বৃষ্টিই পারে বাংলাদেশকে বাঁচাতে
চতুর্থ দিন শেষে
দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৯৬/৩ ডিক্লে. এবং ৪৫ ওভারে ২৪৭/৬ ডিক্লে. (ডু প্লেসি ৮১, বাভুমা ৭১; মুমিনুল ৩/২৭, মুস্তাফিজ ২/৩০)
বাংলাদেশ ৩২০ এবং ৪৯/৩ (ইমরুল ৩২, মুশফিক ১৬*)
৪২৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করা এমনিই প্রায় অসম্ভব। দক্ষিণ আফ্রিকার এই বোলিংয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের জন্য তা বৈঠা ছাড়া উত্তাল সমুদ্রে নৌকা চালানোর মতোই কঠিন। তবে বাংলাদেশের ইনিংসের প্রথম ওভারের পর শঙ্কা জেগেছিল, চতুর্থ দিনেই হয়তো শেষ হয়ে যেতে পারে ম্যাচ। শুন্য রানেই দুই উইকেট হারানোর পর হাল ধরেছিলেন ইমরুল ও মুশফিক। শেষ পর্যন্ত দুজনের ৪৯ রানের জুটি ভেঙে গেছে চা বিরতির ঠিক আগে। মহারাজের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন ইমরুল, জীবন পাওয়ার পর শেষ পর্যন্ত ৩২ রানের বেশি করতে পারেননি। চা বিরতির পরেই আবার বৃষ্টি নেমেছে পচেস্টুফ্রমে, পরে আর খেলাই শুরু হতে পারেনি। ম্যাচ বাঁচাতে কাল সাত উইকেট হাতে রেখে সারাদিন ব্যাট করতে হবে বাংলাদেশকে। আশার খবর দুইটি। কালও বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে, আর মরনে মরকেল খুব সম্ভবত এই টেস্টে আর বল করতে পারবেন না।
অথচ দ্বিতীয় ইনিংসে এই মরকেলই প্রায় দুর্বোধ্য একটা ধাঁধাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর প্রথম ওভারটা বাংলাদেশের জন্য এর চেয়ে বেশি দুঃস্বপ্নের হতে পারত না। রাউন্ড দ্য উইকেটে চতুর্থ বলটাই ভেতরে ঢুকল, ফরোয়ার্ড ডিফেন্স ভেদ করে বলটা ছত্রখান করে দিল তামিমের স্টাম্প। অসহায় হাসিতে তামিম বুঝিয়ে দিলেন, খুব বেশি কিছু করার ছিল না তাঁর।
তবে মুমিনুলের করার ছিল অনেক কিছুই। মরকেলের প্রথম বলটাই হতে পারতেন এলবিডব্লু, কিন্তু পরের বলেই প্যাডে লাগার পর আঙুল তুলে দিলেন আম্পায়ার। ইমরুলের সঙ্গে আলাপ করে মুমিনুল সিদ্ধান্ত নিলেন রিভিউ না নেওয়ার, অথচ রিপ্লেতে দেখা গেছে বলটা মিস করত লেগ স্টাম্প। প্রথম ওভারেই কোনো রান না উঠতেই দুই উইকেট নেই বাংলাদেশের!
উইকেটসংখ্যাটা অবশ্য এক ওভার পরেই তিন হয়ে গিয়েছিল। মরকেলের বলেই বোল্ড হয়ে গিয়েছিলেন মুশফিক, কিন্তু ওভারস্টেপিং হওয়ায় বেঁচে গেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। কয়েক ওভার পর রাবাদার বলে সহজ ক্যাচ দিয়েও পার পেয়ে গেছেন ইমরুল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আর পার পাননি। তবে এমন ভাগ্যের সহায়তা আরও বেশ কিছু লাগবে বাংলাদেশের।
তার আগে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের ইনিংসের শেষটা হয়ে ছিল মুমিনুলময়। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে সাকুল্যে ১২ উইকেট পেয়েছেন, টেস্টে এর আগে মাত্র একটিই উইকেট পেয়েছিলেন। সেই মুমিনুলই আজ পেয়েছেন তিন উইকেট। এর মধ্যে দুইটি কৃতিত্ব অনেকটুকুই পাওনা লিটন দাসের। বাভুমার সুইপটা আগেভাগেই বুঝতে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে এক হাতে নিয়েছেন ক্যাচ, ডি ককও স্টাম্প ছেড়ে বেরিয়ে আসায় সুযোগটা নিয়ে দারুণ ক্ষিপ্রতায় স্টাম্প ভেঙে দিয়েছেন। তার আগে মুমিনুল অবশ্য ৮১ রানে ফিরিয়ে দিয়েছেন ডু প্লেসিকেও।
তার আগে সকালের শুরুটা দারুণ হয়েছিল বাংলাদেশের। আমলা-বাভুমাদের শুরু থেকেই একদমই স্বচ্ছন্দ হতে দেননি মুস্তাফিজ-শফিউলরা। দারুণ লাইন লেংথের পুরস্কারও মুস্তাফিজ পেয়ে গেছেন দ্রুতই। দিনের ষষ্ঠ ওভারেই অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে একটা কাটারে ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন আমলা।
দক্ষিণ আফ্রিকার রান তখন ৩ উইকেটে ৭০ রান। একটা উইকেট কোথায় বাংলাদেশকে জাগিয়ে তুলবে, এরপর বাকিরা লাইন লেংথ ঠিক রাখতে পারলেন না। বাভুমা ও ডু প্লেসি রান তুললেন দ্রুত, মাত্র ২০ ওভারেই হয়ে গেল দুজনের শত রানের জুটি। মুশফিকও রক্ষণাত্মক ফিল্ড সাজিয়ে তাঁদের কাজটা আরও সহজ করে দিলেন। কে জানে, মিরাজের ওভারে স্লিপে কাউকে রাখলে হয়তো আউট হয়ে যেতেন বাভুমা। তার আগেই অবশ্য আরেকটা সুযোগ দিয়েছিলেন বাভুমা, কিন্তু পয়েন্টে সহজ ক্যাচটা ধরতে গিয়ে উল্টো আঙুলে ব্যথা পেয়ে মাঠ ছেড়েছেন কায়েস।শেষ পর্যন্ত বাভুমা ও ডু প্লেসি অবিচ্ছিন্ন থেকেই শেষ করেছেন প্রথম সেশন। এই সেশনে ২৯.১ ওভারে তুলেছে ১৪৯ রান, ওভারপ্রতি পাঁচেরও বেশি গড়ে।\
বাংলাদেশের ইনিংস অবশ্য বলছে, ডু প্লেসি আরও আগেই হয়তো ইনিংস ঘোষণা করতে পারতেন। বৃষ্টির থাবার আগে বাংলাদেশকেন আরেকটু বাগে পাওয়ার সুযোগও পাওয়া যেত। কাল মরকেলহীন আফ্রিকাকে তাই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে আকাশের দিকেই। সেটা হলে দুই দলের টানা তিনটি ম্যাচেই বৃষ্টিই হয়ে যেতে পারে 'ম্যান অব দ্য ম্যাচ'।