• বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা
  • " />

     

    শেষ বিকেলের আলোতেও বাংলাদেশের অশনী-সংকেত

    শেষ বিকেলের আলোতেও বাংলাদেশের অশনী-সংকেত    

    স্কোর, তৃতীয় দিন শেষে

    দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস ৪৯৬/৩ ও ৫৪/২, ১৫.৩ ওভারে (এলগার ১৮, আমলা ১৭*, বাভুমা ৩*; মুস্তাফিজ ১/৭, শফিউল ১/১৮ )

    বাংলাদেশ ৮৯.১ ওভারে ৩২০ (মুমিনুল ৭৭, মাহমুদউল্লাহ ৬৬; মহারাজ ৩/৯২, মরকেল ২/৫১, রাবাদা ২/৮৪)


    শেষ বিকেলের আলো একটু বেশি আগেই ঘনিয়ে এলো পচেস্টুফ্রমে। ১৬ ওভার আগেই আম্পায়াররা তাই তুলে নিলেন বেল। বাংলাদেশের আকাশেও ঘনঘটা কালো মেঘের, এই টেস্ট বাঁচাতে হলে যে অবিস্মরণীয় কিছুই করতে হবে!

    প্রথম ইনিংসে ফাফ ডু প্লেসির ইনিংস ঘোষণার জন্য একরকম বসে বসে অপেক্ষাই করতে হয়েছিল মুশফিককে। দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা অতটা খারাপ হয়নি বাংলাদেশের, এর মধ্যেই আউট হয়ে গেছেন এলগার ও মার্করাম। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার আট উইকেট নিয়েই এখনও এগিয়ে ২৩০ রানে। কাল সকালে ডু প্লেসি কোন পথে হাঁটবেন, এখন তারই অপেক্ষা? ঝুঁকি নিয়ে দ্রুত কিছু রান করে বাংলাদেশকে কি পাঁচ সেশনের কাছাকাছি ব্যাট করাবেন? নাকি নিরাপদ পথে হেঁটে শেষ দিনে বোলারদের জ্বলে ওপরেই ভরসা করবেন? যা-ই হোক, একটা ব্যাপার নিশ্চিত, বাংলাদেশকে ব্যাট করতে হবে প্রথম ইনিংসের চেয়েও অনেকটাই বেশি।

    অথচ প্রথম ইনিংসে যে বাংলাদেশ অন্তত ১০০ ওভারও ব্যাট করতে পারল না, তার দায় ব্যাটসম্যানদের ওপরেই নিতে হবে। এই নিষ্প্রাণ উইকেটেও দুর্দান্ত বল করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা। রিভার্স সুইং আর গতির ‘ইউটিউব-টিউটোরিয়ালের’ মতো বোলিং করেছেন রাবাদা- মরকেল, মহারাজের বল যথেষ্ট স্পিন ধরেছে, অলিভিয়ের-ফেলুকোয়াও দরকারের সময় ব্রেকথ্রু দিয়েছেন। কিন্তু শুরুটা ভালো করেও বড় ইনিংস খেলতে না পারার দায় নিজেদের ঘাড়েই নিতে হবে ব্যাটসম্যানদের।

     

    প্রথম ইনিংসের স্কোরকার্ডের দিকে চোখ বোলালেই চিত্রটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। এক ইমরুল কায়েস ছাড়া সাত নম্বর পর্যন্ত সবাই ছুঁয়েছেন দুই অঙ্ক। কিন্তু ফিফটি পেয়েছেন শুধু মুমিনুল-মাহমুদউল্লাহ। এই দুজনও আবার অঙ্কটা তিনের ঘরে নিয়ে যেতে পারেননি। যেটির খেসারত দিতে হয়েছে ৩২০ রানে অলআউট হয়ে।

    অথচ ম্যাচের চিত্রটা হতে পারত অন্যরকম। মুমিনুল হক লাঞ্চ পর্যন্ত আভাস দিচ্ছিলেন, অনেক দিন পর আরেকটি তিন অঙ্ক আসতে পারে। কিন্তু লাঞ্চের পর আর পাঁচ রান যোগ করেই আউট হয়ে গেলেন। মহারাজের বলে ক্যাচ তুলে দিলেন শর্ট লেগে, আরেকটি ক্যাচ নিলেন অভিষিক্ত মার্করাম।

     

    তখনও বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ২২৭, ফলো অন এড়াতে পারবে কি না সেই আশঙ্কা প্রবল। মাহমুদউল্লাহ ও সাব্বির এর পর হাল ধরলেন। মরকেল তখন ভালোই ভোগাচ্ছিলেন মাহমুদউল্লাহকে, এক ওভারে তো অন্তত দুইবার আউট করেই ফেলেছিলেন। একবার রিভিউ নিয়েও আউট করতে পারেননি।

    ওই ঝাপটা কাটিয়ে এরপর মাহমুদউল্লাহ আবার স্বচ্ছন্দ হয়েছে, মহারাজের বলে চার মেরে পেয়েছেন নিজের ১৪তম টেস্ট ফিফটিও। গত ১৪ ইনিংসে এটি তাঁর দ্বিতীয় ফিফটি, টেস্টে জায়গা ফিরে পেতে যা দরকার ছিল খুব করেই।

     

     

    সাব্বিরের সঙ্গে জুটিটা যখন জমে উঠেছে, তখনই আবার ছন্দপতন। ডুয়াইন অলিভিয়েরের বাড়তি বাউন্স সামলাতে না পেরে বল স্টাম্পে টেনে আনলেন সাব্বির। মাহমুদউল্লাহ অবশ্য খানিক পরেই ছয় মেরে ফলো অনের বৈতরণি পার করেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে মাত্র দ্বিতীয়বার ৩০০ ও হয়ে গেছে বাংলাদেশের। কিন্তু নতুন বল পেয়েই আবার মরকেলের আঘাত, এবার অফ স্টাম্পের বাইরের বলটা স্টাম্পে নিয়ে এলেন মাহমুদউল্লাহ। তাসকিনও একটু পর টেন্ডা বাভুমার দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে হয়ে গেলেন রান আউট। মিরাজ ফিরলেন রাবাদার বাউন্সারে, শফিউলও ক্যাচ দিলেন মহারাজকে। ২৮ রানেই শেষ ৫ উইকেট হারাল বাংলাদেশ।

     

    তার আগে সকালের শুরুটাই হয়েছিল ঘটনার ঘনঘটায়। সকাল থেকেই দারুণ রিভার্স সুইং পাচ্ছিলেন রাবাদা, নিজের চতুর্থ ওভারেই তামিমকে আউটই করে ফেলেছিলেন। ‘আম্পায়ারাস কলে’ ওই যাত্রা বেঁচে গেছেন তামিম। রাবাদার পরের ওভারে আবারও রিভিউ নিল দক্ষিণ আফ্রিকা, এবারও পার পেয়ে গেলেন তামিম। তবে ঐ রিভিউ হারানোর শঙ্কাতেই কি না, চতুর্থ ও ষষ্ঠ বলে দুইটি রিভিউ আর নিলেন না ডু প্লেসি। নিলে অন্তত ষষ্ঠ বলে মুমিনুলের উইকেটটা পেতে পারতেন।

    মুমিনুল ঐ সময়টা ছিলেন একেবারে খোলসের মধ্যে। মরকেল-রাবাদা নিষ্প্রাণ উইকেটেও নাচাচ্ছেন তুর্কি নাচন। দাঁত কামড়ে ২৮ রানেই ৩০টি বল পার করে দিলেন মুমিনুল। তামিমের সঙ্গে জুটিটাও জমে ঊঠল আরেকটু, পঞ্চাশও হয়ে গেল। প্রথম আধ ঘন্টা কাটিয়ে দেওয়ার পর মনে হচ্ছিল, এবারের মতো ফাঁড়া পার হওয়া গেছে।

    এর পরেই ফেলুকোয়াও এসে আঘাত হানলেন, লেগ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলটা খোঁচা দিলেন তামিম। উইকেটের পেছনে ডি কক যেভাবে ক্যাচটা নিয়েছেন, আউটটা তাঁর নামেই লেখা উচিত। ৩৯ রান করেই আউট হয়ে গেলেন তামিম।

    ওদিকে মুমিনুল খানিক পরে পেয়ে গেছেন নিজের ফিফটি। ক্যারিয়ারে যেটি তাঁর ১২তম, এক অস্ট্রেলিয়া আর ভারত ছাড়া ফিফটি আছে আর সব টেস্ট দলের বিপক্ষেই। কিন্তু সুযোগও দিয়েছিলেন এরপর, স্লিপে কঠিন ক্যাচটা লাফিয়েও ধরতে পারেননি ডু প্লেসি। এবারও দুর্ভাগা বোলার রাবাদাই। ওই চারেই দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ডও হয়ে গেল।

     

    আজ অবশ্য এমন অনেক ‘রেকর্ডই’ হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান, প্রথমবারের মতো ৩০০ করা... এসব তো হয়েছেই। শেষ বিকেলে মুস্তাফিজ ও শফিউলও আভাস দিয়েছেন, কাল আমলাদের দ্রুত রান তোলার কাজটা সহজ নাও হতে পারে। তারপরও এই টেস্ট শেষে মুশফিকের মুখে হাসি থাকার সম্ভাবনা বৃষ্টির দিনে যানজট ও জলমগ্নতাহীন ঢাকা শহরের মতোই!