসুলভ সেই ‘ডোণ্ট কেয়ার’ হাসি দিয়ে শুধু বললেন, কোনো কিছু প্রত্যাশা করা তাঁর ধাতে নেই। এমনকি আগের বার কীভাবে অধিনায়কত্ব হারিয়েছিলেন, তাও ভুলে গেছেন!

    সেই স্মৃতিটা তাঁকে পীড়া না দিয়ে পারে না। ২০১১ সালে জিম্বাবুয়ে সফরে ব্যর্থ হওয়ার পর তাঁকে একরকম ছুঁড়েই ফেলা হয়েছিল। অথচ অভিষেক টেস্টে জয় দিয়েই শুরু করেছিলেন নতুন ইনিংসটা। এরপর অনেক জল গড়িয়ে গেছেন, সাকিব নিজেকে নিয়ে গেছেন উঁচু থেকে উঁচুতে। কিন্তু সেই স্মৃতি যদি হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগিয়েও থাকে, সাকিব সেটি গোপন করে গেলেন সযতনে। সংবাদমাধ্যম তা মনে করিয়ে দেওয়ার পর যেন পড়লেন আকাশ থেকে। সবিস্ময়ে বললেন, ‘আমার তো ওটাই মনে নাই, কি হয়েছিল?’ মনে করিয়ে দেওয়ার পর তাঁর মতো করেই বললেন, ‘ঠিক আছে, জীবনে কত কিছুই হয়…’।

     

     

    তবে চ্যালেঞ্জের কথা মনে করিয়ে দিতেই সাকিব একটু সিরিয়াস, ‘নতুন দায়িত্ব। টেস্টে গত কিছুদিন আমরা ভালোই করেছি। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে জিতলাম, অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের সঙ্গে জিতলাম এখানে। এই জায়গা থেকে কতটা ভালো করা যায়, সেই চেষ্টাই থাকবে।’ বিদেশের মাটিতে সাফল্য নেই, সেই চ্যালেঞ্জের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার পরও যেন আত্মবিশ্বাসী শোনাল তাঁর কন্ঠ, ‘প্রতিটি টুর্নামেন্ট বা সিরিজই কঠিন। সেটা দেশে হোক বা বাইরে। হয়ত দেশে একটু স্বস্তি বোধ করি আমরা। বিদেশে যেহেতু সাফল্য নেই, সেহেতু আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যায়। একই সঙ্গে এটাও সুযোগ ভালো কিছু করার। কোনো না কোনো কিছু তো কেউ না কেউ শুরু করবে। যদি শুরু হয়, তাহলে খারাপ কী! যদিও কাজটা কঠিন। কিন্তু আমাদের যে দল আছে, আমরা যেভাবে খেলছি, অনেক কিছু করা সম্ভব। আর অধিনায়কত্ব ব্যাপারটা যতটা না উপভোগ, তার চেয়ে বেশি দায়িত্বের।’

    কিন্তু অধিনায়কত্বের ব্যাপারটা কি তাঁর কাছে প্রত্যাশিত ছিল? এবার করলেন একটা রিভার্স স্কুপ, ‘আমি কোনো কিছু প্রত্যাশা করি না। কিছু ছেড়েও দেই না। আসলে ভালো, না আসলে ঠিক আছে।’  

    সাকিবের সঙ্গে সহ অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। কার্ডিফের সেই মহাকাব্যের সহযোদ্ধাকে পাশে পাওয়াটা সাকিবের কাছে স্বস্তির ব্যাপার, ‘আমরা বেশ কয়েকজনই আছি, যারা দলের নেতা। এবং যে কোনো সিদ্ধান্তই আমরা একসঙ্গে মিলেই নেই। কেউ অধিনায়ক থাক বা না থাক, সেটা ব্যাপার নয় যখন আমরা মাঠে খেলতে নামি। সবার সাহায্যই দরকার হবে। আর রিয়াদ ভাই তো কয়েক বছর ধরেই বিপিএলে ভালো অধিনায়কত্ব করছে। নেতৃত্বগুণ উনার ভেতর অনেক আগে থেকেই আছে। আমার কাছে মনে হয়, আমার জন্য কাজটি সহজ হবে।’

    ছয় বছরে আসলে কতটুকু বদলেছেন সাকিব? নিজে সেই কাজটা প্রচারমাধ্যমের ওপরেই ছেড়ে দিয়েছেন। তবে সাকিবের দল ঢাকা ডায়নামাইটসের কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন বিরাট একটা পরিবর্তন দেখেছেন তাঁর মধ্যে, ‘অনেক পরিবর্তন এসেছে, এটা বিশাল। ছয় বছরে অনেক কিছুই চেঞ্জ এসেছে। ক্রিকেটার হিসেবে ওকে অন্যভাবেই দেখি। ও অনেক কিছু জানে, গেম সেন্স আছে। সিচুয়েশন বুঝে ভালো। এখন বয়সও হয়েছে, আগের চেয়ে অনেক পরিণত। আমার মনে হয়, তার অধিনায়কত্ব দিয়ে, বাংলাদেশ ক্রিকেটে সে একটা পরিবর্তন আনবে।’

    আপাতত সাকিবময় সেই বদলে যাওয়া দিনের অপেক্ষাতেই আছে বাংলাদেশ।