'শেষ ভালোটা' সব ভালো হবে বাংলাদেশের?
স্কোর, দ্বিতীয় দিন শেষে
দক্ষিণ আফ্রিকা ১৪৬ ওভারে ৪৯৬/৩ (এলগার ১৯৯, আমলা ১৩৭, বাভুমা ৩১*, ডু প্লেসি ২৬*; শফিউল ১/৭৪, মুস্তাফিজ ১/৯৮ )
বাংলাদেশ ৩৪ ওভারে ১২৭/৩ (মুশফিক ৪৪, মুমিনুল ২৮*, লিটন ২৫, তামিম ২২*; রাবাদা ১/২৩, মরকেল ১/৩৪, মহারাজ ১/৩৮)
দিনের শেষ বল, শেষ বিকেলের আলো মিইয়ে এসেছে পচেফস্ট্রুমে। কেশব মহারাজের বলটা কোনো ঝুঁকি না নিয়েই খেলার কথা ছিল তামিম ইকবালের। কিন্তু তামিম ভাবছিলেন অন্য কিছু। ডাউন দ্য উইকেটে ছয় মেরেই শেষ করলেন দিনের। তারপরও ‘শেষ ভালো যার, সব ভালো তার’ কথাটা অন্তত আজ খাটছে না বাংলাদেশের জন্য। প্রথম ইনিংসে এখনো পিছিয়ে ৩৬৯ রানে, হারিয়ে ফেলেছে তিন উইকেট। পচেফস্ট্রুম টেস্ট বাঁচাতে হলে যে তামিমদের কাল অসাধারণ কিছুই করতে হবে!
তবে তামিমের ছয়টা প্রতীকী ছবি হয়ে রইল ঘটনাবহুল একটা সেশনের। প্রথম পাঁচ সেশনে যেখানে এলগার ও মার্করামের আক্ষেপ ছাড়া বলার মতো আর কিছুই হয়নি, শেষ সেশনে হয়ে গেল অনেক কিছুই। তামিম যে পাঁচে নামলেন, সেটা দিয়েই তো ঘটনার শুরু!
সেটি জানতে যেতে হবে একটু পেছনে। ৩ উইকেটে ৪৯৬ রান নিয়ে যখন চা বিরতিতে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ইনিংস ঘোষণার তেমন কোনো লক্ষণই ছিল না। বাভুমা ও ডু প্লেসিও উইকেটে বেশ সময় নিচ্ছিলেন। কেন ডু প্লেসি হঠাৎ ইনিংস ঘোষণা করলেন, খানিক পরেই সেই কারণটা অনুমান করা গেল। চা বিরতির আগে ৪৯ মিনিট মাঠের বাইরে ছিলেন তামিম। ইনিংস ঘোষণা করায় তাই ইমরুল কায়েসের সঙ্গে নামতে পারলেন না ওপেনিংয়ে। টেস্টে এই অভিজ্ঞতাও আর কখনোই হয়নি তাঁর!
শেষ পর্যন্ত তামিম পাঁচে নেমেছেন, তার আগে হয়ে গেছে অনেক কিছু। তামিমের বদলে শুরুতে নেমেছিলেন ১৪৫ ওভার কিপিং করা লিটন দাশ। শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ, রাবাদার শরীর বরাবর আসা শর্ট বলটা সামলাতে না পেরে গালিতে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন ইমরুল। ৭ রানেই আউট হয়ে গেলেন, দলে তাঁর জায়গা নড়বড়ে হলো আরেকটু।
তবে লিটন কিন্তু স্বচ্ছন্দেই ছিলেন। মরকেলের ওভারে পর পর দুইটি পুল শটে চার মেরে আভাস দিচ্ছিলেন দারুণ কিছুর। কিন্তু ২৫ রান করেই ছন্দপতন, অফ স্টাম্পের বাইরে মরকেলেরই বলে খোঁচা দিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন স্লিপে।
মুশফিক অবশ্য ফিরে যেতে পারতেন ৬ রানেই। তার পর আবার ১৫ রানেও আউট হতে পারতেন। দুবারই বোলার কেশব মহারাজ, দুবারই স্লিপে সহজ ক্যাচ ছেড়েছেন এলগার। ১৯৯ রানে আউট হওয়ার দুঃখটা নিশ্চিতভাবেই বেড়েছিল আরেকটু। শেষ পর্যন্ত তা আর বড় হয়নি, ৪৪ রানে ওই মহারাজের বলেই ব্যাট-প্যাডে ক্যাচ দিয়েছেন মার্করামকে। মুমিনুলের সঙ্গে জুটিটা আশা দেখাচ্ছিল বড় কিছুর, সেটিও ভেঙে গেছে ৬৭ রানেই।
তামিম আউট হয়ে যেতে পারতেন প্রথম বলেই। শেষ পর্যন্ত অচেনা পজিশনে আজকের দিনটা পার করে দিয়েছেন। তবে মুমিনুলের সঙ্গে তাঁর জুটিটা কাল কতদূর যেতে পারে, ম্যাচের অনেক কিছুই নির্ভর করছে তার ওপর। তবে এই মরা উইকেটেও রাবাদা-মরকেলরা যেভাবে বল করেছেন, কাজটা সহজ হবে না মোটেই।
তার আগে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সেশনে এসেই যা একটু সাফল্যের মুখ দেখেছে। নিস্ফলা প্রথম সেশনের পর আমলা ও এলগারের জুটিটা মনে হচ্ছিল আর ভাঙা যাবে না, লাঞ্চের ঠিক পরেই উইকেট পেল বাংলাদেসশ। পুরো ইনিংসেই প্রায় নিখুঁত ছিলেন আমলা, বলতে গেলে কোনো সুযোগই দেননি। মনযোগটা একটু নড়ল লাঞ্চের পর পরই, অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে করা শফিউলের বলটা তাড়া করতে গিয়ে খেললেন অলস শট। পয়েন্টে ক্যাচটা নিতে ভুল করলেন না মিরাজ, আমলা ফিরলেন ১৩৭ রানেই।
তবে এলগারের ডাবল সেঞ্চুরিটা সময়ের ব্যাপারই মনে হচ্ছিল। কিন্তু মাইলফলকের কাছে এসে হঠাৎ করেই যেন মতিভ্রম হলো। মুস্তাফিজের অফ স্টাম্পের বাইরে শর্ট বল তাড়া করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন মিডউইকেটে। দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হলেন ১৯৯ রানে, টেস্ট ক্রিকেটেই যে আক্ষেপ আছে মাত্র ১২ জনের। মাথা নাড়তে নাড়তে ক্রিজে ফিরলেন এলগার, মুশফিকদের সবার এসে তাঁর পিঠ চাপড়ে দেওয়াও খুব একটা সান্ত্বনা হতে পারল না।
তার আগে সকালে কোনো সুযোগই দেননি আমলা-এলগার। তাসকিনের বলে শুধু দুই বার খোঁচা দিয়েছিলেন দুই ব্যাটসম্যান, স্লিপ না থাকায় চারই হয়ে গেছে দুবারই। পচেফস্ট্রুমের উইকেট আজ যেন আরও বেশি উপমহাদেশের মতো আচরণ করছে, বলও বেশ কয়েকবার নিচু হয়ে গেছে। তবে ব্যাটিং-মৃগয়ায় রান করার সুযোগটা হেলায় হারাননি আমলা-এলগার। তবে শেষ বিকেলে মহারাজ আভাস দিয়েছেন, সামনে উইকেট থেকে মিলবে আরও টার্ন। শেষ ইনিংসে বাংলাদশকেই ব্যাট করতে হবে, মহারাজ নিশ্চয় তার প্রহর গুণছেন। সেজন্য মুশফিককে একটা ধন্যবাদ দিতেই পারেন। টসে জিতে বল করার সিদ্ধান্তটা যে এই পুরো টেস্ট জুড়েই তাড়া করে বেড়াবে বাংলাদেশ অধিনায়ককে!